bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



সুজন-নাদিয়ার খাট
আজাদ আলম

পরের অংশ



বৈশাখী মেলায় সুজনের সাথে সারপ্রাইজিংলি দেখা হল। সুদর্শন সুজন আর নিরুপমা নাদিয়ার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল বছর দশেক আগে। ওরা থাকতো হাই স্ট্রিটের শেষ মাথায়। এক বেডরুমের বাসা। সাবার্বের নাম ম্যাস্কট। সিডনি এয়ারপোর্টের কাছের একটি ছোট্ট আবাসিক এলাকা। সেবার এসেছিল পি এইচ ডি কোর্সে স্কলারশিপ নিয়ে। ঢাকা ভার্সিটির তৎকালীন এই তরুণ শিক্ষক।

লাইনে দাঁড়িয়েছি। মোগলাই পরোটা কিনব। লম্বা লাইন। আমার পিছনে যে দাঁড়ালো সেই-ই সুজন। তাকে দেখে আমি যেমন চমকে গেলাম- তার চেয়ে ঢের বেশি চমকে উঠলো সুজন। মনে হলো লজ্জাও পেল সেই অনুপাতে বেশ। পাশেই ডাবল প্যারামে দুই বাচ্চা নিয়ে দাঁড়ানো নাদিয়া।

“সালাম চাচা, ক্যামন আছেন”?

সুজন, তুমি? কবে এলে? এতদিন পরেও সুজনকে চিনতে কষ্ট হয় নি আমার। চুলের রং আর চশমার ফ্রেম আগের মতই কালো এবং উজ্জ্বলতায় চকচকে।

“মাস ছয়েক হয়ে গেছে চাচা।”

ছয় মাস! আমার আশ্চর্য হবার রহস্যটা ওর বুঝতে দেড়ি হল না।

একটা অপরাধ বোধ রীতিমত বিব্রত করে ফেলেছে সুজনকে। এতদিনেও তাদের প্রিয় চাচাটির সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। পার্মানেন্ট রেসিডেন্সী নিয়ে আসার শুভ সংবাদটা দিতে পারে নি। যোগাযোগ না করার কারণ যত জোরালোই হোক -ভুল যে হয়েছে সেটা ভেবেই সুজনের এই বিব্রতকর অবস্থা। ও নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে শুরু করলো কি কারণে ফোন করতে পারে নি।

আমিও অবাক হয়েছিলাম সুজনকে দেখে। দেশি পালঙ্কে শয়ন না করলে যার নাকি তৃপ্তির ঘুম হয় না, দেশি বাতাসে নিশ্বাস না নিলে যে ছেলেটির দম আটকে যায় সেই সুজন বিদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে আসবে এমনটি ভাবতে গিয়ে অবাক হবারই কথা আমার।

প্রথমত: আমাদের ফোন নম্বর তাদের হাতের কাছে ছিল না। দ্বিতীয় এবং প্রধান কারণ, যমজ দুই শিশু সন্তান এবং বড় আর এক ছেলে এই তিন জনকে নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিল প্রায় প্রতিদিন তাদের। ছয় মাসের মধ্যে যমজ দুই ছেলে এবং মেয়ে হাসপাতাল ঘুরে এসেছে বার তিনেক। নিজেদের শরীরের অবস্থাও ভাল না। কারণ হাওয়া বদল। প্রাণপ্রিয় স্বদেশ সজ্জনদের ছেড়ে আসার বেদনা তো আছেই।

রসিক সুজন বলেই ফেলল, “চাচা, মনে হয় বাংলাদেশের বাউকুন্ঠা বাতাসের কারসাজি, বৈরিতা। এদেশের প্রশান্ত পারের হাওয়াকে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে, ওকে সুস্থির থাকতে দিবি না, অশান্ত রাখবি কিছুদিন...

“দেশের হাওয়া লাগলো না ভালো, তল্পিতল্পা নিয়ে তাই বিদেশ পালালো।”

সুজনের শুকনো হাসিতে আমিও যোগ দিলাম। দেশ ছেড়ে আসার বেদনা সরস কথার আবরণে ঢাকার চেষ্টাটা কাজে লাগে নি।

মোগলাই পরোটার লম্বা লাইন। কালাম ভাইয়ের মোগলাই, এর কোন জবাব নাই। সাথে চিকেন তন্দুরি। লাইন এগুচ্ছে বেশ ধীরে। এর মধ্যে তার চলে আসার বিশদ বিবরণ দিল সে।

পরবর্তী বংশধরদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই ইচ্ছের বিরুদ্ধেই চলে আশা। বাবা আগেই মারা গেছেন। মা ছিলেন এতদিন। বাইরে আসার কথা মাথায় আসে নি তখন। মা ছেড়ে চলে গেলেন গত বছর। মা ই বলে গিয়েছেন, “বাবা, দেশে মনে হয় তুই থাকতে পারবি না। সুযোগ পেলে বাইরে চলে যাস”।

প্রিয় দেশ ছেড়ে আসতে তার কষ্ট হয়েছে অনেক। দেশের উচ্চ বিদ্যাপীঠের পিঠ দেয়ালে সেটে আছে। করিডোরে চলতে গেলেই হোঁচট খেতে হয়। স্বাভাবিক চলাচলের পথ বন্ধ প্রায়। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের মানদণ্ড লেখাপড়ার মতই নিম্ন গতি। এদিকে গুমের রাজনৈতিক পরিবেশে নিজেও অজান্তেই গুমকাতুরে হয়ে পরেছিল।

নাদিয়া এর মধ্যে যোগ দিল, “অনেক গল্প অনেক কথা জমে আছে চাচা, আসেন না একদিন আমাদের নতুন বাসায়। কবে আসতে পারবেন, আগামী শনিবার আসেন না? প্লীজ?”

“এত তাড়া কেন? তোমরা তো আবার পালিয়ে যাচ্ছ না, তোমার চাচীর সাথে কথা বলে নেই, অবশ্যই আসবো একদিন”।

“চাচী কই? এসেছেন তো নিশ্চয়ই!”

“আসবেন না মানে, অই যে মাঠের মধ্যে গোলাকার আড্ডা খানায়।”

“নাদিয়া, তুমি লাইনে দাড়াও- আমি আসছি, চাচীকে বলে এখনই ডেট ঠিক করে ফেলি।”

সুজন তার চাচীর আড্ডা খানায় হানা দিতে গেল। এখনই সময় নতুবা কখনই হবার নয়, এমনই তার শারীরিক ভঙ্গিমা, ত্রস্ত গতি। চাচী বুঝি এই এক্ষুনি ট্রেনে চড়ে পালাবে। এমন আরজেন্সি নিয়ে সুজনের বিদ্যুৎ গমন আমাকে তাজ্জব বানিয়ে ছাড়লো। বুঝতে পারলাম- একটা অপরাধ বোধ তাকে তাড়া করছে। যোগাযোগ না করার অমার্জনীয় অপরাধ।

“এত তাড়াহুড়ো কেন সুজন, এত অস্থিরতারই বা কি কারণ? আমরা তো আছিই সিডনিতে”।

আমার পিছন থেকে হাক-ডাক বারণ-বারতা বাতাসেই হারিয়ে গেল। ততক্ষণে সে তার কর্ণদ্বয়ের অভ্যন্তরীণে কুলুপ এঁটে দিয়েছে। আমার বারণ শোনার কারণ নেই। প্রায় পাঁচ মিনিট পর হাঁপাতে হাঁপাতে এবং হাসতে হাসতে আবার হাজির হলো সুজন পরোটার লাইনে।

“অল সেট আঙ্কেল, চাচীর কোন প্রোগ্রাম নেই সামনের শনিবার। আপনারা আমন্ত্রিত”।

এতক্ষণে সুজনের চেহারায় হাব ভাবে অস্থিরতার মাত্রা কমে গেছে। কপালের ফোটা ফোটা ঘামগুলো উধাও প্রায়। নাদিয়ার কপোল থেকে লজ্জার লাল আভাও মিলিয়ে গেছে। দুজনের মাথা থেকে যেন লজ্জার হাজার মনি বোঝা নেমে গেলো।

তিন বেডরুমের একতলা বাসা। ছিমছাম সাজানো গুছানো। বসার ঘরটা বিশাল। মাটির কলস, আব্বাস উদ্দিনের আমলের গ্রামোফোন থেকে শুরু করে পাটের শিকা, বিন্নি কাশের রঙ-বেরঙ্গের বাটি, শীতল পাটি, চাটাই মোড়া ইত্যাদি দিয়ে নিখুঁতভাবে সাজানো পুরো ঘরটা। ড্রয়িংরুমে ঢুকেই মনে হলো সুজন দেশ ছাড়লেও দেশ তাকে ছাড়ে নি।

“এত দেখি কুটির শিল্পের মেলা। ঢাকার আড়ং এখন সিডনিতে। এত কিছু কি করে আনলে তুমি? নিশ্চয়ই মোটা অঙ্কের ফ্রেইট ভাড়া গুনতে হয়েছে।” আমার কথায় সুজনের হাসি পেল খানিকটা।

“তা হয়েছে আঙ্কেল, মায়ের হাতের পরশ মাখা কিছু কিছু জিনিস পত্র ফেলে আসতে মন চাইল না।”

“সোনালি আর সিঁদুর রঙের এই কলসটা, চমৎকার দেখতে, আড়ং থেকে কেনা নিশ্চয়?” চাচীর প্রশ্ন।
“না চাচী, আমাদের গ্রামের কুলদাশ কুমারের বানানো। আমি চলে আসছি জেনে ওর আবদার আমি যেন এই উপহারটুকু নিয়ে আসি। প্রাইমারি স্কুলের বন্ধু কুলদাশের কথা ফেলতে পারি নি। এখন দেখছি এই কলসটাই সবার নজর কেঁড়ে নেয় সবার আগে।”

“কলসটা সত্যিই সুন্দর, রঙের এত সূক্ষ্ম কাজ, বানাতে নিশ্চয়ই অনেক সময় লেগেছে।” সুজনের চাচীর আরটিস্টিক চোখ এড়াতে পারলো না কলসির বাহার।

“তা লেগেছে চাচী, মাস দুয়েকের উপরে লেগেছে ওর। নাদিয়ার অই জিনিষটাই সবচেয়ে বেশি প্রিয় এখন। ফুলদানী বানাতে চায়, অনেকগুলো নেটিভ ফুল রেখেছিল একবার। পরে ও নিজেই সরিয়ে ফেলেছে ফুলগুলো। ওর মন্তব্য, এমনিতেই কলসটা অনেক সুন্দর।”

বলতে বলতে সুজন তার শোয়ার ঘরে নিয়ে গেল আমাদেরকে। ঘরটার বেশীরভাগ অংশ দখল করে আছে বিরাট এক ময়ূর পালঙ্ক। আমি কিছু বলার আগেই, সুজন বলে উঠল, “চাচা, দেখুন তো এই রুমের কোন কিছু চিনতে পারেন কিনা।”

আমি তো রীতিমত অপ্রস্তুত, পাজল্ড। মনে মনে আওড়ালাম, ভাতিজা বলে কি? এই প্রথম আসলাম ওর বাসায়, ঢাকায় যে ওর বাসায় কোনদিন গিয়েছিলাম সেটাও তো না। এমন কি সাজিয়ে রেখেছে এই ঘরে যা আমার পূর্ব পরিচিত হতে পারে! একটু রস করে বললাম, “না, সরি সুজন, তোমাকে ছাড়া আর তো কিছু চিনলাম না।”

সুজন হেসে দিল আমার উত্তরে, “চিনলেন না চাচা, মনে করতে পারলেন না? আপনার সামনে বিশাল দেহ এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে যাহা- তাহাকে ঠাহর করতে পারলেন না। এই হলো সেই ঐতিহাসিক খাট। দশ বছর আগে যার শুধু ছবি দেখে- গল্প শুনে নাম দিয়েছিলেন সুজন-নাদিয়ার খাট, এস এন কে, এই সেই বিখ্যাত পালঙ্ক। এবারে সেই ছবিটা রেখে এসেছি- ছবির সাবজেক্ট কে সাথে করে নিয়ে এসেছি।”

সুজনের চোখ মুখ আনন্দের আভায় অভিষিক্ত। এতক্ষণে আমার পুরো নজরটা হুমড়ি খেয়ে পড়লো পালঙ্কের সারা শরীরে। সত্যিই তো! এই সেই বিখ্যাত পালঙ্ক! সেদিনের সেই পালঙ্ক কাহিনীর উচ্ছ্বসিত সরস বয়ান মনে পরতে লাগলো একের পর এক।

সুজনেরা সেবার মাত্র এসেছে সিডনিতে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়তার সুবাদে আমাদের বাসায় তাদের অবস্থান ছিল কিছুদিন। এরপর হাই স্ট্রীটের মাথায় এক বেড রুমের বাসা ভাড়া নেয় ওরা। ওরা বলতে ওরা দুজন। নাদিয়া এবং সুজন। বাসা ভাড়া নেয়ার দিন সাতেকের মাথায় আমরা দেখতে যাই তাদের। ছোট্ট সংসার। ছোট্ট এপার্টমেন্ট। ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুমটা ছোট ছোট সুভেনির দিয়ে সাজিয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখছি ওদের টোনা টুনির সাজানো সংসার। বেডরুমটি মাঝারি সাইজের। প্রায় পুরো ঘরটা জুড়ে কুইন সাইজের একটা বেড। বেডের মাথার দিকে টাঙ্গানো একটি পালঙ্কের ছবি। সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো। জমিদার বাড়ির পালঙ্ক যে হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকলো না আমার। নকশা, রঙ, রুপার পাতে মোড়ানো পায়া, ময়ূরের পাখনায় সাজানো বেডহেড সবই এর সাক্ষ্য দিচ্ছিল।



পরের অংশ






Share on Facebook               Home Page             Published on: 28-May-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far