bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












বউয়ের বাগান
আজাদ আলম


আমার ছোট্ট কুটিরের ভিতরে-বাহিরে, আনাচে-কানাচে, ফুটপাতের দু পাশে, দেয়ালের গা ঘেঁষে, অলিতে গলিতে, ঝুলন্ত শিকার থলিতে, রঙিন টবের রকমারি ঝুলিতে, বারান্দায়, গেটের আগায়, জানালার কাঁধে, কালার-বন্ডের বেড়াতে, লাইট পোস্টের গোড়াতে, গার্ডেন শেডের ছাদে, ঝুড়িতে-সিঁড়িতে, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা আধা ভাঙ্গা পিড়িতে, আমার বউয়ের বাগান - পাতায় ফুলে ভরা। ধনে-মরিচ লাউ-কুমড়া, শসা-ঢেঁড়সের আখড়া! মনে পড়ে শেখ মুজিবের বজ্র কণ্ঠের ঘোষণা - এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী থাকে না। তিন শতাংশ গাছ-গাছড়ার নাম, মনে রাখতেই আমার বিধি বাম! অথচ সবার নাম জাত বংশ, সব কিছু ঠোটে তার ভুলে না একাংশ। বউয়ের সাথে লম্বা এক বৈঠক শেষে, ঠিক হলো সব কিছু চুক্তিতে এসে -

লেখা থাক সব সার, পানির বিবরণ
দোষের ভাগি কেন হবে আমার ভোলা মন!
নির্ভুল ভাবে যেন আমি সব কিছু জানি
কোন গাছ কখন খায় কতটুকু পানি।
গোবর আর কম্পোস্ট, ব্লাড এন্ড বোন
তরল সারেরও আছে বহু প্রয়োজন।
সবুজসার আর যত ডিমের ভাঙা খোসা
চাল-ধোয়া পানিও পুষ্টিতে ঠাসা।
নিত্যদিনের দৌড়ঝাঁপ সেটা তো আছেই
“সেমি-শেড প্লান্ট রেখো রৌদ্রের কাছেই।
এ পটকে রোদে রাখো, ঐটাকে সরাও
একহাত না কুষ্মাণ্ড, দুহাত বাড়াও।
সব মানি-প্লান্টগুলো ছায়াতে জড়াও
মাকড়সার জাল ভাংগো শামুকও তাড়াও।”

আজ এ গলির যত্ন কাল আর এক
আমার অলস দিবানিদ্রা হয় হাইজ্যাক!
আমার চা চুমুকের দীর্ঘ সময়টাকে
এক ঘণ্টা থেকে এক মিনিটে এনে রাখে।

বাংলাদেশে গেছেন তাই একা আমি ভাইরে
তবুও এক বিন্দু নিস্তার নাই রে!
জানান দিতেই থাকেন তিনি ফোন-ম্যাসেঞ্জারে
কোন টব কতটুকু পানি পান করে।
যদিও সবই লেখা আছে পাকা হলফ-নামায়
সেটাও আমি হারাতে পারি এই তার ভয়।

কড়া নির্দেশের সাথে আছে হুঁশিয়ারি
কোন কারণে একটাও গাছ যদি মারি
দুর্বল হয় যদি, হয় মরা মরা
“ক্ষমাকারী নাই তোমার আল্লাহ ছাড়া।
হেসে হেসে যত তুমি দাও মুচলেকা -
তোমার মাথায় তবু ঝোলে ভারী রাম দা।
তোমার ওজর আজর আমার সবি আছে জানা
এ যাত্রায় অজুহাতে পার পাবে না।
সব গাছ বাঁচলে তুমিও বাঁচবে
বাকি জীবন তুমি মোর সুনজরে থাকবে।
এই কড়া নির্দেশের একটাই কারণ -
তোমার উদাস ভাব আর নির্লিপ্ত আচরণ।”

“গাছেরও যে প্রাণ আছে এই কথা জানো?
ওদের ও তো ক্ষুধা লাগে সেই কথা মানো?
তুমি তো হামেশাই এটা ওটা খাও
কেন তবে গাছে পানি দিতে ভুলে যাও!
এ ক্যামন কবি তুমি সিমারী ধরণ
জল দিতে পিছু পা, নড়ে না চরণ।
অথচ বাগানের পেলে ফুল ফল
খুশিতে চোখ মুখ করে জ্বলজ্বল!
এই যে চারদিকে সবুজের মেলা
ফুল আর পল্লবে সারাদিন খেলা
ডালিয়ার কানাকানি আর হাতছানি
এমন সোহাগ তুমি কোথা পাবে শুনি!”

যুক্তির সাথে তার পেরে ওঠা দায়
বাগান বেহুশ তার কোমল ছোঁয়ায়!
শুকনো শেকড় থেকে কি যাদুর বলে
ভরে ফেলে পট পাত্র পাতা ফুলে ফলে
এ সাফল্যে মনে তার খুশি ভরপুর
আনন্দে কাটে তার অলস দুপুর
দুঃখ তার একটাই আফসোসও তাতে
পারে না আমাকেই মানুষ বানাতে!
আমার উলু-বন আজ মুক্তাতে ভরা -
এত জল সিঞ্চনেও হয়না উর্বরা।

বসে আছি চুপচাপ অন্ধকার রাত
মনে পড়ে বউয়ের আক্ষেপ-অজুহাত।
অকস্মাৎ টের পাই, সম্বিত আসে ফিরে
আমি কেন অ-সবুজ সবুজের ভিড়ে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আজ শপথ নিলাম
বাগান বাঁচাতে আমি জীবন সপিলাম।

এর পরেও যদি কিছু বাঁচাতে না পারি
চলে যায় কোনো গাছ এ জগত ছাড়ি
সাক্ষী রইল কথামালা এই কমা দাড়ি
এ কবিতাই মুক্তির শেষ কাণ্ডারি
ধুনপুন বাক্য-বাদ্য গুণগান গাই
গাছ পাগল মালিনীর পঞ্চমুখ চাই।









Share on Facebook               Home Page             Published on: 28-Mar-2022

Coming Events:

Blacktown Lakemba Mascot







Blacktown Lakemba Mascot