bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন


হাত বাড়াতেই আনন্দ / আজাদ আলম


আগের অংশ


হিরোশিমা মেমোরিয়াল পার্ক। আণবিক বোমার আঘাতে পুরো শহর ধ্বংস হলেও দাঁড়িয়ে আছে একটি মাত্র দালান। সেটাই মেমোরিয়াল হল। পার্ক আর হলটা ঘুরে ঘুরে অনেক ইতিহাস জেনেছি ১৯৪৫ সালের সেই বিভীষিকায় সময়ের। পার্কে আছে বিশ্ব শান্তির ঘণ্টা। বিগ বেল। বিগ বেলে একটা ছোট্ট পাথরের আঘাত দিয়ে শুনতে চেষ্টা করেছি কত দূরে যেতে পারে শান্তির অনুরণন। মিয়াজুমি দ্বীপের টরি গেটের পাদদেশে গিয়ে অনেক ছবি তুলেছি আবার দূর থেকেও তুলেছি জোয়ারে ডুবন্ত সেই একই টরি গেটের। এই দ্বীপেই অপ্রত্যাশিত ভাবে দেখা মিলেছে সাড়ে সাত টন ওজনের সবচেয়ে বড় কাঠের চামচের। আজকে কেন জানি এ সব কিছু ছাপিয়ে হন্ত দন্ত হয়ে দৌড়ে আসা সেই মানুষটির কথাই মনে হচ্ছিল বার বার।
“আমি হ্যাপি, তোমরা ঠিক জায়গাটিতেই এসেছো”।
শুধুমাত্র হাত বাড়িয়ে আনন্দ দেওয়ার বা পাওয়ার এই নজীর আমাকে মোহাবিষ্ট করে রেখেছিল সারাদিন।

প্রায় এক দশক আগের ঘটনা এগুলো। কথা প্রসঙ্গে সেই স্মৃতিচারণ করছিলাম এক জাপানিজ প্রকৌশলীর সাথে।
“ এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়”, মন্তব্য করল সে।
“আনন্দঘন চিত্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া, আপ্যায়ন করা জাপানিজদের বৈশিষ্ট্য। পারিবারিক আদর্শ আর ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত এই স্বভাব সহজাত, স্বতঃস্ফূর্ত”।
সে দুঃখ করে বলল, ইদানীং হারিয়ে যাচ্ছে এই ট্র্যাডিশন। ফ্যাশন শো এর দৌরাত্ম্যে, নিজেকে দেখানোর সাময়িক আনন্দে গোটা পৃথিবীর সাথে তার দেশও মাতোয়ারা। আদর্শ আর ঐতিহ্যের বাহক হাত বাড়িয়ে দিলেই যে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায় সে সময় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে মানুষের দৈনন্দিন কাজের তালিকা থেকে। এই সময় হারিয়ে যাচ্ছে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের অতল গহ্বরে।
আমি বললাম, “আমাদের ও তোমাদের মত ঐতিহ্য ছিল। মানুষের জন্য মানুষ ছিল নিবেদিত প্রাণ।” তোমরা হারাতে বসেছো ইদানীং আর আমরা অনেক আগে থেকেই হারাতে বসেছি। ফেসবুক, টুইটার, টি ভি সিরিয়াল আর ইন্সটোগ্রামকে সময় দিতে দিতে সমাজ এখন দেউলিয়া। কার এমন ফ্রি টাইম আছে যে কারো সাহায্যে হাসিমুখে এগিয়ে আসবে। শর্ট মেসেজ, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ পেঁচিয়ে করেছে সমাজকে আস্টে পৃষ্টে। ভয়েস কল কজনাই আজকাল করে। ল্যান্ড ফোনের কৃং কৃং শব্দ কচিত শোনা যায়। মোবাইল ফোন ধরে দু’টো কথা বলার মেন্টালিটি নেই মিলিনিয়াম জেনারশনের। মুখের কথার শ্রুতিমধুরতা, কথা বলেও যে অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায় এই বোধ, এই মানসিকতা হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে।

দেশের একটা ঘটনার কথা বলি। এক বন্ধুর থেকে শোনা গল্প এটি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। সেই সাথে ঘন অন্ধকার। ড্রাইভার গাড়ি থামালেন একটা বাজারের কোনায়। ওষুধ কেনা জরুরী। ফার্মেসীর খোঁজ হচ্ছিল। বিভিন্ন বয়সের কিছু দর্শক একটা চায়ের দোকানে ভিড় করে টিভি সিরিয়াল দেখছে।
ড্রাইভার নেমে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই এখানে কোন ওষুধের দোকান আছে”? একজন বলে উঠলো, “আছে, আছে, সামনে গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে কিছুদূর গিয়ে পশ্চিম দিকে গেলেই দেখতে পাবেন”।
টিভির পর্দা থেকে কয়েক সেকেন্ড চোখ উঠিয়ে হরহর করে কথা গুলো বলে আবার পর্দায় চলে গেলেন তিনি। কোনদিকটা পশ্চিম, আগে থেকে না জানলে, কারো জানার জো নেই এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে।
“পশ্চিমটা কোন দিকে ভাই”? ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলেন লোকটাকে। আরে মিয়াঁ পশ্চিম চিনেন না? নামাজ কালাম পড়েন? না চিনলে ওই যে মসজিদে ঢোকেন, চিনতে পারবেন”? বলেই লোকটি আবার সিরিয়াল দেখতে মগ্ন হয়ে গেলেন।
কিসের অভাবটা প্রকট এই মানুষটির? অভাব, আন্তরিকতার, মানুষের উপকারে আসার সহজাত স্বভাবের, মানসিকতার। শুধু হাসি মুখ আর সময়কে সম্বল করে অনাবিল আনন্দে যে নিজের জীবন এবং অন্যের জীবনকে অলংকৃত করা যায় সেই উপলব্ধির অভাব।

এই উপলব্ধি গেঁথে ছিল সেইসব সাধারণ জাপানিজদের মাথায়। দশটি নিত্য নৈমিত্তিক দৈনন্দিন কাজের সাথে একটি অবৈতনিক অনিন্দ্য সুন্দর হাত বাড়ানোর কাজটিও তালিকায় রেখেছিল তারা। সুযোগ পেলেই কারো উপকারে আসা। ঘটা করে কিছুই করে নি। হাসিমুখে শুধু হাতটা বাড়িয়ে কিছুটা সময় দিয়েছে এই যা।

আমরা আনন্দ পাই, খুশি হই নানান ভাবে নানান কারণে। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের সাথে থেকে, দামী রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে, নামীদামী মানুষের সাথে হ্যান্ডশেক করে, সেলফি তুলে, সমুদ্র সৈকতে হাওয়া খেয়ে। আমরা আনন্দ আহরণের চেষ্টায় দেশ বিদেশ ঘুরি। দর্শনীয় স্থান বা ঐতিহাসিক স্থানে পা ফেলে নয়ন, মন, দেহ জুড়াই। নিজের মনের আনন্দের জন্যে কত আপ্রাণ চেষ্টা করি, কত সময় ক্ষেপণ করি আড্ডা মেরে। কত অর্থ কড়িই না পকেট থেকে খসে যায় মাঝে মধ্যে। যাদের পকেটে তেমন অর্থ থাকে না তারাও অবসর সময় কাটায় গল্প করে, টিভি দেখে তাস বা অন্যান্য খেলাধুলা করে। অভিপ্রায় একটাই। হাসি আনন্দে, সুখে শান্তিতে যাতে সময়গুলো কেটে যায়।

সকালে উঠে অফিসে যাওয়ার মত, খবরের কাগজ পড়ার মত, মাঠে ঘাটে কাজে যাওয়ার মত, রাতের খাবার আহরণের মত, ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাওয়ার মত, আনন্দ-চিত্তে হাত বাড়ানোর অভ্যাসটাও হতে পারে প্রাত্যহিক কাজের অংশ বিশেষ। স্রেফ হাতটা বাড়িয়ে কারো পথ চলাটা যদি সহজ করে দেই এর থকে পাওয়া ভালবাসা, আনন্দ, তৃপ্তির পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে আপনার ধারনার বাইরে। আপনার মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, “একি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে”!



আগের অংশ


আজাদ আলম, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া



Share on Facebook               Home Page             Published on: 14-Mar-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far