হাত বাড়াতেই আনন্দ আজাদ আলম
হোটেলে যাওয়ার রাস্তা হারিয়ে ফেলবো ভাবিনি। ওসাকা স্টেশনে নেমে ডান দিকে দিয়ে বেরিয়ে উঠতে হবে প্রথম রাস্তায়। এই রাস্তার ডান পাশের ফুটপাথ ধরে হাটতে হবে শেষ মাথা অবধি। এরপর বামে মোড় নিলেই চোখে পড়বে হোটেলের সাইনবোর্ড। গুগুল ম্যাপ থেকে প্রিন্ট করা হার্ড কপি সাথেই আছে। দেখাচ্ছিল পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। রাস্তা হারিয়ে ফেলার কারণ ফুটপাতের ব্যারিকেড। ডিট্যুর ফলো করতে গিয়েই ফেল মেরেছে প্লান এ। প্লান বি কোনদিনই পছন্দের ছিল না গিন্নীর কাছে। প্লান সি মানে ট্যাক্সি, নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না। হাটতে লাগবে যেখানে চার মিনিট, ট্যাক্সি পেতেই হয়তো লাগবে চৌদ্দ মিনিট। অ্যাড্রেস বোঝাতে লাগবে আরো চার মিনিট। এরপর জাপানিজ ভাষায় ড্রাইভার হয়ত: বলবে, “বোকার হদ্দ নাকি, এইটুকু রাস্তা হেঁটে যেতে পারে না”! প্লান বি হলো কাউকে জিজ্ঞেস করা। আমার এমনিতেই মানুষের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে আর এখন তো কথা বলতে হবে প্রয়োজনে। প্লান বি গিন্নির অপছন্দের প্লান হলেও এই সঙ্কট সময়ে হাত টেনে ধরে বাধা দেয় নি।
একটা সুশি ও সুমো সালাদ বারে ঢুকতেই দু’জন হাস্যময়ী জাপানিজ মেয়ে এগিয়ে এলো। “হাই, দোনা তাবেতাই” অর্থাৎ কি খাবেন বলুন, হৃদয় গলানো হাসিমুখে আমন্ত্রণ। বললাম, “নো ইট, ক্ষুধা নাই, লস্ট দি ওয়ে, হোটেলের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। এই যে ম্যাপ, এই যে হোটেল”। প্রিন্টেড কাগজটা ওদের সামনে ধরলাম। দু’জনের ঠোঁটেই মিষ্টি মিষ্টি হাসি আর মুখে ইচির মিচির কিচির শব্দ। কথা বলছে না হাসছে বুঝতে পারছিলাম না। বেশ জোরের সাথে আবার বললাম, “কনিচুয়া, হ্যালো, রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি, ম্যাপে পথের দিশাটা এঁকে দিবে একটু প্লিজ”। হঠাত উল্লাসে ফেটে পড়লো দুজনই “ওয়াকারি মাছতে, ওয়াকারি মাছেন”। মনে মনে বললাম, না,না ভাত, কারি, মাছ কোন খাবার লাগবে না, এখন পথটা দেখিয়ে দিলেই বাঁচি। একজনের মুখ থেকে ইংরেজি বের হলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে, “ওকে, আই নো, ইউ লস্ট”। এবার বুঝলাম, “ওয়া কারি মাছের” মানেটা কি। ওরা বুঝতে পেরেছে, আমরা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট গেল। কাগজে কিছু আঁকলো না। দুই জাপানিজ নিজ নিজ হাসি খুশি নিয়ে নিজের ভাষায় কথা বলেই যাচ্ছে। মাথা নিচু করে জল্পনা কল্পনা। আমার বউয়ের এসব তেমন ভাল লাগছিল না। বিশেষ জয়ন্তী পালন করতে এসে এসব ভোগান্তি সহ্য হচ্ছিল না তার। সামনে আরো যে কি আছে কপালে! শেষমেশ একজন ইশারায় জানালো তাকে ফলো করতে। হাসি হাসি মুখ। ভেবে পাচ্ছিলাম না,এতে হাসির কি আছে। রেস্তোরাঁর বাইরে গিয়ে হাতের ইশারায় হোটেলে যাওয়ার রাস্তাটা একটু ভাল করে চিনিয়ে দেয়া, এই তো! মহিলার হাতে ইশারা নাই। আগে আগে হাঁটছে সে। আগ বাড়িয়ে আর কিছু বললাম না। ধরে নিলাম হোটেলের নিশানা দেখিয়ে দিয়ে ফেরত আসবে সে। মিনিট দুয়েক হাঁটতেই দূর থেকে হোটেলের সাইনবোর্ড চোখে পড়ল। “পেয়েছি ইয়োকো, হাই দোমো, থাঙ্ক ইউ ইয়োকো, তোমাকে আর যেতে হবে না”। মেয়েটাকে থামার জন্য ডাকলাম। বউ গুঁতো মারলো, “ইয়োকো না কোকো ওর নাম”। ইয়োকোই হোক আর কোকোই হোক ও কি শোনার মানুষ! ও হাঁটছেই। আমাদের আগেই কোকো হোটেলের লবিতে ঢুকলো। ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে কি যেন বলে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর গিন্নি অনেকবার ধন্যবাদ দিয়ে হ্যান্ডশেক করে বিদায় জানানোর চেষ্টা করছি কিন্তু গেল না ও। বিনয়ের সাথে দাঁড়িয়েই আছে। আমার বউ ফিস ফিস করে বললো, “মনে হয় টিপস চাচ্ছে। কিছু ইয়েন দিয়ে দাও, বেচারি এতটা পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো”। বললাম, “খবরদার এদেরকে ভুলেও টিপস দিতে যেও না। এরা বড় আত্নমর্যাদাশীল জাতি”। আমাদের হাতে রুমের চাবি দেখার পর কাছে আসল কোকো, মুখে পরিতৃপ্ত হাসি নিয়ে বিদায় নিতে। আমরা হাত নেড়ে তাঁকে সায়োনারা জানালাম। লিফটে বউকে বললাম, “বলেছিলাম না, জাপানিজরা কত ভদ্র আর হেল্পফুল! তোমার কাছে তো আমার কথার মূল্যই নেই”। ওর মুখ ঘুরিয়ে ছাদের পানে তাকিয়ে উত্তর, “এতক্ষণ কাজে ফাঁকি দিল আর কি।“
নারা জাপানের এক কালের রাজধানী। নারাতে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম কাঠের তৈরি বুদ্ধ প্রাসাদ, টেম্পল টডাইজী। ট্রেন,বাসে পথঘাট চিনতে তেমন অসুবিধা হলো না। রোদটাই যা একটু চড়ার দিকে। বৃহত্তম কাঠের অট্টালিকা। প্রবেশ টিকেটের জন্য বিশাল লাইনে দাঁড়িয়েছি। এত বড় লাইন দেখে বউয়ের উষ্মা মাখা স্বর, “ভিতরে না গেলে হয় না, দেখলাম তো দূর থেকে। আর কত কাছে থেকে দেখতে হবে। গতকালই কিয়োটোতে সোনার টেম্পল, রুপার টেম্পল দেখে আসলাম। আজকে আবার টডাইজী টেম্পল। আর কত টেম্পল”!
কিয়োটো জাপানের আর একটি পুরনো রাজধানী শহর। ওর মুখের দিকে তাকালাম। এক পলকেই বুঝে নিলাম, নারার এই চড়া রোদের নিপীড়নটাই হলো টেম্পল দেখতে অনিহার একমাত্র কারণ। বললাম, “নারাতে এসে এই বিশাল কাঠের অট্টালিকাটা একটু নেড়ে দেখবো না এটা কি হয়? তুমি এক কাজ কর, ঐ ছায়া ঘেরা জায়গায় গিয়ে পোষা হরিণ, ছাগলদের সাথে গোল হয়ে বসে সময় কাটাও। ভাল লাগবে। দেখছো না অনেকেই সেলফি তুলছে কত মজা করে”। এই জনারণ্যে এত হরিণ, ছাগল দল পাকিয়ে বেড়াচ্ছে ভাবাই যায় না। এটা নাকি এই শহরের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ শহরের অনেক পার্ক এদের অভয় চারণ ভূমি। “আমি ছাগলদের সাথে ঘুরি আর তুমি বুদ্ধ বাবার গলা আগলে ধরে ছবি তুলে আসবে তাই না? চালাক কত! অতশত জ্ঞান দিতে হবে না। যা করছ কর”।
টডাইজি টেম্পল দর্শন জমে নি, চড়া রোদ। আর মশার মত এক ধরনের পোকা তাড়াতে তাড়াতে গিন্নির মেজাজ খাড়া। নারায় এসে দু’হাত নাড়াতে নাড়াতে আমার জানটাও সারা। কড়া রোদের চেয়ে আরো করকরা শুকনো হয়ে গেছে বউয়ের চেহারা। শুকনো ঠোঁট । কড়া কিছু বলতে চাইলেও পারছে না। ঠোঁটেই আটকে যাচ্ছে। ভালো একটা রেস্তোরা খুঁজছি। ভালো লাঞ্চ যদি দুজনের মুড ভাল করে দেয় সেই আশায়।
শাবু শাবু জাপানিজ হট পট ডিশ। নানান হার্বস, মশলা মেশানো টগবগে গরম পানির পাত্র, এই পাত্রে ছেড়ে দিতে হয় আপনার পছন্দের শাক সবজি, মাছ মাংস পেয়াজ ইত্যাদি যা মনে ধরে। পাঁচ সাত মিনিট রেখে দিয়ে সুপের বাটিতে নিয়ে গরম গরম খাওয়া। মেশাতে পারেন পছন্দের সস। বেশ নাম ডাক এই খাবারের। বেশিরভাগ খাবার টেবিলেই পরে থাকলো। আজকের দিবসটি রৌদ্রকর উজ্জ্বল হলেও আমাদের দুজনের মন মেঘলা, অন্ধকার। নারাতে বেড়াতে এসে গ্যাঁড়া কল পরেছি গলায়। কি করলে ফলাফল খুশিতে হলফল করবে সেই প্লান খুঁজছি।
“আইসক্রিম খেলে কেমন হয়” বলে উত্তরের অপেক্ষায় আছি। “চমৎকার আইডিয়া, খাবো, মছি না মাছি আইসক্রিমের কথা বলেছিলে, একবাটি নিয়ে আস, ওটা খেয়ে পেট ভরাই”। গিন্নীর মুখে শিশির ভেজা শব্দ। যাক, আইসবার্গ গলতে শুরু করেছে। আইসক্রিম ট্রিটমেন্ট কাজে দিয়েছে। রোদের তেজটাও কমেছে অনেক। “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিছু না দেখলে তার হাম বড়া ভাব আসে না। এবার চল, নারার সবচেয়ে বড় স্যুভেনির শপে নিয়ে চল আমাকে। দেখতে চাই পৃথিবীর কত বড় নোটটা তোমার পকেট থেকে বের হয়”। ভাগ্যের আকাশে সুশীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। সে তার স্বভাবী ঢঙ্গে কথা বলছে এখন। আরও ভাগ্য ভালো যে, সে বেশ পছন্দসই একটা স্যুভেনিরের দোকানে নিজেই ঢুকে পড়েছে। শোকর গোজারি করে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এ যাত্রা। মনে মনে আওড়ালাম, নো মোর টেম্পল টক। বেশ সুন্দর একটা স্যুভেনির শপ। দুটো জিনিশ পছন্দ হল ওর কিন্তু নিবে একটা। আমি আগ বাড়িয়ে দুটোর দাম দিতে গেলাম। এবারে হেসে ফেললো সে, “আমাকে টিপস দেয়া হচ্ছে, দাও, না করবো না এ যাত্রায়”। কুফা ছাড়েনি এখনো। দোকানদার অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিবে না। আমেরিকান অথবা জাপানিজ চাই। আমেরিকান আর জাপানিজ ক্যাশ যা আছে তাতে দুটোর দাম হয় না। মুশকিল! ভাঙ্গাবো কোথায়! দোকানদার মহিলা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি বলতে পারে। আঙ্গুলের ইশারায় দেখিয়ে দিল, কোথায় ব্যাঙ্ক। আমি বউকে দোকানে রেখে হাঁটা দিয়েছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি দোকানদার মহিলাও হাঁটা দিয়েছে পিছে পিছে। বললাম,” লাগবে না, আমি ব্যাঙ্কে যেতে পারবো আর তাছাড়া তোমার দোকান দেখবে কে”? সে শুনলো না অথবা বুঝলো না আমার কথা। হাসিমুখে অল্প ইংরেজিতে বোঝালো, এক মিনিট, কোনো সমস্যা হবে না। আমার স্ত্রী যোগ দিল, “ ও যখন যেতে চাচ্ছে যাক না, আমি একা থাকতে পারবো দু চার মিনিট”। প্রায় আধা ঘণ্টা লেগেছে আমার ট্রাভেলারস চেক ভাঙ্গাতে। অস্ট্রেলিয়ান ডলার ভাঙ্গানো সম্ভব হয় নি। দোকানী মহিলা ব্যাঙ্কের ওয়েটিং রুমে বসেই ছিল। যতই বলেছি আমি ফেরত যেতে পারব, ও হাত জোর করে বলছিল ,আমার কোন অসুবিধা নেই। দোকানে ফিরে এলাম। ভয়ে আতঙ্কে অস্থিরতায় কেটেছে গিন্নির গত অর্ধেক ঘণ্টা। কাস্টমর এসে এটা ওটা চেয়েছে, ও শুধু হাত নাড়িয়ে বলেছে, নো জাপানিজ, হাই দোমো, মানে দুঃখিত, নট মাই শপ। খদ্দের কি ভেবে চলে গেছে। ওর ভয় ছিল কেউ যদি ভাবে ও চুরি করতে দোকানে ঢুকেছে আর পুলিশ এসে নিয়ে যায় তা হলে কি হবে! চুরির দায়ে জাপানের কারাগারে রজত জয়ন্তী যাপিত হবে একা একা। আমাদের দুজনকে দেখে গিন্নী যেন প্রাণ ফিরে পেল। ওকে একা ফেলে যাওয়াটা মোটেও উচিত হয় নি। ওর পাসপোর্ট টাও ছিল আমার কাছে। যেখানে কাউকে জানি না, চিনি না, ভাষা জানি না সেখানে কোন অঘটন ঘটলে সামাল দেয়া সাঙ্ঘাতিক কষ্টসাধ্য হতে পারতো।
ওসাকা থেকে হাই স্পীড ট্রেন ধরে আসলাম হিরোশিমা স্টেশনে। সারাদিনের প্লান অনুযায়ী প্রথমে দেখবো টিপিকাল জাপানিজ গার্ডেন, তারপর দেখতে যাব হিরোশিমা শান্তি মেমোরিয়াল হল। ১৯৪৫ সালে আণবিক বোমার আক্রমণের পরে হিরোশিমায় দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র বিল্ডিং এই মেমোরিয়াল হল। ঘুরে ঘুরে দেখবো চারপাশে গড়ে ওঠা নিবির মেমোরিয়াল পার্ক। তারপর যাব ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মিয়াজুমিয়া আইল্যান্ড। হিরোশিমা স্টেশন থেকে নেমে গার্ডেনের দিকে হাঁটছি। ঠিক পথেই ছিলাম। যা ভেবেছিলাম তার থেকে দূরত্ব একটু বেশি মনে হচ্ছিল। আমার গিন্নির ভাবনার ভাব উতলে পরা শুরু করেছে। তার ধারনা, নিশ্চয় রাস্তা ভুল করেছি। যতই বলি, না, ম্যাপ অনুযায়ী যাচ্ছি ততই ওর সন্দেহ বাড়ছে। “এত সময় লাগছে কেন তাহলে”। অল্পেই প্যানিক হওয়া তার এক ধরনের বাতিক, ভীতি-রোগ। এর মধ্যে দু একটা জাপানিজ ডায়ালগ রপ্ত করে ফেলেছে সে। আমার উপর ভরসা না করে নিজেই একজন পথচারীকে থামালো। বেচারা জোরে জোরে হাঁটছিল। কনিচুয়া, ওহাইও, এক্সকিউজ মি, সুমি মাসেন সব কিছু বলে ভদ্রলোককে থামাতে পেরেছে। ভদ্রলোক তাড়াতে আছে বোঝাই যাচ্ছিল। অফিসে অন টাইম পৌঁছানোর তাড়া। তাড়াহুড়ো করে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংলিশে বোঝাতে চেষ্টা করল, এখান থেকে লেফটে যেতে। ট্রাফিক লাইট দেখিয়ে বলল তিন নম্বর লাইটে আবার লেফটে যেতে। গেলেই গার্ডেনের বড় সাইন চোখে পড়বে। আমিও তাই ভেবে নিয়েছিলাম। আমার হাতের ম্যাপ তাই বলছে। আরিগাতো গজাইমাছ, থ্যাঙ্ক ইউ বলে আমরা মোড়ে এসে বামে চলে গেলাম আর ও বেচারা দৌড়ানো শুরু করলো ডান দিকে।
লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। গার্ডেনে প্রবেশের টিকেট কাটবো। দশ মিনিট হয় নি। হ্যালো, ফ্রেন্ড হ্যালো। শুনে পেছনে তাকালাম। দেখি সেই ভদ্রলোক যার কাছে আমরা বাগানের লোকেশন জানতে চেয়েছিলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এসেছে তার অফিস থেকে। “কিকোদিশু কিকোদিশু অর্থাৎ সব ঠিক আছে ঠিক আছে, ভুল কর নি, আই অ্যাম হ্যাপি। ভেরি ভেরি হ্যাপি”। কথার খই ফুটছিল তার মুখে। চোখে চোয়ালে আনন্দ উপচে পড়ছিল কথাগুলোর সাথে সাথে। ও যা বলল, অফিসে ঢোকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বস কে বলে কয়েক মিনিট ছুটি নিয়ে এখানে আসবে সে। ওর সন্দেহ ছিল আমরা ঠিকমত আসতে পেরেছি কি না। বোঝাই যাচ্ছে সে অনেকটা পথ দৌড়ে এসেছে। সাথে আসতে পারে নি বলে তার অনুতাপের অন্ত ছিল না কিন্তু এখন সে সত্যিই অত্যন্ত খুশি। আমি আর গিন্নি মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। আমাদের দেশে এ সমস্ত লোকদেরকে মানুষ নিশ্চয় পাগল ভাবত। অথচ এই লোকটি ভাবছিল সে হয়ত আমাদের কে ঠিক রাস্তাটি বলতে পারে নি। নিজে এসে সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিতে না পারার দুঃখে এতক্ষণ সে ভারাক্রান্ত ছিল। এখন সে ভারমুক্ত হয়ে আনন্দে আত্মহারা।
পরের অংশ
|