অস্ট্রেলিয়ায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি পালনের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত রতন কুণ্ডু
বাংলা ৩০ শে মাঘ ১৪২৪ ও ইংরেজি ১২ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বাংলাভাষীদের ইতিহাসে আরেকটি অর্জন যুক্ত হলো৷ মহান ভাষা দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সংগঠন - এম এল সি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় ঐদিন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পার্লামেন্টে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন জন্য একটি মোশন উত্থাপিত হয় ও বিস্তারিত আলোচনার পর তা দলমত নির্বিশেষে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়৷ জাতি হিসেবে এটা আমাদের আরেকটি বিশাল অর্জন ৷ লেবার পার্টির ছায়া-মন্ত্রী, সাংসদ ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্ট্যান্ডিং কমিটির উপ-প্রধান ম্যাট থিসেলথওয়েইট মোশনটি উত্থাপন করেন৷ এর সমর্থনে বক্তব্য রাখেন ফেডারেল এম পি, জুলি ওয়েন্স, স্টিভ জারগানস, জন আলেক্সান্ডার, মারিয়া ভাম্যাকিনউ, জোয়েন রায়ান্স ও জুলিয়া ব্যানক্স ৷ ম্যাট ম্যাট থিসেলথওয়েইট তার বক্তব্যে ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে ভাষা ভিত্তিক আন্দোলনের বিস্তারিত পটভূমি তুলে ধরেন৷ এই আন্দোলনে যারা অকাতরে রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে সেই বীর শহীদদের প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ পরবর্তীতে এই ভাষা আন্দোলন কিভাবে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন ও তার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নিয়ে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের অবসানে বিশ্বের মানচিত্রে বিশ্বের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র- বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয় তার বর্ণনা করেন৷
মিস জুলি ওয়েন্স তাঁর বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সেইদিনের আত্মত্যাগ ও নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ৷ তিনি সেই সময়কার স্লোগান – “জয় বাংলা” কে একটি সঞ্জীবনী মন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন ৷ তিনি বাঙালিদের এই অর্জনকে গভীর শ্রদ্ধায় অভিষিক্ত করেন ৷ তিনি তাঁর বক্তব্যে এম এল সি আন্দোলনের চেয়ারপার্সন শ্রী নির্মল পালের সাথে ২০০৪ সাল থেকে এই ইস্যু নিয়ে একত্রে কাজ করে আসছেন বলে উল্লেখ করেন এবং নির্মল পালের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরলস চেষ্টার মাধ্যমে এই অর্জনের রূপকার বলে অভিহিত করেন ৷
এই মোশনটি পাস হওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়ার সবকটি রাজ্যের প্রিমিয়ারদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশ্রুতি এসেছে৷ এম এল সি মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এর নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ক্যানবেরা, ভিক্টোরিয়া, কুইন্সল্যান্ড ও সাউথ অস্ট্রেলিয়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সুদীর্ঘ ১০ বছর যাবত MLC Movement International মাতৃভাষা লালন, পালন ও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ৷ সিডনির আসফিল্ড পার্কে বহির্বিশ্বে প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা, UNESCO র সাথে যৌথ কর্মসূচী , অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের লাইব্রেরি সমূহে একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা, নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট লাইব্রেরির সাথে যৌথভাবে ৩০ টির অধিক ভাষাগোষ্ঠী নিয়ে প্রতি-বৎসর ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা মেলা, ক্যানবেরা লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে মোশন পাশ সহ অনেক প্রাপ্তির রূপকার MLC Movement International. যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই অসাধ্য সাধন হয়েছে তার পুরোধা হলেন চেয়ারপার্সন মি. নির্মল পাল, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মি. এনাম হক, পরিচালক ড. রতন কুন্ডু, পরিচালক ড. অজয় কর, পরিচালক আব্দুল আউয়াল খান, পরিচালক হোসাইন মহসিন, পরিচালক সপ্তর্ষি তিথন পাল, টিম লিডার; আনিসুল হক, আজাদুল আলম, আজাদ আবুল কালাম, পারভেজুল আলম অপাল, সজল রায়, মিষ্টি পাল, অভিজিৎ দাস, সহ আরো অনেক টিম লিডারবৃন্দ ৷ সহযোগিতায় ছিলেন সিডনী প্রেস এন্ড মিডিয়া কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ড. এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক ও বিদেশবাংলা২৪.কম এর অ্যাডমিন বিশিষ্ট সাংবাদিক মোঃ আব্দুল মতিন, বিডিনিউস২৪.কম এর অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি নাইম আব্দুল্লাহ, বাংলা-সিডনি ডট কমের আনিসুর রহমান, ভোরের কাগজ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি কাজী সুলতানা সিমি, স্বাধীন কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক কাজী আরমান, এন টি ভি অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি সুলতানুল আরেফিন সহ অন্যান্য মিডিয়া ব্যক্তিত্বগণ ৷ উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস এর শিক্ষক ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রাক্তন সচিব ও উপদেষ্টা ড. এন আই খান সহ অনেক বুদ্ধিজীবীবৃন্দ৷
এই মোশনটি পাশ হওয়ার ফলে সংসদের উচ্চ-কক্ষে এটিকে চূড়ান্ত করে আইনে পরিণত করা হবে এবং অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপিত হবে ৷ এম এল সি আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক ৷
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে
রতন কুণ্ডু, সিডনি
|