bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













অধরা
আতিক রহমান


গ্রামের নাম রসুলপুর। গ্রাম পেরুলেই ছোট নদী, তারপর ধু ধু মাঠ ও শস্য ক্ষেত, তারই বুক চিরে এঁকে বেঁকে ডিসট্রিক্ট বোর্ডের কাঁচা রাস্তা সেই সুদূর নীলে গিয়ে মিশেছে। আলাল আর বেলাল এই গ্রামের বাসিন্দা। ওরা দুই ভাই, শেফালীর ছেলে, ওয়াজেদ শানার নাতী। শেফালী ওয়াজেদ শানার একমাত্র মেয়ে। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে এখন বাপের ঘরে। ওয়াজেদ শানা সেই ব্রিটিশ আমলের ম্যাট্রিক পাশ, প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষকতার আয় আর ছেলের পাঠান সামান্য টাকায় মেয়ে আর নাতিদের নিয়ে টানাটানির সংসার। তবে একসময় সে ধনাঢ্য ছিল। কয়েক একর জমির উপর দাঁড়িয়ে ছিল ওয়াজেদ শানার বাড়ী। বাড়ীর দরজায় গম্বুজকরা পাকা মসজিদ, পাশেই মক্তব, প্রসস্থ কাছারি - পারিবারিক মুসাফিরখানা। বাড়ীর সামনে শান বাঁধান দিঘী। খরায় এই দিঘীর জলেই সাত গ্রামের মানুষের খাবার পানির ব্যবস্থা হতো। দুর্ভাগ্য সেই শানা বাড়ী আজ আর নেই। মেঘনার করালগ্রাসে আজ তা নদীর গহ্বরে। যেদিন শানা বাড়ীর গম্বুজকরা পাকা মসজিদখানা দিনের আলোয় ধীরে ধীরে মেঘনার অতলে তলিয়ে যাচ্ছিল; সারা গ্রামের মানুষ অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর অবুঝ শিশুর মতো কাঁদছিল। নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হন ওয়াজেদ শানা। উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে শ্বশুরের গাঁয়ে এসে ঠাঁই নেন। শ্বশুর সুজামিয়া কাগুজী তখনো জীবিত। নদী সিকস্তি জামাতাকে বাড়ী করার জন্য অল্প কতটুকু জমি দিয়েছিলেন। সেই থেকে ওয়াজেদ শানা রসুলপুরে। নতুন এই বাড়ীর নামও শানা বাড়ী, তবে এতে নেই পুরানো সেই শানা বাড়ীর জৌলুস। এটি একটি সাদামাটা গ্রাম্য বাড়ী। চৌচালা একখানা টিনের ঘর, ছিমছাম এক ফালি উঠান, বাড়ীর চারপাশে ফলফলাদির গাছ।

ওয়াজেদ শানার ছেলে আলম গ্রামের স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে চিটাগাংয় ষ্টীল মিলে কাজ করে। টানাটানির সংসারে অল্প বয়সে কাজে নেমে পড়তে হয়েছে তাকে। পড়াশুনা বেশী দূর এগোয়নি। মাসে মাসে বাবাকে কিছু টাকা পাঠায়। শেফালীও পড়াশুনায় ভাল ছিলো কিন্তু পড়াশুনা তারও বেশী দূর এগোয়নি। তাই বলে মেয়ের জ্ঞান অর্জনের জন্য ওয়াজেদ শানার চেষ্টার কমতি ছিল না কোনোদিন। শহর থেকে বই ম্যাগাজিন কিনে এনে দিতেন মেয়েকে। এর পাশাপাশি চলেছে মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র খোঁজার পালা। উপযুক্ত পাত্র পেতে বেগ পেতে হয়নি ওয়াজেদ শানার। ছেলে গদাইপুরের; বিএ পাশ। পূর্ব-পাকিস্তান রেলওয়েতে চাকুরী করে। রামগড় রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার। দেখতে সুদর্শন, বেতন ভাল। বেশ ঘটা করে বিয়ে হয়েছিল শেফালীর। ক’দিনের মাথায় জামাই মেয়েকে নিয়ে চলে যায় রামগড়ে। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে শেফালীর কোল জুড়ে এলো আলাল আর বেলাল। সুখেই কাটছিল শেফালীর দিনগুলো। কিন্তু বিধিবাম; বিয়ের ছয় কি সাত বছরের মাথায় সামান্য এক অসুখে পড়ে জামাই মারা গেল। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে বিধবা হয়ে সে ফিরে আসে বাপের ঘরে। ছেলেমেয়ের সুখের কথা ভেবে ওয়াজেদ শানা সারাটা জীবন বিপত্নীক, অথচ সেই অতি আদরের মেয়ে আজ অল্প বয়সে বিধবা হয়ে তার ঘরে। শেফালীকে আবার বিয়ে দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন অনেকে। বাবাও চেয়েছিলেন মেয়ের আবার বিয়ে হোক। কিন্তু শেফালীর এক কথা -“না”। সে যেভাবে আছে- বেশ আছে। ওয়াজেদ শানা এনিয়ে মেয়ের উপর আর কোন জোর খাটাননি। সেই থেকে ছেলে আলাল আর বেলালকে নিয়ে শেফালী বাপের ঘরে-রসুলপুরে। দুই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতই এখন শেফালীর জীবনের একমাত্র কামনা, একমাত্র স্বপ্ন। আলাল আর বেলালই তার আশার আলো।

দিন যায় রাত আসে, দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর। এভাবেই কালের চাকায় পার হয় শেফালীর জীবনের অনেকগুলো বছর। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে শেফালীর নানা সুজামিয়া কাগুজী এবং বড় বড় সব মামারাও একে একে গত হয়েছেন পৃথিবী থেকে। সনাতন পদ্ধতির কাগজ তৈরির জাদুকর এই “কাগুজী” পরিবার এখন আর সেই কাগজের ব্যবসায় নেই। মেশিনে কাগজ তৈরির কৌশল আবিষ্কারের সাথে সাথে অনেক পেশার মত কাগুজী পেশারও অবসান ঘটে। এই কাগুজী বাড়ীর কর্তাব্যক্তি এখন লালুমিয়া কাগুজী। সম্পর্কে শেফালির মামাতো ভাই। বাজারে দোকান জমি জমা সব মিলিয়ে গ্রামের অবস্থা সম্পন্ন গেরস্থ। ছোকানুর লালুমিয়ার একমাত্র মেয়ে। সে আলাল আর বেলালের খেলার সাথী। আলাল, বেলাল আর ছোকানুর বাড়ীর পাশের স্কুলে পড়ে। ওরা তিনজন রোজ স্কুলে যায় একসাথে। ওরা খেলার সাথী। দীঘির পাড়ে সারি সারি তাল গাছ, তার পাশে গাছের ডালে স্বর্ণলতার ঝোপ; তাতে ঘুঘু পাখি বাসা বেঁধেছে। ঘুঘু কুশ টেনে বাসা বেঁধেছে, কখন ডিম পেড়েছে, কখন ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছে; এনিয়ে ওদের শিশুসুলভ চপলতার অন্ত নেই। স্কুল থেকে ফিরে বেঁতঝার থেকে বেঁতফল, কাঁঠালের মুছি, গাছের কাঁচা আম তাতে লবণ মরিচ তেল মাখিয়ে খাওয়া- এ ছিল আলাল, বেলালের আর ছোকুনুরের নিয়মিত কাজ।

আলাল লেখাপড়ায় ভাল। তড়তড় করে গ্রামের স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে মফস্বল শহরের কলেজে ভর্তি হয়। কলেজের পরীক্ষায়ও আলাল ভাল রেজাল্ট করে। অবশেষে চিটাগাং উনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। আলাল লেখাপড়ায় বরাবরই মনোযোগী। যথারীতি সে ভার্সিটির শেষ বর্ষে উঠে আসে। মাঝে মাঝে ভার্সিটির ছুটিতে বাড়ী আসে। এ বাড়ী ও বাড়ী করে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। ছোকানুদের বাড়ী যায় সে। ওর সাথে দেখা হয়।

ছোকানুরও এখন বড় হয়েছে। ছেলেবেলার খেলার সাথী এখন আর সেই ছোট্ট মেয়ে ছোকানুর নেই। সে এখন কিশোরীর গণ্ডি পেরিয়ে যুবতীর চৌহদ্দিতে পা রেখেছে। আলাল আর ছোকানু ওরা একে অপরকে ভালবাসে। ওদের মধ্যে কথাবার্তা খুব কম হয়। অনেকটা এই গানটির মত - “গভীর হয় গো যেখানে ভালবাসা, মুখে তো সেখানে থাকেনা কোন ভাষা”

সেবার যখন ভার্সিটি’র ছুটিতে বাড়ী এসেছিলো, ছোকানুর আলালকে আড়ালে পেয়ে একটুখানি কথা বলেছিল, “দেশের অবস্থা ভাল না, খালি আন্দোলন, জ্বালাও পোড়াও মারামারি, তুমি সাবধানে থাইকো আলাল ভাই, তোমার জন্য আমার ভীষণ ভয় হয়”। উত্তরে আলাল মুচকি হেসে শুধু বলেছিলো, “তুই শুধু শুধু ভয় পাস ছোকানু, আমার কিচ্ছু হবে না।” আরো বলেছিল, “আন্দোলন কি সাধে হয়। আর কতকাল আমরা মাথা নিচু কইরা থাকবো বল। আর কত শোষণ নিপীড়ন সহ্য করবো। বাঙ্গালীরা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ অথচ চাকুরী-বাকুরীর সকল ক্ষেত্রে আমরা সংখ্যালঘিষ্ঠ। সেনাবাহিনীতে আমাদের বাঙ্গালী অফিসার নেই বললেই চলে, অথচ ৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বাঙ্গালী জোয়ানরা পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য কি যুদ্ধটাই না করেছিল। বুকে মাইন বেঁধে ট্যাংকের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আলাল হাসতে হাসতে আরও বলেছিল; “জানিস- এই আন্দোলন তো স্বাধীন একটা দেশ জন্মের প্রসব বেদনা মাত্র”। ছোকানুর লজ্জাবনত মুখে মুচকি হেসে সরে পড়ে।

ছোকানুর জানে আলাল মেধাবী এবং সব ব্যাপারে জ্ঞান রাখে। তার কথার উপর আস্থা রাখে সে। গ্রামের লোক আলালকে দেশ নিয়ে, স্বাধিকার আন্দোলন নিয়ে নানারকম প্রশ্ন করে। আলাল সবার প্রশ্নের জবাব দেয়। সুন্দর করে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে। সবাইকে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেয়। আলাল দেশ প্রেমে উদীপ্ত এক তরুণ যুবক। চোখে মুখে যার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

আলালের ভার্সিটি ফাইনালের আর মাত্র কয়েক মাস বাকী। দুই পরিবারের মধ্যে ওদের বিয়ের কথাবার্তা মোটামুটি পাকা; আলাল ফাইনাল পাশ করলেই ওদের বিয়ে হবে। এনিয়ে ছোট ভাই বেলাল মাঝে মাঝে ছোকানুরকে টিপ্পনী কাটে। ছোকানুর অনুরাগের সুরে মা শেফালী’র কাছে অনুযোগ করে; শেফালী শুধু হাসে, কোন প্রতিবাদ করে না। কিন্তু এরিমধ্যে বেজে উঠে স্বাধীনতার রণদামামা। গর্জে উঠে পাকবাহিনীর মেশিনগান, জ্বলে উঠে পুরো দেশ। সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো যুদ্ধের দাবানল। ঢাকা চিটাগাংসহ বড় বড় শহরে পাকবাহিনী ঢুকে পড়েছে। ভার্সিটির হলে এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করলো অগণিত ছাত্রছাত্রী। লাঞ্ছিত করলো হাজার হাজার মা বোন। বন্দর নগরী চিটাগাং, কালুর ঘাট এবং পতেঙ্গায় পাকিস্তানী মিলিটারিরা বোমা মেরে বহু শিল্প কারখানা জাহাজ ধ্বংস করলো।

ভাই আলম আর ছেলে আলালের কোন খোঁজ নেই। সে এক বিভীষিকাময় দিন তখন। এরই মধ্যে চিটাগাং থেকে পায়ে হেঁটে বহু মানুষ গ্রামে ফিরে এলো। আলমের সহকর্মী সুজন একই মিলে কাজ করতো। কোন রকমে জীবন নিয়ে সে বাড়ী ফিরেছে। সে আলমের কোন সংবাদই দিতে পারলো না। প্রায় দুই মাসের মাথায় লোকমুখে খবর পাওয়া গেলো আলম পাক বাহিনীর চিটাগাং স্টিল মিল আক্রমণের সময় হানাদারদের বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারায়। কিন্তু আলালের হদিস কেউই দিতে পারলো না।

অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধ শুরুর প্রায় তিন মাস পর হঠাৎ আলালের একখানা চিঠি এলো। সে লিখেছে মাকে- সে ভাল আছে। আরও জানিয়েছে; ২৫ মার্চের রাতে আলাল চিটাগাং ছেড়ে পালিয়েছে। তারপর পায়ে হেটে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপাড়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসের মাধ্যমে গোপনে এ চিঠিখানা পাঠিয়ে আলাল মাকে আস্বস্থ করেছে যে সে বেঁচে আছে। আলালের চিঠি পেয়ে শেফালী’র ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এসেছিল সেদিন। এরপর থেকে শেফালীর শুধু প্রতীক্ষার পালা - কবে যুদ্ধ শেষ হবে? ছেলে কবে বাড়ী ফিরবে? নাকি ফিরবেই না? যদি যুদ্ধে আলালের কিছু হয়? মায়ের মন- কত অজানা আশংকা উঁকিঝুকি দেয় অহর্নিশি। শেফালী’র দিন কাটে চোখের জলে, নামাজের পাটিতে। দিনের পর দিন বিনিন্দ্র রজনী কাটিয়ে চোখের কোনে কালো দাগ পড়ে গেছে শেফালীর। ছোকানুর প্রায় রোজই আসে শেফালী’কে দেখতে, পাশে বসে সান্ত্বনা দেয়। নিজেও লোক-চক্ষুর আড়ালে চোখের জল ফেলে প্রাণের মানুষটার জন্য। এর মধ্যে কেটে গেলো আরও চার পাঁচ মাস। এখন আষাঢ় শ্রাবণ মাস। ভরা বাদলের প্যাঁকে বর্বর বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে এখানে ওখানে নাকানী চুবানী খাচ্ছে। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকবাহিনী। মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের বার্তা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আগরতলা থেকে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। যুদ্ধের বোধ হয় আর বেশী বাকী নেই। এ সময় আলালের আরও একখানা চিঠি এলো। আলাল জানিয়েছে সে ভাল আছে এবং মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। মাকে সে জানিয়েছে দেশ অচিরেই স্বাধীন হচ্ছে এবং দেশ স্বাধীন হলেই সে বাড়ী ফিরবে। শেফালি আজ অনেক খুশী ছেলের ঘরে ফেরার বার্তা পেয়ে। অনেক আশায় বুক বেঁধে বসে আছে সে।

১৯৭১’এর ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো, গ্রামছাড়া মানুষগুলো ধীরে ধীরে আবার গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। একটা স্বস্তি ফিরে এলো সারা দেশে। কিন্তু মা শেফালী’র? না, তার স্বস্তি নেই- তাঁর আদরের দুলাল আজো বাড়ী ফেরেনি। এদিকে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ এসে গেলো, স্বাধীন দেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পার হলো। অথচ আলালের আজও কোন হদিশ নেই। কি হলো তাহলে আলালের? যুদ্ধ শেষ হয়েছে আজ তিন চার মাস। কিন্তু না, আলাল তো এখনো বাড়ি ফিরছে না। শেফালীর সকল আশার প্রদীপ আজ আশা নিরাশার দোলাচলে নিভু নিভু করছে। কি হলো তাহলো আলালের? কেউ কিছু ঠাহর করতে পারছে না। খুঁজে বেড় করার মতোও কেউ নেই শেফালির, চোখের জলের অথৈ সাগরে ভাসছে শেফালী।

এদিকে ছোকানুরের বাবা মা মেয়ের বিয়ে দেবার বিশেষ তাগিদ অনুভব করছেন। এখান ওখান থেকে ভাল ভাল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ঘটক আসতে শুরু করেছে। গাঁও গ্রামে আঠারো উনিশ বছরের মেয়ের বিয়ে হয়নি এনিয়ে কথা হয়। আলালের মত ছেলের জন্য ছোকানুরের বাবা মা অপেক্ষায় ছিলেন, আরও থাকতে আপত্তি নেই। তবে তাঁরও এর একটা মেয়াদ আছে। এখন জুন-জুলাই মাস ১৯৭২। গ্রামে রটনা হয়ে মুখে মুখে ফিরছে- “আলাল আর বেঁচে নেই; যুদ্ধ শেষ হয়েছে আজ প্রায় ছয় সাত মাস। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এতদিনে বাড়ী ফিরতো”। অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছোকানুরের বাবা একদিন বিনয়ের সাথে শেফালী’র কাছে কথা পাড়লেন। শেফালীকে বললেন তিনি ছোকানুরের বিয়ে দিতে চান। ছোকানুরের ঠোট কাঁটা মামুজান তো মুখের উপরে বলেই ফেললেন; “আলাল নিশ্চয়ই বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এতদিনে বাড়ী ফিরতো”। তারপর অনেক আলোচনা ও বোঝাপড়ার পর দুই পরিবার সিদ্ধান্তে উপনীত হলো- তাহলে আলালের ছোট ভাই বেলালের সাথেই ছোকানুরের বিয়ে হোক। ছোকানুরও কিছু ভেবে উঠতে পারছিলো না। সেই বা কিভাবে তার অতি প্রিয়জন পুত্রহারা বেদনাক্লিষ্ট ফুফুটিকে এভাবে একা ফেলে অন্য কোথাও অজানা অচেনা ঘরে চলে যাবে। সে যে শেফালি ফুফুকে অনেক ভালবাসে। বেলালের ঘোর আপত্তি ছিল এ বিয়েতে- কি করে সে তার আপন বড় ভাইয়ের হৃদয়ের মানুষটিকে বিয়ে করবে? কি বলবে ভাই যদি কোনদিন ফিরে আসে? পরে নিকটজনদের পরামর্শে বেলাল এ বিয়েতে রাজী হয়। কোনো ধুমধাম ছাড়াই বেলাল আর ছোকানুরের বিয়ে হয়ে যায়। তারপর কেটে যায় আরও দু তিন মাস।



পরের অংশ






Share on Facebook               Home Page             Published on: 28-Mar-2016

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far