bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













শামসুর রাহমান ও কয়েকজন
আশীষ বাবলু



ঢাকায় ২১ শে বই মেলায় প্রফেসার জাফর ইকবালকে দেখেছিলাম। শুধু হুমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই হিসেবেই নয় লেখালেখির জগতে সে এখন নিজ মহিমায় প্রতিষ্ঠিত। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি খুবই জনপ্রিয়। সাইন্স-ফিকশন আমাকে তেমন টানেনা বলে তা‘র লেখা বই আমি খুব একটা পড়িনি। কিন্তু দেশ নিয়ে তার চিন্তা ভাবনাগুলো বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পড়ে বেশ ভাল লাগে। কোন দলের পক্ষ না নিয়ে দেশের মঙ্গল কামনায় তার যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো মনে দাগ কাটে। ছাত্র না হয়েও তাকে স্যার ডাকতে ইচ্ছা করে।

জাফর ইকবালকে মেলায় দেখে ছুটে গিয়ে তার লেখা একটা বই কিনে আনলাম একটা অটোগ্রাফের আশায়। কিন্তু আজকাল একটু নামডাক হয়েছে এমন কাউকে আর একা পাওয়া যায়না। এত চামচা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকেন যে একা পাওয়া দূরে থাক কাছে পাওয়াই দুষ্কর। এই পরিবেষ্টনকারী মানুষগুলি রোগা পাতলা নয় বেশ মোটা তাগড়া। এদের অধিকাংশই সাহিত্যের “স” বোঝে বলে আমার মনে হয়না।

আমাদের ছোটবেলায় এমন ছিলনা। আমি ঢাকার ছেলে। যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই লেখক লেখিকাদের কাছে থেকে দেখেছি। শুনলে আশ্চর্য হবেন স্কুলের দেয়াল পত্রিকার জন্য শামসুর রাহমানের কবিতা আনতে চলেগেছি পুরানো ঢাকার তাজমহল সিনেমার কাছে মাহুত-টুলির গলিতে। তিনি কবিতা দিয়েছেন এবং কাপ-সসারে চা এবং বিস্কুট খাইয়েছেন। আমাদের সবার প্রিয় কবি শামসুর রাহমানের সাথে অনেক ঘটনা এখনো স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে একটা ম্যাগাজিন বের করা তখন আমাদের একটা বাৎসরিক উৎসব বা বিজনেস ছিল। পত্রিকা ছাপানো হোতো বিজ্ঞাপনের টাকায় আর বিক্রির টাকায় ধোলাই খালের বিরিয়ানির দোকানের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়া হতো সাথে অভিসার সিনেমায় রাজ্জাক সুচন্দা।

শামসুর রাহমান বসতেন দৈনিক বাংলা অফিসে। সেখানে ছিলেন কবি ফজল সাহাবুদ্দিন, আহসান হাবিব, বিচিত্রার শাহাদৎ হোসেন। এককোণে মোটা পাঞ্জাবী আর মোটা ফ্রেমের চশমা পরে নির্মল সেন অনিকেত ছদ্মনামে একমনে লিখতেন জনপ্রিয় কলাম।

ফজল শাহাবুদ্দিন ছিলেন আড্ডাবাজ। সেখানে আড্ডাটা শুরু-হতো তার সাথে বসে। তিনি আমাদের বোঝাতেন কবিতা লিখতে হলে কবিতা পড়াটা কতো জরুরী। সেখানে আমাদের সাথে এসে যোগ দিতেন শামসুর রাহমান। তখন অল্পবয়সী হওয়াটা একটা গৌরবের ব্যাপার ছিল। আমরা কেমন আছি খোঁজ খবর নিতেন। বলতেন এবার কি নিয়ে ছড়া চাও? বললাম এবার ছড়া নয়, প্রেমের কবিতা চাই। আমাদের সদ্য ওঠা গোঁফের রেখার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, তাই নাকি? আমার সাথে তখন বাল্য বন্ধু সাহাদৎ হোসেন, এখন সিডনিতে থাকে, আমার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, ও এখন প্রেমে পড়েছে। আমি তখন হাবুডুবু খাচ্ছিলাম এক দারোগার মেয়ের প্রেমে। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটা পুলিশকে মনে হতো আমার আত্মীয়। ইচ্ছে হতো তাদের সবাইকে সালাম দিয়ে বলি, কেমন আছেন চাচা?

সেদিন শামসুর রাহমান শুনিয়ে ছিলেন তার জীবনে প্রথম প্রেমের গল্প। উনি পড়েছিলেন তাদের কাজের বুয়ার কিশোরী মেয়ের প্রেমে। বলেছিলেন কোনদিন কথা বলিনি, কিন্তু একদিন না দেখলে সমস্ত দিনটা খারাপ হয়ে যেতো। শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা। এমন মেয়ের জন্যই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, কালো সে যতই কালো হোক দেখেছি তার কারো হরিণ চোখ। সেই ডাগর চোখের মেয়েটি তার মনে আলো জ্বেলেছিল। পরিসমাপ্তিটা বড় দুঃখ জনক ও রোমান্টিক। একদিন ছাদে ফুলের টব থেকে কয়েকটা হাসনাহেনা ফুল কবি মেয়েটির হাতে তুলে দিয়েছিলেন, মেয়েটি মাথা নামিয়ে গ্রহণ করেছিল। ব্যাস এই পর্যন্ত!

তারপর হঠাৎ করে সব আলো নিভে গেল, মেয়েটির বিয়ের খবর শুনেছিলেন কবি।

একদিন মনে আছে খুব সন্তর্পণে নিউজ পেপারে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটি প্যাকেট তিনি আমাদের সামনে রাখলেন। আমরা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি, কি আছে এই পেটিকায়? সন্তর্পণে যখন খোলা হলো, দেখ গেল সেদ্ধ মিষ্টি আলু। এই খাদ্যটি শামসুর রাহমানের বড় প্রিয় ছিল। তার গ্রামের বাড়ী ছিল মেঘনা নদীর তীরে ‘পাড়াতলী’ গ্রামে। সেখানকার আলু-ঘাটার মিষ্টি-আলু নাকি খুবই প্রসিদ্ধ।

এই দৈনিক বাংলার অফিসেই দেখেছিলাম ফতেহ লোহানীকে। উনি তখন সবার পরিচিত মুখ। সেই স্লিপিং গাউন পরা মুখে পাইপ, আগুন নিয়ে খেলা করে ফেলেছেন। আমরা অনেকেই জানিনা, তিনি গল্পও লিখতেন। বাঙ্গালীদের মুখে পাইপ দেখলে মনে হয় চালিয়াতি। ফতেহ লোহানীকে ভাল লাগতো। আরেক জন বাঙালির মুখে পাইপ মানাতো তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ব্যাবহার করতেন বলেই বস্তুটা বিশেষ হয়ে উঠেছিল। সেখানেই দেখেছিলাম সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল আহাদকে। উনি আসতেই দেখতাম সবাই দাঁড়িয়ে পড়তো । এই গুনি মানুষটির তত্বাবধানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছেন। এই আব্দুল আহাদের সাথে আরেক জন মানুষকে দেখেছি সম্ভবত নামটা নাজির আহমেদ, স্মৃতি থেকে লিখছি। উনি যখন কথা বলতেন মনে হতো কবিতা পড়ছেন। বড় সুন্দর ভারি গলা। সেই নাজির আহমেদ সম্বন্ধে একটা ঘটনা সেখানেই শুনেছিলাম। অনেকেই জানেন আকাশবাণী কলকাতা পূজার এক-সপ্তাহ আগে খুব ভোরে মহালয়া নামে একটি অনুষ্ঠান করে। সেখানে গান হয় এবং সাথে স্তোত্র পাঠ। এই স্তোত্র পাঠ করতেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র। একদিন কোন কারণে তিনি সময় মতো পৌঁছাতে পারেন নি। সেদিন সেই স্তোত্র পাঠ করেছিলেন নাজির আহমেদ। তিনি সবার প্রশংসা পেয়ে ছিলেন।

যাইহোক শামসুর রাহমানের আরেকটি প্রেম কাহিনী দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো। তিনি বলেছিলেন, কবিতা পাঠের আসরে তিনি কবিতা পড়ছিলেন। প্রথম সাড়িতে অনেক মেয়েদের মাঝে বসেছিল একটি মেয়ে, তিনি মেয়েটির মুখ দেখেননি, চোখ দেখেননি, হাসি দেখেননি, দেখেছিলেন শাড়ির তলায় লেস লাগানো সাটিন পেটিকোটের একটু ঝিলিক। ওটুকু দেখেই তিনি মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন। কী সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার! শামসুর রাহমান তোমাকে সেলাম।



আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au




Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Jan-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far