bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













দিলীপ কুমার একটি ইতিহাসের নাম
আশীষ বাবলু



দিলীপ কুমার
এক ভিক্ষুক জন্মভূমি পেশোয়ারের বাড়ীতে বাচ্চা দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন, বেটা একদিন তোমারা অনেক নাম হবে। বাড়ীর অন্য সবাই ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলেও দিলীপ কুমারের নানী মৃত্যুর আগ অবধি ব্যাপারটা বিশ্বাস করতেন। তবে আমার মনে হয় সেই ভিক্ষুক এবং নানী কারো কল্পনায়ও ছিলনা সেই “অনেক নাম হবে”র পরিমাণটা কতটা বিশাল হবে!

অভিনয়ের বাইরেও তিনি ছিলেন একজন পণ্ডিত মানুষ। এই পাণ্ডিত্য তিনি স্কুল কলেজ থেকে অর্জন করেননি। তার সবচাইতে পছন্দের কাজ ছিল বই পড়া। নভেল, নাটক, বায়োগ্রাফী. কবিতা, তিনি গোগ্রাসে গিলতেন তিনটি ভাষায়। উর্দু, পারসি এবং ইংরেজি। এত ঘন ঘন তার বুক শেল্ফ বইয়ে ভরে যেতো যে প্রত্যেক মাসে একবার কিছু বই গ্যারাজে ট্রান্সফার করতে হতো। একটা ইজি চেয়ারের পাশে টেবিল ল্যাম্প আর বই ছিল দিলীপ কুমারের সবচাইতে প্রিয় জায়গা। স্ত্রী সায়রা বানু লিখেছেন, সেটা মুম্বাই এর পালি-হিল হোক, কাশ্মীরের ডাচিগ্রামে বা কুলো ম্যনালীর জঙ্গলে অথবা সুইজারল্যান্ডের ফ্লাটেই হোক, এমন একটা জায়গা সেখানে হতেই হবে। আর সেখানে বই পড়ায় মগ্ন মানুষটিকে দেখলে মনে হয় কোনও শিশু একটি নতুন খেলনা পেয়েছে। তার ধ্যানমগ্ন উজ্জ্বল মুখখানা তখন দেখার মতো!

সিনেমার গল্পকার সচিন ভৌমিক একটা সুন্দর ঘটনা একবার লিখেছিলেন। মহাবালেশ্বরের ‘রেস-ভিউ’ হোটেলে একবার তিন রাত দিলীপ কুমারকে খুব কাছে থেকে তিনি দেখেছিলেন। দিলীপ কুমারকে একটা নতুন ছবির স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাবার জন্যই সেখানে থাকা। হোটেলটা ছিল পার্শিদের। ওরা আইন কানুন টু দ্যা পয়েন্ট মেনে চলে। একদিন স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে। সারে দশটায় পর নো মোর ডিনার এবং রুম সার্ভিস। দিলীপ কুমার অনেক অনুনয় বিনয় করাতেও হোটেল ম্যানেজার অনড়। সে ডিনার সার্ভ করবেন না। সচিন ভৌমিক লিখেছেন, আমি রেগে ম্যানেজারকে বললাম জানেন আপনি কাকে ডিনার সার্ভ করছেন না? উনি যদি একটা ফোন করেন মহাবালেশ্বরের প্রতিটি বাড়ির মায়েরা ওনার জন্য ডিনার রান্না শুরু করে দেবে!

যাই হোক ফ্রিজের জল খেয়েই দিলীপ কুমার ঘুমিয়ে পড়লেন। সকাল বেলা যা হবার তাই। ম্যানেজারের চাকুরী যায় যায়। হাজির হলেন হোটেল ফয়ারে দিলীপ কুমার। ম্যানেজারের ঘাড়ে হাত রেখে বললেন, হি ডিড দ্যা রাইট থিং। উনি ঠিক করেছেন। আমরা নিয়ম রক্ষা করিনি তাই শাস্তি পেয়েছি। প্লিজ ওর চাকুরী খাবেন না। মানুষটি যে কত বড় মাপের ছিলেন, যার ওনার সান্নিধ্যে এসেছেন তাদেরই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে। দিলীপ কুমার ছিলেন একজন কমপ্লিট জ্যান্টেলম্যান।

অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান এর সাথে দিলীপ কুমার

অভিনয়ের কথা যদি বলি, জয়া ভাদুরী তার ছেলে অভিষেককে বলেছিলেন অভিনয় যদি শিখতে চাও দিলীপজীর ছবি বার বার দেখো। অভিনয় শুধু ডায়লগ বলা নয়, চোখ, মুখ, হাত-পা সবই অভিনয়ের অংশ। আর অমিতাভ বচ্চনের অফিসে আপনি যদি যান দেখবেন “ব্ল্যাক” ছবিটি দেখে দিলীপ কুমার যে প্রশংসার চিঠিটি অমিতাভকে লিখেছিলেন সেটা দেয়ালে ঝুলছে, একটা দামি ফ্রেমে বাধানো।

লতা মঙ্গেশকার এক স্মৃতি চারণায় বলেছিলেন, আমার সাথে ইউসুফ ভাইয়ার যখন পরিচয় হয়েছিল তখন আমাকে কেউই চিনতো না, প্রথম দিনের দেখায়ই উনি বলেছিলেন, লতা তোমার গানের গলা খুবই ভাল তবে যদি টিকে থাকতে চাও একজন ভাল উর্দু শিক্ষক রেখে উচ্চারণ ঠিক করো। লতা মঙ্গেশকার ঠিক পরদিন তাই করেছিলেন।


এমন সব দুর্লভ মহৎ ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন পৃথিবী থেকে কমে যাচ্ছে। রোজ রোজ হয়না, অনেক অনেক কাঠখড় পোড়বার পর জন্ম নেন একজন দিলীপ কুমার। এই ছোট্ট লেখাটি তার বিদায় দিনে আমার শ্রদ্ধার্ঘ।






আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au




Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Jul-2021

Coming Events: