bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













বিশ্বাস করিনা, তবে ভয় পাই
আশীষ বাবলু



হারবার ব্রিজ দিয়ে যদি গাড়ি চালাতে গিয়ে তিন জন কালো কোট আর সাদা শার্ট পরা ভদ্রলোককে হাঁটতে দেখেন তবে সাবধান গাড়ি থামাবেন না। যদি ওনারা লিফট চায় বিনয়ী হয়ে গাড়ির দরজা খুলবেন না। আপনি যা দেখছেন ওরা তেমনটি নয়। আমি বলতে চাইছি ওনারা রক্তে মাংসে মানুষ নয়! আজকে থেকে ৮৭ বছর আগে (১৯৩২) হারবার ব্রিজ যখন তৈরির শেষ পর্যায়ে, তখন এই তিনজন দুর্ঘটনায় মারা যান। এর আগে ১৩জন ওয়ার্কার প্রাণ হারিয়েছেন এই ব্রিজ বানাতে, এবার যোগ হতে চলেছে আরও তিন জনের নাম। এতগুলো দুর্ঘটনা সিডনি-বাসী কতটা সহজ ভাবে নেবে সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। তারা ভাবছিলেন অনেকেই হয়তো ভয়ে অথবা কুসংস্কার বসত ব্রিজটি ব্যাবহারই করবে না। তখন ঠিক হয় এই তিনজনের মৃত্যুর খবর গোপন করা হবে। তাই তাড়াতাড়ি তিনটি মানুষের দেহকে পিলারের কংক্রিটের সাথে ঢালাই করে ফেলা হয়। এই তিনজন ছিলেন কনট্রাকটর। মৃত্যুর পর ‘রেস্ট ইন পিস’ বলে যে সব অনুষ্ঠান সাধারণত হয়, এদের বেলা সে সব কিছুই হয়নি। সারাদিনের ব্যস্ততার পর ব্রিজটা যখন শুন শান হয় তখন এই তিনজন কনট্রাকটর হাঁটতে বেড় হন। অমাবস্যার রাত হলে-তো কোন কথাই নেই!

আপনি কি ভুতে বিশ্বাস করেন? বলবেন ধুর! ভুত বলে কিছুই নেই। সব বাজে কথা। দিনের বেলা ভুত নেই বলে টেবিল চাপড়ানো খুবই সোজা। কিন্তু আমাবস্যার রাতে একা রুকউড সিমেট্রির গেটে দাঁড়িয়ে দু’লাইন রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে পারবেন? পারবেন না! আসল কথা হচ্ছে আমারা ভুতে বিশ্বাস করি না, তবে সবাই ভুতে ভয় পাই!

আপনাদের ভুতের গল্প শোনাবো বলে এই লেখা লিখতে বসিনি। তবে গতকাল মার্টিনপ্লেসে এমন একজন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে যে তার কথা ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমরা সবাই জানি বাংলাদেশের গ্রামে ভুতটুত কখনো সখনো দেখা যায়। আমি দশ বছর বয়সে আমাদের গ্রামে বাঁশ ঝাড় আর গাব গাছের মাঝখানের সরু কাঁচা রাস্তায় একটা সাদা লম্বাটে বেয়াদব ভুত দেখেছিলাম। সেখানটায় সেই ভুতটার বেয়াদবি এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে ভুত ছাড়ানোর ওঝা ডাকতে হয়েছিল। আমি গতকাল এমনই একজন ভুত ছাড়াবার ওঝার সাথে পরিচিত হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। মার্র্টিনপ্লেসের চত্বরে বসে যখন ভদ্রলোকের প্রফেশন কি জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তিনি আমাকে অবাক করে বললেন, ‘ভুতধরা’। ভুতের ওঝা (Paranormal Investigator) এই সিডনি শহরে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল! তবে আমাদের গ্রামের লম্বা চুল, মাথায় পাগড়ী, পরনে লাল জামা হাতে লাঠি এমন দেখতে ওঝা সে নয়। বয়স বছর তিরিশেক, ছোটো করে ছাটা চুল, বিজনেস সার্ট, বাদামি সুট, ঝকঝকে জুতো। তার মধ্যে নীল চোখ, এমন সুদর্শন ওঝার সাথে অনেক মেয়েরই প্রেম করতে ইচ্ছে হবে।

সিডনির মত শহরে ভুত ধরার প্রফেশন! মানে ভুত ধরে সংসার চালায়! আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন কোন বুকিং নিতে পারবেন না। বলছেন কি? এ শহরে এত ভুত আছে? হ্যাঁ আছে। ভদ্রলোক বেশ জোরেই বললেন। ভুতেরা বেশি শহরেই থাকে। এ শহর এককালে ক্রিমিনালে ভরা ছিল। ক্রিমিনাল থাকলেই ক্রাইম এবং হত্যাকাণ্ড। নৃশংস খুনের অনেক স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে আছে এ শহর। উনি বলছিলেন কোন বাড়িতে ভুতের খবর নেবার আগে প্রথমেই দেখতে হয় জমিটা কত দিনের পুরানো। সেখানে আগে কি ছিল। মানুষ নূতন সাবার্বে নতুন বাড়ি বানায় এবং অনেক আননেচারাল ঘটনার সম্মুখীন হয়। হাসির আওয়াজ, কারো হেঁটে যাবার শব্দ, হঠাৎ করে দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘরে বিনা কারণে অদ্ভুত একটা গন্ধ, আরও কত কি! বর্তমানে ক্যালিভিলে ভুতদের এ্যাক্টিভিটি সবচাইতে বেশি চলছে। প্রতিদিন ঐ অঞ্চলের মানুষ এক একটা অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। উনি বললেন কিছুদিন আগে একটা কল এ্যাটেন করতে গিয়েছিলাম ক্যালিভিলের একটা দোতালা বাড়িতে। বাড়ির নিচে চাইল্ড কেয়ার আর উপরের তলায় এক ভাড়াটে আত্মহত্যা করেছে। আমরা রাতে কয়েক ঘণ্টা সেখানে ছিলাম। কিছু থার্মাল ইমেজ (Thermal Image) নেবার চেষ্টা করেছিলাম। হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার বা দিকে কেউ নিশ্বাস নিচ্ছে, কানের কাছে ফিস ফিস করে কিছু বলার চেষ্টা করছে!

একটা বড় রকমের সমস্যায় পরে গেলাম। ছোট বেলায় ম্যাজিক বিশ্বাস করতাম, এখন এই বয়সে ভুত বিশ্বাস করতে হবে! কিন্তু উপায় কি? ভুত ধরার লোক আছে অথচ ভুত নেই, এ কেমন কথা!

কয়েক বছর আগে লন্ডনে আমরা যে হোটেলে ছিলাম, হোটেলের নামও মনে আছে, ল্যাং-হাম হোটেল, সে হোটেলের তিন তলায় ৩৩৩ নাম্বার রুমে যে থেকেছে সেই ভুত দেখেছে। জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখন কি কেউ থাকছে ঐ রুমে? বললো, কেউ নেই, কিছু সাহসী মানুষ ভুত দেখার জন্য কখনো সখনো থাকতে আসে ঐ রুমে। লন্ডন টাওয়ারে সাদা ড্রেস পরা ভুতটা যে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ায় সে কথা সবাই জানে। ব্যাপারটা শুধু বাচ্চারা দেখতে পায়। আর কেউ নয়। সেখানেই শুনেছিলাম ইউরোপের সবচাইতে বেশি ভুত থাকে লন্ডনে।

যাই হোক লন্ডন নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কাজ নেই, অস্ট্রেলিয়ার ভুতদের সম্বন্ধে আমাদের জানা বেশি দরকার। কেননা এই দেশটায় আমরা থাকি, আগে থেকে জানা থাকলে একটু সাবধান হওয়া যাবে। সেই ওঝা ভদ্রলোক বললেন, ভুতেরা মানুষদের ক্ষতি করতে পারেনা। আমরা মিছেমিছি ভয় পাই। বরং ওরাই মাঝে মাঝে মানুষের সাহায্য চায়। প্রেমিকের মৃত্যুর পর প্রেমিকা যখন বসে বসে কাঁদছে, প্রেমিকের ভুতটা তখন পাশে বসে বলছে, শাহানা, তোমার চোখের জল মুছে দিতে ইচ্ছা করছে, কিন্তু আমারতো সেই ক্ষমতা নেই! ভুতদের বড় দুঃখের জীবন। আমরা নাকি মাঝে মধ্যে ভুতদের সাথে কথা বলি কিন্তু বুঝতে পারিনা সে ভুত।

সিফোর্থ থেকে নারাবিন্ (Seaforth to Narrabeen) এই রাস্তাটায় অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আপনি হয়তো আনমনে গাড়ি চালাচ্ছেন, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে। হঠাৎ করে উইন্ড-স্ক্রিনের ওয়াইপারটা বন্ধ হয়ে গেল। গাড়ির দরজা লক হলো আবার খুলে গেল। রেডিওর ভলিউম বেড়ে গেল অথবা বন্ধ হয়ে গেল। এমন অনেক ঘটনা ঘটে ঐ রাস্তাটা দিয়ে গাড়ি চালালে। উনি বললেন, ওয়েকহার্সট পার্কওয়ের কাছে মিডিলটন ক্রিক ব্রিজে কেলি নামে একটা সুন্দরী ভুত আছে। সে সাদা ড্রেস পরে। অনেক মটর চালক তাকে হাঁটতে দেখেছে। সে কখনো মাথা নামিয়ে হাটে আবার কখনো ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে হেটে এগিয়ে আসে। তার চোখ করুন, তবে নির্লিপ্ত নয় জ্বল জ্বল করছে । মনে হয় কিছু একটা খুঁজছে। তবে ভাগ্য ভাল সেই রাস্তায় কোন ট্রাফিক লাইট নেই। কাউকে থামতে হয়না। তবে বড় রকমের অঘটন ঘটেছে তখন যখন কোন গাড়ি চালক হঠাৎ লক্ষ করেছে যে তার গাড়ির পেছনের সিটে কেলি বসে মুচকি মুচকি হাসছে! বেচারা ড্রাইভারের কি অবস্থা ভেবে দেখুন। ভুত প্যাসেঞ্জার নিয়ে গাড়ি চালাবার মত বুকের পাটা কয়জন ড্রাইভারের আছে?

ভুত মানে এই নয় যে যারা বেঁচে আছে তাদের ভয় দেখাতে তারা আসে। ভুতেরা কোন স্মৃতি বা ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হলে সেখানে বার বার ফিরে আসে। তবে সবাই দেখতে পায়না, ভাগ্যবান বা দূর্ভাগ্যবান কিছু মানুষ রয়েছেন যারা দেখতে পান। আমাদের এই নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেটেই ব্রিটেন থেকে কনভিক্টদের প্রথম নিয়ে আসা হয়েছিল। অনেক দুঃখ, অনেক অনুতাপ, হতাশার কাহিনী রয়েছে এই মাটিতে। ঔ মানুষগুলো মরেও কি শান্তি পেয়েছে?

কিছুদিন আগে একটা বাংলা নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল সিডনির বেলাভিস্টা ফার্ম হাউজে। সে জায়গাটি এককালে ভুতের ডিপো ছিল। এই ফার্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮০০ সালে। ফার্মের মালিক ছিলেন জন এবং এলিজাবেথ ম্যাকারর্থার। এইখানে সংগঠিত হয়েছিল নয়টি নির্মম হত্যা কাণ্ড। এখনো রাতে যদি আপনি সেখানে একা যান তবে অনুভব করবেন গা ছমছম করা একটা ব্যাপার। হয়তো শুনবেন এলিজাবেথ আপনাকে নাম ধরে ডাকছেন অথবা জন আপনাকে গল্পের বই পড়ে শোনাতে চাইছেন!

সেই ওঝা ভদ্রলোক আমাকে আরও অনেক ভুতের গল্প বলেছিলেন। মাঝরাতে বসে একা একা ঐসব ভুতের কথা লিখতে আমারই এখন ভয় করছে!




আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au




Share on Facebook               Home Page             Published on: 8-Nov-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far