গল্পপদ্মাবতী আশীষ বাবলু
পদ্মাবতীকে শুধু রূপসী বললে কম বলা হয়। সে প্রতিদিন সরোবরের শ্বেত পাথরে বাঁধানো ঘাটের শেষ সিঁড়িতে বসে স্থির জলের আয়নায় তার সুন্দর মুখখানা দেখতো। দিনের পর দিন এটা ছিল তার বাঁধা কাজ। একদিন সে এতই তন্ময় হয়ে নিজের রূপ দেখছিলো যে পা ফসকে পরে গেল গভীর সরোবরের জলে। হলো তার সলিল সমাধি। যেখানে সে তলিয়ে গিয়েছিলো ঠিক সেখানেই কিছুদিন বাদে একটা ফুল ফুটে উঠলো। পদ্মফুল। সেই থেকে এই সরোবরের নাম পদ্ম-দিঘি। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, কিন্তু হয়নি।
সেই সরোবরের পাশ দিয়ে একদিন বনদেবী যাচ্ছিলেন। তিনি ছিলেন পিপাসার্ত। সরোবরের টলটলে এক আঁজলা জল তিনি মুখে দিলেন। কি আশ্চর্য! জল এত লবণাক্ত কেন? এতে তো কান্না মিশে আছে! তিনি সরোবরকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কেঁদেছো? সরোবর বললো, হ্যাঁ। বনদেবী বললেন, নিশ্চয়ই পদ্মাবতীর জন্য! সরোবর বললো, হ্যাঁ। বনদেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, কতবার মেয়েটাকে বলেছি একা একা ঐ সরোবরের শেষ সিঁড়িতে বসে তুমি তোমার সুন্দর মুখখানা দেখোনা। দুর্ঘটনা ঘটবে। কিছুতেই কথা শোনেনি মেয়ে। সরোবর বনদেবীকে প্রশ্ন করলো, পদ্মাবতী কি খুব সুন্দরী ছিলেন? এমন একটা প্রশ্নে বনদেবী একদম চুপ হয়ে গেলেন। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললেন, এর উত্তর তোমার চাইতে বেশি কে জানে? ওতো প্রতিদিন তোমার দিকে মুখ করে একমনে বসে থাকতো! সরোবর একটু আনমনা হলো, ধীরেধীরে বললো, সত্যি তো দিনের পর দিন পদ্মাবতী আমার দিকে মুখ করে বসে থাকতেন অথচ ওর মুখখানাই আমার দেখা হয়নি! বনদেবী একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, তবে তুমি পদ্মাবতীর জন্য কেঁদেছো কেনো?
সরোবর বললো, আমি কেঁদেছি কারণ ও যখন হাঁটু গেড়ে চোখ মেলে এখানে বসে থাকতো আমি ওর চোখের গভীরে আমার নিজের রূপ দেখতাম, এখন তো আর নিজেকে তেমন করে দেখতে পারিনা!
গল্পটা এখানে এসে শেষ হলো।
(একটি গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে)
আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au
|