bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



একজন জুয়াড়ি পুত্রের গল্প
আশীষ বাবলু



পরের অংশ


সিডনির স্টার ক্যাসিনোতে দেখা হয়েছিল জনাব মুনির হোসেন চৌধুরীর সাথে। বছরে দু-এক বার আমাকে এখানে আসতেই হয়। দেশ থেকে কেউ এলেই বায়না ধরে ক্যাসিনো দেখার। সমরেশ মজুমদার, নির্মলেন্দু গুন এমন অনেককে নিয়ে আমি এখানে এসেছি। বলতে বাধা নেই পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গা আছে যা বর্ণনার অতীত। ক্যাসিনো হচ্ছে এমন একটি। আনন্দ বেদনার এক ধোয়াটে মেলা। এখানে অনেক টাকা জিতেও মানুষ আনন্দে লাফায় না, হেরেও কান্নায় ভেঙ্গে পরেনা। অথচ হার এবং জিত একই টেবিলে পাশাপাশি বসে আছেন। এটাই ক্যাসিনোর অদ্ভুত এ্যাটিকেট।

পাক্কা জুয়ারীদের সব চাইতে বড় গুন মুখের অভিব্যক্তি কন্ট্রোলে রাখা। ভাল কার্ড পেলে যদি চোখের তারায় আনন্দ ফুটে ওঠে তবে তার তাস খেলতে না বসাই ভাল। সেখানে সব সময় মুখ রাখতে হবে গম্ভীর। যেনো এই মাত্র স্ত্রীর মৃত্যু সংবাদ পেয়েছেন। কলেজ জীবনে আমরা যখন তিন-তাস খেলতাম সেখানে নুর রহমান ছিল সবচাইতে লাকি প্লেয়ার। ও ব্যাটা সবসময় হাসতো। মনে হতো ওর বগলে কেউ সুড়সুড়ি দিচ্ছে। কার বাবার সাধ্যি ছিল বোঝার নুরের হাতে ভাল কার্ড না খারাপ কার্ড !

জনাব মুনির হোসেন চৌধুরী মোবাইলে কথা বলছিলেন। খুবই নিচু গলায়। তবে যত নিচু স্বরেই কথা বলা হোকনা বাংলা-বর্ণমালা ইথার তরঙ্গে এমন একটা গুঞ্জন সৃষ্টি করে যে আশে পাশে কোন বাঙ্গালী বসে থাকলে তার এ্যান্টিনায় ধরা পরবেই। আমার চোখ যে বারবার তা’র দিকে যাচ্ছিল সেটা তিনি টের পেয়েছিলেন। টেলিফোন শেষ করে সোজা আমার কাছে হেঁটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, বাঙ্গালী?

আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি?

বাংলাদেশ, ঢাকা।

আমি ফরিদপুর। পুরান ঢাকায় বড় হয়েছি। করমর্দন করতে করতে দুজনের নাম বললাম।

কোথায় থাকেন? আমি জিজ্ঞেস করি।

হোটেলে। সাত দিনের জন্য এসেছি। আপনি?

এ শহরেই থাকি।

কতদিন ?

ত্রিশ বছর ।

ত্রিশ বছর! আমি তখন ক্লাস ফাইভ।

আমি যা ভেবে ছিলাম তাই। মুনির হোসেনের বয়স চল্লিশের বেশি হবেনা। ছেলেটি স্মার্ট। চুল থেকে পা পর্যন্ত পরিপাটি। পরনে স্যুট টাই। টাইয়ের রং ঝকঝকে রূপালি। ছাই রং এর কোটের সাথে বেশ মানিয়েছে।

কোনো ভনিতা না করে মুনির হোসেন আমার পাশের চেয়ারে বসলেন। ওয়েটার টেবিলে একটা বিয়ারের গ্লাস রেখে গেল। ভুলেই গিয়েছিলাম আমি ড্রিংস এর অর্ডার করেছিলাম। আমি বললাম আপনার জন্য কিছু অর্ডার করব ? একটু ইতস্তত করে উনি বললেন, ঠিক আছে একটা ঠাণ্ডা বিয়ার হতেই পারে।

খুব কাছে থেকে মুনির হোসেনকে দেখছিলাম। বেশ সুঠাম স্বাস্থ্য । দুটি সুন্দর উজ্জ্বল চোখ। গভীর। এ ধরনের চোখে অনেক গল্প থাকে। হাসিতে কোন ছল চাতুরী নেই। নির্ভেজাল। হাসিটি মুখের সাথে মানিয়েছে। গায়ের রং বাদামী, তবে চিনে বাদামের মত নয়, কাজু বাদাম। মাখন মাখন ভাব।

কেমন লাগছে সিডনি ? আমিই প্রশ্ন করলাম।

ভাল । ওয়েদার ফ্যান্টাস্টিক । এই বলে মুনির হোসেন কোটটা খুলে চেয়ারের কাঁধে রাখলেন।

কিছু দেখলেন সিডনির ?

না তেমন কিছু নয় । হোটেল থেকে ক্যাসিনো আসা-যাবার পথে গাড়ীর জালনা দিয়ে যতটুক চোখে পরে দেখেছি।

এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া ?

হ্যাঁ।

একটু বেড়িয়ে দেখুন, দেশটা ভাল।

সেটা আন্দাজ করতে পারছি। তবে আমি ঠিক দেশ দেখার অর্থে টুরিস্ট নই।

নিশ্চয়ই ব্যাবসায়িক কারণে এসেছেন ?

ঠিক সেটা নয়। সত্যি কথা বলতে, আমি এই জুয়া খেলতেই এ দেশে এসেছি।

এমন একটা উত্তরের জন্যে তৈরি ছিলাম না। বাংলাদেশের একটা ইয়াং ছেলে এতদূর সিডনিতে এসেছেন জুয়া খেলতে ! এবং সোজাসুজি সে কথা বলছেন। উত্তরটা শুনে আমার মুখের পরিবর্তনটা মুনির হোসেনের বুঝতে অসুবিধা হয়নি।

আসলে বাংলায় ‘জুয়া’ শব্দটায় একটা ছোটলোক ছোটলোক গন্ধ আছে তাইনা ? অথচ দেখুন আমাদের দেশের মানুষ প্রতিদিন জীবন যুদ্ধে এই জুয়া খেলছে। আমার মনে পড়ে গেল বুলবুল আহমেদের সেই বিখ্যাত ছবিটার নাম, জীবন নিয়ে জুয়া। আমি বললাম, এই জুয়ার জন্য এই সিডনি কেন ?

প্রতি বছরেই ইউএস এর লাসভাগাস যাই, ভাবলাম যাই এবার সিডনি। এক বন্ধুর বলছিল এখানে ভাল ব্যবস্থা আছে ।

কেমন হলো, কিছু জিতেছেন ?

হিসেব করিনি। যোগ বিয়োগের হিসেব করে কি জুয়া খেলা যায় ?

জুয়া খেলবো কিন্তু জিতবোনা , এটা কি কখনো হয়। মৃত্যুর মত জেতাটাই জীবনের শেষ টার্গেট।

জুয়া খেলাটা একটা আর্ট। মনির হোসেন মাস্টারি কায়দায় আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন। ছবি শুরু করার আগে শিল্পী জানেন না যে ছবিটি বার্থ হবে না মাস্টার পিস হবে। একটা ছন্দে, ধীরে ধীরে রং চড়িয়ে, কখনো নিয়ম মেনে কখনো নিয়ম ভেঙ্গে এগোতে হয়।

এমন করে জুয়া নিয়ে কখনো ভাবিনি। আমি বললাম।

ভাল গ্যাম্বলার সেই যে বুঝতে পারে কখন নিয়ম ভাংতে হবে। যেমন ক্রিকেটে ব্যাকরণ মেনে ছক্কা মারা যায়না। ওটা হচ্ছে টাইমিং।

দেশে আপনার নিশ্চয়ই ব্যবসা ? আমি জিজ্ঞেস করি।

না তেমন কিছুই নয়। দেশে আমি কিছুই করিনা। আব্বার হোটেলে।

আপনার আব্বার নিশ্চয়ই বিজনেস ?

বিজনেস ও বলতে পারেন পলেটিক্স ও বলতে পারেন।

আপনার আব্বার নামটা জানতে পারি ?

আমার প্রশ্ন শুনে মুনির হোসেন তা’র মুখের সাথে মানান সই মিষ্টি হাসিটা হাসলেন। বিয়ারের গ্লাসে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন, মনে কিছু করবেন না, নামটা আমি বলতে পারবোনা।

আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, সরি, এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন আমার করা উচিত হয়নি।

না না না সরি বলবেন না। পিতার নাম জিজ্ঞেস করা কোনো অন্যায় কিছু নয়।

এবার আমি কথা পাল্টাই। বলি, দেশের কথা বলুন, কেমন চলছে দেশ ?

ভাল। মিছিল মিটিং, হরতাল অনেকটা কমে এসেছে।

গরিবদের কি অবস্থা ?

ঠিক বলতে পারবো না, দেশে আমার ড্রাইভারকে দেখি গুন গুন করে গান গায়। গান যখন গাইছে নিশ্চয়ই ভাল আছে।

আমি একটু হেসে বললাম. গান যে কখন আসে তা কেও বলতে পারেনা। দেশে অনেক ভিক্ষুক আছে যার গান গেয়ে ভিক্ষা করে। সিনেমার নায়ক নায়িকারা দুঃখ পেলে গান গায় !

মুনির হোসেন হাসলেন। বললেন, আমাদের দেশে দুটো সম্প্রদায় আছে। ’হিরোস’ আর ‘জিরোস’। খুবই অল্প কয়েকজন হিরোস, অন্যদিকে ১৫কোটি জিরোস।

আমি সেই পুরনো রেকর্ড বাজালাম, এর জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছিল !

নিজের ইচ্ছায় কিছু করা আর আপনাকে দিয়ে কিছু করানো কি এক হলো ?

আপনি বলতে চাইছেন বাংলার মানুষদের দেশ স্বাধীন করার কোন ইচ্ছাই ছিলনা ?

না, মনির হোসেন বেশ শক্ত কণ্ঠে বললেন। ক্ষুধার্ত মানুষ গুলোকে বলা হয়ে ছিল দেশ স্বাধীন হলে দু’বেলা খেতে পারবে। ওদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল।

কথাটাতো ভুল নয়।

পঞ্চাশ বছর হতে চললো তার নমুনা তো দেখছেন । যা’রা দেশের অর্থনীতি চালাচ্ছে, যাদের ভরসায় আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের লম্ফঝম্ফ করছি, তারা হলো গার্মেন্টস আর বিদেশে বসবাসরত শ্রমিক। এরা বেঁচে থাকার জন্য যে কি অমানবিক জীবন কাটাচ্ছে তার কিছুটা আমি দেখেছি। তবে স্বাধীনতার স্বপ্ন যারা দেখিয়েছিলেন অর্থাৎ নেতারা একজনও কি অভাবের মধ্যে আছেন?



পরের অংশ







Share on Facebook               Home Page             Published on: 18-Jan-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far