bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













সেন্ট্রাল স্টেশনের প্লাটফর্মে একদিন
আশীষ বাবলু



এতটা দৌড়ে এসেও তিনটা পঁয়ত্রিশের ট্রেনটা ধরা গেলনা। ত্রিশ মিনিট এখন বসে থাকতে হবে। সেন্ট্রাল স্টেশনে এই সময়টায় খুব একটা লোকজন নেই। কোনার বেঞ্চটাতে একটা খালি জায়গাও পাওয়া গেল। এখন বসে বসে অপেক্ষার পালা। ইদানীং কারো অপেক্ষা করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি - সে সব দিন এখন গেছে। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বেড় করে টেপাটেপি করলে কারো আশায় থাকার প্রশ্নই আসেনা! কোথা দিয়ে সময় কেটে যায়। তবে আজকে আমি মোবাইল নিয়ে সময় কাটাতে পারবো না। ব্যাটারি প্রায় শেষ দাগে। যেটুকু আছে স্ত্রীর জন্য যত্ন করে রাখা। এই সময়টায় সাধারণত তা‘র কাছ থেকে দুধ, চিনি অথবা গোল-আলু নিয়ে বাসায় ফেরার অর্ডার আসে। ব্যাগে নিউজ পেপার, বই, কিছুই নেই। এখন কী করে সময় কাটাবো আমি! ভাবলাম মানুষ গোনা যাক, অথবা ক‘জন টেলিফোন নিয়ে ব্যাস্ত তার একটা সমীক্ষা করা যাক।

ষ্টেশনে এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে ত্রিশ জন মানুষ। পঞ্চাশ ভাগ মধ্য বয়স্ক। জীবনের অর্ধেকটা পেড়িয়ে এখন দাড়িয়ে আছে নেক্সট ট্রেনের অপেক্ষায়। সিঁড়ির কোণে দুটি স্কুলের ছেলেমেয়ে। একটি মোবাইলেই দুজনের চোখ আটকানো। আমার পাশে বসা আইল্যান্ডার ভদ্রলোক বার্গার শেষ করে আইসক্রিম ধরেছে। ফুল-ছাপ জামা পরা উনিশ কুড়ি বছরের মেয়েটি টেলিফোনে খিলখিল করে হাসছে। যৌবন হলো জীবনের কোকিল, কুহু তানে ভরা। এমন চোখে বসন্ত খেলা করে। আমার সোজাসুজি যে হালকা নীল ব্যাগ কাঁধে সোনালী চুল স্মার্ট মধ্য বয়সী মহিলাটি তা‘র হাতেও টেলিফোন। মহিলার নীল জামা, নীল ছাতা, এমনকি পাদুকাও নীল, আকাশের সাথে বুঝি খেলা হবে। জীবনানন্দ বলেছেন, নারী তুমি অর্ধেক আকাশ! মনে হচ্ছে আমি আর বার্গার ভদ্রলোক ছাড়া সবাই টেলিফোন নিয়ে ব্যাস্ত। এতো লোকের মধ্যেও নিজেকে মনে হচ্ছে একা। টেলিফোন ছাড়া মানুষ আজকাল বড় অসহায়। শহরে টেলিফোন হীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে!
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সেই নীল স্মার্ট মহিলাটি ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। মহিলাকে আমি যা ভেবেছিলাম তা‘র চাইতেও বেশি সুন্দরী। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললাম। এই সব সিচুয়েশনে সিনেমার নায়করা ধুত-তরিকা বলে এগিয়ে যায়। আর আমি ভাবছি আমার এই আদমশুমারি জাতিয় কাজ কারবার ভদ্রমহিলার ভাল লাগেনি। একি! ভদ্রমহিলা দেখছি আমার দিকেই আসছে। খাইছে ড্ইানো আইছে!

মহিলা আমার কাছে এসে মিষ্টি করে বললেন, ‘তোমার নাম কি আশীষ?’ পায়ের তলায় মাটি পেলাম। এবার মুখের দিকে তাকালাম। মহিলা আমার নাম জানে, আমাকে চেনে। আমি যে বাংলাদেশের পোলা ভুলে গেলাম, নিজেকে মনে হচ্ছিল আলেক্সজান্ডার। আস্তে করে বললাম ‘ইয়েস’। এবার মহিলাটি একটা শক্ত প্রশ্ন করলেন।

‘ডু ইউ রিমেম্বার মি?’

স্মৃতির পাতা উল্টাতে লাগলাম। কোথায়? এই নীল চোখ, এই ঠোঁট, এই হাসি, এই হাই হিল, কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না।

মহিলা আবার বললেন, ‘ট্র্ইা টু রিমেম্বার।’ তাকিয়ে রইলাম মহিলার নাকের বিন্দু বিন্দু ঘামের দিকে। চক্ষু লজ্জার বয়স আর নেই, সময়ও নেই। এমন সুন্দরী একজন মহিলার সাথে ট্রেন ষ্টেশনে দেখা হলো অথচ রবীন্দ্রনাথের কবিতার মত বলতে পারছিনা - আকাশের সব তারারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে। তারাকেই মনে করতে পারছিনা, আকাশ দিয়ে কী হবে! কি যন্ত্রণা! কি যন্ত্রণা!

এবার সুন্দরী বললেন, ‘ডু ইউ রিমেম্বার স্টুয়ার্ট?’ এখনো আমার মুখে কোনো পরিবর্তন নেই। নিজেকে গোল্ড ফিশ মনে হচ্ছে। কিছুই মনে রাখতে পারিনা। নিজেকে কসিয়ে একটা চড় দিতে ইচ্ছে করছে।

এবার মহিলা বললেন, ‘স্টুয়ার্ট হোয়াইট।’ মনে হলো কেউ আমার মাথার পেছনে একটা চাটি মারলো। আমি বললাম, ‘ ইয়েস, স্টুয়ার্ট হোয়াইট, ক্যেলগস্ কোম্পানি।’ মহিলা বললেন, ‘ইয়েস’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘উনি কেমন আছেন?’

‘ভাল আছে, এখন থাকে মেলবোর্ন।’

এতক্ষণে উল্টো দিকের প্লাটফর্মে ট্রেন এসে গ্যাছে। দ্যাটস মাই ট্রেন - বলে মহিলা এগোলেন। স্টুয়ার্টকে চিনলেও এই মহিলাকে তখনও আমি চিনিনি। এবার সুন্দরী মুখ ঘুড়িয়ে বললেন, ‘আমি লোরেন, স্টুয়ার্টের বোন।’ ট্রেন ছেড়ে দিল, লোরেন আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে।

আমি স্টুপিডের মত দাড়িয়ে রইলাম। এমন সুন্দর একটা হাসি ভুলে গেলাম কী করে? আমার মতো ভুলো মনের মানুষ পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য। এই সুন্দর পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর তা‘ ভুলে যাওয়া পাপ।

চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটা ঘটনা। ২০ বছর আগের কথা। মনে হচ্ছিল এইতো সেদিন। তখন আমার বন্ধু বান্ধব বলতে সহকর্মীরা। আমাদের ফোরম্যান স্টুয়ার্ট ছিলেন ইংল্যান্ডের মানুষ। খুব ইন্ডিয়ান ফুড খেতে পছন্দ করতেন। মাঝে মাঝেই চলে আসতেন আমার ছোট্ট ফ্লাটে চিকেন-কারী খেতে। একসময় দেখলাম ওর খুব কাছের বন্ধু হয়ে গেছি আমি। ওর জীবনের অনেক কাহিনীই আমার জানা। ইংল্যান্ডে ওর যে একটা বৌ ছিল সেটা সহকর্মীদের মধ্যে শুধু আমিই জানতাম। যাইহোক, সেই স্টুয়ার্টের ফ্লাটে একবার খ্রীসমাস পার্টি হয়েছিল। সেখানেই প্রথম দেখেছিলাম লোরেনকে। ঐ ফ্লাটে একটা বড় বারান্দা ছিল। তাই প্রায় ২৫জন মানুষের হৈ হল্লা করতে কোন অসুবিধা হয়নি। নাচ-গান, লাউড মিউজিক আর ড্রিংকস-এর বন্যা। সে এক মাতাল করা পার্টি। পার্টি কত রাতে শেষ হয়েছিল মনে নেই, তবে অনেকেই বাসায় ফিরে যায়নি। আমিও না। সকালে যখন ঘুম ভেঙ্গেছিল তখন নিজেকে আবিষ্কার করেছিলাম লোরেনের সাথে একই সোফায়। আমাকে খুব সন্তর্পণে লোরেনের বাহু বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠতে হয়েছিল। লোরেন তখনও ছিল গভীর ঘুমে।

মেয়েরা দেখছি কিছুই ভোলেনা।



আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au




Share on Facebook               Home Page             Published on: 21-Nov-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far