bangla-sydney













বঙ্গবন্ধুর সাথে সেলফি
আশিষ বাবলু



তখন কোন মিছিল হলেই শেষ হতো ৩২ নম্বরে। আমি যে সময়টার কথা লিখছি সেটা সম্ভবত ৬৯/৭০ সালের কথা। পড়তাম পগোজ স্কুলে। প্রাচীর টপকালেই জগন্নাথ কলেজ। তখন সেখানে ছাত্র লিগের নেতা ছিলেন রেজা ভাই। আমারই মতো ফরিদপুরের। উনি ছিলেন লম্বায় চওড়ায় বিশাল। কথা বললেই মনে হতো বক্তৃতা দিচ্ছেন। যে কোন কারণে ধর্মঘট হলেই তিনি কিছু ছেলেপেলে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে চলে আসতেন আমাদের স্কুলে। আমরাও হ্যামিলিয়নের বংশী বাদকের মত তার পেছনে পেছনে ‘মানিনা’ ‘দিতে হবে’ ‘মানতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে নেমে আসতাম রাস্তায়। এই মিছিল গুলো শেষ হতো আগেই লিখেছি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।

আমরা সোজা চলে যেতাম সে বাড়ির ড্রইং রুমে। গেটে দারোয়ান থাকতো কিনা আজ মনে নেই, নিশ্চয়ই থাকতো তবে কোন দিন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। ছিল অবারিত দ্বার। ড্রইংরুম শব্দটা শুনে ভাববেননা সোফা সেট, মেহগনি কাঠের কফি-টেবিল, মেঝেতে কার্পেট দিয়ে সাজানো একটা রুম। তা নয় আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে সে আমলে যেমন বার্নিশ-হীন টেবিল, রংচটা বেশ ক‘খানা অমিল চেয়ার থাকতো অনেকটা তেমন। অথচ ভুলে যাবেন না বঙ্গবন্ধু এর কিছু বছর আগে পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন। যাইহোক বঙ্গবন্ধু সেই ঐতিহাসিক সিঁড়ি দিয়ে লুঙ্গি পাঞ্জাবি গায়ে নেমে আসতেন। আমাদের ফুলপ্যান্ট পরা ছাত্র নেতারা প্রবল উচ্ছ্বাসে তার কাছে নালিশ জানাতো। তিনি তাদের পিঠে হাত দিয়ে কিছু বলতেন। আমরা হ্যাপপ্যান্টওয়ালারা অপেক্ষা করতাম কখন শ্লোগান দিতে হবে। এর মধ্যে কয়েক জগ ঠাণ্ডা পানি চলে আসতো। কিছু মেরী বিস্কুট আর কয়েক বাটি মুড়ি আর গুড়। বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথে একই বাটিতে মুড়ি তুলে মুখে দিতেন, বলতে পারেন অনেকটা পার্সোনাল মিটিং। সে সময় কি দুর্ভাগ্য আই-ফোন ছিলনা, সেল্ফি তোলা হয়নি। তবে আজ ঐসব ছবি আপনাদের দেখিয়ে তাজ্জব বানিয়ে দেয়া যেতো।

এখানে বলে রাখা ভাল ঐসব মিছিল এতটা পথ পেড়িয়ে যখন ঐ বাড়িতে এসে পৌঁছাত তখন ১৫/২০ জনের বেশী টিকতোনা। কতবার যে ৩২ নম্বরে গেছি কী বলবো। এখনো মনে আছে আমাদের স্কুলের ইংরেজি স্যার তার পার্সোনাল কোচিংএ ভর্তি না হলে ইংরেজিতে ফেল করিয়ে দিতেন, সেই নালিশ জানাতেও একবার বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম!

আজকে এই লেখা লিখতে বসেছিলাম বেশকিছু বইপত্র ঘেঁটে একটা মোটা-দাগের কিছু লিখবো বলে। হঠাৎ মনে হলো আমিতো অসংখ্য বার এই মহীরুহের কাছাকাছি এসেছি, সে স্মৃতিই একটু ঝালাই করে দেখা যাক!

আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর জীবনে জেল ছিল তার সেকেন্ড হোম। গভর্নর মোনায়েম খানতো প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যতদিন আমি গদিতে থাকবো ততদিন শেখ মুজিব থাকবে জেলে। সেই ছয় দফা দাবি পেশ করার পর থেকে পাকিস্তান সরকারতো তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার লাইন লাগিয়ে দিয়েছিল। কিছুতেই তাকে ধরাশায়ী করতে পারছিলনা। শেষ অস্ত্রটি ছাড়া হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার মামলা। মোটামুটি প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসী অথবা ফায়ারিং স্কোয়াড। প্রধান আসামী শেখ মুজিব ছড়াও সেই মামলায় আসামী ছিলেন মোট ৩৫ জন। সাক্ষী ছিলেন ২৩২জন। একটি মিথ্যা মামলা কী পরিমাণ ছক কসে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল আজ ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। ঢাকার আকাশে তখন একটাই স্লোগান, জেলের তালা ভাঙ্গবো শেখ মুজিবকে আনবো।

অবশেষে ছাত্র জনতার আন্দোলনে শেখ মুজিব মুক্তি পেলেন। স্লোগান বদলে হলো, জেলের তালা ভেঙ্গেছি শেখ মুজিবকে এনেছি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ৬৯ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জেল থেকে মুক্ত শেখ মুজিবকে সংবর্ধনা দিয়েছিল, তোফায়েল আহমেদ দিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে সেখানে উপস্থিত আমিও ছিলাম। স্টেজ থেকে খুব বেশী হলে মাত্র দশ গজ দূরে দাড়িয়ে কাঠি দিয়ে কদবেল খেতে খেতে সেই দৃশ্য আমি দেখেছি। উপাধি-তো কত মানুষকেই দেয়া হয়, তখন কে বুঝতে পেরেছিল এই ভদ্রলোক বাংলার মানুষের সাথে এই বন্ধুত্বের দাবী মেটাতে নিজের জীবন দান করে যাবেন। কে বুঝতে পেরেছিল এই মানুষটি নতুন করে লিখবে বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস।

একটা তথ্য আপনাদের দিচ্ছি, আমরা জানি সেই মঞ্চে কমরেড মনি সিং কেও সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কিছু নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোকেও সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিল! কত ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়।

সেই সময় নেতাদের এত সিকিউরিটি গার্ডের বালাই ছিলনা। আমি পুরানো ঢাকার ছেলে আর ৭১এর নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ঢাকা শহর তখন এতটা ফুলে ফেঁপে ওঠেনি। হাঁটা দিলেও এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাওয়া যেত। নির্বাচনের ২/১ দিন আগে বঙ্গবন্ধু পুরাণ ঢাকায় এসেছিলেন। বর্তমানে নেতারা যেমন গাড়ি থেকে নেমে তার জন্য নির্ধারিত দুইতলা মঞ্চে ওঠেন তারপর ভাষণের নামে মাইকে চিৎকার করে মুখস্থ কিছু বলে অদৃশ্য হয়ে যান ঠিক তেমনটি নয়। তিনি হাঁটছিলেন পুড়ানো ঢাকার রাস্তায়। পাখির পালকের মত ধবধবে পাজামা পাঞ্জাবি পরে প্রচণ্ড প্রত্যয়ে ভরা মাথা উঁচিয়ে হাসি মুখে হাঁটছিলেন। মোটা চশমার কাচের ভেতর দুটি স্বপ্নময় চোখ। সাথে গোট ৩০/৪০ জন সহকর্মী। রাস্তার দুপাশে অজস্র মানুষ আর জানলায় দরজায় মা-বোনেরা দেখছিল সেই প্রবল পুরুষকে। আমি ভিড় ঠেলে কখন বঙ্গবন্ধুর পাশে চলেগেছি সেটা নিজেই বুঝতে পারিনি। অনেকটা পথ হেঁটেছি তার গা ঘেঁসে। দৃশ্যটা কল্পনা করুন, হিমালয় পর্বত হাঁটছে সঙ্গে শাল পিয়ালীর বন, তার সাতে নাম গোত্রহীন অতিশয় দীন আমার মত একজন। তবে একটা কথা বলি তখন অল্পবয়সী কেউ মিছিল মিটিং এ গেলে একটা গৌরবের ব্যাপার হতো। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিত না। সেলফির প্রসঙ্গ এখানে তুলছি না। অনায়াসে গোটা দশেক তোলা যেতো!
পরদিন ইত্তেফাকে ছবি বের হলো বঙ্গবন্ধু ঢাকার রাস্তায় ভোটের ক্যাম্পিং করছেন। সেই ছবিতে আমিও ছিলাম। বন্ধুদের দেখালাম চেক শার্ট পরা ছেলেটা আমি। কেউই চিনতে পারছিলনা। কি করা যাবে, প্রচণ্ড সূর্যের পাশে সবাইকেই অচেনা লাগে!

শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয়, তোমার ভেতর চন্দ্র সূর্য তোমার ভেতর এক লক্ষ তারা। পৃথিবীতে দুই ধরনের নেতা আছেন। এক হলো যারা ক্ষমতায় যাবার ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি করেন। আরেক হলো যারা মানুষের মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারেন। এরা হলেন বিরল প্রজাতি। বঙ্গবন্ধু এমনই একজন। বাংলাদেশের মানুষের কথাই ধরুন, আমাদের কাছে অধিকার, মুক্তি, স্বাধীনতার সংজ্ঞাই জানা ছিল না। তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুষের মাথায় ‘স্বরাজ’ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন।

আরেকটা দিনের কথা উল্লেখ করেছি। আমার সেদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হবার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। দিনটি ছিল ১লা মার্চ ১৯৭১। আসম আব্দুল রব ছিলেন সেদিন দুপুর বেলা জগন্নাথ কলেজে। ঢাকা শহর তখন থমথমে। ‘রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই’ - সেই সময়ের কথা। রব ভাই ভীষণ চিন্তিত। তার হাতে একটা ছোট্ট ট্রানজিস্টার রেডিও। কলেজের মাঠে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে শ‘দুয়েক ছাত্র হবে। তিনি কানে চেপে আছেন রেডিওটা। ঢাকা বেতারের দুপুরের খবরে প্রচারিত হলো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মার্চের তিন তারিখ জাতিয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করেছেন। রাগে উত্তেজনায় ফেটে পড়লো আব্দুল রব সহ উপস্থিত সবাই। বের হলো মিছিল ঢাকার রাস্তায়। আমার সাথে সহপাঠী শাহাদাৎ হোসেন (বর্তমানে সিডনি প্রবাসী)। আমরা গলা ছেড়ে চেঁচাচ্ছি, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। ক্ষোভে ফেটে পড়ছে সবাই। মিছিলের শুরুতে ছিল শ-দুয়েক মানুষ তবে যখন মিছিল নওয়াবপুর রোডের মাঝপথে তখন জনতা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। সঙ্গী শাহাদাৎ-এর পায়ের একপাটি স্যান্ডেল গেল ছিঁড়ে। ও রাগের মাথায় দু পায়ের স্যান্ডেল ছুড়ে দিল আকাশে। স্লোগান উঠলো, ইয়াহিয়াকে জুতা মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আর যাই কোথায়! শাহাদাৎ এর দেখাদেখি অনেকেই আকাশে জুতা ছুড়তে লাগলো। নওয়াবপুর রোডে তখন জুতার বৃষ্টি। দুপুরের তপ্ত পিচের রাস্তায় সাহাদৎ সহ আনেকেই খালি পায়ে হাঁটছে। ওটাই ছিল মুক্তিবাহিনী ট্রেনিং এর প্রথম পাঠ।

আমি গলায় যত শক্তি আছে তা‘দিয়ে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে কে আমার কলার ধরে টান দিল। পেছন ফিরে দেখি আমার বাবা। সেখানেই আমার মিছিলের ইতি টানতে হলো। মিছিল এগিয়ে গেল ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে, আমার সে যাত্রায় আর যাওয়া হলোনা!

এখানে একটা কথা বলে রাখি বর্তমানের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সে আমলের জগন্নাথ কলেজ ছিল ছাত্র আন্দোলনের পুরোধায়। প্রথম পতাকাবাহী। অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। অনেকে হয়তো আমার সাথে একমত হবেন না, একটু ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যাবে কথাটা সত্যি।

এরপর বঙ্গবন্ধুকে দেখেছিলাম সেই ঐতিহাসিক দিনে। ক্যালেন্ডারে যে দিনটি স্বাক্ষরিত বাঙ্গালি জাতির নামে। ৭ই মার্চ ১৯৭১।

ঢাকার অবস্থা তখন খুবই থমথমে। মাঝে মধ্যে গোঙ্গানির মত আওয়াজ তুলে আকাশে হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছে। রাস্তায় ট্র্যাক ভর্তি পাকিস্তানি সৈন্য হায়েনার মত জ্বল জ্বল চোখে তাকাতে তাকাতে কোথায় যাচ্ছে কেউ জানেনা। রেডিওতে বাজছে তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। ঢাকা শহরের মত আমাদের বাড়ির অবস্থাও সুবিধার নয়। আমার বাবা সহ প্রতিবেশী চাচারা গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। পাকিস্তান কি সহজে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নেবে? এর মধ্যে কোথা থেকে খবর এলো এই জনসভায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়বে। নির্বিচারে গুলি চালাবে। বাবা আমাকে ডেকে বললেন, একদম বাইরে যাবে না। আমি যেনও গেটের বাইরে তোমাকে না দেখি। মাথা নামিয়ে লক্ষ্মী ছেলের মতো ঘাড় নেড়ে বাবার কথার সম্মতি জানালাম।

যথারীতি দুপুর হলো। পাশের বাড়ির দারোগার ছেলে রণজিৎ বিশ্বাস আমার জন্য অপেক্ষা করছে হানিফ টেইলরের দোকানে। হানিফ তখন শার্ট প্যান্ট বানানো বন্ধ করে রাত্রি জেগে বাংলাদেশের মানচিত্র ওয়ালা পতাকা তৈরি করছে। আমি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে গেলাম। দুটো ফ্ল্যাগ ধার করলাম যে মিটিং থেকে ফিরে তাকে ফেরত দিয়ে দেবো। ধার করতে হলো কেননা ফ্ল্যাগ কেনার মত...


পয়সা ছিল না। আমরা দুইজন রাস্তায় নামলাম। বাংলাদেশে যে এত মানুষ আছে আমাদের ধারনা ছিল না। পিঁপড়ের মত মানুষ। সবার গন্তব্য রেসকোর্স ময়দান। আমাদের বুকের মধ্যে তখন হাজারো পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে। একটা ঘোরের মধ্যে পৌঁছে গেলাম রেসকোর্স ময়দানে। এই উত্তাল জনতার বর্ণনা দেবার মত শব্দ-গুচ্ছ অন্য ভাষায় আছে কিনা আমার জানা নেই তবে বাংলা ভাষায় নেই! একে ওকে ঠেলে স্টেজের অনেকটা কাছে চলে গেলাম। বয়স কম থাকার এই একটা সুবিধা। বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। একটা সাদা মার্সিডিজ মঞ্চের একটু দুরে এসে থামল। গাড়ী থেকে নেমে এলেন বঙ্গবন্ধু। স্থির দুটি চোখ। ঐ চোখ গত কত রাত যে ঘুমহীন শুধু তিনিই জানেন। কোন দিকে না তাকিয়ে ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে হেঁটে গেলেন আমাদের খুব কাছ থেকে। পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন এবার সেলফির কথা মাথায় এলোনা? সত্যি করে বলছি তখন বঙ্গবন্ধুর চোখ মুখের যা অবস্থা, এমন গম্ভীর বঙ্গবন্ধু আমি কখনো দেখিনি। যদি তখন আই ফোনও থাকতো, পৃথিবীর কোন বাপের বেটা জন্মায়নি সে সময় সাহস করে তার সাথে সেলফি তোলে!

উনি মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। তার বাংলাদেশের মানচিত্রের মত বড় বিশাল বুকে একটা নিঃশ্বাস নিলেন। ডায়াসে চশমা খুলে রাখলেন। খালি চোখে তিনি জন সমুদ্রের দিকে তাকালেন। হাতে কোন চিরকুট নেই। তখন কে বুঝতে পেরেছিল তিনি এমন একটি ভাষণ দিতে চলেছেন যা বাঙ্গালী জাতীর কোন দিন ভুলে যাওয়া সম্ভব হবেনা। ভাষণের প্রথম বাক্যটি শুনুন, কোন উত্তেজনা নেই। গম্ভীর কণ্ঠে, ভাইয়েরা আমার, বড় দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। তিনি প্রত্যেকটি কথার পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন। প্রশ্ন করেছেন দোষ কি আমাদের? পাকিস্তানি সৈন্যেরে বললেন, তোমাদের ভাতে মারবো, পানিতে মারবো। তার পরেই বলেছেন তোমরা আমার ভাই ব্যারাকে ফিরে যাও। তোমাদের কোন অসুবিধা হবেনা। আমার ভাইদের বুকে গুলি চালাবার চেষ্টা করোনা। তিনি জনগণকে একটা প্রশ্ন করলেন, তোমাদের আমার উপর বিশ্বাস আছে? সেই প্রশ্নের উত্তরে ‘আছে’ বলে ফেটে পরেছিল সেই জন সমুদ্র। এই ভাষণের একটা বাক্য জনগণের মধ্যে হাহাকার হয়ে বেজেছিল, যখন তিনি বললেন, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি...।

আমেরিকার উপন্যাসিক স্কট ফিট-জেরল্ড একবার বলেছেন, আমাকে একজন হিরো দেখাও, আমি তোমাদের একটা দুঃখের কাহিনী লিখে দেবো। পাকিস্তানী কারো হাতে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হলে এতটা দুঃখ হতনা যখন ভাবি যে মানুষটি বাঙ্গালিদের জন্য এতটা করে গেছেন, সেই বাঙ্গালীদের হাতে তার মৃত্যু হলো। বাঙ্গালী হিসেবে নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে ইচ্ছা হয়না। মুজিবর তুমি নাকি বাংলার সবচেয়ে আদরের ছেলে, বাংলাকে ভালবেসে কি করুন প্রতিদান পেলে।




আশীষ বাবলু, সিডনি, ashisbablu13@yahoo.com.au


Share on Facebook               Home Page             Published on: 27-Apr-2022

Coming Events: