bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে
আশীষ বাবলু

‘ভ্যালেনটাইন ডে’। না বাবা, ভালবাসাকে ভালবাসাই থাকতে দাও, অন্য একটা নাম দেবার কি দরকার আছে ? লেবুর বদলে ‘ভিটামিন সি’ খাওয়া কি এক ব্যাপার হলো ? ইদানীং ভ্যালেনটাইন ডে নিয়ে মাতামাতি দেখলে মনে হয় এই জেনারেশনই ভালবাসা বোঝে, আমাদের কালে এই বস্তুটি ছিলনা। তাদের বলে দিতে চাই প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা ‘ভ্যালেনটাইন ডে’ আসে। আমরা হলাম প্রেম করেছি পথে পথে বিয়ে করেছি বাবার মতে জেনারেশন। তবে এটা ঠিক, এখনকার মত প্রত্যেক বছর বছর ভালবাসা দিবস হয়ত আমাদের জীবনে আসতো না। তবে প্রেমিক থেকে স্বামীতে রূপান্তর হবার প্রক্রিয়া আমাদের চাইতে বেশি কে জানে ! মার্কসের ভাসায় যাকে বলে, ‘হ্যাভস’ থেকে ‘হ্যাভস নট’।
পুরুষের ভেতর থেকে প্রেম বেড় করে নিলে যা পড়ে থাকে তার নাম ‘স্বামী’। আমার এই রূপান্তরের গল্পটাই আপনাদের করকমলে পেশ করছি।
প্রথম দেখা দিয়েই শুরু করছি, আমার স্ত্রীর সাথে বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে গীতিতে দোল খাওয়া একটি বাঙ্গালী অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা হয়েছিল। আমি ওর দিকে তাকালাম, ও আমার দিকে তাকালো। না তাকালে দেখা হল কি করে ? পাঠক অনুগ্রহ করে আমাকে এমন প্রশ্ন করবেন না। আমরা একটা সেন্সেটিভ ইস্যুতে প্রবেশ করছি। এই তাকানো তথাকথিত তাকানো নয়। ভোরের নীল আকাশ মাঝে মাঝে মানুষের দিকে এমন করে তাকায়। দুজনে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। শেষ বিকেলের কামরাঙ্গা রোদ ওর দীর্ঘ কালো চুলে এবং গাছের পাতায়। বাংলা সিনেমা যারা দেখেন তাদের পক্ষে এই দৃশ্য কল্পনা করা অসুবিধা হবে না। সংলাপ ছিল অনেকটা এই রকম।
- আপনি সিডনিতে নতুন এসেছেন বুঝি ?
- এইতো এক মাস হয়েছে।
- কোথায় থাকেন ?
- মেডোব্যাং।
- আপনি ?
- ওয়েন্টওয়ার্থ ভিল। চেনেন ?
- না চিনিনা।
নীরবতা। এরপর কি বলা যায় ? আমারতো জীবনানন্দের ভাষায় বলতে ইচ্ছা করছে, এতদিন কোথায় ছিলেন ? তবে এমন কথাতো শুরুতে বলা যায়না । তবে কথা এগিয়ে নিতে আবহাওয়ার প্রসঙ্গ হচ্ছে নির্ভরযোগ্য।
- দিনটা বেশ সুন্দর তাইনা ?
- গতকাল আকাশ দেখে মনে হয়েছিল আজ বৃষ্টি হবে।
- ভালই হয়েছে, বৃষ্টি হলে এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে কথা বলা হতোনা।
- আকাশে মেঘ করে, রংধনু ওঠে তবে আকাশ আকাশই থাকে।
- আমি একটা ঝড়ের আভাস পাচ্ছি।
- ঠিকানা রেখে দিন।
- তার মানে ?
- জানেন না ? ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা।
তারপর ধীরে ধীরে বেশ কিছুদিন পেরিয়েছে। পূর্বাভাষ সত্যি হলো। ঝড় এলো। ভাসিয়ে নিয়ে গেল প্লাবনে। ভেবেছিলাম এমন ভেসে ভেসেই কাটবে জীবন। আমাদের একটা ভাসা ভাসা জীবন হবে। তিলোত্তমা সিডনির পথে পথে, ডি-ওয়াই থেকে বন্ডাই, ম্যাকডোনাল্ড থেকে ইন্ডিয়ান, ওয়েষ্টফিল্ড থেকে ঢাকা মার্কেট, ঘুরে ঘুরে বেড়ানো। কত সুখের স্মৃতি, অল্প কথায় বোঝাতে হলে বলতে হয়, ‘নাইলনের শাড়ি পাইলট পেন, উত্তমের কোলে সুচিত্রা সেন’।
কোলে বসেতো আর জীবন কাটেনা। প্রাথমিক এই এ্যাকশনটাকে মনস্তাত্তিকবিদ্যায় বলা হয় ‘ইডিও মিডর’ এ্যাকশন। এটা অনেকটা ডাক্তার রোগীকে যখন ইনজেকশন দেন পাশে যে দাড়িয়ে থাকেন তাঁর অবস্থা লক্ষ করেছেন ? চোখ কুচঁকে যাবে, হাতের মুঠো শক্ত হবে। মনে হবে সুঁই এর খোঁচা তাকেও দেওয়া হলো। এখন আমাদের সেই অবস্থা। ও হাসলে আমি হাসি, ও বেশি হাসলে আমিও বেশি হাসি।
একজন মনিষী বলেছেন, মেয়েরা হচ্ছে টি-ব্যাগ। যত নাড়াবে তত রং ছাড়বে। তবে ব্যাগ নাড়াতে নাড়াতে চা ঠাণ্ডা হতে দেওয়া যাবেনা। তাই ঠাণ্ডা হওয়ার আগে জীবনের সবচাইতে কঠিন প্রশ্নের জন্য তৈরি হতে হয়। উইল ইউ ম্যারি মি ? সুনীল গাঙ্গুলীর ভাষায়, যমুনা হাত ধরো, স্বর্গে যাবো।
স্কুল জীবনে ব্যাকরণ স্যার বলেছিলেন, বিশিষ্ট রূপে বহন করার নাম ‘বিবাহ’। এই বিশিষ্ট রূপটা দেখতে কেমন ? ওজন কত ? না না প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করল। ছুটে গেলাম এক বন্ধুর কাছে পরামর্শ নিতে। বললাম, দোস্ত আমি বিয়ে করব ঠিক করেছি। ভেবেছিলাম বন্ধুটি বলবে, খুব ভাল, কংগ্রেচুলেশন্স। কিন্তু বন্ধুটি যা বলল তা ছাপার অক্ষরে লেখাকি ঠিক হবে ? পাঠকদের আমার জানানো উচিত, কেননা সেই কথাটিতে এমন একটা দর্শন ছিল, যা এত বছর পর আমি হাড্ডিতে হাড্ডিতে টের পাচ্ছি। বন্ধুটি বলেছিল -‘ হঠাৎ বিয়া করতে যাবি ক্যান ? তোরে কি গুড়া কৃমিতে কামড়াইতাছে’ ?
উপদেশ কি তখন কানে আসে ? কে একজন বলেছিলেন কবিতার জন্য সন্দেশ ছেড়ে দিতে পাড়ি। আমি তখন বিবাহের আনন্দে পৃথিবী ছেড়ে দিতে পারি। তবুও উইল ইউ ম্যারি মি বলার আগে কয়েকটা শক্ত প্রশ্ন দিয়ে ওকে বাজিয়ে নিতে চাইলাম।
- তুমি হয়ত জাননা আমার কিছু বদ অভ্যাস আছে।
- আহা, তোমার আবার বদভ্যাস !
- সত্যি বলছি, কমডের উপর আমি পা তুলে বসি। কিছু করার আগে দু‘বার ফ্ল্যাস টানি।
- দু’বার কেন, চারবার টানো, আমিতো আর দেখতে যাবোনা।
- আমি কিন্তু একা একা কথা বলি। টেবিলের সাথে, ফ্রাই প্যানের সাথে, জুতার বাক্সের সাথে।
- তুমি একা একা থাকতে তাই ওসবের সাথে কথা বলতে। এখনতো কথা বলার মানুষ আমি রয়েছি।
- আমার কিন্তু নাক ডাকার অভ্যাস আছে। কখনো জোড়ে, কখনো মিহি সুরে, অনেকটা কিশোর কুমারের ইয়োডলিং এর মতন।
- আমার কিশোর কুমারের গান খুবই ভাল লাগে। বিশেষ করে ওর ‘ইয়োডলিং’।
আমি আস্বস্থ হই। আমার বুক কাঁপতে থাকে। আলেকজান্ডারের মত বুকের পাঁটা থাকলে বলতাম, আমি হত হইনি, আহত হইনি, আমাকে কেউ জয় করেছে। না আর দেরি করা যায়না। হাতে হাত রেখে বললাম তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছ ? জীবন মরণের সাথী করবে? বড় কঠিন প্রশ্ন। যুদ্ধের শেষ দিন, দুজনে একসাথে আত্মহত্যা করার ২৪ ঘণ্টা আগে হিটলার ইভা ব্রাউনকে এমন একটা প্রশ্ন করে ছিলেন।
আমি কোন উত্তর পেলাম না। যেহেতু মৌনতা ছিল তাই সম্মতির সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। রাতে ঘুম এলোনা। দ্যা ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার। আমার মন তখন হারিয়ে গেছে, তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরছে একটু আশ্রয়। সংসারে যা কিছু হারাবার আছে তার মধ্যে নিজেকে হারানো হচ্ছে সবচাইতে সর্বনাশা।
দুদিন পর উত্তর এলো, ‘হ্যাঁ’। এটা হচ্ছে লিটারালি, অফিসিয়ালি, লিগ্যালি হ্যাঁ। তখন দূরে বহুদূরে, ঈশ্বর তাঁর হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে বলেছিলেন, ইওর টাইম স্টার্ট নাউ।
বিয়ের পর হানিমুনের সময়সীমা সর্ট ফিল্মের মত। শুরু হতে না হতেই শেষ। যা দর্শকরা দেখছেন তা সত্য নয়, আর যা সত্য তা দর্শকরা দেখছেন না। তবে এইটুকু বলব, নতুন জুতাও প্রথম প্রথম পায়ে খুশীতে মস্ মস্ করে। সর্ট ফিল্মের পর এখন শুরু হচ্ছে জীবনের পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি।
একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। এক জায়গায় বেড়াতে যাবার আগে আমি বললাম সোয়েটারটা পরে নাও। আকাশে কালো মেঘ ঝুলছে, বৃষ্টি বাদল শুরু হলে ঠাণ্ডা পড়বে।
- না, এ শাড়ির সাথে সোয়েটার যায়না, বেমানান।
- না পরলে গাড়িতে ফেলে রাখো, যদি দরকার হয়।
- না, শাড়ির সাথে সোয়েটার পরলে আমাকে মোটা দেখা যায়।
- এতগুলি সোয়েটার তবে আলমারি সাজাবার জন্য কিনেছো ?
- তুমি কটা কিনে দিয়েছ ? আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা।
আমাকে শেষ পর্যন্ত ভাবতে হয়। যা ভেবেছিলাম তাই হয়, বৃষ্টি নামে। কনকনে ঠাণ্ডা পরে। আমার ফ্যাশন সচেতন স্ত্রী দাঁতে দাঁত লাগিয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপে। আমি বলি আর একটু হাঁটো গাড়ী ঐ রাস্তায় পার্ক করেছি। স্ত্রী বলে,- ‘আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি । তুমি গাড়ী এখানে নিয়ে এসো। রাস্তার গর্তে জল জমে গেছে, আমি লাফ দিতে পারবোনা’।
ইনসাইক্লপিডিয়া অফ্ এনিমেলস্ এ পড়েছিলাম, হাতি ছাড়া পৃথিবীর তাবৎ প্রাণী লাফ দিতে পারে। আমি কোন কথা না বলে আমার কোটখানা ওকে পরিয়ে দেই। আপত্তি করেনা । আশে পাশের লোকেরা ভাবে, আহা, কি ভালবাসা। আর আমি পাতলা একটা শার্ট পরে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে যাচ্ছি স্ত্রীর জন্য গাড়ী আনতে।
এদিকে আমার নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য ডাক্তারের সাথে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়ে গেছে। কিশোর কুমারের গান এখন আর আমার স্ত্রীর ভাল লাগেনা । আমি আমার নাককে কি বলতে পারি, নাক ভাই আপনি মান্নাদের সুরে নাক ডাকেন। একদিন টুথব্রাশের সাথে কথা বলছিলাম, স্ত্রী বলল এগুলো পাগলের লক্ষণ। আর কমডের উপর পা রেখে বসে বস্তির লোকেরা।
এইতো গত সপ্তায় বাসায় বসে একটু সাহিত্য চর্চা করছি। স্ত্রী পাশের ঘরে টেলিফোনে কারো সাথে কথা বলছে। হঠাৎ কানে এলো, তোমার আশীষ দা কি করছে ? আমার নামটা শুনে আমি একটু কানটা খাড়া করি। এবার নিশ্চয়ই আমার স্ত্রী বলবে তোমার আশীষ দা সাহিত্যকর্ম করছে অথবা বলবে কবিতা লিখছে। অথচ আমার স্ত্রী কি বলল জানেন ?
বললো, ওর ঘরের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। একটা ব্যাটা ছেলে যদি খালি গায়ে ভুড়ি বাগিয়ে প্রেমের কবিতা লিখতে বসে সেই দৃশ্য কি দেখা যায় ?
এবার দেশে স্ত্রীকে নিয়ে শাড়ি কেনার ঘটনাটা আপনাদের বলি, এ দোকান থেকে সে দোকান। কাউন্টারে শাড়ির পাহার জমে গেছে। এই রংটা ম্যাটম্যাটে, ঐ রংটা কটকটে, এই শাড়িটা বেশি গডি, ঐ শাড়িটার জরির বডি। এটা সিল্ক, ওটা হাফ সিল্ক। মাঝে মাঝে আমার দিকে প্রশ্নবাণ, শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছ কেন ? এটা কি তোমার পছন্দ হচ্ছে ?
এসব বিশেষ বিশেষ সময়ের জন্য ঈশ্বরের উচিত ছিল মানুষের দু‘টোর বেশি চোখ দেওয়া। আমি কি আর শাড়ি দেখছিলাম। আমার চোখ ছিল শাড়ির পাড়ের সাথে যে একটা ছোট্ট কাগজের টুকরা যাতে দাম লেখা থাকে তার দিকে। শুধু আমি কেন তাবৎ স্বামীরাই স্ত্রীর সাথে শাড়ি কিনতে গিয়ে ঐ ছোট্ট কাগজের গায়ে লেখা টাকার অঙ্কটা দেখতে চায়।
যাই হোক শাড়ি পছন্দ হলো শেষ পর্যন্ত। এবার শুরু ম্যাচিং ব্লাউজ। এই প্রথম অনুধাবন করলাম ব্লাউজ কেনা শাড়ি কেনার চাইতেও কঠিন। কিছুতেই মিলতে চায়না। রং যদি মেলে তবে সাইজ হচ্ছে না। লম্বা হাতা চাইলে ছোট হাতা, ছোট হাতা চাইলে শকুন্তলা । গোল গলা চাইলে হল্টার ন্যেক্। দেশের পরিবর্তন না হলেও ব্লাউজের বাজারে মোটামুটি একটা ফ্রেঞ্চ রেভুলিউশন হয়ে গেছে। আমি বললাম,
- এই রংটা ঠিকই আছে নিয়ে নাওনা।
- তুমি কি অন্ধ ? নাকি চোখে ছানি পড়েছে ? কোথায় স্কাই ব্লু আর কোথায় সী ব্লু।
আমি চিন্তায় পরে যাই। এতদিন সিডনির বন্ডাই বীচ ঘোরাঘুরি করলাম। সমুদ্রের নীল আর আকাশের নীলের পার্থক্যটা ভাল করে দেখা হয়নি ! সেদিন মহাকাশের দিকে তাকিয়েও মনে হয়েছিল আকাশে তারাদের সংখ্যা দিনে দিন কমে আসছে। আমার চোখে কি সত্যি ছানি পড়েছে ?
স্ত্রী একটা কাপড় দেখিয়ে বলল, দেখতো এই রংটা মিলছে কিনা ? আমি তখন সমুদ্রের রং আর আসমানি রং এর তফাৎ ভাবতে ভাবতে দার্শনিক হয়ে গেছি। বললাম,
- দেখ, পৃথিবী হচ্ছে কম্বিনেশন অফ কনট্রাডিকশন। ম্যাচিং তুমি পাবে কোথায় ? আলোর সাথে অন্ধকার, সুখের সাথে দুঃখ, ভালর সাথে মন্দ, মোটা স্ত্রী তো হালকা স্বামী, কালো স্বামীর সাদা ধবধবে বউ। রাধা ফর্সা কৃষ্ণ কালো। অমিতাভ বচ্চন আর জয়ার ম্যাচিংটা দেখ, কত কনট্রাস্ট, অমিতাভ লম্বা আর জয়া বেটে।
- বক বক বন্ধ করে এই রংটা দেখো।
- ঠিক আছে।
- ছাই ঠিক আছে।
- তুমি ভুল করেছ ?
- কি ভুল করেছি ?
- শাড়ি কেনার আগে তোমার ব্লাউজ কেনা উচিত ছিল।
স্ত্রী গডগড করে ব্লাউজের দোকান থেকে বেড়িয়ে এলো। পেছনে গুটি গুটি পায়ে আমি। ব্লাউজ কেনা হলনা। একটা সমস্ত দিন চলে গেল একখানা অসম্পূর্ণ শাড়ি কিনতে। ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি কি পূর্ণতা পায় ? সত্যি জীবন উল্টো দিকে বইছে। আমার বাড়ীর ছাদ আমার জীবন একই আর্কিটেক্টের তৈরি। জল ছোটে গ্যাটারের উল্টো দিকে।
কাহিনীর শেষ নাটকীয় ভাবে। পরদিন বোনের বাসায় নেমতন্ন খেতে গেছি। ডাইনিং টেবিলে থরে থরে সাজানো মুখরোচক সব রান্না। ইলিশ, পাপ্দা, চিংড়ি, টেংরা। সবাই কব্জি ডুবিয়ে খেতে ব্যস্ত। আমার স্ত্রী মুখ খুলল।
- দিদি, একটা জিনিস চাইব দেবে ?
- নিশ্চয়ই দেবো, আরেক খানা কোলের মাছ ?
- না, তোমার টেবিল ক্লথটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, শুধু টেবিল ক্লথ কেন ? টেবিলটাই চলো আমরা সিডনি নিয়ে যাই।
- তুমি চুপ কর। স্ত্রী খেঁকিয়ে উঠল।
খাওয়া দাওয়ার পর টেবিল ক্লথ বগলদাবা করে স্বামী-স্ত্রী রাস্তায় নেমে এলাম।
- টেবিল ক্লথটা কেন নিলে ?
- আমিতো তোমার মত অন্ধ নই।
- তার মানে ?
- আমার শাড়ির রংটা মনে আছে ? এই টেবিল ক্লথটা সেই রংয়ের।
- তাতে কি হয়েছে ?
- আমি টেবিল ক্লথটা কেটে ব্লাউজ বানাবো।
স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি বুদ্ধি মাইডি। তোমাকে দেখছি কত রূপে কতবার। আমি জীবনভর শুধু রহস্যই দেখেছি, বিন্দুমাত্র ভেদ করতে পারিনি। স্ত্রীর পাশে দাড়িয়ে নিজেকে বড় ছোট মনে হলো। আপনাদের কখনও কখনও এমন মনে হয়না ?


ashisbablu13@yahoo.com.au



Share on Facebook               Home Page             Published on: 14-Feb-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far