bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...




আগের অংশ
২য় অংশ

এখন লক্ষ করা যায়, মুজিব আর জিয়াকে নিয়ে সমগ্র দেশ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। লেখক বদরুল রহমান খান লিখেছেন, ‘১৯৭৪ সালে মুজিববাদ নামে এক বিশাল আকারের বই প্রকাশিত হয়ে ছিল। সেখানে মুজিবের নামের সঙ্গে একটি ‘বাদ’ শব্দ যোগ করে তাকে এক আদর্শিক গুরু বা দার্শনিক ধারার প্রবক্তা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। ওই মতবাদটা যে কী সেই বিশ্লেষণ দিতে শেখ মুজিব নিজেই বিব্রত বোধ করতেন। তবে পরে অবশ্য তিনি সেটা মেনে নিয়েছিলেন।’

একই প্রক্রিয়া জিয়াউর রহমানের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। তার ভাবমূর্তির প্রধান উৎস তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামে নতুন আদর্শের প্রবক্তা, এবং সবুজ বিপ্লবের উদ্যোক্তা।

মুজিবের ঠোটে পাইপ, জিয়ার চোখে সানগ্লাস। মুজিবের পরনে বিশেষ ধরনের কোট, জিয়ার পরনে সাফারি। মুজিব ভালবাসেন ছোট মাছের ঝোল, জিয়া পরেন ছেড়া গেঞ্জি। মুজিব রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, জিয়া রেডিওতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

তিনি লিখেছেন, আমাদের জাতীয় চরিত্র যে কতটা অপরিপক্ক তার প্রমান এই সব তুলনামূলক আলোচনা। এভাবেই আওয়ামী লিগ এবং বি,এন,পি সুনিপুণ ভাবে গড়ে তুলেছেন মুজিব, জিয়ার বৈরী ভাবমূর্তি।

নব্বই দশকে বি,এন,পি ছিল একটি আধুনিক টগবগে দল, আর সেই দলকে এখন আর জামাতে ইসলামি দল থেকে আলাদা করা যায়না। লেখক শিক্ষক জাফর ইকবাল লিখেছিলেন, ‘বেশ দুঃখ হয় বি,এন,পির তরুণ ছেলেমেয়েদের দেখলে। ওরা জামাত চক্র থেকে বেড় হতে পারছেনা আর নিজেকে এখন বি,এন,পি হিসেবে পরিচয় দেয় চোখ মাটির দিকে নামিয়ে।’

বইটি পড়ে দুঃখ হয় ভেবে যে আওয়ামী লিগের মত একটি বিশাল দল কখনো পেছনে তাকিয়ে শুধরোবার চেষ্টা করেনি, তাদের ভুল কার্যকলাপের জন্যই জন্ম নিয়েছে বি,এন, পি এবং জামায়েতের মত পার্টি। ভুল আমরা করেছি একের পর এক কিন্তু শুধরোবার চেষ্টা করিনি। আমরা চিরদিন অন্যায় প্রশ্রয় দিয়েছি। অন্যায় চাপের মুখে মাথা নত করেছি। হুমায়ুন আজাদের হত্যাকারীর বিচার করিনি, শামসুর রাহমানের হত্যা করার প্রচেষ্টাকারীর বিচার করিনি, দাউদ হায়দারকে দেশ ছাড়া করেছিলাম, তসলিমা নাসরিনকে দেশ ছাড়া করেছি। আজ অভিজিতের রক্তমাখা দেহ ঢাকার রাস্তায় পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এরপর এমন আরো কত অভিজিৎ, কত হুমায়ুন আজাদ এভাবে রক্তাপ্লূত হয়ে ঢাকার রাস্তায় পরে থাকবে তা কে জানে!

সম্রাট আকবরের আমলে যখন আমাদের দেশে ধর্মবিশ্বাসে যুক্তির (রাহি অক্ল) হাওয়া বইছে। অর্থাৎ কারও ধর্মীয় জীবনে হস্তক্ষেপ করা যাবেনা, এবং যে কোনও লোকই পালন করার জন্য যে কোন ধর্ম বেছে নিতে পারেন। অন্ধবিশ্বাসের পথ নয়, যুক্তির পথে চলছে দেশ। সেই সময় ইউরোপে(রোমে) জিওর্দানো ব্রুনোকে প্রকাশ্য স্থানে খুঁটিতে বেঁধে পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল। আর আজ আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি!

স্বাধীনতা আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অর্জন ছিল আমাদের সংবিধানটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধান ঘেঁটে একটি অসামান্য সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব থাকে বিচারপতিদের, অথচ তারা সেই মহান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, বিচারপতি লতিফুর রহমান, বিচারপতি সাত্তার, বিচারপতি সায়েম, এদের দেখেছি সংবিধান রক্ষার গুরু দায়িত্ব পাশ কাটিয়ে কয়েক মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি হবার লালসায় অথবা অন্য কোন কাড়নে অনৈতিক কার্য করেছেন যা দেশবাসী তাদের কাছে আশা করেনি। আমি আশা করব বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে লেখক এদের সম্বন্ধে তার যুক্তিপূর্ণ মতামত দেবেন, সংঘাতময় বাংলাদেশে তাদেরও কিছু অবদান(!) আছে বলে আমার ধারনা।

অধ্যাপক বদরুল আলম খান লিখেছেন, জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রবল অভিঘাতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এবং জাতীয়তাবাদী শক্তি নতুন এই রাষ্ট্রটির পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দেশ শাসনের বিরাট ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে পুরনো মধ্যবিত্তের এক বড় অংশের মধ্যে স্বদেশের প্রতি বিরাগ দেখা দেয়। তারা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে বিদেশ পাড়ি জমায়। তাদের অনুপস্থিতিতে যে আদর্শিক শূন্যতা সৃষ্টি হয় সেই জায়গাটি এক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণি এসে পূর্ণ করে।.... যারা ওই পুরনো মধ্যবিত্তদের থেকে ভিন্ন ছিল। যাদের অধিকাংশই ছিল গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষ। যাদের আদর্শের উৎস গ্রামীণ জীবন এবং ধর্ম, আর সে কাড়নে বাংলাদেশে ঘটে চলছে অন্যান্য দেশের তুলনায় একটি উল্টো, বিপরীতমুখী ধারা। তিনি আরো লিখেছেন, সেই থেকে শহরের চিরায়ত সমাজ-কাঠামোও গ্রামীণ সংস্কৃতির ছোঁয়ায় প্রভাবিত হয়। তার চেহারা বিকৃত হয়। শহর হারাতে বসে তার নিজস্ব সত্তাকে। অর্থাৎ শহরের সঙ্গে গ্রামের যে পার্থক্য থাকা প্রয়োজন, সেই পার্থক্য বাংলাদেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে.... ।

কথাগুলো সত্যিই ভাবায়, অধ্যাপক বদরুল আলম খান বইটিতে সমাজ বিজ্ঞানের বৃহত্তর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। দেশের বর্তমান ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ, মনিষী এবং ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট বেছে নিয়েছেন। আমাদের বর্তমান রাজনীতিতে দুর্বিত্তায়ন নিয়ে অনেক কথাই আমরা শুনতে পাই, তবে তিনি তার শেকড়ের সন্ধান খুঁজে বেড় করার চেষ্টা করেছেন নিরপেক্ষ ভাবে।

আমরা জানি অধ্যাপকের কথাই শেষ কথা নয়। তার সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক হবে। এবং তিনি সেটা আশাও করেন। যুক্তিগ্রাহ্য তর্ক হজম করার ক্ষমতা তার আছে আমি বিশ্বাস করি।

বিজ্ঞাপনদাতা এবং ধর্মব্যবসায়ীরা সাধারণত বলে তর্ক করো না। তর্কে বহুদূর। লাক্স সাবান হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাবান। মা কালীর চরণে জবা ফুল দাও তিনিই সব ঠিক করে দেবেন। কেমন করে, কীভাবে সে প্রশ্ন করনা।

আমাদের বাংলায় একটা শব্দ আছে ‘সতর্ক’। এই শব্দটার মধ্যে ‘তর্ক’ কথাটা আছে। অর্থ হচ্ছে তর্কের মধ্যে থাকাই মানে সতর্ক থাকা। তাই দেশ নিয়ে তর্ক আমাদের করতে হবে, তা‘না হলে একই ভুল আমরা বারবার করতে থাকবো।

এত কিছুর পরও বাংলাদেশ নিয়ে হতাশ হবার কোন কারণ নেই। যা হতে পারতো সেটা হয়ত হয়নি। তবে সতর্ক থাকলে ভবিষ্যতে হবে। তিনি বইটির শেষে সংঘাত নিরসনের কিছু পথও দেখিয়েছেন। মহাভারত বার বার বলেছে, সব জীবনের শেষে যেমন মৃত্যু, তেমনি সব বিচ্ছেদের শেষে মিলন, সব পতনের শেষে উত্থান। ‘সংঘাতময় বাংলাদেশ’ একদিন ‘সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ’ হবে।

বইটি শুধু সুখপাঠ্যই নয়। বইটি ভাবায়। ধন্যবাদ অধ্যাপক বদরুল আলম খান, প্রচুর পরিশ্রম করে এমন একটি বই আমাদের উপহার দেবার জন্য।



আগের অংশ


ashisbablu13@yahoo.com.au






Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Apr-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far