স্বদেশপ্রেম ও আমরা ডা. আসাদ
(সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী বন্ধু ডা. রূপনের দেশে ফেরার আকুতির প্রেক্ষিতে লেখা )
স্বদেশের প্রীতি যত সেই শুধু অবগত বিদেশেতে অধিবাস যার।
কার কবিতা মনে নেই, সম্ভবত শংকর এর একটি বইয়ে কোট করা থেকে পড়েছিলাম। আমার মা প্রথম দেখিয়েছিলেন। সেখান থেকে পড়তে বলেছিলেন। তবে আমার মা কিন্তু বিদেশী নাগরিকত্ত্ব নিয়ে স্থায়ীভাবে বিদেশে পড়ে থাকার ঘোর বিরোধী ছিলেন। ২০০৫ সালে pancriatic cancer এ মৃত্যুর অনেক আগে সিডনি প্রবাসী আমার বড়ভাইকে চিঠিতে লিখেছিলেন, তোমার root কে ভুলে যেওনা। তোমার মেয়েকে কবি মাইকেল মধুসূধনের জীবনী পড়তে দিও।
আমি নিজেও মেডিকেলে ছাত্র থাকাকালীন বিদেশের প্রসঙ্গ এলেই ওকে কাব্য ক'রে জীবনানন্দ আওড়াতাম,
তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব।
ও তখন বিদেশমুখী ছিলো। কিন্তু আজ তার দেশে ফিরে খামার বাড়ি করার ভীষণ আগ্রহ। বলে, এখন তো আমাদের অন্তত আড়াই হাজার টাকা বেতনে ক্লিনিকে চাকরী করতে হবে না। কিংবা সাড়ে চার হাজার টাকায় উপজেলা হাসপাতালে চাকরি করতে গিয়ে গ্রাম্য পাতি নেতাদের দলের লোকদেরকে মিথ্যে মেডিকেল সার্টিফিকেট না দিলে হুমকির মুখে পড়তে হবে না। আমাদের সামান্য যা জমেছে তা দিয়ে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে বাড়ি না হোক কিন্তু রাজবাড়ী কিংবা কুমিল্লার কাছাকাছি কোথাও একটা খামার বাড়ি তো হবে; চলনা দেশে ফিরে যাই! তুমিই না প্রেম করার সময় বড়াই করে কত কি বলতে -
আমি বলি, কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কলিগের বাসায় ভয়াবহ ডাকাতির গল্প শুনেই না আমি বিদেশে আসতে রাজি হলাম, সে অবস্থার কি এখন উন্নতি হয়েছে?
আমার স্ত্রীর মার্বেলের মত স্বচ্ছ কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়! মুখটা মলিন হয়ে যায়।
আমি বলি, আমাদের পাঁচ একর খামার বাড়ি একা কেনার সাধ্য নেই, কিন্তু অনেকে মিলে চেষ্টা করলে ক্যামন হয়? নাম দেবো - নিপবন। ও বলে, ভাল হয়, কিন্তু আমি তো সেই বাড়িতে থাকতে চাই।
আমি বলি, চিন্তা ক'রো না, আরও কিছুদিন যাক, তোমার পুকুর, শাপলা, কাঠের ব্রীজ সহ ক্ষুদ্র জলাশয় দিয়ে একটা মিনি খামার বাড়ি কিনে নেব আমরা।
স্ত্রী বলেন, কবে আর কোরবা? তোমার তো একান্ন চলছে। আমার বয়সও তোমার থেকে খুব একটা কম নয়! ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এক বছর দেশ উদ্ধার করে যখন মেডিকেল কলেজে এলে তখন তো আমরা এক ব্যাচেই ছিলাম!
আমি ওর হাত ধরে রাখি ...
ডা. আসাদ, সিডনি
|