গুলি খাওয়া বাঘ আর সুখের অসুখ ডা. আসাদ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ১৯শে মার্চ ২০১৫ প্রথমবারের মত ক্রিকেটের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। ঐতিহাসিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে উড়াল দিয়েছিলাম আমরা কজন সিডনি থেকে মেলবোর্ন। অনেকে আবার এই নয়শো কিলোমিটার বাসের কাফেলা নিয়ে সারা রাত পিকনিক আমেজে গিয়েছিলেন।
প্রাপ্তি অনেক ছিল। ক্রিকেটের অন্যতম তীর্থস্থান, বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট গ্রাউন্ড এই এমসিজি। একলক্ষ চব্বিশ জন দর্শক ধারণক্ষমতা। দীর্ঘতম বাউন্ডারি এড়িয়ে।এখানে ছক্কা হাঁকানোর কব্জি খুব কম ব্যাটসম্যানেরই আছে। এই মাঠে আমাদের ছেলেদের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারাটাই ছিল একটি অর্জন, একটি মাইলফলক পাড় হওয়া। পঞ্চান্ন হাজার দর্শকের সাথে দাঁড়িয়ে এমসিজিতে সোনার বাংলা জাতীয় সংগীত গাইতে পারার শিহরণ আমার মত সব বাঙালিই অনুধাবন করবেন সহজেই! অনেকেই প্রথমে আনন্দে কেঁদেছিলেন! কিন্তু তারপর অনেকে কেঁদেছিলেন ক্রোধে। কারণ সবারই জানা। সঠিক আম্পায়ারিং হলে আমরা সেদিন হারতাম কি হারতাম না সে প্রশ্ন না হয় তোলাই থাক।
সেদিন ভারতের সাথে খেলা দেখেছিলাম স্টেডিয়ামে বসে, সামনে বসে থাকা নীল-জার্সি পরা দর্শকরা কিছুটা সম্ভবত লজ্জিত (বাজে আম্পায়ারিং এর জন্য) আর অনেকটাই করুণা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়েছিল।
গতরাতে খেলা দেখেছি টিভির পর্দায়। রাত জেগে। রবিবার একুশে জুন রাত থেকে শুরু করে আজ সোমবার বাইশে জুন ভোররাত তিনটে পর্যন্ত। ভারত বধ সিনেমার প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে করতে আমি আরো দেড়ঘন্টা অর্থাৎ ভোর সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেগে এমএস ধনীর দীর্ঘ অসহায় সাক্ষাতকার সহ ভারত শিবিরের সবার অসহায়ত্ব উপভোগ করেছি! চারঘন্টা ঘুমিয়েছি, ঘুম পুরা হয়নি। আজ আর কিনিকে যাব না। ক্লিনিকে রুগীর লাইন জমছে? জমুক! আমার আজ অসুখ। ডাক্তারের আজ নিজেরই অসুখ। দক্ষিণ গোলার্ধের শীতার্ত সময়ের এই অসুখের নাম "ভারত বধের সুখের অসুখ" আর সেই অসুখের জীবাণুর নাম "ক্রিকেট"!
ডা. আসাদ জামান, সিডনি
|