আপনি কেন ধূমপান বর্জন করবেন? আরিফুর রহমান খাদেম
বেশ কয়েক বছর আগে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ধূমপানের ভয়াবহতার উপর বিশদ একটি আর্টিকেল লিখি। ওই লেখাটি ছিল একটু ব্যতিক্রমধর্মী। এটি প্রকাশের পরপরই যেভাবে দেশ-বিদেশের পাঠকদের কাছ থেকে ইমেইল এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাঠকদের কাছ থেকে সরাসরি মন্তব্য পেয়েছি; বিশেষকরে কিছু কিছু নিয়মিত ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, দিচ্ছেন বা ছেড়ে দেবেন বলে যেভাবে সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন, আমি বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আমার সময় ও পরিশ্রম দুটোই সার্থক হয়েছে। তাদের সেই অনুপ্রেরণা এবং ভালবাসার টানেই আবারো এ বিষয়ে কিছু লেখার সাহস পেয়েছি।
ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের আদর্শে বড় হয়েছি। বাবার সততা ও নৈতিকতায় কোনদিন কোনও ফাঁকফোকর আমার নজর কাড়েনি। এতদসত্ত্বেও আমার স্কুল জীবনে বাবার একটাই বদভ্যাস চোখে পড়ত, আর তা হচ্ছে ধূমপান। বাবা একদিকে নিজে ধূমপান করতেন, অন্যদিকে আমাদের দুই ভাইকে উপদেশ দিতেন এ থেকে সর্বদা দূরে থাকতে। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়টি জেনেও বাবা কেন নিয়মিত পান করে যাচ্ছেন, আমার বোধগম্যের বাইরে ছিল। অন্যান্য দিনের মতই একদিন বাবা যখন আমাকে দোকান থেকে সিগারেট আনতে বললেন, আমি অনেকটা বাবার মুখের উপরই বলে দিলাম, "আজ থেকে আপনি সিগারেট খেলে আমিও খাব"। ছোট মুখে এত বড় কথা বলে ফেললাম, তাই একটু ভয় হচ্ছিল এই ভেবে যে বাবার প্রতিক্রিয়া কি হবে! ওইদিন পর বাবা আমাকে আর কোনদিন সিগারেট আনতে বলবেন দূরের কথা আমি আমার বাবাকে আর কখনো ধূমপান করতে দেখিনি। এর প্রভাবেই হয়ত পরবর্তী জীবনে আমার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা আমাকে কোনদিন এই জীবননাশক সিগারেট বা মাদক জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্ত করতে পারেনি।
ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত থাকলেও অথবা "ধূমপান বিষপান" বা "ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর" স্লোগানগুলো সিগারেটের প্যাকেটে বা বিভিন্ন জায়গায় দেখেও কয়জন ধূমপায়ী প্রকৃতপক্ষে ধূমপান থকে বিরত থেকেছে, সে সংখ্যা লাখে একজনও হবে কিনা সন্দেহ। প্রতিটি সিগারেটে থাকে ৪ হাজারের বেশি কেমিকেল। এছাড়া টার ও নিকোটিন জাতীয় বিষাক্ত তৈলাক্ত পদার্থের পাশাপাশি থাকে কার্বন মনোক্সাইড। আরও থাকে এ্যামৌনিয়া নামক পদার্থ যা বিস্ফোরক ও সার তৈরিতে ব্যবহৃত তীক্ষ্ণ গন্ধযুক্ত গ্যাস। তাছাড়া আর্সেনিক নামক পদার্থ দিয়ে ইঁদুর মারার ঔষধ বানানো হয়। সিগারেটের ৬৯% কেমিকেল ক্যান্সার ঘটায়। একসময় আমাদের ধারণা ছিল ধূমপান শুধুই ক্যান্সার ঘটায়। কিন্তু যুগের পর যুগ প্রযুক্তির আশীর্বাদ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে বিপুল সব তথ্য। পা থেকে মস্তক পর্যন্ত প্রায় সর্বাঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধূমপানে শরীরের যে অংশগুলো বিশেষভাবে আক্রান্ত হয় সেগুলো হচ্ছে: ফুসফুস, গলা, মুখ, পাকস্থলী, মূত্রাশয়, গর্ভাশয়, হৃৎপিণ্ড, চোখের ভিতর, চামড়া ইত্যাদি। ধূমপান ব্রেইনের ধমনী বা রাস্তাকে সংকীর্ণ করে যা পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং প্যারালাইসিসের মত কঠিন রোগ ঘটাতে পারে। গণসচেতনতা বাড়াতে প্রায় প্রতিদিনই অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় টিভিগুলোতে দেখানো হয় ধূমপানের ফলে মানুষের মা-বাবা বা স্বজনরা কীভাবে হার্ট-অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গেছে।
বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, প্রতিটি সিগারেট একজনের জীবন থেকে গড়ে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট করে আয়ু কমায় এবং পৃথিবীর অর্ধেক তামাক সেবী ধূমপানের ফলে মারা যায়। একজন ধূমপায়ী একজন অধূমপায়ীর চেয়ে তের-চৌদ্দ বছর আগে মারা যায়। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক কার্যকারিতা হারায় দশ বছর। মোটকথা ধূমপানের ফলে একজন মানুষ তার জীবন থেকে কমপক্ষে তেইশ বছর হারায়। বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী তামাক বা মাদকজাতীয় পদার্থ সেবনে মারা যায় প্রায় দশ কোটি লোক। প্রতি বছর ধূমপানের ফলে প্রাণ হারায় ৬০ লক্ষ লোক। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৫ এবং ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬৫ লাখ এবং ৮৩ লাখ। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে নিম্ন থেকে মধ্য আয়-ভুক্ত দেশগুলোর উপর। এ অবস্থা চলতে থাকলে একবিংশ শতাব্দীতে এ মৃত্যু একশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ দুনিয়ার প্রায় এক পঞ্চমাংশ লোক মারা যাবে শুধুই এ মরণ বিষে। তাছাড়া, ঘরে বা পাবলিক স্পটে ধূমপায়ীদের দ্বারা আক্রান্ত অধূমপায়ীর মৃত্যুর হার বছরে প্রায় ছয় লাখ। গর্ভবতী মহিলা ধূমপায়ীদের বাচ্চারা জন্ম নিতে পারে কম ওজন বা দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক শিশু পাবলিক স্পটে নিয়মিত তামাক যুক্ত দূষিত বায়ু সেবন করে বড় হয় এবং ৪০% এর অধিক শিশুর বাবা বা মা ধূমপানে আসক্ত।
প্রতি পাঁচজন ধূমপায়ীর মধ্যে একজনের বয়স ১৩ থেকে ১৫। প্রায় এক লাখ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে প্রতিদিন ধূমপান শুরু করে, যার প্রায় অর্ধেক ঘটে এশিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় একশত ত্রিশ কোটি লোক ধূমপানে আসক্ত এবং প্রতি সাড়ে ৬ সেকেন্ডে একজন ধূমপায়ী মারা যায়। উন্নত বিশ্বে ধূমপায়ীর সংখ্যা গত কয়েক যুগে অনেকাংশে হ্রাস পেলেও, আমাদের উপমহাদেশে এর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। গত তিন যুগে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় এ সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশে প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ৪ ভাগ। তন্মধ্যে বাংলাদেশ, চীন ও রাশিয়া অন্যতম। যুক্তরাজ্যের গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে ধূমপান একধরণের কালচারে পরিণত হলেও, বলিউড মুভিও ধূমপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে, যেখানে নায়ককে প্রায়ই সিগারেট হাতে দেখানো হয় এবং এতে যুব-সমাজ অনেকাংশেই প্রভাবিত হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি বছর ধূমপান-জনিত রোগে মারা যায় প্রায় ৯ লাখ লোক। বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ১ লাখ এবং শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে ৩ লাখ লোক। তাছাড়া চীনে প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ১২ লাখ ধূমপায়ী (প্রতিদিন ৩ হাজার), রাশিয়ায় সাড়ে চার লাখ, তুরস্কে ১ লাখ ৪০ হাজার, আমেরিকায় সাড়ে চার লাখ, ব্রাজিলে ২ লাখ, ইংল্যান্ডে ৯০ হাজার এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১৯ হাজার।
ধূমপান শুরু করা যতটা সহজ, ত্যাগ করা তার চেয়ে লাখ গুণ বেশি কঠিন। কারণ এটা এক ধরণের পুরনো এবং কঠিন মুদ্রা-রোগ। প্রেমের মরা যেমন জলে ডুবেনা, তেমনি ধূমপানের নেশায়ও সহজেই মিটেনা। মধ্যবয়সী ধূমপায়ীরা যদি জেনে শুনেও তা ছাড়তে না পারে, যারা স্কুল কলেজে যায় তারাতো অনেকটাই অবুঝ, তারা কীভাবে ছাড়বে? তবে ধূমপান ত্যাগের যাদের ইচ্ছা শক্তি আছে তারা মনে-প্রাণে চাইলে খুব সহজেই তা ছাড়তে পারেন। "ইচ্ছা থাকলে উপায় বের হয়" বা "চেষ্টায় মেলে ধন না চেষ্টায় নয়" এ কাব্যিক উক্তিগুলো শুধুই পাঠ্য বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে চলুন না বাস্তবে প্রয়োগ করি।
১। ধূমপান ছাড়তে আগ্রহীরা কখনো কোনও নির্দিষ্ট দিনে তা ছাড়তে পারে না, যদিও তারা বিভিন্ন সময় বলে বেড়ায় কাল থেকে আমি আর একটিও সিগারেট খাব না। যেহেতু অভ্যাসটি পুরনো ও জটিল, তাই চিকিৎসাও করতে হবে ধৈর্যের সাথে। প্রথমত: চিন্তা করতে হবে কিভাবে দৈনিক সিগারেট সেবনের সংখ্যা কমানো যায়। এ চিন্তা মাথায় নিয়ে আগামীকাল সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করুন। যেখানে আপনি প্রতিদিন ২০টি সিগারেট পান করতেন, মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন যে কাল আমি ১০টির বেশি খাব না। ঠিক একই প্রতিজ্ঞা করুন পরের দিনের বেলায়ও। তবে অবশ্যই সংখ্যা কমিয়ে।
২। ধূমপান ছাড়ার আগ্রহ পরিবারের সবাইকে বিনা সংকোচে জানান। অনেকেই লজ্জায়, ভয়ে বা আস্থার অভাবে অন্যদের সাথে আলোচনা করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, ধূমপান ত্যাগে আপনার আগ্রহ যথেষ্ট নয়। যদিও আপনি মা, বাবা, ভাই, বোন কিংবা স্ত্রী, সন্তানদের আড়ালে করে থাকেন, তারা ঠিকই জানেন যে আপনি লুকিয়ে ধূমপান করেন। তাদেরকে আপনার ইচ্ছার কথা জানালে, একদিকে যেমন তাদের সকলের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাবেন, তেমনিভাবে মূল্যায়িত হবে আপনার প্রতিজ্ঞা। একইসাথে তাদের অবর্তমানেও পরিস্থিতি আপনাকে ধূমপান করতে নিরুৎসাহিত করবে।
৩। যারা ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে, তাদের পরামর্শ নিন। একইসাথে মনে প্রেরণার সৃষ্টি করুন যে, তারা যদি ধূমপায়ী হয়েও ছাড়তে পারে, আমি পারবো না কেন?
৪। যেহেতু আপনার যেকোনো মুহূর্তেই ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে, সেহেতু অন্য ধূমপায়ীদের আপনার আশেপাশে ধূমপান করতে বারণ করুন, অথবা ধূমপান করতে হবে এমন আশংকা থাকলে ধূমপান ত্যাগের প্রাথমিক স্তরে সে ধরনের সঙ্গ, পার্টি বা অনুষ্ঠান বর্জন করুন। রেস্তোরাঁয় খাবার খেলে ধূমপান-মুক্ত এলাকা বেছে নিন।
৫। কাপড় ধৌত করুন এবং যে সমস্ত জায়গায় বসে ধূমপান করতেন সে স্থানগুলো ভালভাবে পরিষ্কার করুন, যাতে এ জাতীয় কোনও গন্ধ আপনার নাকে না আসে। যেমন: টয়লেট, শোবার ঘর, জানালার পাশ, বারান্দা ও গাড়ি।
৬। দিনের পর দিন যখন সিগারেট সেবনের মাত্রা কমে যাবে এ্যাশট্রে, লাইটার বা এ জাতীয় যে কোনো জিনিস ময়লার বিনে ফেলে দিন। নইলে এগুলো পুনরায় আপনাকে ধূমপানের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।
৭। প্রচুর পরিমাণে পানি, জুস ও গরম দুধ পান করুন, যা আপনার শরীর থেকে নিকোটিন বের করে আনবে। তবে অতি মাত্রায় কফি পান করলে পরিমাণ কমিয়ে দিন। যারা মদ্যপান করেন, কমিয়ে দিন বা ত্যাগ করুন। কারণ অনেকের ক্ষেত্রে মদ্যপান করার সময় সিগারেট সেবন জরুরি হয়ে পড়ে।।
৮। ধূমপানের ইচ্ছা জাগলে নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখুন। যেমন: পরিবার পরিজন বা অধূমপায়ী বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। মুক্ত যায়গায় হাটতে যান। যে সময়গুলোতে আপনি সিগারেট নিতে বাধ্য হতেন, সে সময়ে দাঁত ব্রাশ করুন, তারপর একটা আপেল বা স্নেক খেতে পারেন, যা আপনার মুখকে বা আপনাকে ব্যস্ত রাখবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করে আসছেন তাদের অবশ্যই প্রথম প্রথম বেশ অস্থির লাগবে, কিন্তু একটা বিষয় ধৈর্য ও আস্থার সাথে মাথায় রাখবেন যে সিগারেট হাতে না নিলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন না বা মারা যাবেন না। প্রাথমিক অবস্থায় অস্থিরতা বেশ প্রবল হলেও, পর্যায়ক্রমে তা অবশ্যই বহুলাংশে হ্রাস পাবে এবং শতভাগ দূর হবে।
৯। যারা অনেক বেশি ধূমপান করেন তারা নিকোটিন প্যাচ বা চুয়িংগামের মতো নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেও এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারেন। তাছাড়া ডাক্তারের প্রেস্কিপশনেও কিছু ঔষধ পাওয়া যায়, যা ধূমপানের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। যেমন: Varenicline(ব্র্যান্ডের নাম Champix) এবং Bupropion(ব্র্যান্ডের নাম Zyban)। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন আপনার জন্য কোনটি ভাল হবে।
১০। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে ইন্টারনেটে youtube এ ধূমপায়ীদের বিভিন্ন করুন কাহিনী সম্বলিত ভিডিও দেখতে পারেন; যেগুলো দেখেও ধূমপানের প্রতি আপনার ঘৃণা জন্মাতে পারে।
১১। অপরদিকে, পরিবারের প্রতিটি সদস্যও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। বড়দের উচিত নয় ছোটদের সামনে সিগারেট খাওয়া বা সিগারেটের সংস্পর্শে আসে এমন কোনো কার্য করা। যেমন: এ্যাশট্রে বা লাইটার আনতে বলা, দোকান থেকে সিগারেট আনতে বলা। কোনো এককালে যেভাবে ছোটরা বড়দের সামনে সিগারেট খেতে ভয় পেত, তেমনি বড়দেরও ছোটদের সামনে বা আশেপাশে তা সেবন কালে তাদের বিবেক বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত। তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই সিগারেটের সমস্ত কুফল ও ভয়াবহ দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা/জ্ঞান দেয়া উচিত, যাতে তারা জীবনের শুরু থেকেই একে ঘৃণা করে। তবে এ সফলতার সিংহভাগই নির্ভর করছে আপনার নিজের অভ্যাসের উপর।
১২। আমাদের সকলের ইচ্ছার পাশাপাশি যথাযথ কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতেও ধূমপানের ভয়াবহতার উপর গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সংযোজন করা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও ভূমিকা থাকবে ব্যাপক। একইসাথে দরিদ্র শ্রেণী ও যুব সমাজকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের মত সিগারেটের উপর উচ্চ মূল্যে কর আরোপ করা উচিৎ।
১৩। পাবলিক স্পটে ধূমপান বর্জন করুন কথাটি বললেই বা কোনো একদিন বিশেষ অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেই আইনের প্রয়োগ হল না। জনগণ নিয়মিত এগুলো মানছে কিনা বা কর্তব্যরত অফিসাররা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে কিনা তাও মনিটর করতে হবে। আমি ঢাকার বিভিন্ন সড়কে অনেকবার দেখেছি যে কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার জনসম্মুখে মনের আনন্দে ধূমপান করছে। কে কাকে শাস্তি দিবে?
১৪। মিডিয়াও এ বিষয়ে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। স্বাস্থ্য ও এইডস-এর বিজ্ঞাপনের মতো ধূমপানের কুফল ও ভয়াবহতার উপর বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে। তাছাড়া গণসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র ও নাটক-নাটিকার মাধ্যমেও এর কুফল ও ভয়াবহতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা যেতে পারে।
১৫। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সিগারেট বিক্রিতে লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক হলেও আমাদের দেশে যে কেউ তা অবাধে বিক্রি করতে পারে। ফলে তিন বছর বয়সের শিশু থেকে যে কোনো বয়সের ক্রেতা নির্দ্বিধায় সিগারেট ক্রয় করতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিগারেট বিক্রিতে লাইসেন্সের পাশাপাশি ২২ বছর বয়সের নিচে কারো কাছে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করা উচিৎ। বিক্রেতারা আইন না মানলে নিয়মভঙ্গের ধরণের উপর ভিত্তি করে জরিমানা এবং লাইসেন্স বাতিলসহ জেলে সাজা দেয়ার মতো কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে।
একবার ভাবুন, ধূমপান শুধু আপনার কষ্টার্জিত পয়সাই নষ্ট করছে না, নষ্ট করছে পরিবেশ এবং আপনার মূল্যবান জীবন।
arifurk2004@yahoo.com.au
(লেখক অস্ট্রেলিয়ায় ফাইন্যান্স ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ও খন্ডকালীন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক)
|