বাওয়া'র বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুগ্ধ পার্থবাসী আরিফুর রহমান খাদেম গত ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ ছিল বাওয়া'র (Bangladesh-Australia Association of Western Australia) জীবনের এক স্মরণীয় রাত। বাংলা সংস্কৃতি বা বাংলাদেশকে মনে ধারণ করার রাত। পার্থবাসীর মতে, বিভিন্ন বয়সের রংবেরঙের দেশীয় সাজসজ্জায় ৬০ - ৭০ জন স্থানীয় শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দেশীয় সংস্কৃতির এত বড় বর্ণাঢ্য আয়োজন তারা অতীতে উপভোগ করেনি। এটা ছিল বাওয়ার ৩২তম বার্ষিক আয়োজন। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টাব্যাপী পার্থের এক স্থানীয় থিয়েটারে প্রায় ৭০০ দেশি বিদেশি দর্শকদের হাস্যোজ্জল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, সরকারী কর্মকর্তা ও কিছু বিদেশী নাগরিকের উপস্থিতিও পুরো অনুষ্ঠানকে অলংকৃত করে। তাছাড়া, বাওয়ার এ অসাধারণ আয়োজনকে স্বীকৃতি দিতে সম্প্রতি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্লাম্যান্টে অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক, বাংলাদেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও কালচার নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা হয়, যা নিঃসন্দেহে বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তিকে প্রজ্বলিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পার্থে বেড়ে উঠা ছোট্ট সোনামণিদের কণ্ঠে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ধ্বনিত হওয়া বিশ্বকবির লেখা আমাদের সকলের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' হল ভর্তি দর্শকদের মনকে এক অনাবিল আবেগের খাঁচায় বন্দী করে দেয়। শিশুরা তাদের সুরেলা কণ্ঠে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করে। নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না যে এ শিশুদের জন্ম বাংলাদেশের বাইরে হয়েছে। জাতীয় সঙ্গীতের পরপরই বাওয়ার সভাপতি প্রফেসর রুহুল সেলিম, প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের পরপরই শুরু হয় একের পর এক সব মজার ঘটনা।
পর্যায়ক্রমে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে হারানো দিনের দেশাত্মবোধক ও জনপ্রিয় গান, নাচ, নৃত্য সহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের উপর বাস্তবভিত্তিক মজার মজার নাটিকা দর্শকদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে, যা পার্থবাসী আজীবন মনে রাখবে। পুরো সন্ধ্যায় কিছুটা ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য আনতে এবং ভিন্ন সংস্কৃতিকে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক অনুষ্ঠানে আরও স্থান পায় স্বস্ব দেশীয় সাজে সজ্জিত ভারতীয়, নেপালি ও ল্যাটিন আমেরিকান গান ও নৃত্য। ছোটবড় প্রতিটি শিল্পীর নিখুঁত কারুকাজ, পোশাক, অঙ্গভঙ্গি ও অভিনয় দর্শকদের প্রতিটি মুহূর্তকেই আনন্দে মাতিয়ে রাখে। এমনকি কেউ কেউ হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ার এত কর্মব্যস্ত জীবনের ভিতরে থেকেও শিল্পীরা তাদের অভিনয় প্রতিভা ও দক্ষতা বিভিন্ন কৌতুক সম্বলিত সংলাপের মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা বাংলাদেশের অনেক পেশাদার নাট্যাভিনেতাদেরও হার মানাবে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটিকাগুলো ছিল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের উপর বাংলাদেশি সমর্থকদের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ, কাতার ফেরত সোলেমানের বিয়ে করার খায়েস, অস্ট্রেলিয়ায় আসা নবীন ছাত্রদের জীবন-যুদ্ধ এবং প্রবাসে থাকা কিছু প্রবীণ ও নবীনদের দেশ নিয়ে স্মৃতিচারণ ইত্যাদি ইত্যাদি।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, ঘটনাবলি ও বিষয়াদির উপর নানা রকম প্রামাণ্যচিত্রও স্থান পায় এ বিশেষ সন্ধ্যায়। প্রযুক্তির আশীর্বাদে প্রোজেক্টর ও মাল্টিমিডিয়ার সফল ব্যবহারও দর্শকদের বেশ আকর্ষণ করে। বিশেষকরে স্টেজ পার্ফরম্যান্সের পাশাপাশি ও প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলির উপর ভিত্তি করে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের নয়নাভিরাম দৃশ্যগুলো দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হয়েছে সবাই বুঝি স্বদেশেই আছি। অনুষ্ঠানে র্যা্ফল্ ড্রয়ের মাধ্যমে দর্শকদের জন্য বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কারেরও আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা তাদের এ নিখুঁত কারুকাজ ও উদ্যোগের জন্য সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
arifurk2004@yahoo.com.au
|