ভালবাসার গল্প / এম এস আরেফীন
আগের অংশ
এখন মাহতাবের মাথা গরম হয়ে গেলো। খুব কান্না পেলো। মনে হলো এই মুহূর্তে হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে লুটে গিয়ে বাচ্চাদের মতো হাউ মাউ করে কান্না করে। মাহতাব বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। কোথায় সোহানা কে খুঁজবে। আবার ভাবছে সোহানা আসলেই ঠিক আছেতো? নিজের উপর মাহতাবের প্রচণ্ড ঘৃণা হচ্ছে এখন। মনে হচ্ছে নিজেকে শেষ করে দিতে। সোহানা না হয় মেয়ে কিন্তু সে তো একটা ছেলে। অন্তত সে না হয় নিজেকে সামলালে আজকে এই দুর্ভোগটা পোহাতে হতোনা। তার ২৩ বছর বয়সের জীবনে সে এইটুকু বুঝে যে, কোন বড় কারণে কোন সম্পর্ক ভাঙ্গে না। কেবল মাত্র তুচ্ছ নিছক কারণেই শুভ্র সুন্দর ভালবাসার ভাগ্যে চিরন্তন সুখ জোটেনা। এসব জানার পরেও সে কেন এমন করলো? কেন নিজেকে সামাল দিলো না? মাহতাব হাঁটছে কিন্তু তার পা এগুচ্ছে না। বমি বমি লাগছে। সে জানে না সে কোথায় যাচ্ছে। ধীরে ধীরে হাটতে হাটতে সে আবাহনী মাঠে এসে পৌছুলো। আজ কোন ক্লাস করবে না। এই মাঠেই বসে থাকবে সারাক্ষণ। মাহতাব আবাহনী মাঠের গ্যালারীতে বসে আছে। শূন্য দৃষ্টিতে শূন্যের দিকে তাকিয়ে আছে, আর তার চোখ থেকে কষ্টের নোনা জল যেন ফিনকী দিয়ে বের হয় আসছে। নিজের অজান্তেই মাহতাব কাগজে কলম বের করলো।
সোহানা
ফিরে এসো। আমি তোমাকে ভালবাসি। প্রমিজ করছি তোমার সাথে আর ঝগড়া করবো না। রাগ করবো না। কথা ধরবো না। শুধুই ভালবাসবো। যা বলবে শুনবো একেবারে বাধ্য ছেলের মত। ফিরে এসো সোহানা। ফিরে এসো। আমাদের তো একসাথে অনেক কিছু করার কথা, মনে নেই? তুমি আর আমি একসাথে না হলে সেই স্বপ্নগুলো পূরণ হবে কি করে! কি করে সৃষ্টি হবে ইতিহাস, গল্প, মায়া এবং ভালবাসা! ফিরে এসো সোহানা, please come back.
মাহতাব ঘড়ির দিকে তাকালো। দুইটা ত্রিশ বাজে। ভাবলো শেষ বারের মতো কলেজে গিয়ে দেখবে। যদি দেখা মেলে। তিনটা দশ। মাহতাব মামার চটপটির দোকানের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাচের অনেক পরিচিত মুখ বের হচ্ছে। হঠাৎ তার নজর আটকে গেলো। ঐ তো সোহানা। বুকটা আবারো চিরাচরিত নিয়মে ধুক করে উঠলো। নিজেকে বিশ্বাস হচ্ছে না। শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। সোহানা মাহতাবের দিকে এগিয়ে আসলো। দুজনের চোখ ঝলকে এবং ছলকে উঠলো। দুজনেই ঢোক গিলছে। দুজনেই মুচকি হাসছে। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে। তাদের বাহ্যিকতা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে। সেই কথোপকথন ভেঙ্গে দিয়ে মাহতাব বলে উঠলো। - বড় করে হাসো। তোমার টোল পরা গালে বড় হাসি বেশ মানায়। বলতে বলতে চিঠিটা সোহানার হাতে দিলো। সোহানা চিঠি পড়ছে আর অঝোরে কাঁদছে। সোহানাকে দেখে মাহতাব ও কাঁদছে। গতকাল ছুটিয়েছিলো ঝগড়ার ম্যারাথন আজ মনে হয় তারা কান্নার ম্যারাথন ছুটাবে। কান্না ভরা গলা নিয়ে মাহতাব বললো - কোথায় ছিলা? - রুম্পার বাসায় মুভি দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম - কেন কাঁদছিলে? - এমনি - এমনি কেউ কাঁদে? - হ্যাঁ আমি কাঁদি। তুমি কোথায় ছিলে? - আবাহনী মাঠে - কি করছিলে? - কাঁদছিলাম - কেন কাঁদছিলে? - তোমায় ভেবে, তুমি-হীন এই জীবনে চলতে পারবো না সেটা ভেবে কাঁদছিলাম। - তাহলে লাজ ফার্মার সামনে সকাল বেলা কে বসে ছিলো? - তুমি জানো কি করে? - বাসার কাজের মেয়েটা বললো, ও তোমাকে দেখেছে লাজ ফার্মার সামনে রাস্তায় বসে থাকতে - হ্যাঁ বসেছিলাম তোমাকে দেখবো বলে - আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার চলো - কোথায়? - তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে বলেই দুজনে রিকশা নিলো। ঘণ্টা হিসেবে। তারপর তিন ঘণ্টা তারা রিকশা করে ঘুরলো। সেই তিন ঘণ্টা কেউ কারো হাত এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েনি। কোন কথা হলো না শুধু চোখের ভাষা আদান প্রদান হলো। ছয়টা বিশে রিকশাটা ধানমন্ডি লেকের সামনে এসে থামলো। সোহানা বললো এখন ঠিক এইখানে দুজনে মিলে সূর্যাস্ত দেখবো এটাই তোমার জন্য আমার দেয়া সারপ্রাইজ। দুজনে প্রাণ ভরে সূর্য ডোবা উপভোগ করলো। সন্ধ্যা সাতটা। সাঁঝের বেলা তার সমস্ত আচার বিধি পালন করে আজকের দিনের সূর্যটাকে অস্তাবসানে পাঠালো। অন্ধকার নেমে আসছে। মাহতাব বললো খুব খিদা পেয়েছে, চলো কিছু খাই। দুজনেই পাশের চিলিজ রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ডিনার করলো। টুকটাক কথা হলো। ডিনার শেষে বিল দিয়ে মাহতাব বললো চলো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। - কি? - আরে চলোইনা - না দূরে যেতে পারবো না। রাত হয়ে গেলে বাসায় আব্বা আম্মা চিন্তা করবেন। - দূরে যেতে হবে না। বলতে বলতে তারা রাস্তায় নামলো। ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়ির সামনে দিয়ে ডানের রাস্তায় ঢুকে হাঁটতে শুরু করলো। মাহতাব বললো ঐ দেখ আকাশে কি সুন্দর চাঁদ। আজ ভরা পূর্ণিমা, তোমার সারপ্রাইজ। সোহানা লক্ষ করলো চারদিক ঝকঝকে পরিষ্কার। এমনকি লেকের পানিতেও চাঁদের রূপের প্রতিমা প্রতিফলিত হচ্ছে। অকস্মাৎ কারেন্ট চলে গেলো। চারিদিক নিঝুম অন্ধকার। আশে পাশে বাড়ি রাস্তা কোথাও এক কণা পরিমাণ আলো নেই শুধুমাত্র আকাশের ঐ বিশাল গোলকের আলো ছাড়া। মাহতাব সোহানার হাত ধরলো। তাদের দুজনের শ্বাস দ্রুত হচ্ছে। সোহানা কিছু বলতে গেলো....
আগের অংশ
এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|