bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



অতঃপর ঈদ
এম এস আরেফীন



শৈশবে ঈদের আনন্দের প্রধান উপকরণ হয়ে থাকে জামা কাপড়, খাওয়া দাওয়া আর ঈদি বা সালামী। আর বয়সটা যখন বাড়তে থাকে ঠিক সেই সাথে ঈদের আকর্ষণের মধ্যেও বিস্তর পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে ১৬ - ১৭ বছর বয়সের পর থেকে ঈদের আনন্দের জোয়ার অন্য নদীতে বইতে শুরু করে। গত ১৬ - ১৭ বছরের বিগত ঈদের সময় প্রতিদিন রুটিন করে ড্রয়ার থেকে নতুন কাপড় বের করে গন্ধ নেয়া আর নতুন জুতা পরে বিছানায় হেটে ঈদের আগেই ঈদ করে ফেলার মত বিষয় গুলো তখন নেহায়েত ছেলেমানুষি ও বেশ অচেনা বলে মনে হয়। আর সেই সাথে ছোট বেলার এই সব কাজ কম্মের কথা মনে পড়লে আনমনেই ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসির উদয় হয়।

১৬ - ১৭ এই বয়সটাই কেমন যেন খুব অন্যরকম। সবদিকেই রোমাঞ্চ সবকিছুতেই রোমাঞ্চ। মনে হয় জীবনকে আবার আমরা নতুন করে আবিষ্কার করি। বিগত দশ বছরের স্কুল জীবনের এক ঘেয়েমী কাটিয়ে উঠে এস এস সি পাশ দেবার পরে আমরা যখন কলেজে ভর্তি হই তখন আমরা কেমন যেন হঠাৎ করেই বড় হয়ে যাই আর সেই বড় হবার নিদর্শন হিসেবে কারো চোখে উঠে সানগ্লাস, কেউবা কলেজ ক্যান্টিনে সারাদিন পিটাচ্ছে তাস, কারো হাতের দু আঙুল আর দুটি ঠোঁটের মাঝখানে জ্বলছে তারুণ্যের মশাল অর্থাৎ ধূম্র শলাকা। কারো গলায় ঝুলছে ভারী স্বর্ণের চেইন এবং তারা কোন একটা কারণে তাদের পোশাকের ব্যাপারে খুব উদাসীন তাই তাদের শার্টের উপরের বোতাম দুটি সব সময় লাগাতে ভুলে যায় এবং সেই ফাঁক গলেই তাদের স্বর্ণের শিকল তাদের দীপ্ত ও দৃঢ় তারুণ্যের জানান দেয়। কেউ আবার কয়েক কাঠি সরেস, তাদের মুখে খই এর মত ফুটে শুধুই গার্লফ্রেন্ড এর গল্প। যেহেতু বয়সের সাথে সাথে শিক্ষার স্তরেও একটা বিশাল পরিবর্তন আসে তাই তখন সব কিছুই যেন অনেক আনকোড়া লাগে। আর সেই আনকোড়া বয়সটাই মনে হয় সেই রক্তগরম বয়স।

সেই রক্তগরম বয়সে যে বিষয়টা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল সেটা হচ্ছে আড্ডা মারা। তাও আবার এক দুই ঘণ্টার ১০০ মিটার স্প্রিন্ট নয় একেবারে টানা কয়েকদিনের ম্যারাথন আড্ডা।

সেই বয়সে ঈদের শপিং নামে আমার বা আমার বন্ধুদের কোনো শপিং ছিলনা। বাসা এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ঈদের শপিং বাবদ যে টাকা বরাদ্দ হতো সেই টাকা দিয়ে যা যা কেনা হতো তা হলো:

১. নামী দামী বিদেশী সিগারেট
২. ভেল্কি লাগিয়ে দেয় সেই রকম লাইটার। অর্থাৎ আগুন জ্বালানোর জন্য লাইটারে চাপ দিলে মিউজিক বাজতো অথবা রঙ বেরঙের লাইট জ্বলতো।
৩. নামী দামী পারফিউম
৪. বাংলা ও ইংরেজি গানের সিডি
৫. গল্পের বই
৬. ওর জন্য একটা গিফট (যদি কারো গার্লফ্রেন্ড থাকে তাহলে এটা তালিকার প্রথমে স্থান পায়)

মোদ্যাকথা হচ্ছে ঈদের নতুন কাপড়ের স্থানই নেই এই তালিকায়। আর আমার মনে হয় আমার সাথে অনেক পাঠকেরও সেই বয়সের ঈদের বাজারের তালিকা মিলে যাবে। আর আমাদের মা বাবাদের মতে এইসব অকাজের জিনিষ কেনার ধুম পড়তো ২০ রোজার পরে এবং আমাদের প্রাণের চেয়েও প্রিয় এই সব কাজের জিনিষ কেনার জন্যই আমাদের ম্যারাথন আড্ডা শুরু।

আমি ও আমার বন্ধুদের ম্যারাথন আড্ডাটার আরো একটা উদ্দেশ্য ছিল এইসব “অতি প্রয়োজনীয়” জিনিষ পত্র কেনাকাটা করার পাশাপাশি “যদি কাউকে পেয়ে যাই”। মেডিকেল জীবনে আমি ছিলাম চরম রকমের ফাঁকিবাজ ও উদাস তাই সেই গণ্ডির কোন বন্ধুর সাথে ম্যারাথন আড্ডার সম্পর্ক আমার গড়ে উঠেনি। আমার আড্ডার বন্ধু বান্ধব ছিল আমার স্কুল কলেজের এবং সেই সূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের এবং চারুকলার কিছু ছেলে মেয়ে। আর তাই আমাদের আড্ডার স্থানগুলো ছিল টি এস সি, বুয়েট ক্যান্টিন চত্বর বা কোনো ফ্যাকাল্টির বারান্দা। ২০ রোজার পর থেকে আড্ডা চলতো প্রতিদিন। আড্ডা শুরু দুপুরের দিকে। আর আড্ডা শেষ হতো রাত দু টা তিনটার দিকে। এভাবে প্রতিদিনই আড্ডা চলতো প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টা আর সর্বশেষ ও সবচেয়ে বড় আড্ডাটা চলতো ঈদের দিন ভোররাত পর্যন্ত। আর সেই আড্ডাটা শুরু হতো চাঁদ-রাতের সকালে অর্থাৎ আড্ডার মেয়াদ প্রায় ২০ ঘণ্টা। আর যদি কোনো কারণে লাজুক চাঁদকে গুঁতিয়েও উঠানো সম্ভব না হলেতো সোনায় সোহাগা। চাঁদ না উঠলেও আমাদের জন্য সেটা আরেকটা ঈদ আরো একদিন বাড়তি আড্ডা বাড়তি আনন্দ। অর্থাৎ সম্ভাব্য চাঁদ-রাতের সকালে শুরু হওয়া আড্ডা রাত তিনটায় শেষ হয়ে আবার সেই আড্ডাটা পরদিন সকাল দশটায় শুরু হতো।

আমাদের আড্ডার স্থানগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তবে প্রতিদিনই আড্ডা শুরু হতো নীরব হোটেল থেকে। আমরা সবাই যেহেতু প্রতিদিনই তিনটি করে রোজা রাখতাম তাই নীরব হোটেলে দুপুরের ইফতার সেরে আড্ডা শুরু। তারপর বুয়েট, সেখান থেকে টি এস সির গরম ও সর গরম বিকেলের আড্ডা। তারপর নিউ মার্কেট বইপাড়া আর আমাদের সন্ধ্যার ইফতারটাও হতো সেখানেই। খোলা আকাশের নীচে গোটা বিশ ত্রিশ জন বইপাড়ার ঠিক মাঝখানে গোল হয়ে বসে পেঁয়াজু পুরি ছোলা শিঙাড়া চা আর মুড়িভর্তা। তারপরের আড্ডার আস্তানা এলিফ্যান্ট রোডের রেইনবো গলি কবির ভাই এর রেকর্ডিং দোকানের সামনে। সেখানে ছুটতো চা আর সিগারেটের বন্যা। সেখান থেকে আড্ডাটা শেষ আস্তানা, ইস্টার্ন প্লাজার দিকে ধাবিত হতো। আর সেই আমলে ইস্টার্ন প্লাজা ছিল জাঁক জমকে পূর্ণ মানে হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রেমিকা খোজার হট স্পট। তাই রাত আট টা থেকে শুরু হতো সেই আড্ডা আর ভাঙতো সেই রাত দুটা বা তিনটায়। এমন বহুদিন হয়েছে যে সেই প্লাজার দোকান মালিক আর আমরা একসাথে বের হচ্ছি। দারোয়ান পারলে আমাদেরকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে আর আমরা পারলে ইস্টার্ন প্লাজার মেঝেতে টানা কার্পেট বিছিয়ে রাতটা সেখানেই কাটাই। এত দুর্দান্ত সুন্দর ও সুখময় ছিল সেই দিনগুলো। তবে যেদিন সরকার আনুষ্ঠানিক ভাবে ঈদের ঘোষণা দিতেন অর্থাৎ আসল চাঁদরাতে আড্ডা গড়াতো মোহাম্মদপুর আড়ং পর্যন্ত। রাত বারোটার দিকে গোটা বিশ ত্রিশ জন মিলে হুমড়ি খেয়ে পরতাম আড়ং এর সবচেয়ে উপরের তলার পাঞ্জাবী সেকশনে। ঈদের বরাদ্দকৃত সব টাকা যেহেতু সিগারেট পারফিউম আর সিডি খেয়ে ফেলেছে সুতরাং হাতে যা আছে সেটা দিয়েই অন্তত একটা পাঞ্জাবী কেনা ঈদ উপলক্ষে। আর সেই রাতে সেই সময় আড়ং এর পাঞ্জাবী কেনা সে আরেক হুলুস্থুল ব্যাপার। তখন আড়ং আর আড়ং নেই একেবারে আস্ত মাছের বাজার। চারিদিকে লোকজন, চেঁচামেচি, একেবারে কাহিল অবস্থা। পাঞ্জাবী একটা তো ক্রেতা তিনজন। ডিজাইন একটা তো সেটার উপর চোখ ছয় জোড়া। সাইজ হয় তো পছন্দ হয় না, পছন্দ হয় তো সাইজ হয় না। আর যখন সাইজ ও পছন্দ দুটোই হয় তখন পকেট বাবাজী গলা শুকিয়ে বসেন। পাঞ্জাবীর হ্যানগারগুলোর সামনে লাইন, ট্রায়াল রুমের সামনে লাইন ক্যাশিয়ারের সামনে লাইন আবার কোনো সুন্দরী মেয়ে- তার পেছনেও লাইন। কেউ কেউ আছে এত ধৈর্য নেই। ট্রায়াল রুমের সামনে লাইন অতএব সবার সামনেই হঠাৎ করেই গায়ের গেঞ্জিটা খুলে ফেললো। আড়ং এর হাই পাওয়ারের সবগুলো বাতির কড়া আলোয় তার ঘর্মাক্ত শরীর চিক চিক করছে আর সাথে সাথেই কয়েক শত চোখ তার শরীর গিলছে মুখ হা করে। অন্যদিকে কিছু মেয়ের চোখে লজ্জা অথচ তাকিয়ে আছে সেই উদাম শরীরের দিকে আর তাদের এই বেহায়া আচরণকে ব্যালেন্স করছে তাদের ঠোঁটের কোনে ঝুলে থাকা মুচকি হাসি। এই হ য ব র ল এর মধ্যে থেকেই কোন রকমে পাঞ্জাবী আর পায়জামা কিনে শেষ গন্তব্য এলিফ্যান্ট রোড। এলিফ্যান্ট রোড থেকে এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে গন্তব্য সোজা বাড়ি। ম্যারাথন আড্ডার পরে কেনাকাটা সেরে যখন বাড়ি ফেরা তখন ভোর প্রায় সাড়ে চারটা। বাসায় ফিরে একটা হট শাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়া মাত্রই ঘুম মাতার আশীর্বাদ সরাসরি কাজে লেগে যায় অতঃপর আমি ঘুম নগরীর বাসিন্দা হয়ে যাই।

“কিরে ওঠ নামাযে যাবিনা” নানীর চিৎকারে ঘুম ভাঙে। তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে তাকিয়ে দেখি ভোর ছয়টা। ওহ মাই গড আজ ঈদ, মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। মুহূর্তেই গোটা বিশ্বের সব এনার্জি যেন আমার উপর ভর করে। সেই ঘোরে পানি ঢালেন মামা। দরজায় এসে জানান দেন আর দশ মিনিটের মধ্যে নীচে না নামলে নামায মিস, মানে আমাকে রেখেই উনারা রওয়ানা দেবেন সেই ধরনের একটা সুক্ষ হুমকি দিয়ে যান। অতএব তাড়াহুড়া করে একটা কাক গোসল দেয়া। গোসল থেকে বের হতেই নীচ থেকে গাড়ির হর্ন। গাড়িতে সবাই উঠে বসে আছে এবং একমাত্র আমার জন্য অপেক্ষা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়া করে পাঞ্জাবীটা গায়ে গলানোর চেষ্টা। দুহাত গলেছে মাথাটা পাঞ্জাবীর কলার পর্যন্ত গিয়ে ফেঁসেছে। গতরাতে ট্রায়াল রুমের সামনে লম্বা লাইন থাকার কারণে ট্রায়াল দেবার সময় হয়নি। আর তার ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। আমি ৪২ সাইজের পাঞ্জাবীর পরি আর এটাও ৪২ তাহলে সমস্যাটা কোথায়। যা হোক সেই এনালাইসিস করার সময় নেই এই মুহূর্তে। অত:পর বেড়িয়ে থাকা হাতদুটোর আঙুল দিয়ে পাঞ্জাবীর বোতাম খোলার চেষ্টা। আর স্বভাবতই নতুন পাঞ্জাবীর বোতাম খুব শক্ত হয়ে আটকে থাকে। দুহাত আর ফেঁসে যাওয়া মাথা নিয়ে চলে বোতাম খোলার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ এক সময় শেষ হয় কিন্তু তারপরেও পাঞ্জাবীটা খুব টাইট। যাই হোক। পায়জামা টান দিয়ে তাড়াতাড়ি পা দুটোতে গলিয়ে দেয়া মাত্রই আসল কাহিনী শুরু। এই পায়জামার দড়ি নেই। কি হবে। পায়জামা ধরেই নানীর রুমে গেলাম দড়ির আশায় আর ইজ্জত রক্ষার আশায়। নানী শাওয়ারে। এখন কি হবে? নিজের ঘরে ফিরে এসে একটা বেল্ট দিয়ে পায়জামাটাকে খুব শক্ত করে কোমরের সাথে বেধে পায়জামা পরা হলো। বেল্ট টা এত জোড়ে বাধা হয়েছে মনে হচ্ছে আজকে এই পবিত্র ঈদের দিনেই বুঝি কোমরটা কেটে দুভাগ হবে। ঐদিকে গাড়ির হর্ন বেজেই চলছে। কোন রকমে নতুন স্যান্ডেল গলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে গিয়ে গাড়িতে বসা। সময় ৬টা ৩৫। গাড়িতে নানা মামা বাড়ির কাজের ছেলে দারোয়ান ড্রাইভার আর আমি। অগত্যা চাপাচাপি আর কোল সীটে বসে ঈদ গাহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা। গাড়িতে বসে টের পাচ্ছি কোমরে বেল্টের চাপে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে। ভাগ্যিস জাতীয় ঈদগাহ বাসা থেকে কাছে আর ঈদের দিন সকালে কোন জাম থাকে না তাই ১৫ মিনিটেই এই পুলসিরাত পার হওয়া গেল। কিন্তু ঈদের নামাজের কারণে গাড়ি পার্ক করতে হয় অনেক দূরে। গাড়ি থেকে বের হয়েই টের পেলাম দড়ির কাজ কি আর বেল্টে হয়। এত টাইট করে চিপকানোর পরেও পায়জামা খুলে পড়ি পড়ি করছে। এদিকে গাড়ি থেকে নামার পর নানা চিৎকার দিয়ে বললেন আরে জলদি চল, নামাজ শুরু হলো বলে। তাকিয়ে দেখি মামা বাড়ির কাজের ছেলে দারোয়ান আর ড্রাইভার নানার পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছে। আর আমি এক হাতে পায়জামা ধরে তাদের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি। চারিদিকে হাজার হাজার চোখ এই রকম সরগরম মহলে দৌড় দেবার ঝুঁকি নেব কি নেব না সেটা ভাবছি। মনে হচ্ছিল সময়টাকে থামিয়ে দেই। আর আমি ঠাণ্ডা মাথায় একটা রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরে গিয়ে পায়জামায় দড়ি গতিয়ে ঠিক করে পায়জামা পড়ে ফিরে এসে সময়টাকে চালু করি। নামাজের একামত আমার ভাবনায় ভাটা ধরালো। আর তো উপায় নেই। কি করি। দৌড় দেব কি দেব না। এক মুহুর্ত ভাবলাম ইজ্জত রক্ষার মালিক আল্লাহ। আর আজকে তো ঈদ আজকে উপরওয়ালা ইজ্জত রাখবেনই ইনশাআল্লাহ। এই ভেবেই এক হাতে পায়জামা আর বেল্ট ধরে আর আরেক হাতে স্যান্ডেল ধরে দৌড়। অত:পর নামাজ আদায় হলো। পুরো নামাজের সময়টাই মনোযোগ পুরোটাই পায়জামার দিকে আর নামাজের রুকু সেজদার সময় অনেক ধরনের ক্যারিশ্মা করে পায়জামাকে নিজের শরীরের সাথে আগলে রাখার চেষ্টা চললো এবং সফল ভাবে ইজ্জত সহকারেই ঈদের নামাজ আদায় হলো। নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই কোলাকুলির ঢল। আশেপাশে পরিচিত অপরিচিত যে বা যিনিই আছেন তাদের সাথে কোলাকুলি। এভাবে কোলাকুলি করতে করতে বন্ধু আসাদের সাথে দেখা। তার সাথেও কোলাকুলি একবার নয় দুইবার। দ্বিতীয় বার কোলাকুলি করার পরে সে বলছে তোর দুই হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবী এত টাইট কেন?

বুঝলাম প্রাইস ট্যাগ টা খুলতে ভুলে গেছি। পায়জামার সাথে এখন প্রাইস ট্যাগ চিন্তা যুক্ত হলো।
যা হোক বন্ধুকে উত্তর দিলাম

- এটা এই ঈদের ইসটাইল বুঝেছিস।
- আরে মামা ট্রায়াল দেস নাই সেটা বল
- আরে মামা তুইও তো ছিলি, গত রাতে আড়ং এর রঙ তামাশা দেখব না পাঞ্জাবী ট্রায়াল দেব
- যাকগে বিকালে কি করছিস
- কিছুই না
- তাহলে চল শুরু হোক
- আচ্ছা তবে হোক শুরু আড্ডা।
- কোথায়?
- এলিফ্যান্ট রোড
- কবির ভাই, রেইনবো গলি
- হুম
- তাইলে তুই মাসুদদেরকে বলে দে
- আর আমি সোহাগদেরকে জানাই
- বিকাল ঠিক চারটায়
- আচ্ছা
- আচ্ছা তাহলে দেখা হচ্ছে দোস্ত
- ঈদ মোবারাক
- ঈদ মোবারাক- আর শোন বাসায় গিয়ে প্রাইস ট্যাগটা খুলে ফেলিস।

ঈদ আসে, ঈদ চলে যায়। রেখে যায় এই রকম কিছু বিচ্ছিন্ন বীভৎস রকমের সুন্দর সুখ স্মৃতি। জীবনের মধ্যপথে দণ্ডায়মান মানুষের ঈদগুলো হয়তো সেই রকম উদ্যম পূর্ণ বয়সের মত চমকপ্রদ হয় না। তবে সেই চমকপ্রদ বয়সের ঈদের ছোট ছোট সুখগুলো আজও আমাদেরকে ঈদের আনন্দ দেয়। কোন এক বর্ষামুখর রাতে বা কোন বসন্ত দিনের গোধূলি লগ্নে অথবা কোন কাঠ চৌচির গরম দিনে যখনই এই স্মৃতিগুলো মনের সিন্দুক থেকে উকি ঝুঁকি দেয় ঠিক সেই ক্ষণ আর সেই দিনগুলোই মনে হয় ঈদ। এই ছোট ছোট ঈদ আনন্দগুলোর স্মৃতিচারণা আমাদের প্রতিটি দিনকে করে তুলুক এক একটি ঈদের দিন।





এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-Jun-2019

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot