bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



উপলব্ধি
এম এস আরেফীন



বড় সাহেবের কামরার দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলেন মতিন সাহেব। ঠিক এই মুহূর্তে উনার মনটা দুর্দান্ত রকমের খারাপ এবং এই মন খারাপের জোয়ার চোখের মাটিকেও সিক্ত করেছে। খুব ভাল পরিবেশও অনেক সময় বৈরী হয়ে দাঁড়ায় ঠিক যেমন এই মুহূর্তে এই অফিসের এত সুন্দর পরিবেশটিও মতিন সাহেবের কাছে চরম বৈরী লাগছে। কারণ তিনি মন খারাপের জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে মন খুলে কাঁদতে পারছেন না।

এই প্রাইভেট কোম্পানিতে মতিন সাহেব কাজ করছেন আজ প্রায় ২৪ বছর। মতিন সাহেব যে একজন সৎ ব্যক্তি শুধু তাই নয়, তিনি প্রচণ্ড রকম নিষ্ঠাবান একজন ব্যক্তি। আর বিশেষ করে কাজের প্রতি মতিন সাহেবের নিষ্ঠার পরিমাণ একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। আর এই কারণেই হয়তো এই দীর্ঘ ২৪ বছরে গোটা সাতেক পদক ও কিছু সনদ তার ঘর ও তার সম্মান কে আলোকিত করেছে। শুধু পদক বা সনদ প্রাপ্তিই নয়, তার থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে প্রতিদিনই কর্মস্থলে বড় বস থেকে শুরু করে পিওন আর্দালি সবার মুখেই কোন না কোন প্রশংসা তিনি কুড়িয়েছেন।

অথচ একটা সাধারণ ভুলের জন্য বড় সাহেব আজকে মতিন সাহেবকে বেদম ঝারি দিলেন। বসের ঝারিতে মতিন সাহেবের মন খারাপ হয়নি। তবে, যে দুটি বিষয় মতিন সাহেবের মন ভিজিয়েছে তা হলোঃ

১. কাজের ভুল
২. ন্যায্যতা বা আরেক ভাষায়, ফেয়ারনেস

কাজের ভুলটাও বড় বিষয় নয়। এর পরের বার ঠিক করে নেয়া যাবে। কিন্তু ন্যায্যতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়াটা একটা বিশাল ব্যাপার। আর এই ধরনের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মানেই একটা বড় পরিবার আর সেই পরিবারের হেড হলেন বড় বস। আর সেই বড় বস যদি তার পরিবারের সদস্য অর্থাৎ তার কর্মচারীদেরকে ন্যায্যতা প্রদান করতে ব্যর্থ হন তাহলে এটা বড় বসের জন্য যেমন লজ্জাস্কর তেমনি তার কর্মচারীদের জন্য একটা হুমকিও বটে।

মতিন সাহেব এই কোম্পানিকে অনেক কিছু দিয়েছেন। ছোটখাটো দেয়ার পরিমাণ তো হাজারে হাজার, তবে বড় বড় কাজ করে, প্রজেক্ট শেষ করে কোম্পানিকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তার উদাহরণও গোটা ত্রিশের কম হবে না। মতিন সাহেবের দেয়া গোটা তিরিশেক ভাল কাজের বিপরীতে মাত্র একটি ভুলের জন্য বস তাকে এত কষ্ট, এত ঝারি বা বকুনি দিয়েছেন এটা একেবারেই ন্যায্য নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা মানব প্রজাতি ভাল কাজগুলো ভুলে যাই। কেউ একজন দশটা ভাল করার পরে যদি একটা খারাপ কাজ করে তাহলে আমরা সেই একটা খারাপের পা ধরে টানাটানি করি এবং তার আগের দশটা ভাল কাজ দিব্যি ভুলে গিয়ে ঐ একটা খারাপকে কেন্দ্র করে সেই ব্যক্তিকে নাজেহাল করি এবং আরো অনেক কিছুই করি। কিন্তু এটা একেবারে অন্যায্য।

মতিন সাহেব যদি কোন বড় কোম্পানির মহা কর্মকর্তা হতেন তাহলে তিনি একটা রেকর্ড মেইন্টেইন করতেন যেখানে সব কর্মচারীর ভাল এবং কাজ মন্দ কাজ লিপিবদ্ধ করতেন। এবং একজন কর্মচারীকে তখনই সাইজ করতেন বা ঝারি দিতেন যখন তিনি দেখতেন যে লোকটির খারাপ কাজের সংখ্যা ভাল কাজের তুলনায় বেশী। অথচ এই ধরনের প্রফেশনাল প্রাইভেট কোম্পানিতে এই ধরনের রেকর্ডের কোন নিয়মই নেই।

রাতের খাবার গ্রহণের জন্য মতিন সাহেব হাত ধুয়ে খাবার টেবিলে আসলেন। উনার স্ত্রী রওশন টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন। উনাকে সাহায্য করছেন তাদের বড় ছেলে স্মরণ আর ছোট মেয়ে স্বর্ণা। সবাই খেতে বসেছে। ভাজি ভর্তা দিয়ে খাওয়া শেষ করে মতিন সাহেব গরুর ভুনা নিলেন। প্রথম লোকমা মুখে দিয়েই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কোন লবণই হয়নি। মেজাজ ধরে রাখতে পারলেন না। ভাতের থালাটা জোরে মাটিতে ফেলে দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গর্জন করে উঠলেন।

- এসব কি রান্না করো! গরুর ভুনায় এক ফোটা লবণ নেই। যত্তোসব অকর্মার গুষ্টি।

মতিন সাহেবের এই অগ্নিরুপ দেখে তার ছেলে স্মরণ, মতিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল।

- ছি, বাবা ছি। তুমি এই ধরনের একটা কাজ করতে পারলে। খাবারে লবণ হয়নি এই সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি মায়ের সাথে যে ব্যবহার করলে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য ও ন্যায্য আচরণ নয়।

প্রথমত তোমার এই ৫২ বছরের জীবনে তুমি যদি প্রতিদিন তিন বেলা করে খাবার খেয়ে থাকো তাহলে (স্মরণ মোবাইলের ক্যালকুলেটরে হিসাব করে) তুমি সর্বমোট ৫৬৯৪০ বেলা খাবার খেয়েছো। সেখানে এক বেলা খাবারের একটি আইটেম যদি গ্রহণের অনুপযোগী হয় সে ক্ষেত্রে ৫৬৯৪০ এর বিপরীতে একটি বেলার খাবার খারাপ হবার কারণে তুমি একজন মানুষ হিসেবে এমন আচরণ করতে পার না। একবার ভেবেছ, এই শহরে অনেকেই আছে যারা সারা দিনে মাত্র একবার খাবার গ্রহণের ক্ষমতা রাখে, আবার কেউ কেউ আছে ডাস্টবিনে বসে তাদের রাতের ডিনার সারে।

দ্বিতীয়ত, এ পর্যন্ত তোমাদের ২৩ বছরের বৈবাহিক জীবনে মা তোমার জন্য হাজার হাজার বেলা রান্না করে খাইয়েছেন। গত ২৩ বছরে তুমি কি একটি বেলা মাকে রান্না করে খাইয়েছো! এমন অনেক সময় গেছে মা তোমাকে আমাদেরকে এমন এমন সব মজার রান্না খাইয়েছেন যা আমাদেরকে অভিভূত করেছে, চমক দিয়েছে। এই রকম গোটা পঞ্চাশেক চমক দেয়া খাবারের বিপরীতে মাত্র একটি বেলা একটি আইটেম খারাপ রান্নার কারণে তুমি মায়ের সাথে যে আচরণ করলে তা মোটেও ন্যায্য নয়। যদি হিসাবটা এমন হয় যে মায়ের রান্না করা খাবার আমাদেরকে ও তোমাকে পঞ্চাশ বার চমকে দিয়েছে এবং তার বিপরীতে মা একান্ন বার খুব খারাপ রান্না করে আমাদের মন বিষিয়ে দিয়েছে তখন ভাল মন্দের পাল্লায় মন্দের ওজন বেশী বিধায় তুমি হয়তো মাকে বকা ঝকা করলেও করতে পার। এবং তখন হয়তো তোমার রাগ ও দুর্ব্যবহার ন্যায্য হতো।

একবেলা খাবারের মাত্র একটি আইটেম খারাপ রান্নার কারণে তুমি মায়ের গত ২৩ বছরের ভাল করে রান্না করা হাজার হাজার আইটেমের কথা ভুলে গিয়ে সেই খারাপ রান্না করা খাবারটার পা ধরেই টানা টানি করছো। মাত্র একটা ভুলের কারণে হাজার হাজার নির্ভুল গুলোকে তুমি ভুলে গেলে এক নিমিষেই। বরং সেই কারণেই মাকে তুমি বকা ঝকাও করেছো অর্থাৎ মাকে তুমি ন্যায্যতা বা ফেয়ারনেস দিতে ব্যর্থ হয়েছো। তুমি আমাদের পরিবারের মাথা। তুমি যদি ন্যায্যতা দিতে ব্যর্থ হও তাহলে এটা তোমার জন্য যেমন লজ্জাস্কর তেমনি আমাদের জন্য হুমকিও বটে।

মতিন সাহেব তার বারান্দায় চেয়ারে হেলে বসে আছেন। রাত প্রায় একটা। গত দু ঘণ্টা ধরে তিনি এই চেয়ারে বসে আছেন এবং মাঝে মাঝে তার চোখটা ভিজে আসছে।

বস বকেছেন বা ছেলে কথা শুনিয়েছে সে জন্য নয়, মতিন সাহেবের মন খারাপ তার নিজের কমতির কারণে। একজন স্বামী হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে, পরিবারের একজন কর্তা হিসেবে এবং সর্বোপরি একজন মানুষ হিসেবে তিনি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ সমাজের অন্য এক মানুষের কাছে তিনি সেই ন্যায্যতাই আশা করছেন।

উপরওয়ালা আমাদের সবাইকে কোন না কোন খুত দিয়েই এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। মানুষ হিসেবে আমরা কেউই নিখুঁত নই। এবং আমাদের সবার মাঝে কিছু না কিছু খুত আছে বলেই পৃথিবী চলছে। তবে মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম ও পরম দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের নিজেদের খুত বের করা, সেটা স্বীকার করা এবং সেই খুতটাকে ঠিক করা।

এই ইম্পারফেক্ট আমাদেরকে নিয়েই আমাদের এই ইম্পারফেক্ট পৃথিবী। তবে আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে আমরা যখন আমাদের নিজেদের খুতগুলোকে সারানো শুরু করবো একমাত্র তখনই সম্ভব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি “A world with less problems” উপহার দেয়া।




এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 19-Jun-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far