bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













গল্প
অচেনা যুদ্ধ
এম এস আরেফীন



প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমেও কেমন হিম হিম ভাব। প্রকৃতি কি মানুষের মনের অবস্থা বা শঙ্কা টের পায় আর তার সাথে তাল মিলিয়ে সে নিজেও তার রূপ বদলায়? নাহ.... তাতো হবার কথা না। প্রকৃতি যদি সাহাদাত মিয়ার মনের অবস্থা টের পেয়েও থাকে তাও তো শুধুমাত্র তার মনের সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টি আর হিম ভাব নামিয়ে যারা সুখে আছে আজ রাতে তাদেরকে কষ্ট দিতে পারেনা। কারণ প্রকৃতি তো নিরপেক্ষ ও মধ্যাবস্থানকারী। সাহাদাত মিয়ার কারণে অন্যদেরকে কষ্ট দেওয়া প্রকৃতির নিয়মে নাই। নাকি মানুষের মন ও শরীর প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আজ না হয় সাহাদাত মিয়ার জীবনে এক ভিন্ন রকম ভয়াল রাত কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে যে মানুষগুলো সুখে আছে তাদের কাছে হয়তো এই বৃষ্টিস্নাত রাত স্বর্গ-সম। যদিও দেশের এই পরিস্থিতিতে কারোরই সুখে থাকার কথা না। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে মানুষ যেমন আবোল তাবোল বকে তেমনি মানসিক চাপেও মানুষ এলেবেলে ভাবে। সারারাত ধরে সাহাদাত মিয়া ভেবেই যাচ্ছে। আর তার পাশে তার স্ত্রী রশিদা আর ছেলে রায়হান ঘুমিয়ে। কয়েকবার চেষ্টা করেও নিজের অস্থিরতাকে কাবু করতে পারেনি সাহাদাত তাই তার চোখে ঘুম নেই। ঘুম নেই কারণ সামনে নিশ্চিত অনিশ্চয়তা। হাতঘড়ি টেনে দেখলেন রাত তিনটা চল্লিশ। খুব ক্লান্ত তার শরীর। চোখ ভারি হয়ে আসছে। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে সাহাদাত মিয়া আবারো, ঠিক সেই সময় ঘরের দরজায় কড়া নাড়লো মহা অনিশ্চয়তার মাহেন্দ্রক্ষণ।আর এর পরপরই ঘরের টিনে তিনটা টোকা। নির্দেশ মত উঠেই ঘরের বাতি জালিয়ে কাশি দিয়ে বাইরে সংকেত পাঠালেন রশিদ মিয়া। তার কাশি আর বাতির আলোয় রশিদাও বিছানা ছেড়ে উঠে গেল। সব কিছুই গোছানো ছিলো সাহাদাত মিয়ার। ঘরের লাগোয়া স্নান-ঘরে হাত মুখ ধুয়ে কাপড় পরে নিলো সে। কব্জিতে হাত ঘড়িটা গলিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালো। অনেকক্ষণ দুজনার দৃষ্টি এক সম্মোহনী মিলন আবেশে মুখোর ছিলো। বাইরে থেকে কাশির সংকেত আসতেই সম্বিত ফিরে পেলো সাহাদাত মিয়া। স্ত্রীর কপালে চুমু দিয়ে বললো -

- যাইরে, দোয়া রাখিস। আর ফিরি কিনা জানিনা তয় আমারে মাফ কইরা দিস। আর পোলাটার দিকে খেয়াল রাহিস। আর এই চাবিটা ধর। ঐ ট্রাংকের চাবি। ভিতরে ৩৪০০ টেহা আসে। জমাইসিলাম তোর লেগাই। বিপদে পড়লে কাজে লাগাইস।
- যুদ্ধে যাইবেনই?
- হ। আশেপাশে কি হয় দেহসনা? অখিল মাতব্বরের ডাঙর মাইয়াডারে উঠায়া লয়া গেল। পরে ওর লাশ উঠাইলাম পুইবা পুকুর থেইক্যা। তুই দেহসনাই, আমি দেখসি। ওর শরীরে কুত্তার বাচ্চাগুলা বেলেড দিয়া ওগো দেশের মানচিত্র আঁকসে। গত সপ্তাহে মনসুরের বাড়ির সবকয়টা পোলারে জবাই দিসে। ঘোষ বাড়ি, ওরা হিন্দু তাই সবগুলা পোলার অঙ্গ কাটসে, তিন বছরের বিপ্লবরেও রেহাই দেয় নাই। পরে সব কয়টারে ফাঁসিতে ঝুলাইসে। আর সইহ্য হয়নারে আর সইহ্য হয় না। ভাষা লইতে চাইসে - দেইনাই। দেশও দিমুনা। মরলে, মাইরা মরুম। মাইরা..... তারপরে মরুম। আসিরে। তুই নিজের যত্ন নিস।

খিল খুলে পা বাড়াতেই রায়হান উঠে গেল - বাজান কই যাও?
- যুদ্ধে যাইরে বাজান যুদ্ধে যাই...
- ঢিসুম ঢিসুম করতে যাও বাবা?
- হ রে, তুই মায়ের খেয়াল রাখিস।
- আইচ্ছা, যাও।

বলেই গায়ের কাঁথা টেনে আবারো ঘুমিয়ে গেল রায়হান।





৭১ এর ডিসেম্বরের তের তারিখে সুবে্হসাদেকের সময় সাহাদাত মিয়াকে মুক্তিযোদ্ধারা বাসায় নিয়ে আসে। রায়হানের আজও মনে আছে সেই দিনের কথা। কারণ সেই দিনটাও অনেক ভয়াল ছিলো। সেদিন বাবা ফিরলেও তার হাত দুটো ফেরেনি। যুদ্ধ তার জীবন নেয়নি তবে পরিবারের উপার্জন কেড়ে নিলো। সাহাদাত মিয়া ছয় নং সেক্টরের হয়ে যুদ্ধ করেছে। নভেম্বরের ১৯ তারিখ রাতে এক অপারেশনে এক সহযোদ্ধা কে গ্রেনেডের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের দুহাত পেতে দেয় সাহাদাত। তারপরই সব অন্ধকার। এক জরাজীর্ণ হাসপাতালে চোখ খুলে সাহাদাত। ঝাপসা দৃষ্টিতে চোখ কচলাতে চায়। কিন্তু হাত আসেনা। শরীরের সব শক্তি দিলেও হাত উঠেনা। সেই হাসপাতালে চিকিৎসার পর ঘরে ফেরে সাহাদাত।

নতুন দেশ নতুন আশা। সেই আশায় বুক বেঁধে শুধু ভিটা বাড়িটা রেখে গ্রামের প্রায় সব জমি বেচে দিয়ে শহরে চলে আসে সাহাদতরা। স্ত্রীর বড় ভাই জামশেদের ব্যবসা আছে ঢাকা শহরে। জমি বিক্রির টাকা তার ব্যবসায় বিনিয়োগ দিয়ে লাভের টাকা গুনবে আর সংসার চালাবে, এটাই এখন একমাত্র ভরসা।

সেই ৭৩ সালে ঢাকা আসে রায়হান। তখন তার বয়স আট। মামার ব্যবসা বড় হয় আর সেই সাথে বড় হয় তাদের আয়। মামার ব্যবসায় বাবা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা সাহাদাতও সময় ও মেধা দুইই দিয়েছেন। হাত নাই তাই প্রত্যক্ষ ভাবে কাজে না আসলেও বুদ্ধি দিয়েছেন। মামার শ্রম আর বাবার মেধায় আজ তাদের ব্যবসা অনেকটাই বড়। ঢাকায় রায়হানদের একটা দালান আছে যেখান থেকে মাসে ভালই ভাড়া আসে। এর পাশাপাশি তাদের নিজেদের থাকার ফ্ল্যাটটাও ইন্দিরা রোডের অভিজাত এলাকায়। ইন্দিরা রোড, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, আড়ং, ধানমন্ডি এই এলাকা গুলো রায়হানের কাছে নিজের ডেরা বলে মনে হয়। মনে হয় খুব আপন। আর এই এলাকাতেই বড় হয় তার ছেলে অরিদ্র। অরিদ্র ঢাকার একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তৃতীয় বর্ষে পড়ে।





সকালে বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছেন রায়হান। অরিদ্র কাঁচুমাচু চেহারায় রায়হানের সামনে এসে দাঁড়ালো। রায়হান ওর দিকে নজর দিয়েও নির্লিপ্ত দৃষ্টি ছুঁড়লেন আবার কাগজে নিমজ্জিত হয়ে গেলেন। ঐ মুহূর্তেই সাহাদাত সাহেবের গলার আওয়াজ। বাবুজান ও বাবুজান। সাহাদাত সাহেব তার একমাত্র নাতিকে বাবুজান ডাকেন। হাঁক শুনেই অরিদ্র দাদুর ঘরে দৌড়ে গেল। কাজ সেরেই আবার দৌড়ে এসে বাবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।

- কত?
- উম.....উম.....
- উম টাকা মানে কি? তোর সাংকেতিক ভাষা তোর কাছে রাখ। কত লাগবে সেটা স্পষ্ট গলায় বল।
- তিন হাজার টাকা লাগবে বাবা
- হুম। উপলক্ষ?
- রুহানের জন্মদিন
- হুম। রুহানকে বলিস বছরে চারবার জন্ম না নিতে। এই এক বছরে এই নিয়ে চারবার তুই রুহানের জন্মদিনের কথা বলে টাকা নিয়েছিস। যা আমার বালিশের নীচে ওয়ালেট আছে নিয়ে আয়।

অরিদ্র এক দৌড়ে ওয়ালেট নিয়ে আসলো। রায়হান সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে অরিদ্রের হাতে দিয়ে বললেন
- সুনন্দার জন্মদিন আজকে সেই জন্য টাকা লাগবে বললেই হয়। আর শোন মেয়েটাকে নিয়ে ভাল একটা রেস্টুরেন্টে যাবি। হাজার হোক, কিছুদিন বাদে আমাদের ঘরের বৌমা হয়ে আসবে। আর শোন, তুই কখন ফিরবি?
- যুদ্ধ শেষ হলেই ফিরবো বাবা
- আচ্ছা তুই প্রতিদিন ঘর থেকে বের হবার সময় কেন বলিস - বাবা যুদ্ধে যাই?
- কি করবো বাবা বল? যেই মুহূর্তে ঘর থেকে বের হই রাস্তায় রিকশাওয়ালার সাথে বা সি এন জি ওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে যুদ্ধ, রাস্তায় জ্যামের সাথে মানুষিক ও সময় ক্ষেপণের যুদ্ধ, ইউনিভার্সিটিতে ভাল ছাত্রের দেমাগের সাথে যুদ্ধ, সুন্দরী মেয়েদের এটিচুডের সাথে যুদ্ধ, লেকচারারের সাথে প্রফেসরদের অনাকাঙ্ক্ষিত অত্যাচার তাদের সাথে যুদ্ধ, ক্যাম্পাসে রংবাজদের সাথে যুদ্ধ, ক্যান্টিনে অথবা রেস্তোরায় খাবারের ভেজাল নিয়ে যুদ্ধ, বাজারে সদাইয়ের দামামাদি নিয়ে যুদ্ধ, ফিরতি পথে সেই একই ট্রাফিক জ্যাম, ভাড়া, দরদাম, পড়াশুনা, ক্যারিয়ার, কম্পিটিশন আবার খুব পড়াশুনা করেও টিচারদের ফেভারেট ছাত্র না হবার কারণে কম মার্ক পাবার যুদ্ধ, এমনকি সারাদিন পরে বাসায় ফেরার পথে পাড়ার কোনায় পাতি মাস্তানদের সাথে যুদ্ধ। যুদ্ধের শেষ নেই তাই শান্তিও নেই। অথচ বাবা আমরা স্বাধীন হয়েছি আজ ৪৬ বছর। এই ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েও আমাদেরকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এ কেমন যুদ্ধ বাবা।নিজেদের সাথে নিজেদের এক অচেনা যুদ্ধ!

বলেই অরিদ্র তার ঘরে চলে গেলো। ঠিক আধা ঘণ্টা পরে অরিদ্র বের হয়ে গেল। বরাবরের মত বের হবার আগে বলে গেল
- বাবা, যুদ্ধে যাই বাবা।
- যা রে, আমার বীর পুত্র। আর হ্যাঁ শোন সুনন্দাকে আমাদের হয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিস।
- আচ্ছা আচ্ছা

অরিদ্রকে নিয়ে রায়হানের অনেক দুশ্চিন্তা। ছেলেটা অনেক সাদামাটা সহজ সরল একেবারেই ভোলা ভালা। এই অস্থির যুগে কোন নেশা পানি তো দূর, সে সিগারেট পর্যন্ত স্পর্শ করেনি। তার ঐ এক নেশা গল্পের বই আর আছে তার জানের জান বন্ধু রুহান আর ঐ সুনন্দা। সে কারো সাথে নেই পাছে নেই। ঘর থেকে ইউনি, ইউনি থেকে ঘর। মাঝে মাঝে রুহানের বাসায় আড্ডা আর ঐ মেয়েটার সাথে সময় কাটানো। তবে তার সমস্যা একটাই। সহজে রাগেনা, আর রাগলে থামেনা।







সন্ধ্যা সাতটা বিশ। অরিদ্র আর সুনন্দা বসে আছে একসাথে একটা রেস্টুরেন্টের ডেকে। ডেকের পাশ ঘেঁষে একটা বিশাল বিল। মাথার উপর তেরপল। খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা। বিলের পানিকে ছুঁয়ে আসা ঝিরিঝিরি বাতাস ওদের দুজনকে একটা পরম শান্তির পরশ দিয়ে যাচ্ছে। ওরা এখানে বিকালে এসেছে সুনন্দার জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে। স্ন্যাকিং শেষ করে অপেক্ষা করছে রুহানের। রুহান আসলেই ওরা ডিনারের অর্ডার দেবে। আকস্মিক ডেকের দরজাটা খুব জোরে খুলে গেলো। ওপাশ থেকে কয়েকটা ছেলে হৈ চৈ আর উশৃংখলতা করতে করতে ঢুকলো আর তাদের পাশের টেবিলে বসলো। ওদের পেছন পেছন রুহানও ঢুকলো। রুহান এসে ওদের পাশে বসলো।

- কিরে এত দেরী করে এলি যে?
- আর কি? যুদ্ধ করে এলাম
- কার সাথে?
- রাস্তার জ্যাম আর সি এন জি মামা
- হুম। যুদ্ধ, যাকগে, অর্ডার কর

রুহান মেনুটা কাছে নিয়ে কিছুক্ষণ দেখে-টেখে একটা ওয়েটারের দিকে হাত নাড়লো। ওয়েটার পাশে এসে জিজ্ঞেস করলো, ওরা কি অর্ডার করবে। ঠিক সেই সময় পাশের টেবিলে বসা উশৃংখল ছেলেগুলোর মধ্যে একটা ছেলে ওয়েটারকে বললো।

- এই ওয়েটার এদিকে আয়
- স্যার আমি এই টেবিলের অর্ডার নিয়ে তারপর আসছি
- ঐ টেবিলের অর্ডার পরে নিস। আগে আমারটা নে। আমার খুব খুধা লাগসে।
- স্যার উনারা আগে ডেকেছে আমায়
- তাতে কি? আমি এখন ডাকসি। তোরে এখনই আমার অর্ডার নিতে হইবো
- স্যার আমি এখনি অন্য ওয়েটার পাঠাচ্ছি
- না অন্য ওয়েটার না, তুই আয়

অরিদ্র বললো, আপনি আগে আমাদের অর্ডার নেন। তখন পাশে টেবিলের ছেলেটি চিৎকার করে ওয়েটারকে বললো, তুই এখনি আমার অর্ডার না নিলে জান হারাইবি। ভয় পেয়ে ওয়েটার পাশের টেবিলে গেল। তার একটু পরেই অরিদ্র উঠে গিয়ে ওয়েটারকে বললো, আপনি আমাদের টেবিলে আসেন, আগে আমরা ডাক দিয়েছি, আগে আমাদের অর্ডার নেন, তারপর উনাদেরটা নেবেন রুহান বলে উঠলো

- অরিদ্র, বাদ দে না, আমরা অপেক্ষা করি
- না, আমরা আগে ডেকেছি

উশৃংখল ছেলেটা বললো, ঐ ওয়েটার তুই এইখান থেইকা নড়সস কি তোর জান শেষ। অরিদ্র বলে উঠলো, আপনি আমাদের টেবিলে এসে এখনি অর্ডার নেন। তখন সেই ছেলেটা হুংকার দিয়ে উঠলো, ঐ তুই আমারে চিনস? অরিদ্র বললো, আপনি যেই হননা কেন তাতে কিছুই আসে যায় না, আমরা ওয়েটারকে আগে ডেকেছি তাই সে আমাদের অর্ডার আগে নেবে। কথাটা শোনা মাত্রই ছেলেটি তার কোমরে রাখা পিস্তলটা অরিদ্রের দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দিলো। মুহূর্তেই অরিদ্রের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।





আজ ১৩ই জানুয়ারি ২০২১। অরিদ্রের কেসের আজ শুনানি। কেসটা এর আগে আরো দু’টো আদালতে গেছে। টেকেনি। ওর হত্যাকারীরা এখনো উন্মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে আর রায়হান সাহেব ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে আদালতে ঘুরছেন। ছেলে হারানোর শোকে রায়হান সাহেবের স্ত্রী গত হয়েছেন ২০১৮ সালে, অরিদ্রের মৃত্যুর এক বছর পরেই। ঘরে এখন শুধু রায়হান সাহেব আর তার মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু বাবা সাহাদাত সাহেব। এই স্বাধীন দেশে সুবিচার এখনো সোনার হরিণ হয়েই রয়ে গেছে। সন্তান আর স্ত্রীকে হারিয়ে, ন্যায় বিচার না পেয়ে রায়হান সাহেব এখন অনেক ক্লান্ত। রায়হান সাহেব যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। কিন্তু অবাক বিষয় হচ্ছে উনার যুদ্ধটা তার নিজের দেশের মানুষদের সাথেই। নিজের লোকদের সাথেই। প্রতিবার যখন শুনানিতে যান তার কানে অরিদ্রের সেই কথাগুলো ভেসে আসে,..... চারিদিকে যুদ্ধ বাবা.....সবসময় যুদ্ধ.... …রাস্তায় পথে ঘাটে... …সবার সাথে.....সবকিছুর সাথে যুদ্ধ। বাসার ড্রইংরুমে সাহাদাত সাহেব শুয়ে আছেন। উনার মাথা আজকাল ঠিক নেই। বয়স ৮০ এর উপরে। প্রায়শই উলটা পালটা কথা বলেন। রায়হান সাহেব তার বাবাকে পেরিয়ে কোর্টে যাবার উদ্দেশ্যে বাসার দরজা খুললেন আর তখনই সাহাদাত সাহেব জিজ্ঞেস করলেন -

- কোই যাস বাজান
- যুদ্ধে যাই
- তুই কার লগে যুদ্ধ করস?
- জানিনা বাজান কার লগে যুদ্ধ করি
- যুদ্ধ করস কিন্তু জানস না কার লগে! এইডা আবার কেমন যুদ্ধ!

রায়হান সাহেব অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন, আর বলে উঠলেন।

এ এক অচেনা যুদ্ধ বাবা... অচেনা যুদ্ধ।





এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া



Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Apr-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far