গল্পএক এক / এম এস আরেফীন
আগের অংশ
জাহিনের ভাবনার সুতায় কাটা পড়লো। দরজায় নক হলো। উঠে দরজা খুলে দেখে মা দাঁড়িয়ে। তার মা মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, তোর মোবাইলে কি হয়েছে, পললী নাকি কয়েকবার চেষ্টা করেও তোকে পায়নি, তাই আমার মোবাইলে করেছে। নে ধর, কথা বল। ও হ্যাঁ, আর শোন, হ্যাপি বার্থ ডে। জাহিন কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল।
জাহিন ফোন নিলো
- হ্যালো - হ্যালো হ্যাপি বার্থ ডে - থ্যাংকস - কি হয়েছে তোমার বলতো - কিছু না, এমনি - এমনি, তাই বলে মোবাইল বন্ধ? - হুম - আচ্ছা তুমি সত্যি করে বলতো কি হয়েছে, তোমার নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে তা না হলে গলা কেন এমন স্তিমিত। - বলেছি তো কিছুনা। এমনি। - আচ্ছা শোন। এখন বাজে দুটা। তুমি এক ঘণ্টার মধ্যে রেডি হয়ে যাবে।আমি আসছি তোমাকে পিক করতে, তারপর তোমাকে তোমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় নিয়ে যাব। সেখান থেকে মুভি। মুভি শেষে রাতের ডিনার। আর তোমার জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে। আমাদের প্রেম জীবনের এটা প্রথম তোমার জন্মদিন পালন। একটু তো স্পেশাল হওয়া চাই। কি বলো? উফ তুমি কত ভাগ্যবান যে এক এক এ জন্মেছো। সারা পৃথিবী তোমার জন্মদিন পালন করে। কি ঈর্ষনীয় ব্যাপার ভেবে দেখেছো? - পললী, আমি আজ কোথাও যাব না - ও মা কেন? - বলেছি না, যাব না। - তা বলবে তো কেন যাবে না - আমি তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা - কারণটা বলতে সমস্যা কি - হ্যাঁ সেটাই সমস্যা। আর আমি বলেছি কারণটা আমি বলতে পারব না। - কেন? - কারণ....... কারণ........কারণ.....কারণ টা হচ্ছে আমার জন্মদিন টা মি.......
জাহিন কথা শেষ করতে পারল না। লাইন কেটে দিলো।
জাহিন কাঁদছে, পাগলের মত কাঁদছে, উন্মাদের মত কাঁদছে। কাঁদছে অবুঝ শিশুর মত।
আমরা অনেকেই কোন বিশেষ কারণে এক এক বা ৩১/১২ কে নিজের জন্ম তারিখ হিসেবে ব্যবহার করি। আমরা আসলে ভাগ্যবান যে আমরা আমাদের নিজেদের আসল জন্ম তারিখ জানি। আর তাই আমাদের সেই বিলাসিতাও আছে যে আমরা এক এক বা ৩১/১২ কে একটি নতুন অথচ ফেইক জন্ম তারিখ বানিয়ে ব্যবহার করতে পারি। অথচ আমাদের পাশাপাশি অনেক জাহিন ও রেজওয়ান আছে যাদেরকে আজীবন এই মিথ্যা মেকি এক এক, কে নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। বছরের ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিনে তারা এই পৃথিবীর বুকে এসেছিলো সেটা তাদের অজানা আর তাই তাদেরকে আজীবন ভর করতে হয় আমাদের ফেইক এক এক, এর উপর। যেটা আমাদের জন্য ফেইক বা ফান সেটা জাহিনদের ফেইট বা নিয়তি।
যে কারণে জাহিন বা রেজওয়ান দেরকে আজীবন ফেইক জন্মতারিখ নিয়ে ঘুরতে হয় তার লিস্ট হয়তো অনেক বড়। তবে মূলত দায়িত্ববোধ, সচেতনতা এবং স্বদিচ্ছা থাকলেই এই বিড়ম্বনা টা এড়ানো সম্ভব।
যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে, তা হয়তো আর আমরা ফেরাতে পারবো না, তবে আমরা যদি আরো দায়িত্ববান হই, সচেতন হই এবং স্বদিচ্ছা পোষণ করি তাহলে হয়তো সারাজীবন একটা মিথ্যা বয়ে বেড়ানোকে এড়াতে পারি।
আসুন আমরা প্রত্যেকেই সেই দায়িত্ব নেই যে, একটি শিশু জন্ম নেবার সাথে সাথেই তার জন্ম তারিখ ও নাম নিবন্ধন করি এবং একটা বার্থ সার্টিফিকেট বের করি।
আসুন সেই স্বদিচ্ছা পোষণ করি যেন জাহিনের মত প্রেমিকেরা তাদের প্রেমিকার সাথে তাদের প্রেম জীবনের প্রথম জন্মদিন গর্ব করে পালন করতে পারে।
সেই সচেতনতা গড়ে তুলি যেদিন আর কোন রেজওয়ানদেরকে সারাটা জীবন একটা মিথ্যা মেকি জন্মতারিখ বয়ে বেরাতে হবে না। যখন জাহিনদেরকে প্রত্যেকবার তাদের জন্ম তারিখ লেখা বা বলার সময় তীব্র অনুশোচনায় ভুগতে হবে না
আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দিন কে কাছে নিয়ে আসি যেদিন কোন ভিনদেশী মানুষ আমাদের দেশ ও দেশের গৌরবকে নিয়ে কোন কটাক্ষ করবে না। কোন ধারাভাষ্যকার যেন হেসে হেসে তাচ্ছিল্য করে বলতে না পারে - কি করে একটি দেশের ক্রিকেট টিমের সাতজন খেলোয়াড়ের জন্ম তারিখ হয় এক এক।
জাহিন রেজওয়ানেরা যেন সব সময় সগর্বে তাদের সঠিক ও সত্য জন্ম তারিখ বলতে ও লিখতে পারে, সেই হোক আমাদের প্রতিশ্রুতি।
বি দ্র: কোন ব্যক্তি অথবা কোন গোষ্ঠী যারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এক এক তারিখ বেছে নিয়েছেন তাদেরকে কোন ভাবেই কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে এই লেখার জন্ম হয়নি। এটি একটি সচেতনতা মূলক লেখা যেখানে সঠিক জন্ম তারিখ ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু ধারনাকে একটি সুতায় গাথা হয়েছে। কেউ যদি এই লেখা পড়ে মন ক্ষুণ্ণ হয়ে থাকেন তাহলে নিজ দায়িত্বে আপনার মনের ক্ষত আপনি সারিয়ে নেবেন। আপনার ব্যক্তিগত অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়ার জন্য লেখক দায়ী নয়।
আগের অংশ
এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|