bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













ছোটবেলার বন্ধু
এম এস আরেফীন



সেদিন এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হলো। কথোপকথনের সীমানা দশ মিনিটের এপারেই ছিলো। টুকটাক কিছু কথার মাঝে উনার একটা কথা আমার মনের আস্তানায় একটা নিবাস তৈরি করে নিলো। উনার সাথে কথা হয়েছে প্রায় এক দেড় মাস আগে। সেই নাতিদীর্ঘ কথোপকথনের কোন কিছুই আজ মনে নেই শুধু একটি কথা ছাড়া। আর কথাটা হচ্ছে, “আমার মায়ের দাঁত ব্যথা, আমি দেখলাম আমার মা দাঁত ব্যথার দোয়া পড়ছেন। আমি মাকে বললাম, মা তোমার দাঁতে ব্যথা তুমি দাঁতের ডাক্তার দেখাও।”

কথাটা শুনে খুব অবাক হয়েছি। কারণ অনেক দোয়ার কথা শুনেছি। দোয়া থেকে থাকলে সাধারণভাবে ব্যথার দোয়া থাকবে। কিন্তু এখানে বিষয়টা একেবারে সুনির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র দাঁত ব্যথার দোয়া। সেই সেদিন থেকেই এই কথাটা কেন জানি মগজ থেকে বেরই হতে চাচ্ছেনা। প্রথম প্রথম মনে হয়েছিলো বিষয়টা নতুন শুনেছি তাই মাথায় জেঁকে বসেছে। কিছুদিন পরে ভুলে যাবো। না, তা হলোনা। বিষয়টা একটা বিরক্তির পর্যায়ে চলে গেল। যেমন: ঘরোয়া অফিসে মানে, Work From Home এ অফিসের কাজ করছি, হঠাৎ মনে পরে গেলো। কথাটা মাথায় আসতেই চিন্তা শুরু হয়ে গেলো, তাহলে তো মাথা ব্যথার দোয়া, কোমর ব্যথার দোয়া, হাঁটুর ব্যথার দোয়া এই রকম বিভিন্ন ব্যথার দোয়াও আছে। আবার আরেকদিন, আমার নিজের মাথা ব্যথা শুরু হলো। দুটা প্যানাডল গেলার পরেও মাথায় একটা ভোতা ব্যথা রয়েই গেলো। ঠিক তখনই মনে হলো আচ্ছা মাথা ব্যথার দোয়া পড়তে পারলে মনে হয় মাথা ব্যথাটা সেরে যেত। আবার অন্য একদিন, পাগলামি চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠলো আর হঠাৎ মনে হলো আজকে সেই ব্যক্তিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবো, “ভাই আপনি একটু কষ্ট করে আপনার আম্মাকে জিজ্ঞেস করবেন দাঁত ব্যথার দোয়াটা কি”। মানে এই বিষয়টা মাথা থেকে নামছেই না।

দাঁতের ব্যথার দোয়া কথাটা শুনলে বিষয়টাকে যতটা ছোট বা তুচ্ছ মনে হয় বস্তুত বিষয়টা কিন্তু এতটা হালকা নয়। প্রথমত দাঁতের ব্যথার দোয়া থেকে থাকলে শরীরের আর সব অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যথার দোয়াও তাহলে আছে। কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির উন্নয়নে এই সমস্ত ছোট খাট খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আমরা হারিয়ে ফেলেছি। যেহেতু সেগুলো হারিয়ে ফেলেছি তাই সেই পথে আমার লেখা দীর্ঘ না করি। তবে এই দাঁত ব্যথার দোয়ার সাথে আরো একটা গভীর বিষয় ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। বিষয়টা হচ্ছে একাত্মতা বা নিবিড় সম্পর্ক। আরো খোলাসা করে বলি।
যেই ভদ্রলোকের মায়ের কথা বলছি তিনি বয়সে আমার বড় হবেন। সামনা সামনি আমি উনাকে দেখিনি তবে ছবি দেখে আর গলার ভারিক্কিতে মনে হয়েছে তিনি আমার থেকে অন্তত দশ বছরের বড় হবেন। সেই হিসেবে উনার বয়স ৫৫ বৈ কম হবেনা। তিনি ৫৫ হলে উনার মা নিদেন পক্ষে ৭৫ হবেন হয়তো। আমার জানা মতে তিনি রাজশাহীতে মানুষ। এখন আসুন আরো একটু গভীরে যাই। আমি ইন্টার পাশ দেই নব্বই দশকের শুরুর দিকে। সেই সময়ে, মানে আজ থেকে মাত্র পঁচিশ বছর আগেও আমাদের দেশে পেশা বলতে ছিলো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। এমনকি সেই সময়েও কেউ খোদ ঢাকায় ডেন্টালে চান্স পেলেও সবার একটা নাক সিটকানো ভাব ছিলো। এবং আপনারাও আমার সাথে একমত হবেন আজ থেকে পঁচিশ বছর আগেও খোদ ঢাকা শহরে দাঁতের উন্নত চিকিৎসা পেতে হিমশিম খেতে হতো। সেখানে আজ থেকে পঁয়ষট্টি বা সত্তর বছর আগে বাংলাদেশের এক মফস্বল শহরের দাঁতের চিকিৎসার কি অবস্থা থাকতে পারে তা আপনারা বুঝতেই পারছেন। আর যেহেতু সুচিকিৎসা বা চিকিৎসা কোনটাই হয়তো ছিলোনা তাই একমাত্র ভরসা ছিলো দাঁতের ব্যথার দোয়া। বিষয়টা আসলে এখানেও গুরুগম্ভীর হয়নি, গুরুগম্ভীর হয়েছে ছোটবেলার বন্ধুতে। কারণ ছোট্টবেলার বন্ধুত্বটাই একমাত্র ভরসা। আমি আপনি আজ বিদেশ জীবনে যতই ফাইন ডাইনিং, সেভেন কোর্স মিল অথবা gourmet buffet খাইনা কেন, আমাদের ছোটবেলার বন্ধু ডাল ভাত আলু ভর্তা আর আচার এর কিন্তু কোন জুড়ি নেই। যতই croissant, raisin bread খাইনা কেন আমাদের ছোটবেলার বন্ধু আটা রুটি বা চালের রুটির মজা কিন্তু আর কিছুতে নেই। Opera house এর পাড়ে বা ডার্লিং হারবারে আমরা যতই ফুরফুরে বাতাসে মাতোয়ারা হইনা কেন পদ্মার পাড়ের ধুলোময় বাতাসই যেন আমার পরম ভরসা, পরম বন্ধু, দেশে বিদেশে এই বয়সে আমাদের যতই কলিগ বা বন্ধুই থাকুক না কেন নিজের স্কুল জীবনের বা পাড়ার সেই ছোট্ট বন্ধুটি যেন আজও আমাদের একমাত্র ভরসা, একমাত্র একাত্মতার স্থান। ঠিক তেমনিভাবেই প্রযুক্তি যতই উন্নত হোকনা কেন তার মায়ের কাছে সেই ছোটবেলার দাঁত ব্যথার দোয়াটা আজও উনার খুব কাছের খুব নিজের আর খুব ভরসার।

বিষয়গুলো কিন্তু খুব ছোট্ট অথচ অনেক গভীর, অনেক অনেক গভীর। ভরসা থাকুক সেই পদ্মা পাড়ের বাতাসের উপর, ভরসা থাকুক মফস্বলের মুদি দোকানের নাড়ুর উপর ভরসা থাকুক ছোট্টোবেলার বন্ধুর উপর আর সেই সাথে ভরসা থাকুক মায়ের - তার দাঁত ব্যথার দোয়ার উপর।

বিঃ দ্রঃ দাঁতের ব্যথার দোয়া নামক যেই বিষয়টা মাথায় আটকে ছিলো। আশা করছি এই লেখার মাধ্যমে সেই বিষয়টা মাথা থেকে নামবে।




এম এস আরেফীন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 6-Dec-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far