হার্স্টভিল গ্রেটার ইউনিয়ন সিনেমায় গতকাল (১ মে ২০১৫) সন্ধ্যায়, হাউস ফুল পেক্ষাগৃহে, প্রদর্শিত হলো বাংলা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘জিরো ডিগ্রী’। অনিমেষ আইচ পরিচালিত জিরো ডিগ্রী এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পেয়েছে। জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা ও পরিচালক মাহফুজ আহমেদ ছবিটি প্রযোজনা করেছেন। এতে অভিনয় করেছেন মাহফুজ আহমেদ, জয়া আহসান, দিলরুবা ইয়াসমিন রুহি, ইফতেখার জাইব, মীর রাব্বি, রনন রয়, তারিক আনাম খান, টেলিসামাদ, ইরেশ যাকের, লায়লা হাসান, শিরিন আলম প্রমুখ।
একমাত্র সন্তান অর্ক কে নিয়ে নীরা আর অমিতের সুখের সংসার। অফিসের কাজের জন্য নীরাকে মাঝে মাঝে বিদেশে যেতে হয়। কিন্তু নীরা একবার বিদেশে গিয়ে আর ফিরে আসে না। সে অমিতকে ফোনে জানায়, সে রকস্টার মুশফিককে বিয়ে করে সেখানেই থাকবে। অমিত ব্যাপারটিকে মেনে নিতে পারে না, সে ভেঙে পড়ে। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ক নিহত হয়। অমিত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এদিকে গ্রামের প্রভাবশালী মানুষ পাটোয়ারী। সে সুন্দরী মহিলা বিয়ে করে দিন-কয়েক পরে ছেড়ে দেয় বা মেরে ফেলে। এসব সহ্য করতে না পেরে তার স্ত্রী তাদের মেয়ে সোনিয়াকে কিছু টাকা দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু বিভিন্ন যায়গায় প্রতারিত হয়ে সেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মানসিক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দু'জনেই প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত হয়। এদিকে নীরা ও প্রতারিত হয় মুশফিকের কাছে। এভাবেই এগিয়ে চলে গল্প।
দেশে ছবিটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ বলেছেন এতে কাহিনী-গত ত্রুটি আছে। কেউ বলেছেন ছবিটি 'উপভোগ্য' কিন্তু 'অশ্লীল'। কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন এটা যুব সমাজ নষ্ট করার ছবি আবার কেউ বলেছেন পয়সা উসুল।
ছবিটি সম্পর্কে লিখতে গেলে এর একটা প্রেক্ষাপট দরকার -
এক: আমরা সুতরাং, আবির্ভাব আর নীল আকাশের নিচের যুগে বাস করিনা।
দুই: ভিসিআর, ডিভিডি, স্যাটেলাইট টিভি পেরিয়ে এখন আমরা ইন্টারনেটের যুগে বাস করছি। সিনেমা এখন খুব সহজ লভ্য একটি জিনিস।
তিন: দেশে, হলে গিয়ে ছবি দেখার মানুষ কমে গেছে। সারা দেশে সিনেমা হল ভেঙ্গে বানানো হচ্ছে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং কিংবা শপিং সেন্টার।
চার: হিন্দি ছবি আর সিরিয়ালে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে দেশ।
এই সব মাথায় রেখে বিচার করতে হবে জিরো ডিগ্রীকে। এটি প্রেম, ভুল-বুঝা-বুঝি এবং শেষে মিল জাতীয় আমাদের টিপিক্যাল বাংলা ছবি নয়। ভালবাসায় প্রতারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারানো তিন জন মানুষের করুণ পরিণতিকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে জিরো ডিগ্রী। কাহিনীর নতুনত্ব এবং গাঁথুনি, ছবির চিত্রায়ন এবং অভিনয় দক্ষতা সবকিছু মিলিয়ে জিরো ডিগ্রী সম্পূর্ণ ভাবেই একটি একবিংশ শতকের ছবি। গত শতকের বাংলা সামাজিক ছবির ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে অনিমেষ আইচ নতুন শতকের পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে।
এধরনের শক্তিশালী ছবি দর্শককে সিনেমা হলে ফিরে আসতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। ছবিতে বড় ধরণের কোন কাহিনী-গত ত্রুটি আমার চোখে পড়েনি। তবে কিছু কিছু দৃশ্য একটু বেখাপ মনে হয়েছে যা সহজেই উপেক্ষা করা যায়। ছবিটি ভাল লেগেছে তবে "উপভোগ্য" বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমন নয়। ছবিটা আপনাকে ভাবাবে। যারা ছবি দেখতে গিয়ে ভাবা-ভাবি করতে চান না তাদেরকেও ধরে রাখার মত যথেষ্ট উপকরণ আছে ছবিটিতে। কিন্তু কোনভাবেই ছবিটিকে অশ্লীল মনে হয় নি। যারা বাংলা ছবিতে অশ্লীল নাচ দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তারা জিরো ডিগ্রী দেখে হতাশ হবেন। যুব সমাজকে নষ্ট করার মত কিছুও খুঁজে পাইনি ছবিটিতে বরং ঘুণে ধরা সমাজ, ফাস্ট লাইফ এবং সোশাল মিডিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জিরো ডিগ্রী যুব সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত বলে মনে হয়েছে। ইংরেজি সাবটাইটেল থাকায় ছবিটি নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক দর্শক টানবে। সাবটাইটেলের ভাষায় বাংলার সঠিক ভাবানুবাদ প্রশংসনীয়।
ছবি দেখে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে তিন সহযাত্রীর সাথে আলাপ হচ্ছিল। এরা সবাই প্রচুর দেশী-বিদেশী ছবি দেখতে অভ্যস্ত। তারা তিন জনই ছবিটিকে দশ এর মধ্যে আট দিলেন যা বাংলা ছবির জন্য খুব ভালো স্কোর বলতে হবে।
ছবি দেখে হলের বাইরে এসে দেখি ছবির নায়ক এবং প্রযোজক মাহফুজ আহমেদকে ঘিরে বিশাল জটলা। কেউ সাক্ষাতকার নিচ্ছে, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। ভিড় কিছু পাতলা হলে মাহফুজ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা এবং কাওসার খান কে এক জায়গায় পেয়ে গেলাম। ভাল ছবির পোকা ইঞ্জিনিয়ার লিসা রহমান অনুরোধ করলাম বাংলা-সিডনি ডট কমের পক্ষ থেকে তাদের সাথে আলাপ করতে। তিনি সানন্দে রাজী হলেন। বাকিটা নিচের ভিডিওতে দেখুন -
Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-May-2015