উপমার উপন্যাস আনিসুর রহমান বিশ্ব জুড়ে বাবা-মা'দের অভিযোগ - ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় মন নেই। সারাদিন ঘরের ভেতর কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকে! বাইরে যায় না, খেলাধুলা করে না, করো সাথে মেশে না। এমন অভিযোগ উপমাকেও শুনতে হয়েছে অনেক বার। শুধু অভিযোগ আর অভিযোগ। ঘরে বসে কি করে মেয়েটা!
উপমা'র বাবা মামুন চৌধুরী একদিন একটা ফোন কল পেলেন। ফোন করেছেন ট্রাইডেন্ট মিডিয়া গ্রুপ নামে একটি প্রকাশনা এজেন্ট এর প্রতিনিধি, নিউ ইয়র্ক থেকে।
- আমরা আপনার মেয়ের বইটা ছাপাতে চাই
- বই! কিসের বই? কার বই!
ধীরে ধীরে পরিষ্কার হলো সবকিছু - মেয়েটা ঘরে বসে কি করে বোঝা গেল এতদিনে! ও বই লেখে!
উপমা ওর বাবা, মামুন চৌধুরী আর মা, শারমিন চৌধুরী সীমা'র সাথে গোলকোষ্টে থাকে। বয়স ১৭। এবছর থেকে ব্রিসবেনে'র গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে ল'তে ভর্তি হয়েছে।
পাঁচ বছর আগের কথা - উপমা একটা বই পড়ছিল। কিন্তু পড়া শেষ হবার আগেই কিভাবে যেন বইটা হারিয়ে যায়। সারা বাড়ি খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না বইটা। তখন মনে হলো ইন্টারনেটে বইটার অনলাইন ভার্শন আছে কিনা খুঁজে দেখলে কেমন হয়। বইটা না পেলেও, উপমা আরো মজার একটা জিনিস খুঁজে পেল ইন্টারনেটে। Wattpad নামে একটা ওয়েবসাইট।
Wattpad সাইটটা ঘুরে দেখে আমার মনে হয়েছে এটা একসাথে অনেক কিছু। লেখার টেবিল, ছাপা-খানা, লাইব্রেরি এবং পড়ার টেবিল। এখানে একটা একাউন্ট খুলে যে কেউ তার বই লিখতে পারে। আকর্ষণীয় কাভার দিয়ে বইটা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ পাঠকের জন্য প্রকাশ করতে পারে। আবার যারা শুধু পড়তে চায় তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত অসংখ্য মজার মজার বই।
Wattpad বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিন কোটি বই-প্রেমী মানুষের একটি বিশাল কমিউনিটি। এখানে Neve Adams ছদ্মনামে ৪৫০ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস লিখে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছে উপমা। ওর বইয়ের নাম The Bucket List. Wattpad এর রিডার কাউন্ট অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৮৩ লক্ষ পাঠক বইটা পড়েছে। শুধু তাই নয়, উপমার লেখা বইটি এর মধ্যে The Best of Instant Addiction ক্যাটাগরিতে একটা এওয়ার্ড ও পেয়েছে।
লেখালেখির প্রেরণা তুমি কোথা থেকে পেয়েছো, জানতে চাইলে উপমা বললো, আমি ঠিক জানি না। তবে আমি যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি তখন আমাদের সপ্তাহে একদিন করে এক ঘণ্টার একটা ক্রিয়েটিভ রাইটিং ক্লাস হতো। তখন থেকেই লেখালেখি প্রতি আমার ঝোঁক। Wattpad খুঁজে পাবার আগ থেকেই লিখতাম তবে সেগুলো মূলত: ছোটগল্প। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি থেকে The Bucket List লিখতে শুরু করি। আমার বয়স তখন ১৬। ১১ টা চ্যাপ্টার লেখার পর কিছুদিন লেখালেখি বন্ধ রেখেছিলাম। ২০১৪ থেকে আবার লিখতে শুরু করি, অক্টোবর নাগাদ কাজ শেষ হয়।
বর্তমানে বইটা ছাপার অক্ষরে প্রকাশের জন্য নিউ ইয়র্কের ট্রাইডেন্ট মিডিয়া গ্রুপের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বাংলা-সিডনি ডট কম এর সকল পাঠক-পাঠিকার পক্ষ থেকে উপমা এবং ওর বাবা-মা কে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন!
উপমার বইটি পড়ার জন্য ওপরের ছবিতে ক্লিক করুন।
|