সূর্য-শক্তি চালিত বিমানে বিশ্ব ভ্রমণ
সূর্য-শক্তি চালিত বিমানে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছেন দুই সুইস নাগরিক, বারট্রান্ড পিকার্ড এবং আন্দ্রে বোরশবার্গ। সোলার ইমপালস ২ নামে বিশেষ ভাবে নির্মিত একটি বিমানে করে এই দূরহ কাজটি করছেন তারা। পরিবেশ বান্ধব সূর্য-শক্তি'র দিকে জনগণ, সরকার, বিজ্ঞানী এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। সোলার ইমপালস এর ডানার বিস্তৃতি বোয়িং ৭৪৭ এর চেয়ে বেশী কিন্তু ওজন মাত্র ১০০ ভাগের এক ভাগ। বোয়িং ৭৪৭ এর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৫০০ এর ওপরে। সোলার ইমপালস নিতে পারে মাত্র এক জন; শুধু পাইলট। মনে হতে পারে তাহলে লাভটা কি হলো! মাত্র এক জন যাত্রীর জন্য এত আয়োজন! স্মরণ করা যেতে পারে ১৯০৩ সালে নির্মিত উইলবার আর অরভিল রাইট এর প্রথম বিমানটি উড়েছিল মাত্র ১২ সেকেন্ড এবং দূরত্ব অতিক্রম করেছিল মাত্র ৩৬ মিটার। সে বিমানেও মাত্র এক জন যাত্রী ছিলো, ছোট ভাই অরভিল রাইট। সেই এক থেকে বেড়ে বেড়ে বর্তমানে পৃথিবীর বিমান যাত্রীর সংখ্যা চলে গেছে বছরে ৩২১ কোটির ওপরে! কিন্তু আসল পার্থক্যটি অন্য জায়গায়। বোয়িং ৭৪৭ চালাতে তেল লাগে প্রতি সেকেন্ডে ৪ লিটার। যা প্রতিদিন পরিবেশ দূষণ করে পৃথিবীকে ঠেলে দিচ্ছে গ্লোবাল ওয়ারমিং এর ভয়াবহ পরিণতির দিকে। কিন্তু সোলার ইমপালস চলে সূর্যের আলোতে। জ্বালানি লাগে না বলে এতে খরচ কম এবং পরিবেশও দূষণ মুক্ত থাকে। দিনের বেলা মেঘের ওপরে সূর্যের আলো আছে অফুরন্ত। বিদ্যুৎ চালিত ৪ প্রপেলার বিশিষ্ট এই বিমানের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ১৪৫ কিলো মিটার। প্রতিটি প্রপেলার এর পেছনে আছে একটি করে ব্যাটারি। ডানার ওপর বসানো সোলার প্যানেল থেকে দিনের বেলা যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তার বাড়তি অংশ জমা হয় এই ব্যাটারিগুলোতে; সেই সঞ্চিত শক্তি ব্যাবহার করে রাতেও চলতে পারে এই বিমান।
গত ৯ই মার্চ ২০১৫, আবুধাবি থেকে যাত্রা শুরু করে বিমানটি। ওমান, ভারত, মায়ানমার ও চীন হয়ে জাপানের নাগয়া (Nagoya) পৌছায় ৩০শে মে। এর মধ্যে অবশ্য যাত্রা-বিরতি ছিল। কোথাও ৭ দিন কোথাও ১০ দিন আবার কোথাও পুরো ১ মাস। জাপান মূল পরিকল্পনায় ছিল না, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে অবতরণ করতে বাধ্য হন বোরশবার্গ।
বিশ্ব ভ্রমণের দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লাইটটি শুরু হয় গত ২৮শে জুন, জাপান থেকে হাওয়াই। সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরের দুই তৃতীয়াংশ পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৫ দিন। এ সময় বিমানের ককপিটে ছিলেন আন্দ্রে বোরশবার্গ। এই ৫ দিন ককপিটের একমাত্র সিটটিই ছিল তার অফিস, বেডরুম, ডাইনিং রুম এবং টয়লেট। ৫ দিনে তিনি ঘুমিয়েছেন মাত্র ১৫ ঘণ্টা তাও একটানা ২০ মিনিটের বেশী নয়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে তার প্রতি দিনের বরাদ্দ ছিল নেসলে কর্তৃক বিশেষ ভাবে প্রক্রিয়াজাত ২.৪ কিলোগ্রাম খাবার এবং ২.৫ লিটার পানি।
এই লেখাটি তৈরি করার সময় বিমানটি হাওয়াই তে পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে। পরবর্তী গন্তব্য ফিনিক্স, এরিজোনা।
এয়ারলাইন্স এর মোট খরচের একটা বিশাল অংশ ব্যয় হয় জ্বালানির পেছনে। সূর্য-শক্তির ব্যবহার নিয়ে আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন। সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন সূর্য-শক্তি দিয়ে আরাম দায়ক যাত্রীবাহী বিমান চালানো সম্ভব হবে। ভ্রমণের খরচ নেমে যাবে অর্ধেকের নিচে। সেদিনের কথা কল্পনা করে এখনি বুকের ভেতর পুলক অনুভব করছি!
আনিসুর রহমান, সিডনি (anisur57@gmail.com)
|