স্বপ্নের সেতু আনিসুর রহমান
ছোটবেলায় আমার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল রেল গাড়িতে চেপে তিস্তা ব্রিজ পার হওয়া। রাজশাহী থেকে আমনুরা এক্সপ্রেস ধরে সারা রাত কয়লার ইঞ্জিনের ঝিক ঝিক শুনে ভোরে পার্বতীপুরে নামতাম। সেখান থেকে দুপুরের দিকে লালমনিরহাট কিংবা কুড়িগ্রাম যাবার ট্রেন ছাড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকতো। আর তো মাত্র কয়েকটা স্টেশন। খোলাহাটি, বদরগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর আর কাউনিয়া জংশন পেরুলেই সেই ব্রিজ। নিচে খরস্রোতা তিস্তা নদী, তার ওপর লাল রঙের বিশাল লোহার ব্রিজের ওপর দিয়ে ঘটাং ঘটাং শব্দ করে ছুটে চলেছে রেলগাড়ি। শাসন এড়িয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করে অবাক হয়ে দেখতাম শৈশবের সেই সপ্তম আশ্চর্য!
কোন এক মনিষী বলেছিলেন শৈশবের স্থিতির কাছে ফিরে যেতে নেই কিন্তু গত বছর ঘটনাচক্রে আমি গিয়েছিলাম, চল্লিশ বছর পর। তিস্তা নদীর ভাটিতে এখন একটা সড়ক সেতু তৈরি হয়েছে। সেটা দিয়ে নদী পার হবার সময় উজানে সম্পূর্ণ তিস্তা রেলওয়ে ব্রিজটা দেখা যায়। দূর থেকে দেখার কারণেই সম্ভবত সম্পূর্ণ ব্রিজটাকে মনে হলো একটা খেলনা। কোন ভাবে নদীর ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। হঠাত করে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে হল ব্রিজটাকে আমি ছোট করলাম; আমার শ্রদ্ধার স্থান থেকে নামিয়ে দিলাম।
যুক্তিবাদী মানুষের কাছে এই অদ্ভুত অনুভূতির কোন মূল্য নেই। কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র আমি। লজিক, অংক আর অ্যালগরিদম আমার পেশা তবুও সমস্ত যুক্তিতর্ক ভুলে সেদিন দু’ফোটা পানিতে ভিজে গিয়েছিল চোখ। কর্মজীবন শেষ করে এখন অবসরে আমি। আর হয়তো কোন দিন এই পথে আসা হবে না, দেখাও হবে না। ঝাপসা চোখে বিদায় জানালাম ছোট বেলার বন্ধুকে!
আনিসুর রহমান, সিডনি
|