শুক্র গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার জোরালো সম্ভাবনা!
আনিসুর রহমান: পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও, অন্য কোন গ্রহে, প্রাণ আছে কিনা এটা অনেক পুরনো প্রশ্ন! এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মানুষ কিনা করেছে! চাঁদের মাটি পৃথিবীতে এনে পরীক্ষা করেছে, মঙ্গল গ্রহের পাথর উল্টে উল্টে দেখেছে, মহাবিশ্বের দূরদূরান্ত থেকে ভেসে আসা ক্ষীণ বেতার তরঙ্গে কান পেতেছে - যদি কিছু শোনা যায়, কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং সিনেমার পর্দা ছাড়া আর কোথাও মেলেনি এলিয়েন প্রাণের সন্ধান। তবে এই মহাবিশ্বে প্রাণ আছে এটা তো সত্য। কারণ এর প্রমাণ তো আমরা নিজেরাই। আমরা তো এই মহাবিশ্বেই বাস করি। প্রশ্নটা তাই, পৃথিবী ছাড়া আর কোথাও প্রাণ আছে কিনা? অতি সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের ঘোষণা থেকে শুক্র গ্রহে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শুক্র গ্রহের ইংরেজি নাম Venus. প্রচলিত কথায় একে আমরা শুকতারা বলে থাকি, যদিও এটি তারা নয়, গ্রহ। সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে গ্ৰহটি যখন সূর্যের ডান পাশে চলে আসে তখন একে আমরা পূর্ব আকাশে দেখতে পাই সূর্য ওঠার আগে, যখন সূর্যের বামপাশে চলে যায় তখন এটিকে দেখা যায় পশ্চিম আকাশে, সূর্য ডোবার পরে। আয়তনে শুক্র গ্রহ পৃথিবীর প্রায় কাছাকাছি এবং এর একটি পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ মাত্র ০.০৪% কিন্তু শুক্র গ্রহে এই ভয়াবহ গ্রিনহাউজ গ্যাসটির পরিমাণ ৯৬.৫% তাই শুক্র গ্রহে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপ প্রায় ৪৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। গ্রিনহাউজ ইফেক্টের এমনই গুণ, বুধ সূর্যের অনেক কাছে হওয়া স্বত্বেও শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা বুধের চেয়ে বেশি। হাসপাতালে সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টগুলি জীবাণুমুক্ত করতে যে অটোক্লেভ মেশিন ব্যবহার করা হয় তার তাপমাত্রা মাত্র ১২০ ডিগ্রি। তাই মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে একসময় পৃথিবীতে যথেষ্ট হৈইচৈই হলেও কেউ কখনো কল্পনা করেননি শুক্র গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীদের সম্প্রতি ঘোষণায় ফিরে আসি, তারা জানিয়েছেন শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ফসফিন নামক একটি রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া গেছে। ফসফিন অনেকটা অ্যামোনিয়ার মত জিনিস। একটা নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে তিনটা হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অ্যামোনিয়া। নাইট্রোজেন এর পরিবর্তে যখন ফসফরাসের সাথে তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয় তখন তৈরি হয় ফসফিন। অ্যামোনিয়া প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হতে পারে। পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ যেমন মঙ্গল, বৃহস্পতি শনি ইউরেনাস নেপচুন এবং প্লুটোতে অ্যামোনিয়া আছে। কিন্তু ফসফিন প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয় না। পৃথিবীতে ফসফিন ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হয় এবং কিছু কিছু এনরোবিক ব্যাকটেরিয়া ফসফিন তৈরি করে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এত উত্তপ্ত একটি গ্রহে ফসফিন তৈরি করার মত ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু এলো কোথা থেকে! এখানে উল্লেখ্য শুক্র গ্রহের ভূমির তাপমাত্রা গ্রিনহাউজ ইফেক্ট এর কারণে অত্যন্ত বেশি হলেও এর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের তাপমাত্রা অঞ্চল বিশেষে ৩০ থেকে ৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর মধ্যে ওঠানামা করে। শুক্র গ্রহের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ফসফিন পাওয়া গিয়েছে, যা সেখানে এককোষী প্রাণী, জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্দেশ করে।
শিগগিরই হয়তো শুক্র গ্রহে প্রোব পাঠানো হবে বায়ুমণ্ডলের স্যাম্পল এনে প্রাণের সন্ধান করার জন্য। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে পৃথিবীতে যখন আমরা করোনা ভাইরাসের উৎপাতে জর্জরিত তখন অন্য গ্রহ থেকে জীবাণু এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার কি! এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন তবে এর সাথে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত আছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। প্রাণের উদ্ভব, প্রাণের বিবর্তন আর প্রাণের পরিণতি এসব বিষয়ে কৌতূহল মানুষের চিরকালের। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই হয়তো একদিন মানুষ পেয়ে যাবে অমরত্বের সন্ধান!
|