কবিতা বিকেল এর ১০ বছর আনিসুর রহমান
প্রকৌশলী ও কবি মাহমুদা রুনু ১০ বছর আগে সিডনিতে একটা নতুন জিনিস শুরু করেছিলেন। কবিতা পাঠের আসর। অলস বিকেলে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কবিতা পড়া এবং শোনার আড্ডা। ২০০৭ এর ২৩ শে জুন প্রথম এই আড্ডা বসেছিল মাহমুদা রুনুর ওয়াটল গ্রোভের বাড়িতে। সেই অনুষ্ঠানে কিংবা তার পর পরই এই আড্ডার নাম দেয়া হল কবিতা বিকেল। প্রতি মাসে একটি করে আসর হবার কথা ছিলো তবে সেটা সম্ভব হয়নি। অনিয়মিত ভাবেই হয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠান, কখনো এর বাসায় কখনো ওর বাসায়। সব অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি। মাঝে মধ্যে গেছি। ভালোই লাগতো। বিশেষ করে আমরা যারা গান গাইতে পারিনা একটা কবিতা পড়ে দু'টো হাততালি পেতে ভালোই লাগতো!
এভাবে ২ বছর চলার পর উদ্যোক্তারা একে ঘরের বাইরে নিয়ে এলেন। কোয়েকার্স হিল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হলো কবিতা বিকেলের ২য় জন্মদিন। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কিছু কবিতা যা পরে গান হিসেবেও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল এমন সব কালজয়ী কবিতা এবং গান দিয়ে সাজানো হয়েছিল চমৎকার এই অনুষ্ঠানটি। আমি নিজেও একটা কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম। আমার আবৃত্তি শুনে এক বন্ধু আর বন্ধু-পত্নী ধমক দিয়ে বলেছিলেন এটা কোন আবৃত্তি হলো! আমি ধমকের ভয়ে আর কোনদিন কবিতা আবৃত্তি করিনি। কিন্তু সবাইতো আমার মত দমে যাবার পাত্র নন। অনেক চড়াই উৎরাই আর ভাঙ্গনের ব্যথা বুকে নিয়ে তারা লেগে থেকেছেন এর পেছনে।
কবিতা বিকেলের পরবর্তী উন্মুক্ত অনুষ্ঠান হয়েছে লেকেম্বার সিনিয়ার সিটিজেন সেন্টারে। অনেকেই এসেছিলেন আবার অনেকে আসেননি। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সূত্র ধরে উদ্যোক্তাদের একদল "কবিতা বিকেল" থেকে বেরিয়ে গিয়ে তৈরি করেছেন আরেকটি দল, "কবিতার বিকেল"। নাম থেকেই বোঝা যায় দুই দলের মধ্যে পার্থক্যটা কত ক্ষুদ্র! শুধু একটা "র"। কিন্তু এই সামান্য পার্থক্যটুকু অতিক্রম করা সম্ভব হলো না। এতে অবশ্য করো কোন ক্ষতি হয় নি তবে জাতির গায়ে যে কলঙ্ক আগে থেকেই লেগে আছে তার ওপর পড়েছে নতুন আরেকটি প্রলেপ। আমরা এক সাথে বসে দু'টো কবিতাও পড়তে পারি না! মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ছোট মনে হয়।
এর পর থেকে "কবিতা" বা "কবিতার" কারো সাথেই যোগাযোগ নেই বহুদিন। এর মধ্যে সেদিন মাহমুদা রুনু জানালেন কবিতা বিকেলের দশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হবে তার বাড়িতে। একটু চমকে উঠেছিলাম, এর মধ্যে দশ বছর হয়ে গেছে!
ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কি কি হলো তার বিশদ বর্ণনা লিখতে ইচ্ছা করছেনা। সংক্ষেপে - অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেছেন ড. মমতা চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়েছেন মাহমুদা রুনু, নাজমূল ইসলাম খান এবং আশীষ বাবলু। কবিতা আবৃত্তি করেছেন ড. আব্দুর রাজ্জাক, মাহমুদা রুনু, শীর্ষেন্দু নন্দী, মমতা চৌধুরী, শাকিল চৌধুরী, রিসিল, রাজন নন্দী, সাবিরা রীমা, ফাহাদ আসমার, শাহরিয়ার পাভেল এবং অনিলা পারভিন। গান শুনিয়েছেন, ফাহিমা নাসরিন, তামিমা শাহরিন, ফারাহ কান্তা এবং সীমা আহমেদ। তবলায় সঙ্গত করেছেন শান্তনু কর। এ ছাড়াও কিবোর্ডে রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর বাজিয়ে শুনিয়েছেন আবু সাইদ মামুন। এখানে দু'জন আবৃত্তিকারের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ না করে পারছিনা; শীর্ষেন্দু নন্দী এবং শাকিল চৌধুরী। এরা দু'জনেই এক কথায় অসাধারণ।
দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কবিতা বিকেলের সকল বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্মীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন এবং আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা।
পুনশ্চঃ
গত দশ বছরে উল্লেখযোগ্য আরো যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো কবিতা বিকেল সেগুলো হলোঃ ৭ জুলাই ২০১২ - প্যারামেটা - ৫ম জন্ম-বার্ষিকী ৫ জুলাই ২০১৩ - ব্যাঙ্কসটাউন - ৬ষ্ঠ জন্ম-বার্ষিকী ৮ মার্চ ২০১৪ - ব্যাঙ্কসটাউন - প্রেম অপ্রেমের পদ্য ২২ অগাস্ট ২০১৫ - ব্যাঙ্কসটাউন - প্রখ্যাত আবৃত্তিকার মাহিদুল ইসলাম এর কবিতা সন্ধ্যা
|