একটা নাচের ভিডিও করার ইচ্ছা অনেক দিনের। মঞ্চের নাচ নয়, বাইরে। কোন পার্কে কিংবা সমুদ্রের পাড়ে। কিন্তু এ কাজে বেশ কিছু ঝামেলা আছে যা আমার মত সখের ভিডিওগ্রাফারদের প্রথমে মাথায় আসেনি। মঞ্চের ভিডিও সে তুলনায় অনেক সহজ। কে নাচবে, কোন গানের সাথে নাচবে, লাইট, সাউন্ড সবকিছুর দায়িত্ব অনুষ্ঠান অয়োজকদের। কিন্তু বহিরাঙ্গণে সবকিছুর আয়োজন নিজেকে করতে হয়। সাইট নির্বাচন, দিনের কোন সময় আলো ভিডিওর জন্য ভাল, রিফ্লেকটার লাগবে কিনা, মিউজিক কোথায় বাজাবেন, শব্দ ধারণ কিভাবে হবে, বাতাসের শব্দ গাড়ির শব্দ এসব সমস্যা করবে কিনা এমন অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। সিডনিতে যারা টিভির জন্য নাটক বা সিনেমা বানাচ্ছেন তাদের জন্য এসব মামুলী ব্যাপার কিন্তু সখের বসে মান সম্পন্ন ভিডিও বানানো যে কতটা জটিল সেটা আমি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি।
গত মার্চ মাসে কিংবদন্তী শিল্পী হৈমন্তী শুক্লা সিডনি এসেছিলেন। সাথে নৃত্যশিল্পী হিসেবে এসেছিলেন ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী মেঘমিতা মিত্র। বাংলা-সিডনির জন্য হৈমন্তী শুক্লার একটা ইন্টারভিউ নেবার সখ হলো। আয়োজক আনিসুর রহমান নান্টু এর সাথে আলাপ করলাম। তিনি রাজী হলেন। মেঘমিতা আগেও সিডনি এসেছিলেন। ২০১৬ সালে তার ইন্টারভিউ নিয়েছিলেম তাই আবার ইন্টারভিউ না নিয়ে একটা নাচের ভিডিও করার কথা মাথায় এসেছিল। একদিন গিয়ে ব্লাকটাউনের ন্যারাগিঞ্জি রিজার্ভ ঘুরে দেখে এলাম। সেখানে আগেও অনেক বার গিয়েছি কিন্তু গাছপালার ভেতরে লুকিয়ে থাকা একটা সুন্দর জায়গা পেয়ে গেলাম যেটা আগে কখনো দেখিনি।
নির্ধারিত দিনে একাধিক ক্যামেরা, ট্রাইপড, রিচার্জএবল ব্যাটারি চালিত আউটডোর সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে হাজির হলাম স্পটে। কিন্তু গিয়ে দেখি এক সদ্য বিবাহিত কপোত-কপোতী তাদের একদল বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দখল করে রেখেছেন স্পট। ছবি তোলা হচ্ছে। সিডনির নয়নাভিরাম স্থানগুলিতে এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। কোন কাজে বাধা পড়লে আমি খুব বিরক্ত হই। আলো পড়ে যাচ্ছিলো তবুও সেদিন কেন যেন একটুও বিরক্ত বোধ করি নি। একজোড়া তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন আর আনন্দে ভরা দিনটি আমিও উপভোগ করলাম। মনে মনে বললাম তোমরা সুখী হয়ো!
ওরা চলে যাবার পর আমরা কাজ শুরু করলাম। ২/৩ টা ক্যামেরা বসানো হলো। সাউন্ড টেস্ট করা হলো। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে নাচলেন মেঘমিতা। একবার, দু’বার, তিনবার, চারবার... রবীন্দ্র-ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্য-কলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ধ্রুপদী শিল্পীর প্রাণশক্তি এবং সহযোগিতার মানসিকতা মুগ্ধ করলো আমাকে।
অনেকগুলি ট্রাক জোড়া দিয়ে ভিডিওটা এডিট করতে অনেক দিন লেগে গেল। এক সময় প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেম কিন্তু আনিসুর রহমান নান্টু’র বকাবকি আর ঠেলাঠেলিতে কাজ হয়েছে।
আনিসুর রহমান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
Share on Facebook               Home Page             Published on: 27-Sep-2018