বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন ধারা! আনিসুর রহমান
খন্দকার সুমন বাংলাদেশের একজন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র “পৌনঃপুনিক” এবং “অঙ্গজ” নির্মাণের পর তিনি হাত দিয়েছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সাঁতাও নির্মাণের কাজে। পাঠক হয়তো বলবেন সেটাইতো স্বাভাবিক, ছবি নির্মাতা ছবি বানাবে এ আর নতুন কি! হ্যাঁ, নতুনত্ব একটা আছে আর সেজন্যই এই লেখা। সাঁতাও ছবিটি নির্মিত হচ্ছে গণ অর্থায়নের (Crowdfunding) মাধ্যমে। বাংলাদেশ সম্ভবতঃ এই প্রথম!
গণ অর্থায়ন বা Crowdfunding প্রথম আমার নজর কাড়ে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা’র নির্বাচনী প্রচারণার সময়। সে সময় সোশাল মিডিয়া ব্যাবহার করে তিনি নির্বাচনী তহবিলের জন্য ৬.৫ মিলিয়ন তৃণমূল সমর্থকদের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার তুলেছিলেন। অর্থাৎ মাথাপিছু ৭৭ ডলারের মত। অনেকে বিশ্বাস করেন এই ব্যাপক গণ অর্থায়ন ছাড়া বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। গণ অর্থায়নে যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় তাহলে সিনেমাও বানানো যাবে। খন্দকার সুমন ব্যাপারটা শুধু ভেবেই বসে থাকেননি, সঠিক উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন।
ভাল ছবি আমরা সবাই পছন্দ করি। কিন্তু নিম্ন মানের বাণিজ্যিক ছবির দৌরাত্ম্যে বোদ্ধা দর্শকরা সিনেমা হলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন প্রায়। এসব ছবির প্রযোজককে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তিনি টাকা খাটিয়েছেন মুনাফা তাকে করতেই হবে। ছবি বিক্রি হচ্ছে কিনা সেটাই তার কাছে বড় বিষয় ছবির মান নিয়ে চিন্তা করার সময় তার নেই। কিন্তু ছবির দর্শকরাই যদি ছবির প্রযোজক হয় তাহলে দৃশ্যপট কিন্তু পাল্টে যাবে। ভাল ছবি নির্মাণের সাথে জড়িত হতে চান এমন মানুষ দেশে ও বিদেশে অনেক আছেন। তারা সবাই যদি নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে বাংলাদেশ থেকে আরো অনেক তারেক মাসুদ, গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজা আর খন্দকার সুমন বেরিয়ে আসবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সাঁতাও ছবি নির্মাণ এবং এর গণ অর্থায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুণ। এই সাইটে খন্দকার সুমনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পৌনঃপুনিক এবং অঙ্গজ এর লিংকও পাবেন। এখানে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত অনুদানের নিয়মাবলী দেয়া আছে। এছাড়াও অনুদানের স্বীকৃতি সরূপ অনুদান প্রদানকারী কি পাবেন তাও বলা আছে। saatao.khandakersumon.com
বিদেশ থেকে যারা সহযোগিতা করতে চান তাদের জন্য এই সাইটের একটা ইংলিশ ভার্সন আছে। সেখানে “DONATE” বা “Donate Us” বাটনে চাপ দিলে আপনাকে INDIEGOGO নামে একটা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জনপ্রিয় ওয়েব সাইটে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে আপনি ১০ ডলার থেকে ৩০০০ ডলার পর্যন্ত অনুদান দিতে পারবেন। তবে সঙ্গত করণেই বিদেশ থেকে অনুদান প্রদানকারীদের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ প্রাপ্য সুবিধাগুলি এ ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন। saatao.khandakersumon.com/en
bangla-sydney.com এর জন্য সিডনির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ফুটেজ সংগ্রহ করি অনেক বছর হলো। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে একটা শর্ট-ফিল্ম বানাই কিন্তু সাহস পাই নি। কিন্তু আজ আর শর্ট-ফিল্ম নয় খন্দকার সুমনের সৌজন্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে হাত দিলাম, সহযোগিতার হাত। Indiegogo এর মাধ্যমে আমার ক্ষুদ্র অনুদান পাঠানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই নির্মাতাদের কাছ থেকে নিচের কৃতজ্ঞতা পত্রটি পেয়ে ভাল লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে খন্দকার সুমন!
গণ অর্থায়নে সাঁতাও নির্মাণের কিছু ইতি-বাচক দিক আছে; এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একটি নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করবে। অনেক মেধাবী নির্মাতারা টাকার অভাবে ছবি নির্মাণ করতে পারছেন না, সাঁতাও সফল হলে, তারাও অনুপ্রাণিত হবে। সেই সাথে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব ছাড়াই কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে যা সৃজনশীল কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরী!
আনিসুর রহমান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|