bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













দূর থেকে চেনা!
আনিসুর রহমান



এন্ড্রু কিশোর
আমার জন্মস্থান রাজশাহী না হলেও বেড়ে উঠেছি মূলত রাজশাহী শহরেই। এন্ড্রু কিশোর যখন এন্ড্রু কিশোর হয়ে ওঠেন নি তখন থেকেই তার নাম অনেকবার শুনেছি। এন্ড্রু কিশোর ভালো গান করে এই কথাটা লোকমুখে সে সময় অনেক শুনতাম কিন্তু তার গান সামনাসামনি কখনো শুনেছি বলে মনে পড়ে না। সে সময় রাজশাহীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খুব একটা হতো না। কিছু কিছু হয়তো হতো কিন্তু লোকাল নিউজ পেপার না থাকার কারণে আমরা খবরও পেতাম না। তাই লোকমুখে শুনে শুনেই আমি এন্ড্রু কিশোরের ভক্ত হয়ে উঠেছিলাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা কেটেছে ইউরোপের রোমানিয়ায়। আমাদের সে সময়ের অবস্থা টা ছিল অনেকটা “নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম” এর মত। দেশের সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্নই বলতে হবে। এই সময়টাতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। পাঁচ বছর পরে, আশির দশকের শুরুতে দেশে ফিরে দেখি এন্ড্রু কিশোর তখন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর নাম। ছায়াছবিতে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে গান করছেন তিনি। কিন্তু ততদিনে আমার বাংলা সিনেমা দেখার কোটাও প্রায় শেষ। সিনেমা যা দেখেছি তা ওই স্কুল-কলেজ জীবনেই।

পাঁচ বছর দেশমাতৃকার সেবা করে আবার প্রবাসী হলাম। স্ত্রী আর শিশু কন্যা নিয়ে থিতু হলাম অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। ৮০ দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের মাঝামাঝি, ঘরে ঘরে ইন্টারনেট না আসা পর্যন্ত আবার এক বিচ্ছিন্ন জীবন। এই সময়টাই ছিল এন্ড্রু কিশোরের স্বর্ণযুগ। এসময়ের কয়েকটি গান যেমন ভালো আছি ভালো থেকো, জীবনের গল্প, আমার সারা দেহ খেও গো মাটি, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুষ এবং যে গানটির কথা না বললেই নয় সেটা হল বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে - এই কালজয়ী গানগুলির জন্য এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। অথচ একই শহরে অনেক বছর বাস করেও এই মানুষটিকে আমি তখনও সামনাসামনি দেখিনি।

এন্ড্রু কিশোরের মা রাজশাহীর মিশন হাসপাতালের সম্ভবতঃ সিনিয়র নার্স কিংবা মিডওয়াইফ ছিলেন। মনে আছে একবার আমি তখন ক্লাস টেনের ছাত্র অথবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, আমাদের এক প্রতিবেশী আত্মীয়ার বাচ্চা হলো। সে যুগে অনেক মহিলাই ঘরে বাচ্চা প্রসব করতেন। প্রসবে সহায়তা করার জন্য একজন মিডওয়াইফ আনা হয়েছিল। ভোরের দিকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো তাকে একটি রিকশা ঠিক করে দিতে। বাড়ির কাছেই মোড়। সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এত ভোরে কোন রিকশা পেলাম না। উনি বললেন চলো হেটেই যাই বেশি দূর তো নয়। আমরা কথা বলতে বলতে হাঁটছি আর তখনি আবিষ্কার করলাম তিনি এন্ড্রু কিশোরের মা! আমি তখনো এন্ড্রু কিশোর কে দেখিনি কিন্তু তার মাকে দেখেছি!

এন্ড্রু কিশোরের সাথে আমার প্রথম দেখা ২০১৩ সালে, সিডনিতে। সে সময় পথ প্রোডাকশনস ক্যাসেল হিলে এ নাইট উইথ স্টারস নামে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সে অনুষ্ঠানে দেশ থেকে এসেছিলেন তিনজন শিল্পী। রিজিয়া পারভিন, এন্ড্রু কিশোর এবং মাকসুদ O'Dhaka. বিদেশে বসে দেশের মানুষের সাথে দেখা করিয়ে দেবার জন্য পথ প্রোডাকশনস কে আন্তরিক ধন্যবাদ।

এছাড়াও আরো দুবার দেখা হয়েছে তার সাথে সিডনিতে। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত অলিম্পিক পার্কের বৈশাখী মেলা। ANZ স্টেডিয়ামের পেছন দিকে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢোকার জন্য হেঁটে যাচ্ছি দেখি এন্ড্রু কিশোর ফুটপাতের উপরে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন! আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। হেঁটে পার হয়ে গেছি। হঠাৎ মনে হল, কাকে দেখলাম! ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এন্ড্রু কিশোর না? উনি মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন জী।

বিনোদন জগতের জনপ্রিয় মানুষদের সাথে হঠাৎ দেখা হলে একটা সমস্যা তো হয়ই। আমরা তাদেরকে বেশ ভালো ভাবে চিনি, অনেক খুঁটিনাটি খবরও রাখি অথচ এরা কিন্তু আমাদের কে একক ভাবে চেনে না। শুধু দর্শক বা ফ্যান হিসেবে চেনে। আমি শুধু পরিচয় দিয়ে বললাম আমিও রাজশাহীর ছেলে। ব্যস্ততা ছিল তাই দু একটা কথা বলেই বিদায় নিতে হলো।

শেষ বার এন্ড্রু কিশোরের সাথে দেখা হয়েছিল গত বছর, ২০১৯ সালে, বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস এর গালা নাইটে। দেশ থেকে এসেছিলেন ক্লোজআপ ওয়ান স্টার রন্টি দাস, মেজবাহ রহমান এবং এন্ড্রু কিশোর। এন্ড্রু কিশোর কে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছিল প্লেব্যাক কিং হিসেবে। এন্ড্রু কিশোর এর বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আবার শুনলাম। তাকে বেশ অসুস্থ মনে হচ্ছিল। কিন্তু তাকে আর কখনো দেখবো না, এভাবে সামনাসামনি তার গান আর কখনো শুনবো না এটা মাথায় আসেনি।

পদ্মাপাড়ের এই ছেলেটি নিজের অসাধারণ প্রতিভায় ধাপে ধাপে উঠে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গান শুনিয়ে আপ্লুত করেছে দেশে বিদেশের বাঙালি হৃদয়। তারপর একদিন তার শেষ নিঃশ্বাস টুকু নেবার জন্য ফিরে গেছে আবার সেই পদ্মাপাড়ে! প্রিয় এন্ড্রু কিশোর, তোমার শেষ নিঃশ্বাস, তোমার গানের সুর, পদ্মার খোলা বাতাসে মিশে ঘুরে ঘুরে ফিরে ফিরে যুগ যুগ ধরে তোমাকেই খুঁজে ফিরবে সারা বাংলায় এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিদের তিলে তিলে গড়ে তোলা বাংলাবিশ্বে!





আনিসুর রহমান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 8-Jul-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far