40 Years of Evolution বিবর্তন বাদে'র স্বপক্ষে একটি জোরালো সমর্থন আনিসুর রহমান পৃথিবীতে বাঘ আছে ৫ কি ৬ প্রজাতির কিন্তু কুকুর আছে প্রায় ১৫৫ প্রজাতির। কাক আছে ৪০ জাতের কিন্তু কবুতর আছে প্রায় ৪৫০ জাতের। শুধু প্রাণী নয় উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এ রকম তারতম্য দেখা যায়। বিষয়টি বিবর্তন বাদের প্রবর্তক চার্লস ডারউইন বেশ ভাবিয়েছিল। তিনি লক্ষ করেন গৃহপালিত পশু-পাখী এবং যে সব ফসল মানুষ চাষ করে তাদের মধ্যে ভ্যারাইটি অনেক বেশী। এ ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা হলো, এসব পশু-পাখী এবং ফসল মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গার মাটি এবং জলবায়ুর ভিন্নতার কারণে নতুন নতুন জাত তৈরি হয়েছে। এছাড়াও মানুষ আদি কাল থেকেই উন্নত জাতের পশু-পাখীর সাথে দেশী জাতের পশু-পাখীর ক্রস ব্রিডিং করে নতুন নতুন জাত সৃষ্টি করেছে। কোন পশুর কোন গুনটা ভাল, কোন এলাকায় কোন ফসলটা ভাল হচ্ছে এই সিলেকশনটা যেহেতু মানুষ করছে তাই ডারউইন এর নাম দিয়েছিলেন আর্টিফিশিয়াল সিলেকশন। স্বাভাবিক ভাবেই তার মনে প্রশ্ন জেগেছিল এই যে পৃথিবীতে এত বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখী এবং গাছ-পালা এগুলো সৃষ্টি হলো কিভাবে? ঘোড়া, গাধা, জেব্রা - দেখেই মনে যায় এরা কাছাকাছি জাতের প্রাণী কিন্তু আলাদা। এগুলোও কি সিলেকশনের মধ্যমেই উদ্ভব হয়েছে? কিন্তু এখানেতো মানুষের হাত পড়েনি - তাহলে সিলেকশনটা করলো কে! ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬, এই পাঁচ বছর ডারউইন পালতোলা জাহাজে করে সারা পৃথিবী ঘুরে বিভিন্ন পশু-পাখী এবং উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন। এসব পর্যবেক্ষণ করে তিনি প্রকৃতিতেও এক ধরনের সিলেকশন কাজ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তিনি এর নাম দেন ন্যাচারাল সিলেকশন। এটি একটি যুগান্তকারী ধারনা। এই প্রথম মানুষ পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব সম্পর্কে প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব দাঁড় করালো।
ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী কোন জাত বিভক্ত হয়ে নতুন দুটি জাতের প্রাণী বা উদ্ভিদ সৃষ্টি হতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন বলে মনে করতেন চার্লস ডারউইন। কিন্তু সম্প্রতি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বিজ্ঞানী দম্পতি, পিটার এবং রোজমেরি গ্রান্ট গালাপাগস দ্বীপপুঞ্জে মাত্র ৪০ বছরে একটি নতুন প্রজাতির শালিকের (finch) উদ্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
গালাপাগস দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে নানান প্রজাতির শালিক দেখা যায়। ৪০ বছর আগে গ্রান্ট দম্পতি ড্যাফনি মেজর দ্বীপের শালিকদের পায়ে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার লাগানোর সময় একটা বহিরাগত শালিক দেখতে পান। এটা ছিল অত্যন্ত বিরল একটা ঘটনা। গালাপাগস দ্বীপপুঞ্জের শালিকেরা সাধারণত নিজ নিজ দ্বীপেই বাস করে। গ্রান্ট দম্পতি বহিরাগত শালিকটির পায়ে নাম্বার লাগিয়ে দেন ৫১১০ এবং ৪০ বছর ধরে এই পাখীটির বিভিন্ন প্রজন্মকে অনুসরণ করেন। তারা লক্ষ করেন ৫১১০ এর উত্তরসূরিরা প্রথম কয়েক প্রজন্মের পর থেকে দ্বীপের স্থানীয় পাখীদের সাথে মিশ্রিত হয়নি। পাখীরা তাদের চেহারা এবং ডাক দিয়ে প্রজনন সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে আকর্ষণ করে। কিন্তু ৫১১০ এর উত্তরসূরিদের শারীরিক গঠন ও ডাক সামান্য পৃথক হয়ে পড়ায় এরা স্থানীয় পাখীদের আকর্ষণ করতে পারেনি বা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়নি। ফলে এরা প্রজনন গত ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করেছে। প্রজনন গত বিচ্ছিন্নতা কোন প্রাণী-গোষ্ঠীকে আলাদা প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করনের মূল শর্ত।
গ্রান্ট দম্পতির গবেষণা লব্ধ তথ্য নিয়ে প্রকাশিত বই এর নাম 40 Years of Evolution. বইটি বিবর্তন বাদের স্বপক্ষে একটি জোরালো সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হবে।
|