bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ সপ্তাহ (শেষ পর্ব)
সরদার আমীর আজম



আগের অংশ

৭। আমেরিকার সবচেয়ে ভাল লেগেছে সমগ্র দেশ জুড়ে ইহার রোড নেটওয়ার্ক। পশ্চিমা উন্নত বিশ্বের পুরোধা দেশ বলেই কথা। ঘনবসতির কারণে নিউইয়র্কের রাস্তাঘাট প্রশস্ত-করনের ব্যাপারটি একটা সম্পৃক্তিসীমায় (saturation point) চলে গেছে। সুতরাং যানবাহনের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির কারণে বলা বাহুল্য যানজট (বিশেষ করে পিক আওয়ারে) খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে প্রতিদিন, আমাদের সিডনীতে যেরকম। ইতিপূর্বে হিউষ্টনের রাস্তা-ঘাট ও ফ্লাইওভার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলেছি। এরপর সেখান থেকে আরকানসাস, টেনেসি, মিসিসিপি, কেন্টাকি, ওয়েষ্ট ভার্জিনিয়া, ওহাইও, পেন্সিলভ্যানিয়া এবং নিউইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো পর্যন্ত কয়েক হাজার মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়েছি এবং সাকুল্যে আমেরিকার সর্বমোট ১২টি রাজ্য এবং কানাডার নায়াগ্রাসহ অন্টারিও প্রদেশ দেখা হয়েছে ৫ সপ্তাহে যা চাট্টিখানি কথা ছিলনা। একমাত্র কিছু কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া সর্বত্রই সুন্দর ফ্লাইওভার নেটওয়ার্কসহ মাল্টি-লেন (দুই বা ততোধিক এবং সর্বোচ্চ ৬ লেন) এবং মোটামুটি মসৃণ রাস্তা দেখা গেছে (যদিও মাঝে মাঝে রাস্তা প্রশস্ত-করনের কাজ চলছিল)। এমনকি পাহাড়ি এলাকার রাস্তাও মোটামুটি সোজা হয়েই নীচে নেমে কিংবা উপরে উঠে গেছে মনে হয়েছে। যেটি চমৎকার লেগেছে, সাড়া আমেরিকা জুড়ে বিস্তৃত এই highway নেটওয়ার্কের পরিকল্পিত entry ও exit ব্যবস্থা। সর্বত্র highway-গুলির নম্বর দেয়া আছে, যেমন, হাইওয়ে ২০, ৪৫, ৫৫, ৮০, ইত্যাদি। আবার প্রত্যেকটি হাইওয়ে থেকে exit point-গুলি দেখানো হয় সেই হাইওয়ের কত মাইলের মাথায় এক্সিট নেয়া হচ্ছে, যেমন, এক্সিট ১০ (অর্থাৎ ঐ হাইওয়ের ১০ মাইলের মাথায় ঐ এক্সিটটি অবস্থিত), ২০, ৩৫, ৬৫, ৯৫, ইত্যাদি। আর এইসব GPS-গুলিতেও ঐভাবে set করা আছে এবং কোথাও যাওয়ার জন্য GPS-এর কাছে direction চাইলে, হাইওয়ে নম্বর ও এক্সিট নম্বর ধরে GPS নিয়ে যাবে। তবে সিডনীর তুলনায় রাস্তায় ট্রাক ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের আধিক্য ও দৌরাত্ম্য অনেক কম দেখেছি। বেশিরভাগ রাজ্যে দেখেছি ঐ সমস্ত যানবাহন (একমাত্র ওভারটেকিং ছাড়া) প্রথম লেনে চলছেনা, যেটি ভাল লেগেছে। বেপরোয়া ও ক্রেজি ড্রাইভিং-এর মাত্রা যথেষ্ট দেখা গেছে (যেমন, স্পিডিং, ইন্ডিকেটর ব্যবহার না করা, ইত্যাদি), কিন্তু সিডনীর মত অতটা খারাপ মনে হয়নি। রাস্তায় দুর্ঘটনাও খুব একটা দেখা যায়নি, আর সেইরকম কোন দুর্ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি বলে একটু অবাকই হয়েছি। রাস্তায় ট্রাফিক সাইন হিসেবে দুটি সাইনই (স্টপ ও স্পীডলিমিট) সর্বত্র দেখা গেছে। কোথাও গিভওয়ে সাইন দেখিনি, যা একটু অবাক লেগেছে। আর আশ্চর্যজনকভাবে কোথাও রাউন্ড-আবাউট দেখিনি (সম্ভবত: ব্রিটিশ ইনভেনশনস বলে বোধ করি)।

৮। ব্যক্তিগতভাবে চা কিংবা কফি খেয়ে তেমন মজা পাইনি। আমাদের মত কফি শপগুলি যেরকম মেশিনে কফি বিংশ গুড়ো করে সুন্দর করে চাহিদামত চা-কফি (যেমন, কফির বেলায় ফ্লাট-হোয়াইট, লাটে, কাপুচিনো, ইত্যাদি) বানিয়ে দেয় তা ওখানে কম দেখা গেছে। চা-কফি ও অন্যান্য পানীয় মেশিনে কিনতে হয়েছিল সচরাচর, কিন্তু চা-কফি ও ড্রিংক্সের প্রচুর ভ্যারাইটি ও ফ্লেভার পাওয়া যায়, যা আমাদের এখানে অতটা দেখা যায়না। তাই ইচ্ছামাফিক হাতে বানানো চা-কফি খাওয়ার মজাটি তেমন পাইনি। তবে আমেরিকাতে কাপের সাইজ বিশাল। আমাদের সবচেয়ে বড় সাইজের কাপ ওদের ছোট সাইজের সমান। আবার কিছু কিছু বিশেষ দোকানের (তবে ম্যাকডোনাল্ডস কিংবা কে এফ সি-র বার্গার নয়) বার্গারের সাইজ এখানকার চেয়ে দ্বিগুণ মনে হয়েছে, তবে দামেও বেশি। অনেক এয়ারপোর্টে আবার দেখেছি অর্ডার করা ও পে করার সিস্টেম মেশিনের মাধ্যমে। আস্তে আস্তে সবকিছুই মেশিন-চালিত হয়ে যাচ্ছে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, সব পেট্রল পাম্পেই (ওরা বলে গ্যাস ষ্টেশন) তেল কিনেছি পাম্পের সাথেই সংযুক্ত পে মেশিনে ক্রেডিট কার্ডে কোথাও কোন ঝামেলা ছাড়া।

৯। যাত্রাপথে স্বভাবতই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়েছে। কিন্তু আমেরিকাতে ‘টয়লেট’-কে বলে ‘রেষ্টরুম’। তাই, প্রথমদিকে শপিং সেন্টার কিংবা পেট্রোল(গ্যাস) ষ্টেশনে কর্মরত ষ্টাফদের কাছে টয়লেটের দিক নির্দেশনা চাইলে অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। ওরা অনেকটা না বুঝতে পেরে তাকিয়ে থাকত। তখন সাথের লোকজন ‘রেষ্টরুম’ বলে শুধরিয়ে দিত। কয়েকদিন পরে অবশ্য ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

১০। একটি লক্ষণীয় ব্যাপার (যা অস্ট্রেলিয়াতেও ইদানীংকালে বেশ দৃশ্যমান) ছিল যে, নিউইয়র্ক, হিউস্টন, হান্টিংটনসহ অন্যান্য শহরগুলির বসতি এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক বাড়ির সামনে আমেরিকান ফ্ল্যাগ উড়তে দেখা গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের প্রেক্ষিতে কিংবা বোধ করি অভিবাসীদের প্রতি বর্ণবৈষম্যেরই চেতনা থেকে এটি রক্ষণশীল বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গদের উগ্র জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম প্রদর্শনের এক ধরনের প্রবণতা।

১১। শুনেছি নিউইয়র্কের জে এফ কে (জন এফ কেনেডি) এবং লস এঞ্জেলস এয়ারপোর্ট পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এয়ারপোর্ট, যেখানে মিনিটে একটি করে প্লেন ল্যান্ড করে। ঘটনাচক্রে তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছিল। নিউইয়র্কে ভারতীয় বন্ধু ফিলিপের বাসা জে এফ কে এয়ারপোর্ট থেকে খুবই কাছে। একদিন বিকেলে ওদের বাসার পেছনের পারগোলাতে বসে চা খাচ্ছিলাম। সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছিল প্লেনগুলি ল্যান্ড করছে। উল্লেখ্য, প্লেন ল্যান্ড করে এবং টেক-অফ নেয় বাতাসের প্রবাহের বিপরীত দিক থেকে, তাই ল্যান্ডিং রুট বাতাস কোন দিক থেকে বইছে তার ভিত্তিতে পরিবর্তনশীল। ঐদিন ঐসময়ে ল্যান্ডিং রুট ছিল ফিলিপের বাসার পেছন দিক থেকে। ঠিক ঘড়ি ধরে দেখছিলাম প্রায় প্রতি মিনিটে একটি করে প্লেন লাইন ধরে ল্যান্ড করছিল এবং বুঝতে পারছিলাম কত ব্যস্ত এই বিমানবন্দরটি। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল লস এঞ্জেলস এয়ারপোর্টে ২৭ জুলাই যখন সিডনী ফ্লাইট ধরার জন্য বোর্ডিং গেটে অপেক্ষা করছিলাম। ঐসময়ের ল্যান্ডিং রুটটি আমরা যেখানে বসেছিলাম সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল। একই অবস্থা। প্রায় মিনিটে একটি করে প্লেন লাইন ধরে নেমে আসছিল বিরামহীনভাবে। শুধু অপলক নেত্রে দেখে যাচ্ছিলাম সেই দৃশ্য বোর্ডিং শুরু না হওয়া পর্যন্ত।

১২। ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে এবং টেক্সাসের হিউষ্টনে স্প্যানিশ ভাষাভাষী (হিস্পানিক) লোক বেশি দেখা গেছে অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে। কারণ বোধ করি, কিউবা ফ্লোরিডা রাজ্যের কাছে বিধায় যথেষ্ট সংখ্যক কিউবান ইমিগ্রান্ট আছে এই রাজ্যে, এবং মেক্সিকো টেক্সাস রাজ্যের পার্শ্ববর্তী বিধায় সেখানে প্রচুর মেক্সিকান ও মধ্য আমেরিকান ইমিগ্রান্ট বর্তমান। মজার ব্যাপার হয়েছিল, আমার স্ত্রী চেহারা ও গায়ের রঙে একটু ওদের মত দেখতে বিধায় (অবশ্য কিউবান ও মেক্সিকানদের অবয়ব ও রঙ প্রায় আমাদের মতই বলা যায়) ঐ দু’টি রাজ্যে অবস্থানকালে অনেক স্প্যানিশ স্পিকিং মহিলারা তার সাথে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছে, যা নীরবে এড়িয়ে যেতে হয়েছে। আবার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে (যেমন, মিসিসিপি, টেনেসি, কেন্টাকি, ইত্যাদি) আফ্রিকান-আমেরিকানদের সংখ্যাধিক্য দেখা গেছে, যেখানে ঐতিহাসিকভাবে আফ্রিকান ক্রীতদাসরা তুলনামূলক ভাবে বসতি গেড়েছিল বেশি। স্পষ্টতই, আচার-আচরণ ও সংস্কৃতিতে এদের সাথে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান। তবে, এত অল্প সময়ে (সম্ভবত পর্যটক বিধায়) বর্ণবাদজনিত বৈষম্যের ব্যাপারটি স্পষ্ট করে পরিলক্ষিত হয়নি আমাদের কাছে তেমনটি। আর আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও অন্যান্যদের সাথে আলাপ-চারিতায় এ সম্পর্কে তেমন কোন মারাত্মক কিছু শোনাও যায়নি। তবে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটা মনে হয়েছে যে, আমেরিকায় বর্ণবাদজনিত সমস্যা অদৃশ্যমান এবং সুপ্ত থাকলেও অনেকটা পরিপক্কতার পর্যায়ে পৌঁছেছে হয়তো। কারণ মূলত: আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের দেশে প্রথমে ইউরোপিয়ান শ্বেতাঙ্গদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল (সর্বপ্রথম ইটালিয়ান নাবিক কলম্বাস ও তার সঙ্গীদের আমেরিকা আবিষ্কারের মাধ্যমে সেই ১৪৯২ সালে) এবং এরপর শ্বেতাঙ্গদের প্রয়োজনে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের আমদানির মাধ্যমে সেখানে রেড ইন্ডিয়ান, শ্বেতাঙ্গ ও আফ্রিকান এই ৩টি গ্রুপের সম্মিলন হয়েছিল। পরবর্তীতে ভাগ্যের অন্বেষণে এবং একইসাথে আমেরিকার উন্নয়নের স্বার্থে সারা বিশ্ব থেকে আগত অজস্র অভিবাসীদের সম্মিলনে আজকের আমেরিকা পরিণত হয়েছে একটি কসমোপলিটান দেশে। এক কথায় যাকে বলা যায়, “A country with unity in diversity”. (সমাপ্ত)

sarderazam@gmail.com
২০ আগস্ট ২০১৬



আগের অংশ





Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Nov-2016

Coming Events:



Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far