bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ সপ্তাহ (১ম পর্ব)
সরদার আমীর আজম

পরের অংশ


একে তো আয়তনে বিশাল, প্রায় মহাদেশের ন্যায়। তার উপর প্রথম সারির ধনী দেশগুলির অন্যতম, পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পুঁজিবাদী ও পশ্চিমা উন্নত বিশ্বের পুরোধা। আয়তনে রাশিয়া ও কানাডার পরে তৃতীয় বৃহত্তম উত্তর আমেরিকা মহাদেশের এই দেশটি আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র (আমরা বলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) – পূর্বে আটলান্টিক উপকূল থেকে পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর উপকূল (দূরত্ব প্রায় ৩,০০০ মাইল অর্থাৎ প্রায় ৪,৫০০ কিঃমিঃ) জুড়ে এবং উত্তরে কানাডা সীমান্ত থেকে দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত (প্রায় ১,৫০০ মাইল অর্থাৎ ২,৫০০ কিঃমিঃ) যার অবস্থান (আয়তন ৩,৭৯৪,০৮৩ বর্গমাইল অর্থাৎ ৯,৮২৬,৬৩০ বর্গকিলোমিটার এবং সর্বশেষ জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি)। যাইহোক, কথ্যভাবে আমেরিকা হিসেবে সর্বজনবিদিত বলে লেখাটিতে “আমেরিকা” শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে।

স্বভাবতই, দেশটিতে বেড়াবার বাসনা সে অনেকদিনের। সেইসাথে, একদিকে কানাডা প্রবাসী অন্যতম ছোট ভাই বর্তমানে আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়া রাজ্যের মার্শাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং অন্যদিকে এক ভায়রা বসবাস করছে টেক্সাস রাজ্যের হিউস্টন শহরে ও নিউইয়র্কে বসবাস করছে অন্য এক ভায়রার মেয়ে। অধিকন্তু, বহুবছর আগে আশির দশকে কর্মসূত্রে তৎকালীন দক্ষিণ ইয়েমেনের রাজধানী এডেনের জাতিসংঘ অফিসে পরিচয় হওয়া এক ভারতীয় বন্ধু নিউইয়র্কে বসবাস করছে বহুদিন ধরে, যেকিনা সপরিবারে ২০১৫ সালে আমাদের সিডনীতে বেড়িয়েও গিয়েছিল। সুতরাং, সবকিছু মিলিয়ে গত বছর দুয়েক ধরে আমেরিকা ভ্রমণে যাওয়ার বাসনাটি দিনে দিনে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়েছিল। যা শেষপর্যন্ত বাস্তবে রূপ নিয়েছিল গত ২১ জুন ২০১৬ তারিখে।



নিউইয়র্ক - প্রথম গন্তব্য স্থল

ষাটের দশকের প্রথম দিকে যখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র তখনকার ভূগোলের তথ্যানুযায়ী নিউইয়র্ক ছিল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সিটি/নগরী লন্ডনের পরে, আর জাপানের টোকিও ছিল তৃতীয় (প্রত্যেকটির জনসংখ্যা ছিল তখন ৭ থেকে ৮ মিলিয়নের মধ্যে অর্থাৎ কোটির নীচে)। সময়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দ্রুত নগরায়নের বিবর্তনে বিভিন্ন দেশে আরো নতুন নতুন বড় সিটির আবির্ভাব হয়েছে এবং বর্তমানে ১০ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত সিটিগুলিকে বলা হয় মেগা-সিটি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, র্যাং কিং-এ নিউইয়র্কসহ আগেকার সেই বড় সিটিগুলি অনেক নীচে নেমে এসেছে (ধারনা করা যায় পরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি তেমন একটি হয়নি) এবং তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের সাংহাই (প্রায় ২৫ মিলিয়ন) ও বেইজিং, দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতের দিল্লী ও মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচী, ব্রাজিলের সাওপলো, মিশরের কায়রো, নাইজেরিয়ার লাগোস, জাপানের টোকিও, রাশিয়ার মস্কো, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটি এবং আমাদের ঢাকা নগরীও (প্রায় ১৬ মিলিয়ন কিংবা ১ কোটি ৬০ লাখ)। তাই বলে নিউইয়র্ককে তার পুরানো খ্যাতি থেকে বিচ্যুত করা যায়নি। নিজ বিশালত্ব, বৈশিষ্ট্য ও গুনে নিউইয়র্ক পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত কসমোপলিটান সিটি হিসেবে আজো বিখ্যাত ও উদ্ভাসিত এবং প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন পর্যটকদের পদচারণয় মুখরিত। নিউইয়র্কের বর্তমান জনসংখ্যা ৮.৫ মিলিয়ন যা প্রকৃতপক্ষে এর ৫টি বরা (borough) কিংবা কাউন্সিল এলাকার (ম্যানহাটন, ব্রংক্স, ব্রুকলিন, কুইন্স ও স্টাটেন আইল্যান্ড) জনসংখ্যার সমষ্টি। যদিও নিউইয়র্কের অতি নিকটবর্তী হওয়া স্বত্বতেও লং আইল্যান্ড শহর কিংবা এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

সিডনী থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত সে এক দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার আকাশভ্রমণ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে। একটানা প্রায় ১৫ ঘনটা শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে পাড়ি দিয়ে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলস্থ ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস এঞ্জেলস (যেটি সংক্ষেপে এল এ নামেও পরিচিত) বিমানবন্দরে পৌঁছলাম আমরা দুজন। তিন ঘণ্টার যাত্রা-বিরতি। আমেরিকান আইনানুযায়ী ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সংক্রান্ত ঝামেলা লস এঞ্জেলসেই সম্পন্ন করতে হয়েছিল, কারণ আমেরিকাতে ঢুকতে হলে এইসব আনুষ্ঠানিকতা ফার্স্ট-এন্ট্রি এয়ারপোর্টে করতে হয়। তাই ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে ব্যাগেজ সংগ্রহ করে কাস্টমস পার হতে হয়েছিল। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আবার এক্সিট পয়েন্টে ব্যাগেজ ড্রপ করতে হয়েছিল নিউইয়র্কের কানেক্টিং ফ্লাইটে ট্রান্সফার করার জন্য। এরপর মোটামুটি অনেকটা পথ হেঁটে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের জন্য নির্ধারিত টার্মিনালে (টার্মিনাল ৭) যেতে হয়েছিল নিউইয়র্কের ফ্লাইট ধরার জন্য। উল্লেখ্য, আমেরিকার ডোমেস্টিক অন্যান্য বড় এয়ারলাইন্সগুলির জন্যও (যেমন ডেল্টা, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইত্যাদি) নির্ধারিত আলাদা আলাদা টার্মিনাল আছে। যাইহোক, সাইন অনুসরণ করে সহজেই টার্মিনাল ৭-এ পৌছা গিয়েছিল। এরপর আবারো ৫ ঘণ্টার মত উড়ে সরাসরি পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূলস্থ নিউইয়র্ক শহরের পার্শ্ববর্তী নিউ জার্সি রাজ্যের নিউআর্ক (Newark) বিমান বন্দরে অবতরণ করলাম (তবে নিউইয়র্ক শহরের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটনের থেকে খুব একটা দূরে নয়, বলতে গেলে ঠিক বিপরীতে, হাডসন নদীর ওপারে)। যথারীতি ভারতীয় বন্ধু ফিলিপ ওর ছেলেকে সংগে নিয়ে এয়ারপোর্টে এসেছিল। তবে নিউআর্ক এয়ারপোর্ট থেকে ওদের বাসায় যেতে বেশ সময় লেগেছিল, যেহেতু সুবিশাল নিউইয়র্ক শহরের আরেক প্রান্তে কুইন্স এলাকায় তাদের বসবাস যেকারনে নিউআর্ক এয়ারপোর্ট ও ম্যানহাটন থেকে অনেক দূরে (গত বছর ওরা যখন সিডনীতে বেড়াতে এসেছিল তখন কথা ছিল ওদের বাসায় উঠার)। অবশ্য আমারা নতুন গিয়েছি বলে এতটা দূরে আমাদের জানা ছিলনা। ট্রাভেল এজেন্ট ম্যারিকভিলের শামিম ভাই সস্তায় টিকেটের এই ডিল-টির ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে নিউইয়র্ক শহরের মধ্যে দু’টি এয়ারপোর্ট – বিখ্যাত JFK (John F Kennedy) ইন্টারন্যাশনাল এবং La Guardia (মূলতঃ ডোমেস্টিক), দু’টোই বন্ধু ফিলিপের বাসা থেকে কাছাকাছি। আর ম্যানহাটন কাছে হওয়ার কারণে নিউ জার্সির Newark এয়ারপোর্ট তৃতীয় এয়ারপোর্ট হিসেবে সার্ভিস দিয়ে থাকে।

বলা বাহুল্য, মহাদেশের ন্যায় সুবিশাল আমেরিকায় পর্যটকদের দর্শনের জন্য এত অসংখ্য জায়গা, স্থাপনা ও বস্তু রয়েছ যে, মাসের পর মাস থেকেও তা দেখে শেষ করা যাবে কিনা সন্দেহ, যেখানে পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল কিংবা উত্তর-দক্ষিণে কানাডার বর্ডার থেকে মেক্সিকোর বর্ডার পর্যন্ত কয়েক হাজার কিলোমিটার। সুতরাং, স্বল্প সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব নিজেদের সবচেয়ে পছন্দের বিশেষ বিশেষ জায়গা ও স্থাপনা দেখা (যেমন, ডিজনীল্যান্ড, কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাত, হিউষ্টনের নাসা, ইত্যাদি) এবং আত্মীয়স্বজনদের বসবাসের স্থানসমূহ (যেমন, নিউইয়র্ক, টেক্সাসের হিউস্টন, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার হান্টিংটন এবং কানাডার টরন্টো) বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা এ যাত্রায় আমেরিকার পূর্বাংশেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছিল এবং সেইসাথে সুদূর দক্ষিণের হিউস্টন থেকে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া হয়ে নিউইয়র্ক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বাফেলো সিটি (নায়াগ্রার বিপরীতে) দিয়ে কানাডার সীমান্ত অতিক্রম করে নায়াগ্রা ও টরন্টো পর্যন্ত স্থলপথে ভ্রমণ করা। আর আমাদের ভ্রমণ আমেরিকার পূর্বাংশে সীমাবদ্ধ থাকায় আমরা লস এঞ্জেলসের পরিবর্তে ফ্লোরিডা রাজ্যের অরল্যান্ডোর ডিজনীল্যান্ডকে বেছে নিয়েছিলাম।



লং আইল্যান্ড, জ্যামাইকা এবং জ্যাকসন হাইটস

ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা-জনিত সমস্যার কারণে আমাদের ছোটমেয়ে ঈশান অবশ্য আমাদের সাথে যোগদান করেছিল ৩ দিন পরে ২৫ জুন। যে কারণে, সত্যিকার অর্থে আমাদের আমেরিকা ভ্রমণ শুরু হয়েছিল ২৬ জুন থেকে। তবে ঐ ৩ দিনে শুধুমাত্র কুইন্সের কাছাকাছি কয়েকটি জায়গা দেখে নিয়েছিলাম। বন্ধু ফিলিপ ও তার স্ত্রী সুপারিশ করল লং আইল্যান্ডের লং বীচে যাওয়ার কথা, যার কথা সংবাদ মাধ্যমে মোটামুটি শুনেছি। নিউইয়র্ক শহরের একেবারেই পাশে কিন্তু এর প্রশাসনিক আওতার বাইরে তা জানতাম না। লং আইল্যান্ড সত্যিকারই লম্বা, প্রায় ৭০-৮০ মাইল। লং বীচটিও দর্শনীয় ভাবে তৈরি করা হয়েছে। বীচ ঘেঁষে কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কয়েক মাইল লম্বা বিশাল কাঠের পাটাতন যার উপর রয়েছে দর্শনার্থী ও সাইক্লিস্টদের জন্য আলাদা আলাদা চলার পথ। বেশ ভালই লেগেছিল।

এছাড়া, গিয়েই যোগাযোগ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু জাকিরের সাথে সেই ১৫-২০ বছর পরে বোধ করি। সেও কুইন্সেই থাকে এবং নিয়ে গিয়েছিল বাঙালী অধ্যুষিত জ্যামাইকা (কুইন্সের কাছেই) ও জ্যাকসন হাইটসে। নিউইয়র্কে বাঙালী অধ্যুষিত যতগুলি এলাকা আছে তার মধ্যে এই দুটি অন্যতম। বিশেষ করে স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন-এ জ্যামাইকা ও জ্যাকসন হাইটস-এর বাঙালী মালিকানাধীন অনেক দোকানের বিজ্ঞাপন দেখি প্রায়ই। জ্যামাইকাতে গাড়ী থেকে নেমেই দেখলাম আশেপাশে বাংলাদেশী মালিকানাধীন অনেক দোকান-পাট। সাইনবোর্ডও বাংলায় লেখা। একটি দোকানের নাম “কারওয়ান বাজার” দেখে বেশ পুলকিতই বোধ করলাম। আশেপাশের বেশির ভাগ লোকই বাংলায় কথা বলছে এবং অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডাও মারছে (প্রায় ঢাকার মহল্লা বা রাস্তার মতই)। মনে হল যেন ঢাকার কোন এলাকায় আছি। সেখানে আমরা “পানশি” নামের একটি বাংলাদেশী মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে রীতিমত বাঙালী খাবারাদি খেলাম। পরদিন নিয়ে গিয়েছিল জ্যাকসন হাইটসে। এলাকা হিসেবে একটু বেশি ঘিঞ্জিই মনে হল। সেখানে দেখা গেল বাঙালীদের সংখ্যা আরো বেশি এবং রাস্তার দুইপাশেই বাঙালী মালিকানাধীন দোকান-পাট প্রচুর। রমজানের শেষ দিক তখন। যেতে যেতে ইফতারের সময় হয়ে গিয়েছিল। পাশেই এক বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। একেবারেই বাংলাদেশী কায়দায় (পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, হালিম, ইত্যাদি) ইফতারি, আর সেইসাথে বাঙালি খাবারের রাতের ভোজন। দোকান-পাট সম্পূর্ণ বাংলাদেশী স্টাইলে চলছে। দিনের শেষে রাস্তার ফুটপাতেই খালি কার্টুন/বাক্স স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে কাউন্সিলের গাড়ী কালেক্ট করবে। নিউইয়র্কের অন্য কোথাও এরকম দৃশ্য দেখা যায়নি। এমনকি, ফুটপাতের উপর ছোট-খাট হকার-স্টাইল দোকানও দেখা গেল অনেক। এমনকি ছোট্ট পানের দোকানও (বাক্সের মধ্যে), যেখান থেকে পান পর্যন্ত কিনে খেলাম। নিউইয়র্কের মত সিটিতে শুরুতেই এরকম একটা দেশী আমেজ পাওয়াটা ভালই লাগল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে এটুকু যে, ভাগ্যের অন্বেষণে বিদেশ-বিভূঁইয়ে পাড়ি জমিয়েও আমরা নিজেদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতির বলয়ের বাইরে খুব একটা বেরিয়ে আসতে পারিনি, যেটি আমাদের অস্ট্রেলিয়াতেও দৃশ্যমান।



ষ্ট্যাচু অফ লিবার্টি

২৭ জুন ঐতিহাসিক স্ট্যাচু অফ লিবার্টি (Statue of Liberty) দেখতে গেলাম। ম্যানহাটন থেকে ফেরি দিয়ে যেতে হবে লিবার্টি আইল্যান্ডে। স্পষ্টতই ম্যানহাটনে পার্কিং-এর সমস্যার জন্য সিদ্ধান্ত হল বাস ও সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন) ধরে যাওয়ার। কুইন্স থেকে বাসে করে জ্যামাইকা এবং সেখান থেকে সাবওয়ে ধরে সিটি। তবে সাবওয়ে সার্ভিস আমাদের মনপূতঃ হয়নি। স্পষ্টই বোঝা গেল পুঁজিবাদের ধারক ও বাহক আমেরিকায় (যেখানে প্রাইভেট সেক্টরের প্রাধান্য ও জয়জয়কার) পাবলিক সেক্টর কতটা অবহেলিত। মূলতঃ গরীব, খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী সাবওয়েতে চলে। স্বভাবতই একেবারে নুন্যতম কাস্টমার সার্ভিস যেটা না হলেই নয় ততটুকুও আছে কিনা সন্দেহ। ষ্টেশনগুলির পরিবেশ ঘিঞ্জি ও নোংরা, লিফট দুর্গন্ধময়, এবং ট্রেনগুলিও পরিচ্ছন্ন নয়; উপরন্তু অপরিসর সিংগল ডেকার, সিডনীর মত ডাবল ডেকার নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, প্রত্যেক ষ্টেশনে ট্রেনগুলির তেমন কোন দৃশ্যমান টাইম-টেবল দেখা যায়নি, কিংবা কোন ট্রেন কোন প্লাটফর্ম থেকে কোথায় যাবে তা বোঝা যাচ্ছিলোনা, যা সিডনীতে অনেক অনেক ভাল। আমরা শুধু বন্ধু ও তার স্ত্রীকে অনুসরণ করছিলাম বলে রক্ষা। সুতরাং আমাদের কাছে মনে হয়েছে, নতুনদের জন্য নিউইয়র্কের সাবওয়ে ব্যবহার করা অনেক বিব্রতকর ও ঝুঁকিপূর্ণ।

লিবার্টি আইল্যান্ডে যাওয়ার ফেরি টিকেট মেয়ে ঈশান আগেই অনলাইনে কেটে রেখেছিল। একই টিকেটে প্রথমে লিবার্টি আইল্যান্ডে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দেখা এবং পরে এলিস আইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন মিউজিয়াম দেখে ম্যানহাটনে ফিরে আসা। ফ্রেঞ্চ স্কাল্পটর ফ্রেডেরিক বার্থল্ডি'র ডিজাইনকৃত এবং বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ আর্কিটেক্ট গুস্তাফ আইফেল (যে প্যারিসের বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারেরও নির্মাতা) কর্তৃক নির্মিত ৪৬ মিটার (১৫০ ফুট) উঁচু এই বিশাল মূর্তিটি ১৮৮৬ সালে স্থাপিত হয় এবং সেই থেকে লিবার্টি অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এক কথায় বলতে হবে অনেকটা গরমের মধ্যেও এই ট্রিপটি খুবই উপভোগ্য ছিল। এরপরে ফেরিতে চড়ে গেলাম এলিস আইল্যান্ডে। ১৮৯২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপটি আমেরিকার ইমিগ্রেশন ইন্সপেকশন ষ্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, যেখান থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ইমিগ্রান্ট আমেরিকায় প্রবেশ করেছে। এরপর এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে এখানে একটি ইমিগ্রেশন মিউজিয়াম আছে এবং আমেরিকার ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি জানা যায়। (চলবে)



পরের অংশ






Share on Facebook               Home Page             Published on: 21-Sep-2016

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far