ছোটগল্প
প্রহসন মুনশি আলিম
ওরিয়েন্টেশ ক্লাসে তাড়াতাড়ি ঢুকতে গিয়ে পিছন থেকে এক মেয়ে আমার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আমি সোজা হয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটি করজোর করে বলল- sorry, পিছন থেকে কেউ হয়ত -
-its ok.
- আপনার পিঠে লিপস্টিক... এই নিন টিস্যু
- থাকনা, চলুন ক্লাসে।
প্রথমটায় কেমন যেন অসস্তি অনুভব করল তারপর অস্পষ্ট স্বরে বলল-চলুন।
দীর্ঘক্ষণ ক্লাস চলল। ছাত্রছাত্রী কানায় কানায় পূর্ণ। ভরা জোয়ারের সময় নদী যেমন কানায় কানায় পূর্ণ থাকে তেমনি ওরিয়েন্টেশন ক্লাসেও থাকে ছাত্রছাত্রী!
ক্লাস শেষে বিদায় নেওয়ার সময় অবনত নেত্রে পুনরায় বললেন- sorry. একটু কষ্ট করে লন্ড্রিতে দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
- সুমিতা, যদি না ধুয়ে স্মৃতি স্বরূপ রেখে দিই?
ও তখন লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বিস্মিত হয়ে বলে-
- আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
- সে না হয় আরেক দিন জানলেন। ভাল থাকবেন। পরে আবার কথা হবে।
আমি দ্রুত বেরিয়ে আসি। সকাল থেকেই আম্মুর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ। হাসপাতালে না নিলেই নয়। তাই তড়িঘড়ি করে বিদায় নেই। আম্মুকে নিয়ে হসপিটালে যাই। নানাবিধ ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধ সেবন ও নিয়মিত শুশ্রূষার পর প্রায় সপ্তাহ-খানেকের মধ্যেই উনি সুস্থ হন।
সপ্তাহ-খানেক পর আমি ভার্সিটিতে যাই। দরজার সামনেই সে দাঁড়ানো ছিল। হেসে জিজ্ঞেস করল- এতদিন এলেন না যে? এভাবে মিস করলে তো রেজাল্ট খারাপ করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি অবাক হয়ে যাই। মেয়েটি যে আমার উপর রীতিমত অধিকার নিয়ে খবরদারি করছে! আমি তাকে ধীরে ধীরে সব খুলে বলি। এভাবে তার সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেম।
ভার্সিটিতে ভর্তির প্রায় মাস চারেক পরে হঠাৎ আম্মু একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ডাক্তাররা বললেন- মাদ্রাজ নিতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। পাসপোর্ট আগেই করা ছিল বলে বেশ একটা ঝামেলা হল না। কয়েকদিনের মধ্যেই মাদ্রাজ চলে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি করার কারণে সুমিতাকে আর বিষয়টি জানানো হয়ে ওঠে নি। মাদ্রাজে প্রায় মাস দুয়েক চিকিৎসার পর আম্মু সম্পূর্ণ সুস্থ হলেন। আম্মুকে নিয়ে দেশে ফিরে আসি।
দেশে ফিরতে না ফিরতেই লন্ডন থেকে মামা এসে হাজির। এসেই পরিকল্পনা করলেন বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন। কোথায় যাওয়া যায়? কেউ কোন সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে উনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিলেন এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডে যাবেন। আম্মুও আপত্তি করলেন না।
আমরা সপরিবারে এডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ডে ঢুকলাম। তখন প্রায় বিকেল চারটা। এই পার্কের প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ মনোরম। তাছাড়া মিউজিকও যে কোন ভ্রমণপিপাসুদের হদয় হরণ করে নেওয়ার মত। আমি খানিক এগিয়ে যেতেই এক প্রেমিক জুটির দিকে চোখ পড়ল। চমকে উঠলাম! দূর থেকে মেয়েটিকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে।
Email: munshialim1@gmail.com
|