bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা, সিগারেট এবং কিছু স্মৃতি
কামরুল মান্নান আকাশ


আগের অংশ


এখন বলি আমার বাবার কথা যিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং একজন বিজ্ঞানী। আমার বাবা সিগারেট এবং পাইপে করে সুগন্ধি তামাক খেতেন। চোখ বন্ধ করলে এখনো সেই তামাকের সুগন্ধ নাকে এসে লাগে। তিনি ছিলেন খুবই সৌখিন একজন মানুষ। যেমনি পোশাক আষাকে তেমনি ধূমপানে। দামি সিগারেট এবং তামাক ছিল তাঁর খুব প্রিয়, বলতেন একটাই তো শখ। আব্বা প্রতি বছর ২-৩ বার বিদেশে যেতেন তাঁর গবেষণার কাজে, বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে অথবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে। আসার সময় নিয়ে আসতেন পাইপের জন্যে তামাক আর আমাদের জন্যে সিগারেটের কার্টুন। আম্মা রাগ করতেন। আমার বাবা ছিলেন একজন আধুনিক মনের মানুষ বলতেন ওরা বড় হয়েছে সিগারেটও খায়, আমি চাই ওরা ভালোটাই খাক। এখনো চোখে ভাসে আব্বা রাত জেগে গভীর নিমগ্নতায় ক্লাসের লেকচার তৈরি করছেন বা জার্নালের জন্য পেপার লিখছেন কিংবা কোন থিসিস দেখছেন আর পাইপে করে ধূমপান করছেন। তামাকের মিষ্টি গন্ধ আর টেবিল ল্যাম্পের আবছা আলোয় বসে থাকা আব্বাকে মনে হত যেন এক ধ্যান-মগ্ন ঋষি!

আমরা থাকতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকাতে। একদিন পাড়ার দারওয়ান এসে খবর দিল আব্বা গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছেন। আব্বা নিজেই তাঁর ডাটসান গাড়ি ড্রাইভ করতেন। আমি এসে দেখি আমাদের পাড়ার ভিতরেই একটা খাম্বার সাথে লেগে গাড়ির সামনের বনেট দুমড়ে মুচড়ে গেছে। আব্বা বললেন সিগারেট খেতে খেতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন হঠাৎ ঠোঁট থেকে সিগারেট পড়ে যায় আর সেটা তুলতে যেয়েই ঘটে বিপত্তি। এরপর আব্বার উপদেশ ছিল গাড়ি চালানোর সময় যেন সিগারেট না খাই। আজো গাড়ি চালাতে যেয়ে যদি কখনো সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করে আব্বার সেই কথা মনে পড়ে।

আব্বা তখন ফার্মাসী বিভাগের প্রধান ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডীন। আমার ঔষধ বিজ্ঞানী বাবার নাম দেশে বিদেশে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সফল ঔষধ-নীতির প্রণেতা হিসাবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ আসছে এর উপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। সেই সময় একদিন দেশের দৈনিক পত্রিকা গুলোতে একটি সিগারেটের বিজ্ঞাপন বের হয় আব্বার ছবি আর ক্যাপশন দিয়ে এই ভাবে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসী বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট ঔষধ বিজ্ঞানী ডঃ আব্দুল মান্নান বলেন ধূমপান তাকে গবেষণায় মনোনিবেশ এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে”। এটি দেখে আব্বা খুব রেগে যান আর সেই কোম্পানি এবং পত্রিকা গুলোতে প্রতিবাদ লিখে পাঠান যে তারা যদি ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি না ছাপেন তাহলে আইনের আশ্রয় নেবেন। তারা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে ক্ষমা চাওয়াতে ঘটনা আর বেশিদূর গড়ায়নি। আব্বার কাছ থেকে আমারা জানতে পারি যে সেই বহুজাতিক তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি দুই প্যাকেট সিগারেট দিয়ে আব্বার কাছে মতামত জানতে চায় এবং আরো কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন করে যা কোনভাবেই বিজ্ঞাপন বা মিডিয়াতে যাওয়ার কথা না। এটা ছিল এক ধরণের অসাধুতা।

আব্বাকে নিয়ে লিখতে গেলে সেটা অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করেই ইতি টানতে চাচ্ছি। আব্বা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর আমরা থাকি এর উপাচার্য ভবনে। কোন এক ছুটির দিনের শীতের সকালে আমি আর মিনি সামনের গোলাপ বাগানের চারিদিকে হাঁটছি এমন সময় দেখি আমাদের পাড়ার বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ম ম খানের ছেলে এনায়েত (এনায়েতুল্লাহ খান) ভাই সাথে আরো কয়েকজনকে নিয়ে আসছেন। উনি তখন ছিলেন ইংরেজি পত্রিকা কুরিয়ারের সম্পাদক এবং প্রকাশক। এছাড়া টেলিভিশনে ইংরেজি খবরও পড়তেন। আমাকে বললেন আমরা চাচার সাথে একটু দেখা করতে চাই। আব্বা তখন উপাচার্যের আবাসিক দপ্তরে বসে মিটিং করছিলেন। আমি আব্বার পি এস রেজা ভাইকে (উনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার) বললাম উনাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে। এনায়েত ভাই অনুরোধ করলেন আমিও যেন তাঁর সাথে যাই। তো আমিও গেলাম এনায়েত ভাইয়ের সাথে আব্বার অফিসে। মিটিং শেষে সবাই চা খাচ্ছিলেন এবং আব্বার দুই আঙুলের ফাঁকে ধরা ছিল জ্বলন্ত সিগারেট। আব্বা সবাইকে বসতে বলে জিজ্ঞাস করলেন কি কাজে এসেছে। এনায়েত ভাই বললেন উনারা একটা ধূমপান বিরোধী আন্দোলনের জন্য সংগঠন করেছেন যার নাম “আমরা ধূমপান নিবারণ করি”, সংক্ষেপে “আধুনিক”। জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম হচ্ছেন এর সভাপতি আর এনায়েত ভাই সেক্রেটারি। আব্বা বললেন নুরল ইসলাম সাহেব ফোন করেছিলেন যে তোমরা আসবে কথা বলতে। তখন এনায়েত ভাই বললেন আমরা আপনাকে এই সংগঠনের উপদেষ্টা করতে চাচ্ছি যদি আপনি মত দেন। আব্বা বললেন এটা তো খুব মহতী উদ্যোগ আমি রাজী। এনায়েত ভাই বললেন তাহলেতো আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে কারণ আমাদের কাজই হচ্ছে ধূমপান বিরোধী প্রচারণা করা। আব্বা একটু যেন থমকে গেলেন, কি যেন ভাবলেন তাঁর পর হাতের জ্বলন্ত সিগারেট এসট্রেতে গুজে দিয়ে বললেন ঠিক আছে আজ থেকে আমি ধূমপান ত্যাগ করলাম। এরপর আমৃত্যু একদিনের জন্যও আব্বাকে ধূমপান করতে দেখিনি। এমনি ছিলেন আমার বাবা যা বলতেন তাই করে দেখাতেন।

আব্বার পাইপ, তামাকের পাউচ এবং ক্লিনিং কিট সব আমার দখলেই ছিল কিন্তু পাইপ খাওয়া আর হয়ে উঠেনি। সেই সব এখন দেশে কোথায় পড়ে আছে কে জানে! তাই এনজিওগ্রাম করার আগে মনে হল পাইপ খাওয়ার শখটা মিটিয়ে নেওয়া দরকার এরপর যদি আর খেতে না পারি। টোব্যাকো শপে যেয়ে আনুষঙ্গিক সব কিছুই নিয়ে এলাম।

এরপর যথাসময়ে এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়। যদিও এতে তেমন ঝুঁকি নেই তবু সেটি একটি ভীতিকর প্রক্রিয়া বলেই মনে হয়েছে। অপারেশন টেবিলেই ডাক্তার ওই জানালেন কোন ন্যারো ভেইন বা ব্লক পাওয়া যায়নি। আর আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল তাহলে তো আমি সিগারেট খেতেই পারি! ডাক্তার ওই বললেন তোমার পরিবারকে এবং আমাকে খুশি করার জন্য এটা খাওয়া বাদ দাও।

এরপর থেকে আমি সিরিয়াসলি ভাবছি যার এত খারাপ গুন সেটা না খেলে কি হয়! আপাতত শুধু উইকেন্ডে ১-২টা খাচ্ছি এবং খুব শীঘ্রই টোটালি কুইট করব আশা করছি। এনজিওগ্রামের কারণে সবার কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি তাতে মনে হয় মাঝে মাঝে অসুস্থ হওয়াটা খারাপ না এবং সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকাটা আরও চমৎকার একটা ব্যাপার।

সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।


আগের অংশ


কামরুল মান্নান আকাশ, সিডনী





Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Nov-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far