হৃদয় সংক্রান্ত জটিলতা, সিগারেট এবং কিছু স্মৃতি কামরুল মান্নান আকাশ
বেশ কিছুদিন ধরে হৃদয় মানে ইংরাজিতে যাকে বলে হার্ট সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলাম। রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছিল বুকে ভীষণ চাপ আর চিন চিনে ব্যথার কারণে। একটু দৌড়ালেই মনে হচ্ছিল যেন বুকে হাতুড়ি পেটাচ্ছে কেউ, সাথে সর্ট ব্রিদিং। হার্টের সমস্যা কেন বললাম! কারণ যারা সিগারেট খায় (পান বা টানা শব্দটা আমরা কমই ব্যাবহার করি) তাঁদের এই ধরণের উপসর্গ দেখা দেওয়া মানেই হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যপার। আর আমিও একজন সিগারেটের ভক্ত। এই সমস্যা নিয়ে কয়েকবারই হাসপাতালে দৌড়াতে হয়েছে গভীর রাতে। আর সেখানে যাওয়া মানেই সারারাত থাকা- বিরক্তিকর! তার উপর একবার সেখানে ছিল এক বাংলাদেশী ডাক্তার। তিনি মনে হয় হৃদয়ের সাথে যে হৃদ রোগ সম্পর্কিত তা ভালো বোঝেন! আমাকে কানে কানে জিজ্ঞাস করলেন ভাই ভাবির সাথে সম্পর্ক কেমন। আমি বললাম ভালই তবে মাঝে মধ্যে একটু আধটু খিটিমিটি তো হয়ই। দেখলাম তাতে তিনি খুব একটা খুশি হলেন না এই জন্যে যে গল্পটা মাঠে মারা গেল। ডাক্তার সাহেব মনে হয় গল্প টল্প লেখেন প্লট খুঁজছেন!
আমার জি পি-র পরামর্শে ঠিক করলাম একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাব চেকআপের জন্যে। আমি কাজ করি সিডনীর এক বড় হাসপাতালের আই, টি (IT) বিভাগে সেই সূত্রে অনেক ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞের সাথে ভালই পরিচয় আছে। আছে অনেকের সাথে সখ্যতাও তাই এপয়েন্টমেন্ট পেতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয় না। তেমনি একজন হলেন ডাঃ জাকির আখুঞ্জি আমি জানি সে হৃদয়, থুড়ি হৃদ রোগ নিয়ে কাজ করে, তো তাকে সমস্যাটার কথা বললাম। ভাগ্য ভালো যে সে বাঙালি ডাক্তারের মতন আমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক কেমন জিজ্ঞাস করল না, জানাল সে হচ্ছে হৃদয়ের কাটাছেড়া করে অর্থাৎ হার্ট সার্জন (আমার জানতে ইচ্ছে করছিল সে কি ভেঙ্গে যাওয়া হার্টও জোড়া দেয় কিনা)। সে বলল আমার এক সহকর্মী আছে ডাঃ ওই (DR. OOI) খুব ভাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ (Cardiologist) তার সাথে কথা বলে রাখব তুমি কবে আসতে পারবে। আমি বললাম তুমি যখন বলবে। সে বলল ঠিক আছে আমি তোমাকে জানাব। সেদিনই সে আমাকে জানাল সামনের সপ্তাহে ডাঃ ওই এর কাছে যেতে। যথাসময়ে ডাঃ ওই র চেম্বারে যেয়ে অপেক্ষা করছি এক সময় ৩৫-৩৬ বছর বয়সী একজন বেড়িয়ে এল এবং আমাকে নিয়ে ভিতরে গেল। সে আমার মুখ চেনা কিন্তু নামটা জানিনা। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম তুমি কি ডাক্তার ওই র সাথে কাজ কর নাকি। সে অট্টহাসি দিয়ে বলল আরে আমিই তো ডাক্তার ওই। আমি বললাম কি বল আমি তো ভেবেছি তুমি বড়জোর রেজিষ্ট্রার ফেজিষ্ট্রার কিছু একটা হবা। এই অল্প বয়সেই এত নাম করলা কি করে। সে আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল এশিয়ান জিন। এরপর সিরিয়াস হয়ে বলল আগে তোমার চিকিৎসা করি তারপর তুমি সার্টিফিকেট দিও।
ডাক্তার ওই চেকাপ শেষ করে বলল চল তোমার স্ট্রেস টেস্ট করব। স্ট্রেস টেস্ট শেষে আমাকে বললেন আপাতত: খারাপ কিছু দেখছিনা তবে তোমাকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং ছয় মাস পর আবার আমার কাছে আসবে। তার ফিস হচ্ছে ২৫০ ডলার, সে তার সেক্রেটারিকে বলল এ হচ্ছে আমাদের কম্পিউটার সিস্টেমকে সচল রাখে কাজেই একে তো আমাদের সুস্থ রাখতে হবে তাই না! তাই আমি ফিস নিতে পারিনা, বলেই আবার হেসে উঠল ডাক্তার ওই। একজন চমৎকার হসিখুসি আত্মনির্ভরশীল মানুষ এবং ডাক্তার। জীবনে অনেক ভালো মানুষ এবং ভালো ডাক্তার দেখেছি। কিন্তু একই সাথে ভালো ডাক্তার এবং ভালো মানুষ খুব বেশি পাইনি। এর পর মাঝে মাঝে ডাক্তার ওই এর সাথে হাসপাতালে দেখা হয়েছে এবং আমার কাছে জানতে চেয়েছেন সিগারেট বন্ধ করেছি কিনা। ছোটবেলা থেকেই শুনেছি ডাক্তারদের কাছে মিছে কথা বলতে নেই তাই সত্য কথাটাই বলতাম আর দেখতাম ডাক্তার ওই গম্ভীর হয়ে যেতেন। এরপর তাকে এড়িয়ে চলতাম আর ছয় মাস পরও তাঁর চেম্বারে যাইনি।
এর মধ্য বছর গড়িয়ে গেছে সিগারেটও খাচ্ছি তবে চেষ্টা করছি সংখ্যাটা কমাতে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবার কেমন জানি ঠিক হান্ড্রেড পারসেন্ট ভাল বোধ করছিলাম না। বাসায়ও কিছু বলছিনা কারণ আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে এবং ছেলে মিলে মহা হৈ চৈ শুরু করে দিবে এবং আমার সিগারেট খাওয়া, রাত জেগে বই পড়া, প্রিয় সব খাবার (মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম, চিপস, চানাচুর, বাদাম আরও কত কি!) বন্ধ তো করবেই সাথে আরো কিছু নিয়মের মধ্য বেঁধে দিবে। আবার ডাক্তার ওই এর সাথে দেখা করলাম সে হেসে বলল আমি তোমাকে সিগারেট নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস করবোনা আগে চেকআপ করে নেই। আবার স্ট্রেস টেস্ট, বলল খুব খারাপ কিছু দেখছিনা তবে এনজিওগ্রাম না করে কিছু বলা যাবেনা। আরো বললেন তুমিতো আবার কোনকিছুই মান না, তাই আমি তোমার ব্যাপারে কোন রিস্ক নিতে চাই না। আমি আর কিছু জিজ্ঞাস করলাম না, ভাবছিলাম কিছু একটাতো হয়েছেই তা না হলে কেন এনজিওগ্রাম করবে। আমাকে বলল সামনের সপ্তাহে শুক্রবার ভোর সাতটায় আসতে পারব কিনা। আমি রাজী হলাম। তারপর বলল আরে ভেবনা এটা কোন ব্যাপারই না ব্লক টলক থাকলে ছুটিয়ে দেব। বাসায় সবাইকে হাসিমুখে জানালাম এবং বললাম আরে এইটা কোন ব্যাপারই না। জীবনে অনেকবারই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি, বাঁচব না মরব তা নিয়ে ভাবিনি কখনো। তাই আজকেও সে চিন্তা আসেনি। কিন্তু কেমন যেন অদ্ভুত একটা ভাব এসে ভর করছে। সিগারেট সংক্রান্ত অনেক কথা অনেক স্মৃতিই মনে পরছে। এটা কি অদ্ভুত ভাবনা নয়! এই সাত দিন ধরে সেই ভাবনা গুলিই লিখে ফেলতে চাইলাম। আর ভাবলাম যদি এরপর সব ঠিকঠাক থাকে তবে এসে বাকিটা লিখে শেষ করব। দিয়াশলাই নিয়ে কবি সুকান্তের কবিতা পড়েছি। কিন্তু সিগারেট নিয়ে কেউ কি কিছু লিখেছে! হয়ত লিখেছে, জানিনা। তবে সিগারেট নিয়ে কিন্তু চমৎকার কবিতা হতে পারে। একটি সিগারেট হতে পারে একটি জীবনের গল্প। কিংবা হতে পারে কোন ব্যর্থ প্রেমের উপাখ্যান। একটি সিগারেট কেমন করে একজন ব্যর্থ মানুষ বা প্রেমিকের মত নিঃশেষে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে ঝরে পরে লেখা যায় সেই কথা। কোন কাব্য নয়, কোন সাহিত্য নয়! কেউ কি কখনো জানতে চেয়েছে একজন সিগারেট প্রেমিক বা ভক্তের কথা। পৃথিবীতে আর সব আসক্তির মধ্যে সিগারেটে আসক্তের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। অন্য প্রাণীরাতো এতে আসক্ত নয়। কাজেই একমাত্র উন্নত-জাতের প্রাণী মানুষই এটাকে চিনতে পেরেছিল। মানুষ যে এমন একটা চমৎকার জিনিস উদ্ভাবন করেছিল তার জন্য আদিম মানব অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। অনেক কিছুরই বিকল্প আবিষ্কৃত হয়েছে তেমনি সিগারেটের বিকল্প ইলেকট্রনিক সিগারেটও বেরিয়েছে। আমিও বিভিন্ন মডেলের কয়েকটি কিনেছিলাম। সেটা টেনে কোন মজা না পেলেও অন্য সবার এটির প্রতি আগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণ উপভোগ করেছিলাম। সিগারেট-খোরেরা আমার মতই একমত পোষণ করলেন “real thing” না বলে। কিন্তু ভাবীরা খুব উৎসাহিত হয়ে উঠলেন এতদিনে বোধহয় স্বামীর জীবন দীর্ঘায়িত করার জন্যে সিগারেটের একটা বিকল্প পাওয়া গেল।
সিগারেট আমি খাচ্ছি অনেকদিন ধরেই। এরি মধ্যে আমার জানাশোনা অনেকেই এই কাজটি থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে স্বেচ্ছায় কমই, বেশীর ভাগই অবস্থার চাপে পড়ে যাকে বলে Forced retirement! আমার উত্তম অর্ধেক (Better half) সহ অনেক মেয়েকেই বলতে শুনেছি ছেলেরা বউ ছাড়তে পারে কিন্তু সিগারেট ছাড়তে পারেনা। আমার বউ যখন তাঁদের দেখিয়ে বলেন দেখ ওরা বউকে কত ভালবাসে যে সিগারেট খাওয়ে ছেড়ে দিয়েছে। সেটা শুনে প্রাক্তন সিগারেট প্রেমিকেরা যখন হাসে সেখানে লুকিয়ে থাকে এক দীর্ঘশ্বাস যেটা শুধুমাত্র সিগারেট-খোররাই শুনতে পায়। যারা বউয়ের কথা শুনে সিগারেট ছেড়েছেন তাদেরকে কেউ কেউ স্ত্রৈণ বললেও আমি বলি প্রেমিক, যারা লড়াই করে বাঁচা মরার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সিগারেট ছেড়েছেন আমি তাঁদের বলি বীর! আর যারা একেবারে যুদ্ধেই যান নি তারা হলেন বুদ্ধিমান। অর্থ এবং শরীর দুটোই বাঁচিয়েছেন। তবু আমার যে সব বন্ধুরা সিগারেট পরিত্যাগ করেছেন তাঁদেরকে জানাই সাধুবাদ আর আশা করছি লড়াই করে যখন হেরে যাব একদিন আমিও তাঁদের দলভুক্ত হয়ে যাব।
জীবনে প্রথম কবে সিগারেটে টান দিয়ে ছিলাম সঠিক মনে নেই। তবে একদিন আমার কাকা সিগারেট জ্বালিয়ে রেখে কোথায় যেন গিয়েছিলেন আমি সেটা থেকে একটান দিয়ে খুব কেশেছিলাম। এরপর একটু ডাঁট নিয়ে বলে বেড়াতাম আমিও সিগারেট খেতে পারি। ছোটবেলায় বেড়াতে গেছি পুড়ান ঢাকার নানা বাড়িতে। রাস্তার পাশে দেখি আদিল পাগলা একটা সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে বালির মধ্যে গেঁথে বসে আছে। আমি আর আমার সমবয়সী মামা নেপি জিজ্ঞেস করলাম সে কি করছে সে বলল এটা আকাশে উড়বে। আমরা এতে উৎসাহিত হয়ে দোকানে সিগারেট কিনতে গেলাম। দোকানি আমাদের আচ্ছা করে শাসাল আবার যদি সিগারেট চাইতে আসি তবে বাসায় নালিশ দিবে বলে। ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসছি অমনি নেপি লাফিয়ে উঠল বলল তার বন্ধুর বাবার দোকান আছে তার কাছে গেলেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এবার আমাদের প্রচেষ্টা সফল হয়। খুশি মনে সিগারেট নিয়ে ফিরে আসছি আর অমনি পড়লাম বড় মামার সামনে। মামা নেপির হাতে সিগারেট দেখে তার কান চেপে ধরল। আমরা যতই বলি আমাদের উদ্দেশ্যের কথা তিনি তাতে কর্ণপাত না করে নেপির কর্ণ ধরে আমাদেরকে নিয়ে হাজির করলেন মায়ের সামনে। বললেন নেপিটাতো উচ্ছন্নে যাচ্ছেই আমাকেও উচ্ছন্নে নিয়ে যাবে। আমার মমতাময়ী মা আমাদের কাছে জানতে চাইলেন কি হয়েছে। সব শুনে মামাকে বললেন ওরা মিথ্যা বলছেনা। আর আমাদেরকে বললেন এসব যেন আমরা আর না ছুঁই ।
এরপর কলেজে উঠে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সিগ্রেট মুখে নিয়ে শুধু ধোঁয়া ছুড়তাম, একে ঠিক খাওয়া বলে না। সত্যিকার অর্থে সিগারেট ধরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। আমি ছিলাম ভূতত্ত্বের ছাত্র এবং পরে পেশাগত জীবনে ভূতত্ত্ববিদ। ছাত্রই হোক বা পেশাজীবীই হোক ভূতত্ত্ববিদকে অনেকটা সময় থাকতে হয় ফিল্ড ওয়ার্ক অথবা ড্রিলিং সাইটে, ঘুরে বেড়াতে হয় মাঠে, ঘাটে আর বনে জঙ্গলে। তখন সিগারেটকে মনে হয় একমাত্র সঙ্গী। তাই জুনিয়র সিনিয়রদের মধ্যে সিগারেটের আদান প্রদান চলত অহরহ। আমাদের শিক্ষক মনিরুল হক স্যার ক্লাসে ঢুকতেন হাতে একটা সিগারেট নিয়ে। একটু পর পর ঠোঁটে ছোঁয়াতেন আবার হাতে নিতেন কিন্তু আগুন জ্বালাতেন না। এভাবেই স্যার সিগারেট খাওয়ার সময়টাকে দীর্ঘায়িত করতেন। ভূতত্ব বিভাগের সামনেই ছিল সায়েন্স ক্যাফেটেরিয়া এবং সিগারেটের দোকান। আমারা সেখান থেকে সিগারেট কিনতাম কখনো বা স্যাররা দেখে ফেলতেন। আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন মাজহার স্যার একটু সনাতন পন্থি। আমাদের এক সহপাঠীকে হয়ত স্যার সিগারেট খেতে দেখে থাকবেন। একটু পরেই ছিল তাঁর ক্লাস তিনি ক্লাসে তাকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাস করলেন তুমি যে সিগারেট খাচ্ছিলা আমাকে দেখে নাকি না দেখে। আর সে বেচারা ভয়ে অস্থির হয়ে বলল না স্যার আমি আপনাকে দেখিনি। মাজহার স্যার তাতেই খুব খুশি হলেন বললেন তাইত কই আমার ছাত্র আমার সামনে সিগারেট খাইব এইটা কি হয়। বিভাগের সিনিয়র ভাই সারওয়ার ভাই ছিলেন ভীষণ রকমের ভাল ছাত্র কিন্তু তাঁর ছিল বিভিন্ন রকমের নেশা। একবার বিভাগীয় ছাত্র সংসদের ইলেকশনের আগে আরেক বড় ভাই মিজান ভাই আমাকে বলল তার প্যানেলে সাধারণ সম্পাদকের পদে তাঁর সাথে থাকতে। তা শুনে সারওয়ার ভাই আমাকে ডেকে পাঠালেন তাঁর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন রুমে। আমাকে বললেন তাঁর প্যানেলে থাকতে। আমি বললাম কেন? উনি বললেন তোমাকে যে নিতে চাচ্ছে সে তো ভয়ঙ্কর মানুষ। যে নাকি সিগারেট খয়না, কোন নেশা করেনা সে কত ভয়ঙ্কর বল দেখি!
এরপর চাকুরী জীবনে প্রবেশ করি বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে। সেখানেও ছিল ছাত্রকালিন পরিবেশ। এর কারণ বোধহয় সিনিয়র জুনিয়র সবাই ছিল ভুতত্ব বিভাগেরই ছাত্র। শুধু যারা খুব বেশি সিনিয়র বা আমাদের খন্ডকালিন শিক্ষক ছিলেন তাঁদের সামনে সিগারেট খেতাম না। একদিন এক প্রশিক্ষণ ওয়ার্কশপে আমাদের শিক্ষক এবং মহাপরিচালক এস কে এম আব্দুল্লাহ আর থাকতে না পেরে সেখানেই সিগারেট ধরালেন আর বললেন যেহেতু আমি সিগারেট খাচ্ছি তোমরাও খেতে পার। মমিন উল্লাহ বলে একজন ভূতত্ববিদ ছিলেন উনি হৃদ রোগ আক্রান্ত হলে বাইপাস সার্জারি করতে হয়। অথচ উনি কখনো সিগারেট খেতেন না। তখন আব্দুল্লাহ স্যার হাসতে হাসতে বললেন সিগারেট খাই আমি আর হার্ট এট্যাক হয় মমিন উল্লাহ্র! এর বছর পাঁচেক পরে অবশ্য আব্দুল্লাহ সাহেবকেও হৃদ রোগের শিকার হয়ে সিগারেট ছাড়তে হয়েছিল। মুক্তি যুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়া উনার বাসায়ই আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখান থেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন সাথে আব্দুল্লাহ স্যারও।
পরের অংশ
কামরুল মান্নান আকাশ, সিডনী
|