জীবনের রং- প্রধান অতিথি যখন প্রধান মন্ত্রী / কামরুল মান্নান আকাশ
আগের অংশ
আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি সম্মানিত প্রধান অতিথি তথা প্রধানমন্ত্রীর আগমনের জন্য। মনে মনে ভাবছিলাম সেই দিনের কথা, শেষ যেদিন ওনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। সেটা ছিল আমাদেরই বাসায় আম্মার বেড রুমে, তিনি বসেছিলেন আম্মার পাশে। তখন তিনি ছিলেন খুব সাধারণ বেশে একজন সংগ্রামী, জনগণের নেত্রী। কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন তিনি সেদিন আমাদের বাসায় ছিলেন সেই ঘটনা হয়ত পরে কোন এক সময় লিখব।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতীক্ষায় | এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। উনি আসলেন, লাল গালিচা দিয়ে হেঁটে এসে বসলেন মঞ্চে সাজানো হাজী চাঁন মিয়ার বানানো সেই রাজকীয় চেয়ারে। অনেক ফুলের মাঝখানে বসলেন আরেকটি ফুল হয়ে। মঞ্চে অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা নাফিজা চৌধুরী মিনি তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করল। মিনি ছিল সেই সময়ের একমাত্র ভূতত্ত্ববিদ উপস্থাপিকা, যার সুন্দর উপস্থাপনার জন্য সব অনুষ্ঠানেই ডাক পড়ত। আর সবার উপরে আমার জীবন সঙ্গিনী। দুই একটি ঘোষণার পর দেখি ঘোষণা হচ্ছে কিন্তু মঞ্চে মিনি নাই। আমি মঞ্চের পিছনে গ্রিন রুমে যেয়ে দেখি মিনি উইংসের পাশে শব্দনিয়ন্ত্রনকারী লোকজনের মাঝ থেকে ঘোষণা করছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম কি ব্যাপার, ও মন খারাপ করে বলল কেউ একজন হোমরা চোমরা ওকে বলেছে প্রধান মন্ত্রী পছন্দ করেন না তার সামনে যেয়ে কেউ বার বার মাইক্রোফোনে কথা বলুক। আর মিনিকে তো প্রতিবারই ওখানে যেয়ে পরবর্তী ঘোষণা দিতে হচ্ছিল। ও রাগ করে চলে যেতে চাইছিল আমি বুঝিয়ে সুজিয়ে ধরে রাখলাম তা না হলে অনুষ্ঠান চালাব কি করে!
আর্ট কলেজের ছাত্রদের গানের দল | আমি পিছনে আরেকটি রুমে যেখানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি সহ অন্য অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তার তদারকি করে মঞ্চের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম উনাদের অপেক্ষায়। কথা ছিল মন্ত্রী মহোদয় ও আবদুল্লাহ স্যার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথিকে নিয়ে ওখানে আসবেন। দেখলাম মঞ্চ থেকে বের হয়ে প্রধান অতিথি খাবার ঘরের দিকে না যেয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছেন। আমি আবদুল্লাহ সাহেবের দিকে তাকালাম উনি আমাকে হাত দিয়ে থামার ঈশারা করলেন। খাবার নিয়ে এত ঝামেলার পর আমি আর থেমে থাকতে পারলাম না প্রোটকল ভেঙ্গে ওনার সামনে যেয়ে বিনীত ভাবে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। একজোড়া পিঙ্গল চোখ আমার প্রতি ক্ষণিকের তরে দৃষ্টিপাত করে কিছু না বলেই চলে গেল। নিজেকে কেমন যেন খুব অপাংতেয় মনে হল। হোক না প্রধান মন্ত্রী, হ্যাঁ বা না কিছু একটা বললে খুশি হতাম - নিদেন পক্ষে একটা হাসি!
এই যে প্রধান মন্ত্রীর পছন্দ অপছন্দের নামে এত নাটক মঞ্চস্থ হল এর কতটুকু তার নির্দেশে আর কতটুকু অতি উৎসাহী তোষামোদকারীদের নির্দেশে হল বলা কঠিন। তবে পরে শুনেছি এত হাই প্রোফাইলের কেউ কেউ নাকি এই ধরনের অনুষ্ঠানে কিছু খান না। তাই যদি হবে তা হলে সেটা আগে জানালেই কি ভাল হতনা! তবে আমার আরেকটি অভিজ্ঞতা আছে এক রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে, উনি কিন্তু আমাদের সাথে খেয়েছিলেন।
সারা জীবন কত মানুষের কাছ থেকে কত যে ভালবাসা আর সহযোগিতা পেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবেনা। নিজের জন্য কোনদিন কারও কাছে কিছুই চাইনি। তাই কেউ কেউ বলত অন্যের জন্য করে না বেড়িয়ে নিজের জন্য কিছু কর। আমি তাদের বলতাম আমার লাভটাই তো সবচেয়ে বেশী, এই করার মাঝে যে আনন্দ তার পুরোটাই তো আমার! বড় কোন ঘটনার কথা লিখতে গিয়ে লেখার মাঝে অনেক ছোট ছোট স্মৃতিও এসে ঠাঁই করে নিচ্ছে নিজের অজান্তেই। আর আসবেই বা না কেন এ সব যে অনেক মানুষের অনেক ভালবাসার কথা, ভুলি কেমনে!
আগের অংশ
কামরুল মান্নান আকাশ, সিডনি
|