জীবনের রঙ – একটি ইন্টারভিউর গল্প কামরুল মান্নান আকাশ
লেখালেখির ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোর ধরা মানুষের মত। যখন লিখতে চাই কিছুতেই লিখতে পারিনা। আবার যখন ভাবনায় কিছু একটা এসে যায় তো সারাক্ষণ সেটাই মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না তা অক্ষরে সাজিয়ে তুলি। সেই অস্থিরতাকে কাটাতেই এই লেখালেখি। অনেকেই আমাকে বলে আমার লেখায় নাকি এক ধরনের বিষণ্ণতা বিরাজ করে যা পড়ে মন খারাপ হয়ে যায়। তাতে কিন্তু আমার মন খারাপ হয়না বরং ভাল লাগে সেইসব মানুষের ভিতরের মানুষটাকে অনুভব করে। যাদের মধ্যে দুঃখ বোধ আছে, সহমর্মিতা আছে, ভালবাসা আছে, তারাই তো সত্যিকারের মানুষ! আর যারা মনে করে জীবনের সব পেয়ে গেছি, এবং অহংকার এসে গ্রাস করে ফেলে নিজ সত্ত্বাকে, তাঁদের ভিতরের মানুষটা মরে যায়। অন্যের দুঃখ-বেদনা তাঁদেরকে স্পর্শ করে না। সেই সব মানুষকে করুণা ছাড়া আর দেবার কিছু থাকেনা। আমার কেন যেন মনে হয় মানুষের জীবনে প্রাপ্তির সাথে কিছু কিছু অপ্রাপ্তি ও অপূর্ণতা থাকাটা খুব দরকার। যা তাকে ব্যথিত করবে, কষ্ট দেবে, রাগ-অনুরাগের জন্ম দেবে, তবেই না সে মানুষ!
লিখতে শুরু করেছিলাম জীবনের এক জটিল সময়ের এক স্মৃতির কথা, কিন্তু শুরুটা হয়ে গেল ভাব-গম্ভীর কথা দিয়ে! যে কারণে এই স্মৃতির দিঘীতে ঢিল পড়ল তা হল এক ছোট ভাই, যার সাথে প্রায় পঁচিশ বছর পর ফোনে কথা বলা। ও ভূতত্ত্ব নিয়ে পাশ করলেও চাকুরী করত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশে আমি ও মিনি জিওলজিস্ট ছিলাম এবং ওর কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিল সেখানে। সেই সূত্রে আসাযাওয়ায় আমার ও মিনির সাথে ছোট ভাই সুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিভিন্ন রকম কথা বার্তা হচ্ছিল পুরানো দিনের। ও বলছিল ওর বিয়ের সময় মিনির পছন্দে কেনা শাড়ির সবাই কেমন তারিফ করেছিল। জানাল এখনও বেক্সিমকোতেই কাজ করছে। আর তখনই মনে করিয়ে দিল ফেলে আসা এক সময়ের কথা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এক সময় প্রেম, ভালবাসার সম্পর্কগুলো খুব স্বাভাবিক ছিলনা এবং অনেক পরিবারই সহজভাবে নিত না। কিন্তু আমি ও মিনি ভাগ্যবান ছিলাম যে দুই পরিবারই আমাদেরকে মেনে নিয়েছিল সহজেই। তারপরও এই নৌকায় একবার যারা উঠে শুধু তারাই জানে কত শক্ত হাতে দাঁড় বাইতে হয় মাঝিকে। কত ঝড় ঝঞ্জা পাড়ি দিয়ে তীরে ভিড়াতে হয় তরী। কত বন্ধু শত্রু হয়ে যায়, শিক্ষকদের কোপানলে পড়তে হয়। আমি ও মিনি সে সবের থোড়াই পরওয়া করতাম। সদম্ভে, সগৌরবে মিনিকে আমার মটর সাইকেলের পিছনে বসিয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াতাম। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে যে ফিজিক্স প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের আগে ডিপার্টমেন্টের সামনে সিঁড়িতে বসে (মেইন বিল্ডিং কার্জন হলের) মিনির আনা টিফিন খাচ্ছি আর তখনই চারিদিক শ্লোগানে প্রকম্পিত করে প্রবেশ করছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিল। মিছিলের নেতৃত্বে থাকা নেতারা বিশেষ করে ডাকসুর ভিপি আক্তার (আক্তারুজ্জামান) ভাই ও বাবলু (জিয়া উদ্দিন) ভাই আমাদের সামনে এলেই আমাদের প্রতি হাত নাড়তে থাকতেন, সাথে সাথে মিছিলে থাকা আমার সহযোদ্ধা বন্ধুরা, বড় ভাই, ছোটভাই সবাই মিলে হাত নাড়তে থাকত। আর আমরাও হত নাড়তে থাকতাম। আক্তার ভাইকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম এর কারণ। তিনি বলেছিলেন মিছিলে, আন্দোলনে দেখি তোমার এক অস্থির-উদ্দাম রূপ আর মিনির সাথে আরেক শান্ত রূপ, খুব ভালো লাগে আমার। আমরা রোমান্টিক নাটক, সিনেমা দেখতে পছন্দ করলেও নিজের জীবনের রোমান্টিকতা নিয়ে বলতে গেলে কেমন যেন দ্বিধা বোধ করি। তবে জীবনের এক পর্যায়ে এসে সংকোচ বোধ হয় আর বাধা হয়ে উঠেনা, বরং সেইসব কথা মনে করে এক ধরণের রোমাঞ্চ জাগে মনে।
তখন আমার আর মিনির অনার্স ফাইনাল ইয়ার। মিনিদের বাসায় কোন সমস্যা না থাকলেও সব পরিবারেই দুই একজন থাকে যারা সমস্যা তৈরি করে। তেমনই একজন ছিলেন ওর এক আত্মীয়। তিনি একদিন আমাকে বললেন যে মিনির বাবা মা নাকি বলেছে আমাদের এখনই বিয়ে করতে হবে, তা না হলে আমরা এক সাথে মিশতে পারবনা। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, এখনো তো পড়াশুনাই শেষ হয়নি। আর না মিশেই বা থাকব কেমন করে, আমরা যে একই বিভাগে একই বর্ষে পড়ি! তারপরও প্রস্তুতি নিতে লাগলাম কি ভাবে অর্জিত বিদ্যা নিয়ে দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়।
একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নিবে, যোগ্যতা স্নাতক পাশ। আমার হাতে তখন আছে শুধু মাত্র সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার নম্বর পত্র। এক বন্ধু বলল এটা স্নাতকের সমকক্ষ আর অনার্স হচ্ছে স্নাতকের চেয়ে একটু বেশী! আবেদন পত্রে সেটা সংযুক্ত করলাম। জীবন বৃত্তান্তে শিক্ষাজীবনের ইতিহাসটা হাড় জিরজিরে হলেও এক্সট্রা কারিকুলামের অবস্থাটা হলো সুমো কুস্তিগির মত স্বাস্থ্যবান। তখনই উপোলদ্ধি করলাম এইটুকু জীবনে কত কিছুই না করছি, “জ্যাক অব অল ট্রেড মাস্টার অব নান”! কিন্তু পরবর্তী জীবনে সব কিছুই কাজে লেগেছে এবং আমাকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টায় সাহায্য করছে। কি লিখেছিলাম সেখানে – গাড়ি চালাতে জানি, খুব ভাল মটর সাইকেল চালাই, গিটার বাজাই (আমাদের ব্যান্ড গ্রুপ ঝংকারে বাজাতাম), নাট্যচক্র স্কুল অব ড্রামা থেকে নাটক ও অভিনয়ের উপর দুই বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা করেছি , মঞ্চে নাটক করি (আমি তখন মহিদুল ইসলাম মানু ভাইয়ের গ্রুপ “ব্যতিক্রমে” নাটক করতাম ও সেট ডিজাইন করতাম), ক্যারাটেতে ব্ল্যাক ব্যাল্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সট্রাকটর, ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্যারাটে কম্পিটিশনে রানার আপ, কবিতা লিখি ও আবৃতি করি, বই পড়তে ভালবাসি, ছবি আঁকি, স্কুলে জুনিয়র ক্যাডেট কোরের মেজর ছিলাম, ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেইনিং কোরের সদস্য, ঢাকা ইউনিভার্সিটি রাইফেল ক্লাবের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সদস্য আরও কত কি, রাজনীতির কথা শুধু বাদ থাকল (লেখালেখির এই এক সুবিধা সুযোগ পেলে নিজের ঢোলটা নিজেই একটু বাজিয়ে নেয়া যায়)। আরও সংযুক্ত করলাম আঁকাবাঁকা স্টুডিও থেকে তোলা চমৎকার এক কপি ছবি। নিজের জীবন বৃত্তান্ত দেখে নিজেই মুগ্ধ হলাম। মনে মনে বললাম এই রকম একটা ছেলেকে আমি হলে চাকুরী দিয়ে দিতাম। ডাকুক একবার ইন্টারভিউতে তারপর দেখি কি করে চাকুরী না দেয়, এমনই ছিল আত্মবিশ্বাস।। আজ যখন পিছন ফিরে তাকাই দেখি সেদিনের আত্মবিশ্বাস আমাকে বঞ্চনা করেনি। আমি যে খুব ভাল ছাত্র ছিলাম তা না কিন্তু জীবনে যে ইন্টারভিউতেই গিয়েছি কমই বিফল হয়েছি। এ আমার কোন অহংকার নয় আমার আত্মবিলাস।
কিছুদিনের মধ্যেই চিঠি এলো আমাকে লিখিত পরীক্ষার জন্য যেতে হবে বেক্সিমকোর ধানমণ্ডির অফিসে। আমি তো জীবনের প্রথম ও কঠিন সময়ে সেটা হাতে পেয়ে খুশীতে আট দুগুণে ষোলখানা। যথাসময়ে হাজির হলাম, দেখি বিভিন্ন বয়সের মানুষ বেশ সেজে-গুজে উপস্থিত পরীক্ষার জন্য। আর আমি জিনসের প্যান্টে শার্ট টাকইন করে, স্নিকার পড়া, শুকনা-পটকা এক তরুণ। কেউ কেউ আমাকে মাপছে আর হয়ত ভাবছে এই চ্যাংড়াটা এখানে কি করছে। যাই হোক পরীক্ষা দিয়ে মনে হল ভালই হয়েছে। বেশীর ভাগই ছিল আই কিউ, সাধারণ জ্ঞান ও বেসিক সায়েন্স সংক্রান্ত প্রশ্ন। এখানে যারা পাশ করবে তাদেরকে ডাকা হবে প্রাথমিক ইণ্টারভিউতে তারপর চূড়ান্ত ইন্টারভিউয়ের জন্য। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি আর চা খাচ্ছি তখন একজনকে, যিনি ছিলেন এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার মূল সমন্বয়কারী, চেনা চেনা লাগছিল। জানলাম উনি আমাদের কার্জন হলেরই প্রাণীবিদ্যার ছাত্র ছিলেন, হাসিখুশি মানুষ। বললেন তোমাদের রেজাল্ট হোক তারপর তোমার সাথে কথা বলব। প্রায় ষাট জন পরীক্ষা দিয়েছিল তারমধ্যে কুড়ি জনকে প্রাথমিক ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচন করা হয়। প্রথমেই আমার ডাক এলো। ভাবলাম বাদ দিয়ে দিবে বলেই হয়ত সবার আগে ডেকেছে। ঘরে ঢুকতেই আমার দিকে তাকিয়ে উনি একটু হাসলেন। বিভিন্ন প্রশ্ন করলেন এবং মনে হল সন্তুষ্ট হয়েছেন। সব শেষে বললেন লিখিত পরীক্ষায় তো ভালই করেছ, বাইরে যেয়ে অপেক্ষা কর ফাইনাল ইন্টারভিউয়ের জন্য।
লাঞ্চের পরে হবে ইণ্টারভিউ জিএম সেলসের সাথে। বাইরে লাঞ্চ খেতে যাব যাব করছি তখনই কার্জন হলের সেই বড় ভাই এসে বললেন লাঞ্চ করেছ, বললাম না। চল যাই খেয়ে আসি। খেতে খেতে বললেন তোমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচন করাটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। অন্যরা বলছিল এত স্নাতক পাশ প্রার্থী থাকতে তোমাকে কেন ডাকবে। আমি বলেছিলাম এই রকম ছেলেই আমাদের দরকার যা তুমি লিখেছ এক্সট্রা কারিকুলাম নিয়ে। আর তুমি প্রমাণ করেছ আমি ভুল করিনি। তবে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হবে কিনা এখনও বলতে পারছিনা, সেটা জেনারেল ম্যানেজারের উপর নির্ভর করবে।
লাঞ্চ ব্রেকের পর শুরু হল ফাইনাল ইন্টারভিউ এবং সেখানে অপেক্ষা করছিল আমার জন্য আরেক বিস্ময়। যতদূর মনে পড়ে ভদ্রলোকের নাম ছিল ডি ডি চৌধুরী বা এরকমই কিছু একটা, প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বময় আর ভরাট কণ্ঠের অধিকারী। বসতে বললেন, জিজ্ঞেস করলেন প্রফেসর মান্নান তোমার বাবা হন? আমি ঢোঁক গিলে বললাম হ্যাঁ। বললেন বাবা জানেন তুমি যে ইন্টারভিউতে এসেছ। বললাম না। মনে মনে ভাবছি বাবাকে নিয়ে টানাটানি করছ কেন আমাকে কি জিজ্ঞেস করবে কর। বললেন যদি চাকুরী দেই করবে? তোমার তো পড়াশোনাই এখনও শেষ হয়নি। বললাম চাকুরীটা আমার দরকার, আর দুটোই একসাথে চালাব। বললেন তা কেমন করে হবে তোমাকে তো আমরা ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেব, পরে হয়ত আসতে পারবে। আমি পড়লাম উভয় সংকটে। এর মধ্যেই দেখি তাঁর মুখের গাম্ভীর্য চলে গিয়ে সেখানে কৌতুক খেলা করছে। বললেন তোমার বাবা ফার্মাসী বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান এবং জাতীয় ঔষধ নীতির প্রণেতা, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে উনাকে সবাই চেনে। তুমি বোধহয় জানো না ওনার কত ছাত্র কাজ করে এখানে। আমিও ও উনার ছাত্র ছিলাম যখন স্যার প্রাণরসায়ন বিভাগে ছিলেন। তারপর খুব আন্তরিক ভাবে বললেন বাবার উপর রাগ করে চাকুরী নিতে চাচ্ছ? বললাম, না। তাহলে কেন? বলে এমন আদরের দৃষ্টিতে তাকালেন যে আমি সত্যি কথাটা না বলে পারলাম না। সব শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বসে রইলাম। উনি উঠে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন আমি স্যারকে খুব ভাল করে চিনি। উনাকে যেয়ে বল দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। বললাম সেটা আমিও জানি কিন্তু আমি চাই নিজে প্রস্তুত থাকতে। বললেন আগে পড়াশোনাটা শেষ কর। আর যদি একান্তই তেমন প্রয়োজন হয় আমার কাছে এসো আমি তোমাকে নিয়ে নেব। সেটা তোমার নিজের যোগ্যতাতেই হবে। আর স্যার যদি ফোন করে তাহলে তো কথাই নেই যে কোন জায়গায়ই হতে পারে, কেউ স্যারের কথা ফেলবে না। উনি আমার কাছ থেকে বাসার ফোন নাম্বার নিলেন বললেন স্যারের সাথে অনেকদিন কথা হয়নি একদিন কথা বলব। বাইরে বেরুতে সেই বড় ভাই বললেন স্যারকে সালাম দিও প্রাণরসায়ন সাবসিডিয়ারিতে আমি উনার ছাত্র ছিলাম। এরকম ভাবে দেশে বিদেশে জীবনের কত জায়গায় কত যে আব্বার ছাত্র ছাত্রীদের পেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবেনা। অধ্যাপক বাবার সন্তান হিসাবে সেটাও এক পরম পাওয়া।
আমার বাবা ও মায়ের সাথে আমাদের সম্পর্কটা ছিল বন্ধু-সুলভ তাই সব কথাই নিঃসঙ্কোচে বলতে পারতাম। আর মিনি ও আমাকে তো কার্জন হলে, আমাদের বাসায় অহরহই দেখছেন। আমরা থাকতাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক নিবাসে। অনেক সময় বাইরে লাঞ্চ করলেও বেশীরভাগ সময়ই বাসায় যেতাম মায়ের জন্য – আমার মা যে বসে থাকতেন আমার পথ চেয়ে! মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে আমি আর মিনি মটরসাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছি আর আব্বাও তার গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছেন বাসায় দুপুরের খাবার খেতে। পিছন থেকে হঠাত করেই হর্নের আওয়াজ, তাকিয়ে দেখি আব্বা থামতে বলছেন। যদি বলতাম বাসায় যাচ্ছি আব্বা বলতেন আমিও যাচ্ছি এবং মিনিকে উনার সাথে গাড়ীতে উঠিয়ে নিতেন। আর আমি পিছনে মটরসাইকেলে করে যেতাম। এমন সহজ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নিজের বিয়ের কথা বলতে কুণ্ঠিত বোধ করছিলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু, যে কোন সমস্যায় যার কাছে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছি সে হল আমার বড় ভাই। তাকে সব কিছু খুলে বললাম। সব শুনে ফারুক’দা বললেন দাঁড়া আমি আলাপ করছি আব্বা আম্মার সাথে। আমি ঠিক টেনশন না কেমন যেন নার্ভাস বোধ করতে লাগলাম, নিজের বিয়ে বলে কথা! একটু পরে দেখি হাসতে হাসতে আব্বা আমার ঘরে ঢুকলেন। বললেন ফারুকের কাছে সব শুনেছি, এটা কোন সমস্যা হল! আমি ও তোমার মা তো ঠিকই করে রেখেছি যে পড়াশোনা শেষ হলে তোমাদের বিয়ে হবে। বললেন মিনির বাবার ফোন নাম্বারটা দাও কথা বলে দেখি ওনারা কিভাবে কি করতে চাচ্ছেন। এরপর আব্বা মিনির বাবার সাথে কথা বলার পর সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ওনারা কখনো বলেননি যে এখনই বিয়ে করতে হবে। চেয়েছিলেন দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগটা হোক। আর সে আত্মীয় ব্যাটা চেয়েছিল ভেজাল লাগাতে। এরপর মিনিদের বাসায় আব্বা-আম্মা, খালা-ফুপু সহ সবাই মিলে মিনির আম্মার রান্না করা মজার মজার সব খাবার খেতে খেতে আর কথা বলতে বলতে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
আমিও চাকুরীর কথা ভুলে গিয়ে যা যা করছিলাম তাই তাই করতে লাগলাম। জীবনটা আবার নানান রঙে রঙিন হয়ে উঠল। এরপর আরও অনেক ইন্টারভিউই দিয়েছি তবে এরকম ইন্টারভিউ মনে হয় জীবনে একবারই ঘটে। আজও আমি বুঝতে পারছিনা চাকুরীটা কি আমার হয়েছিল নাকি হয়নি!
কামরুল মান্নান আকাশ, সিডনি
|