নানান রঙের দিনগুলো কামরুল মান্নান আকাশ
নয়ই নভেম্বর ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার (DUAAA) পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান ২০১৪ ও বার্ষিক সাধারণ সভা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মদ্যোগি প্রাক্তন ছাত্ররা মিলে ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে এই সংগঠনটি গড়ে তোলার পর এটা হচ্ছে তাদের পঞ্চম পুনর্মিলনী। সারাদিনব্যাপি এবারের এই অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয় সিডনীর ইঙ্গেলবার্ন কমিউনিটি হলে। এই রোববারটি হয়ত অন্যদের জন্যে ছিল আর দশটি রোববারের মতই সাধারণ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের জন্য ছিল এক অনন্য অসাধারণ দিন। এই দিনটিতে তারা ফিরে যায় ফেলে আসা তারুণ্যে উচ্ছল ঝলমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলোতে। তাই তো সেদিন শত ব্যস্ততার মাঝেও সিডনী, ক্যানবেরা, মেলবোর্ন থেকে প্রাণের টানে ছুটে আসে প্রাক্তন ছাত্ররা।
এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬২ ব্যাচের অর্থনীতির প্রাক্তন ছাত্রী ও বর্তমানে সিডনীতে বসবাসরত মিসেস হুসনে আরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ডঃ আলী কাজী এবং মেলবোর্ন আরএমআইটি (RMIT) ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ডঃ শরীফ আস সাবের।
এই অনুষ্ঠানটি ছিল কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। দুপুর বারটায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জনাব আনিস মজুমদার পূর্ববর্তী সাধারণ সভার মিনিটস, ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং কোষাধ্যক্ষ জনাব কামরুল ইসলাম বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। বিপুল সমর্থনের মধ্য দিয়ে সাধারণ সদস্যরা সবগুলো প্রস্তাবই অনুমোদন করেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া(DUAAA) প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করে আসছে, ডঃ জাকিয়া হোসেন এর উপর আলোকপাত করেন।
জনাব মোস্তফা সদস্য এবং অতিথিদেরকে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানান। এরই মাঝে চলতে থাকে স্মৃতিরোমন্থনের পালা। মনের মণিকোঠায় আগলে রাখা ভীষণ দামি সোনালী সেইসব দিনের কথা বলতে যেয়ে তাদের চোখমুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠে কি এক অচেনা আলোয়। সবাই মেতে উঠে সহপাঠীদের সাথে আড্ডা আর খুনসুটিতে। জীবনের অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সবাই যেন আবার একটি দিনের জন্যে হারিয়ে যায় প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে ফেলে আসা দিনগুলোতে।
এরপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় সেলিমা বেগমের সাবলীল উপস্থাপনায়। জনাব আনিস মজুমদার উপস্থিত সবাইকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান এবং নব নির্বাচিত নির্বাহী পরিষদকে পরিচয় করিয়ে দেন। মিসেস হুসনে আরা ছাত্র জীবনের স্মৃতি স্মরণ করে বলেন তার সময়ে মেয়েদের পড়াশোনা করাটা আজকের মত এত সহজসাধ্য কাজ ছিলনা। অথচ আজকের বাংলাদেশে মেয়েরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। অধ্যাপক আলী এবং ডঃ সাবের বলেন তার গর্ব করেন যে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রতিনিধিত্ব করছেন। সভাপতির সমাপনি ভাষণে জনাব মোস্তফা অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য যারা শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানান এবং নতুন কমিটি নির্বাচন করায় সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানান। সেলিমার দক্ষ পরিচালনায় শেষ হয় এই পর্বটি।
পরবর্তী পর্বে ছিল ট্রিভিয়া কম্পিটিশন “জল পড়ে পাতা নড়ে”। এই পর্বটির পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন নাফিজা চৌধুরী মিনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সাজানো হয় প্রশ্নমালা। এই প্রতিযোগিতায় তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাদের প্রাইজ মানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ তহবিলে দান করেন। মিনির প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় এবং সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে উপভোগ্য।
সবার প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘোষণা করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এই পর্বের স্বনামধন্য গায়ক গায়িকা শুভ্রা ও মাসুদ এই বিশ্ববিদ্যালয়রই ছাত্র। তাঁরা তাদের সুরের মায়াজালে মুগ্ধ করে রাখেন সব শ্রোতাদের। পুরানো দিনের সেই সব গান সবাইকে নস্টালজিক করে তোলে। দেড় ঘণ্টা অনুষ্ঠান চলার পরও যেন সবার রয়ে8 গেল অতৃপ্তি।
সব শেষে হয় র্যায়ফেল ড্র। এতে তিন জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
প্রাক্তন ছাত্রদের এই মিলন মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারো প্রকাশিত হয় বর্ণাঢ্য সংকলন “নানান রঙয়ের দিন গুলি”।
ভাঙ্গল মিলন মেলা ভাঙ্গল - একটি সফল অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূনর্মিলনী ২০১৪।
|