সুইসাইড প্রতিরোধে গণসচেতনতার প্রয়োজন অজয় কর
বেশ কয়েক মাস আগে ক্যানবেরাতে এক বাংলাদেশী সুইসাইড করেছিল। সেই সুইসাইডের পরপরই ক্যানবেরাতে বাংলাদেশের কয়েকজন লোক মিলে ‘সুইসাইডের কারণ ও তার প্রতিকার’ বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করেছিল ।
সুইসাইডে বাঙ্গালীটি মারা না গেলে সেমিনারটি হতো কিনা জানি না। এর আগে সিডনিতে এক বাঙ্গালীর সুইসাইডে মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। তবে সেই সুইসাইডের পরপর বাঙ্গালীরা এধরনের কোন গণসচেতনতামূলক সেমিনার কিংবা ওয়ার্কশপ করেছিল কিনা আমার জানা নেই। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সমাজে ‘সুইসাইড কিংবা ‘সেলফ-হার্ম’ প্রতিকারের জন্যে এধরনের সেমিনার কিংবা ওয়ার্কশপের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
গত ২৪মে ২০১৬ প্রকাশিত সিডনি ইউনিভার্সিটি'র ব্রেইন এন্ড মাইন্ড বিভাগের ‘সুইসাইড ও মেন্টাল হেলথ’ বিষয়ক গবেষণা রিপোর্টে সুইসাইড প্রতিকারের জন্যে সিনেট ইনকুয়ারির ৯টি থিমের একটি থিমে কমিউনিটি এওয়ারনেসের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় সুইসাইডের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত গতিতে। গত দশ বছরে (২০০৪-২০১৪ সাল) অস্ট্রেলিয়ায় সুইসাইডের সংখ্যা বেড়েছে ২২ শতাংশ। সরকারি হিসাব মতে, ২০১৪ সালে প্রায় ৬৫,০০০ থেকে ৭০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান সুইসাইডের চেষ্টা করে। শুধু ২০১৪ সালেই সুইসাইডে মারা যায় ২,৮৬৪ জন অস্ট্রেলিয়ান। এদের মধ্যে ৩৬১ জন ছিল ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা।
আর এদেশে তরুণ বয়সে যত ছেলে মেয়ে মারা যায় তাদের ৩৩ শতাংশই মার যায় সুইসাইডে | গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সের ৯০০০ ছেলে-মেয়েকে ‘সেলফ-হার্ম’ এক্টিভিটি জনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের প্রতি দশজনে একজন ‘সেলফ পানিশমেন্ট’-দিতে সুইসাইডের চেষ্টা করে; আর এসব ছেলেমেয়েদের প্রায় ৫৭ শতাংশ তাদের ‘ইমোশন’ ম্যানেজ করতে সুইসাইডের পথ বেছে নেয়।
চাইল্ডহুড ট্রোমা, আইসোলেশন, বুলিং, জেন্ডার ডাইভার্সিটি সহ নানাবিধ সোশ্যাল প্রব্লেম, এবং এংজাইটি, সাইকোসিস বা পার্সোনালিটি ডিস-অর্ডারের মত সাইকোলজিক্যাল ডিস্ট্রেস তরুণ-তরুণীদের সুইসাইডের অন্যতম কারণ বলে জানা যায়। সেকারণে, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং এন্ড স্টিগমা’ জনিত ‘ইউথ সুইসাইড’ প্রতিরোধ করতে তরুণ বয়সের ছেলেমেয়েরা যেসব সোশ্যাল প্রব্লেম ফেস করছে, কিংবা যেসকল এলিমেন্টস ওদের সাইকোলজিক্যাল ডিস্ট্রেস-এর কারণ হচ্ছে সেগুলিকে আমলে নিয়ে ‘সুইসাইড এওয়ারনেস ক্যাম্পেইন-এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে ছোটবেলায় যখন গ্রামে থাকতাম তখন খবর পেতাম যে ধানের ওষুধ খেয়ে কিংবা গলায় ফাঁসি নিয়ে কেউ কেউ মার গেছে। বউ বাচ্চার মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে না পারার কষ্টে ওরা ঐ ভাবে মারা যেত।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো সম্পদের প্রাচুর্যের দেশে বাংলাদেশের মানুষ কেন সুইসাইড করবে? এখানে কিসের অভাব? এখানেও কি তাহলে এমন কিছুর অভাব আছে যা আমাদের এখনো ভাল ভাবে জানা হয়নি? যার অভাবে বাচার ইচ্ছা হয়না?
আসুন, প্রবাসে আমাদের মাঝ থেকে আর কোন বাংলাদেশীকে যাতে অকালে এভাবে হারাতে না হয় তার জন্যে নিয়মিতভাবে ‘সুইসাইডের কারণ ও তার প্রতিকার’ বিষয়ক সেমিনার করে গণসচেতনতা গড়ে তুলি।
অজয় কর, ক্যানবেরা
|