bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

কালীপূজা ক্যানবেরাতে হলেও বটতলায় হয়নি...
অজয় কর


বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের নবদ্বীপে ১৮ শতকের দিকে তৎকালীন রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের শুরু করা কালীপূজা এখন ক্যানবেরাতেও। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর ২০১৪) ক্যানবেরার হিন্দুরা পাল্মারস্টন প্রাইমারী স্কুল হলে ব্রাহ্মণ ডাকিয়ে মন্ত্র পরে কালি মার পূজা দিয়েছে। ক্যানবেরাতে আমার দেখা এটাই প্রথম কালি পূজা।

বহু বছর আগে কালি পূজার যখন শুরু তখন সেটা ধনী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পূজা বলে স্বীকৃত ছিল। তবে যুগের চাকা ঘুরে কালীপূজা এখন ধনী গরীব সকলের পূজা। গত শুক্রবারের পূজাটি তেমনই একটা পূজা ছিল- এটা ছিল সার্বজনীন পূজা। ক্যানবেরার সকল হিন্দুদের পূজা ছিল এটি।

এধরনের সার্বজনীন কালীপূজা এর আগে দেখেছিলাম প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে আমাদের গ্রামের বটতলায়। অমাবস্যার রাতে তখন রক্ষাকালীর পূজা হতো সেখানে। বটতলায় পূজা শেষ করে পাড়ার কাকারা বিশাল বিশাল ডালায় করে (বেত দিয়ে বানানো বিশেষ ধরনের পাত্র ) চাল, কলা, নারকেল, গুড় নিয়ে আমাদের বাড়ির উঠোনে (আঙ্গিনা) নিয়ে আসতেন। ঐ উঠোনেই কাকারা একত্রে মিলেমিশে ওসব চাল, কলা, নারকেল, গুড় মিশিয়ে পূজার প্রসাদ বানাতেন। বাড়ির উঠোন মুহূর্তেই পাড়াপ্রতিবেশিতে ভরে যেত- আমরা সবাই সেই প্রসাদের জন্যে লাইন ধরে অপেক্ষা করতাম। পূজার প্রসাদ পেতাম আমরা সকলেই।

আমাদের সেই গ্রামের বটতলায় এখন আর পূজা হয় না।

শুক্রবারের কালীপূজা সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। পূজার সাথে জড়িত প্রত্যেক'কে একে অন্যের সাথে মিলেমিশে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে দেখা গেছে। পূজার বেদী সাজানো থেকে শুরু করে শিশুদের চিত্রাঙ্কন তদারকি, ষ্টেজ গোছানো থেকে শুরু করে ক্যান্সার রুগীর সাহায্যের জন্যে রাফেল ড্র'র টিকিট বিক্রি - প্রতিটি কাজে ওরা সকলে ছিল আন্তরিক।
আমার বাবা বলতেন, 'সকল মানুষকে নিয়ে পূজা করার মধ্যেই নাকি সার্বজনীন পূজার আনন্দ; আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই নাকি থাকে পূজার সার্থকতা।' শুক্রবারে ক্যানবেরার কালীপূজাতে আমি সকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখেছি। আত্মীয়-অনাত্মীয়-এর সমাগম ছিল সেখানে। পূজামণ্ডপে উপস্থিত বিভিন্ন ভাষাভাষীর লোকেরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন সেখানে।

সেই সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে আমার কলেজ বন্ধুদের পেয়েছি, পেয়েছি ভিন্ন ধর্মের আর ভিন্ন ভাষার মানুষজনকে। পূজামণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন শ্রীলংকার ডেপুটি হাই কমিশনার সহ অনেক সংস্থার প্রধানগণ। পূজার প্রসাদ পেয়েছিলেন সকলে- উপস্থিত প্রতিটি অতিথির হাতে আয়োজকরা নিজ হাতে পূজার প্রসাদ, স্ন্যাক্স আর ডিনার পৌঁছে দিয়েছিলেন।

পূজার ফল-প্রসাদ বিতরণের পর থেকে শুরু হয়েছিল সিডনী'র মিউজিক্যাল ব্যান্ড 'ক্রিস্টি' আর ক্যানবেরার লোকাল সিঙ্গারদের গাওয়া গানের অনুষ্ঠান। গান শুনতে শুনতে যাতে অতিথিরা ডিনার খেতে পারেন, সেদিক'টা খেয়াল রেখে আসনে বসা অতিথিদের প্রত্যেকের হাতে আয়োজকরা ডিনার পৌঁছে দিয়েছিলেন। ওদের এধরনের আপ্যায়নে খুশি হয়ে বয়স্ক এক অতিথিকে বলতে শুনেছি, 'এধরনের আতিথেয়তা এর আগে আমি কখন দেখিনি। অতিথিকে নারায়ণ জ্ঞানে সেবা দান করার শিক্ষা না থাকলে নাকি অতিথি আপ্যায়নে অমন আন্তরিকতা দেখানো যায় না।'

পূজার অনুষ্ঠানে ক্যান্সার রুগী রাহূল' কে আর্থিক সহযোগিতা দিতে র্যা ফেলের টিকিট কিনেছিলেন অনেকে। রাফেল ড্র'র ভাগ্যবানদের মধ্যে ছিলেন- দেবেশ হালদার, আলী হোসেন এবং ক্রিস (এমুহূর্তে ক্রিসের লাস্ট নামটি আমার মনে নেই)। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল শিশুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল চিত্রাঙ্কনের টোকেন পুরস্কার।

পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছিল 'অরোরা'। বয়সে কিশোর হয়েও অরোরার জন্যে সেই অনুষ্ঠান পরিচালনায় বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি কারণ পূজার আয়োজক কিংবা পূজায় উপস্থিত অতিথি সকলের মধ্যে ছিল একধরনের সহযোগিতার মনোভাব। আয়োজক এবং অতিথি, যাদের অধিকাংশই বাঙ্গালী, বাংলাদেশে তাদের জন্ম। এই পূজাতে কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় তাদের কেউকে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতে হয়নি।

অথচ, আমর সমবয়সী বন্ধুরা বাংলাদেশে নিজের গ্রামে, বাপদাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটায় নির্ভয়ে পূজা করতে পারেনা। পূজা'র তিথি ঘনিয়ে আসলেই কোন এক অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত থাকে ওরা; ভয়ে জড়সড় থাকে।

'আরে, পূজার কথা বলছিস? পূজাপার্বণ না করেও যদি বাপ-দাদার ভিটায় বউ-বাচ্চা, ছেলে-মেয়ে নিয়ে মান-সম্মান বজায় রেখে জীবনের বাকি দিন কটা কাটাতে পারি সেটাই পরম ভাগ্য বলে জানবো', বলছিলেন আমাদের সেই বটতলায় গ্রামের যে কাকারা পূজা করতেন সেই কাকাদেরই একজন। গত দু'বছর আগে যখন গ্রামে গিয়েছিলাম, কথা হয়েছিল তখন আমার এই প্রতিবেশী কাকার সাথে। উনি তখন ৭০ এর কাছাকাছি; গায়ের চামরা ঘোচানো, বুড়ো হয়ে নুয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে পথ চলতে পারতেন। মাত্র ক'দিন আগে খবর পেলাম আমার সেই কাকার মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে আমি আমার গ্রামে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলেছিলাম, নিজ চোখে গ্রামটি ঘুরে দেখেছিলাম। বাংলাদেশে হিন্দু অধ্যুষিত আরো দশটি গ্রামের মতোই আমার গ্রামের অবস্থা। আমাদের গ্রামের সেই বটগাছটি আর নেই। নেই গ্রামের মানুষের সেই উদ্যম। বাবা, কাকা, বড় ভাই সকলকে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতে দেখে দেখে আমার বন্ধুরাও কেমন যেন আগের মতো উদ্যম নিয়ে পূজাপার্বণ করার সাহস হাড়িয়ে ফেলেছে। জাঁকজমক করে সার্বজনীন পূজার আয়োজন তো দুরের কথা নিজ ভিটায় নিয়ম মাফিক পূজাপার্বণ করার উদ্যমটাও ওদের আর নেই।

গ্রামের একমাত্র মন্দিরটা ভেঙ্গে পড়ে আছে- মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোণ এক অজ্ঞাত কারণে সেটার কাজ থেমে আছে। গ্রামের মানুষের চেহারা আর চাহনিতে সদাই একটা ভীতির ভাব। নিরাপত্তার অভাবে ওরা নিজের ভিটায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পূজাপার্বণ করার আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলেছে।

আমি বাংলাদেশের ছেলে- নিজ গ্রাম থেকে হাজার মাইল দূরে ভিন্ন কালচারের মানুষদের সাথে মিলেমিশে ক্যানবেরাতে নির্ভয়ে দু-হাতে ফুল নিয়ে পূজার মন্ত্র পড়ে পুষ্পাঞ্জলি দিচ্ছি। আর আমার সমবয়সী বন্ধুরা বাংলাদেশে নিরাপত্তার অভাবে নিজের ভিটায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পূজাপার্বণ করতে পারছে না। ক্যানবেরাতে আমি পূজার পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারছি কারণ, এখানে আচমকা পূজা মণ্ডপে এসে কেউ হামলা করবে, কিংবা প্রতিমা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে সেই ধরনের কোন ভয় নেই। বটতলায় পূজা করতে আমার গ্রামের বন্ধুদের সেই ভয় আছে- তাইতো বটতলায় পূজা হয়না।






Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Nov-2014

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far